'৯২-এর দাঙ্গার নৈরাজ্যে সমাজবিরোধীদের ফায়দা
0 130বিগত দু’ দিন ধরে ধোবিতালাও বস্তির বাসিন্দাদের ভিড়ে ট্যাংরার কিলখানা ক্রমশ উপচে পড়ছে। এঁরা গত সোমবার থেকে নিজেদের প্রাণ হাতে করে কোনোমতে আতঙ্কে দিন গুজরান করছেন। পুরুষ মহিলা নির্বিশেষে সকলেই তাঁদের এই অবস্থার জন্য স্থানীয় সমাজবিরোধীদের দায়ী করছেন যারা পুলিশের সাথে হাত মিলিয়ে এলাকায় সংগঠিতভাবে লুঠ এবং বাড়িঘর পোড়ানোর কাজ করছে।
কসাইখানার উল্টোদিকের এক সেলুনের মালিক শেখ আজিজের বক্তব্য অনুযায়ী, অযোধ্যায় মসজিদ ভাঙার খবর আসার বেশ কিছু পর, সোমবার অবধি অবস্থা একেবারে স্বাভাবিক ছিল। তাঁর মতে, এই আক্রমণ আসলে তাঁদের এই বস্তি থেকে উচ্ছেদ করে সেই জমি কোনও মুনাফা তৈরির কাজে লাগানোর জন্য।
কিলখানার উঁচু গেট আর পাঁচিলের ওপারে হাজারো মানুষ আত্মগোপন করে জীবন বাঁচাতে পারলেও সেখানে নেই কোনও খাবার বা শীতবস্ত্রের যোগান। সেখানে মোতায়েন করা পুলিশ কোনও প্রশ্নের উত্তর দিতে সম্মত নন, এমনকি কাউকে কিলখানায় আশ্রয় নেওয়া মানুষের সাথে কথা বলতে দিতেও রাজি নন।
পুলিশকর্মীরা যদিও বলছেন স্বরাষ্ট্র দপ্তর থেকে প্রতিদিন খাবার পাঠানো হচ্ছে, এখানকার মানুষের বক্তব্য প্রতিদিন আধপেটা খাবার জুটছে কোনোমতে, তাও কমিউনিটির রিলিফ সোসাইটির সৌজন্যে।
শুক্রবার নতুন করে আগুন লাগার পর এখনও বস্তির চারপাশে প্লাস্টিকের জিনিস ধিকিধিকি জ্বলছে। কুকুর, বেড়ালের পোড়া মৃতদেহ এদিকওদিক পড়ে আছে বস্তির গলির মধ্যে। পুড়ে যাওয়া বস্তিতে এখন পরিত্যক্ত যুদ্ধক্ষেত্রের থমথমে ভাব।
ট্যাংরা অঞ্চলের কথা শুনে যদি আতঙ্কের বাতাবরণ বলে মনে হয়, তাহলে এন্টালির মতিঝিল এলাকার অবস্থা আরও ভয়ানক। মনিকা ডিকোস্টার মুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট, দু’ হাত তুলে হন্তদন্ত হয়ে পামারবাজার ব্রিজের উপর দিয়ে মতিঝিল বস্তির দিকে যাচ্ছিলেন তাঁর স্বামী এখনও বেঁচে আছেন কিনা জানতে। সঙ্গে যাচ্ছেন তাঁর প্রতিবেশী পুতুল দাস, যাঁর বাড়িও রেহাই পায় নি।
মনিকা বলছিলেন কীভাবে এখানে বহু বছর ধরে মুসলিম এবং খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষেরা শান্তিতেই বসবাস করতেন গত বুধবারের আগে অবধি। সেদিন রাতে সমাজবিরোধীরা এসে গোটা এলাকায় তাণ্ডব চালায়। কোনও নির্দিষ্ট ধর্মাবলম্বী মানুষ এই আক্রমণের লক্ষ্য ছিল না, বরং পুরনো হিসেব পুষিয়ে নিতেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করা হয়।
ঘৃণার আগুনে জ্বলতে থাকা শহরের বুকে রাজাবাজারের পারসিবাগান এলাকা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল উদাহরণ হিসাবে সামনে এসেছে।
সেখানকার বাসিন্দারা জানালেন, তাঁরা খুবই ক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন মিডিয়া তাঁদের অঞ্চলকে উপদ্রুত হিসাবে দেখানোয়। সত্তর শতাংশ মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় সংখ্যালঘু হিন্দুরা সম্পূর্ণ নিরাপদে ছিলেন এবং একসাথে গোটা এলাকাকে বাইরের দুষ্কৃতীদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য পাহারা দিয়েছেন, দিনের বেলাতেও।
