খবরে জেন্ডার - ৪
0 83মহিলা কৃষক, কৃষক আত্মহত্যা এবং নারীর সমানাধিকার – বুন্দেলখন্ডে খবর লেহরিয়া
কৃষক আত্মহত্যা আজ জাতীয় রাজনীতিতে সঙ্কট নয়, পরিসংখ্যান মাত্র। বছরের পর বছর বিভিন্ন গালভরা প্রকল্প, যোজনার ঘোষণা সত্ত্বেও কৃষক আত্মহত্যার সংখ্যা ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। ২০১৭ সালেও দেশের রাজধানী সাক্ষী থেকেছে তামিলনাড়ুর কৃষকদের প্রতিবাদের – যেখানে আত্মহত্যায় মৃত কৃষকদের কঙ্কাল নিয়ে বিক্ষোভ দেখানো সত্ত্বেও ঋণমকুবের বদলে সরকারপক্ষের নীরবতাই যোগ হয়েছে প্রাপ্তির খাতায়।
কিন্তু এই কৃষক আত্মহত্যার মত গুরুতর ঘটনা যখনই মিডিয়া তুলে ধরেছে (কদাচিৎ হলেও), তখনই আমরা শুনেছি পুরুষ কৃষকদের কথা। পুরুষ সাংবাদিকরা কথা বলেছেন পুরুষ কৃষক অথবা কৃষি শ্রমিকদের সাথে। দেশের জনসংখ্যার যে সত্তর শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির সাথে যুক্ত, তার মধ্যে মহিলারা ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করলেও তাঁদের স্বর অশ্রুতই রয়ে গেছে। কৃষক আত্মহত্যা যেখানে ক্রমশ মহামারির মত ছড়িয়ে পড়ছে মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ুর মত রাজ্যে; সেখানে আমরা প্রায় কেউই জানি না দেশের মহিলা কৃষকদের বর্তমান অবস্থা কি।
সেই অজানাকেই লোকচক্ষুর গোচরে আনার উদ্যোগ নেয় খবর লেহরিয়া। এটি দেশের একমাত্র সংবাদপত্র যার সমস্ত বিভাগের দায়িত্ব সামলান মহিলারা। দিল্লীর স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘নিরন্তর’-এর উদ্যোগে শুরু হওয়া এই সংবাদপত্র আজ প্রতি সপ্তাহে পৌঁছে যায় উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের ৬০০টি গ্রামে। ভারতের প্রথম বুন্দেলি ভাষার সংবাদপত্র খবর লহেরিয়া আজ প্রকাশিত হয় সাতটি স্থানীয় ভাষায়। উত্তরপ্রদেশের বুন্দেলখন্ডে সমাজকর্মী উমা কুশওয়াহা, সন্তোষ কুশওয়াহা এবং গুলাবি গ্যাং-এর নেত্রী সম্পত পালের সাথে রাজ্য তথা দেশের মহিলা কৃষকদের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন খবর লেহরিয়াঁর এডিটর মীরা জাতভ। ফেসবুক লাইভে প্রচারিত এই আলোচনায় যুক্ত হন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সাধারণ মানুষ, নিজেদের প্রশ্ন তুলে ধরেন এই তিনজনের কাছে।
এই আলোচনায় সমাজকর্মী উমা কুশওয়াহা মহিলা কৃষকের আত্মহত্যার প্রতি সরকারের ঔদাসিন্যের কথা তুলে ধরেন। উনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেন, যে সরকার আজও মহিলা কৃষকদের আত্মহত্যার ঘটনাকে স্বীকৃতি দেয় না। এইভাবে মহিলা কৃষকদের শ্রমের মূল্য পাওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্যকে সরকারী মান্যতা দেওয়া হয়।
দীর্ঘ পঁচিশ বছর ধরে বুন্দেলখন্ডে নারী-পুরুষের সমানাধিকারের দাবিকে আন্দোলনরত সমাজকর্মী সন্তোষ কুশওয়াহা এই বৈষম্যের প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের সমাজব্যবস্থার সামগ্রিক কাঠামোই এই বৈষম্যকে বৈধতা দেয়। আলোচনার মাঝে সম্পত পাল এবং সন্তোষ কুশওয়াহার মধ্যে বিবাদ তৈরি হলেও দুজনের বক্তব্য এই সামগ