ডক্টর বিপ্লব কুমার নাগ, এপিসি রায় রোড-গিরীশ বিদ্যারত্ন লেন মহল্লা কমিটির সদস্য, জানিয়েছেন তাঁর রোগীরা প্রধানত মুসলিম যারা আশেপাশের অঞ্চলেই থাকেন। ডাক্তারবাবুর কথা অনুযায়ী, প্রতিদিনই রোগীরা তাঁদের সমস্যা নিয়ে তাঁর কাছে এসেছেন, কোনও সঙ্কোচ বা অস্বস্তি ছাড়াই।
সেন্ট পলস কলেজের অধ্যাপক শাহজাহান আলি মোল্লা, যিনি আবার ডক্টর নাগের প্রতিবেশী, তাঁর মতো করে সম্প্রীতির বার্তা দিলেন এবং অযোধ্যার ঘটনাকে ‘অনভিপ্রেত দুর্ঘটনা’ বলে উল্লেখ করেন।
হাসি রায়, আশি বছরের উপর বয়স, ১৯৪৬ ও ১৯৬৪ দুই দাঙ্গাই দেখেছেন। ১৯৪৬-এর দাঙ্গায় তাঁরা ঘরছাড়া হন উল্টোডাঙ্গায়। তারপর ১৯৫০ সালে তাঁর পরিবার নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পারসিবাগানে চলে আসে এবং তখন থেকে আজ অবধি তাঁরা শান্তিতেই দিন কাটিয়েছেন।
তাঁর মতো আরও মানুষকে মেটিয়াব্রুজের মত দাঙ্গাকবলিত অঞ্চলে খুঁজে পাওয়াও সত্যিই আশাব্যঞ্জক। বিজয় বাহাদুর, কেসোরাম কটন মিলের প্রাক্তন ম্যানেজার, এখানে বাস করছেন ১৯২৫ সাল থেকে। তাঁকে প্রশ্ন করায় মতিঝিলের মনিকা ডিকোস্টা এবং ট্যাংরার শেখ আজিজের মতই একই কথা বললেন, যে লুঠপাট এবং খুন মূলত স্থানীয় সমাজবিরোধীরাই করছে যারা এই পরিস্থিতিকে নিজেদের প্রয়োজনে কাজে লাগাতে চায়।
তিনি তাঁর ছেলের ক্লিনিকে বহূ পরিবারকে আশ্রয় দিয়েছেন এবং তিনি নিশ্চিত আর্মি দায়িত্ব নিলে কিছুদিনের মধ্যেই হিন্দুরা তাঁদের বাড়িতে ফিরে যেতে পারবে এবং আবার মুসলিম প্রতিবেশীদের সাথে আগের মত স্বাচ্ছন্দ্যে বাস করতে পারবে।
এই প্রতিবেদনটি ১১ ডিসেম্বর ১৯৯২ Indian Express-এর কলকাতা সংস্করণের Financial Express -এ প্রকাশিত। মূল ইংরাজি থেকে অনুবাদ: সুদীপ চক্রবর্তী।
Tagsadolescence age of consent age of marriage caa child marriage corona and nursing covid19 Covid impacts on education domestic violence early marriage education during lockdown foremothers gender discrimination gender identity gender in school honour killing human rights intercommunity marriage interfaith marriage lockdown lockdown and economy lockdown and school education lockdown in india lockdown in school lockdown in schools love jihad marriage and legitimacy memoir of a nurse misogyny nrc nurse in bengal nursing nursing and gender discrimination nursing in bengal nursing in india online class online classes during lockdown online education right to choose partner school education during lockdown social taboo toxic masculinity transgender Women womens rights
Leave a Reply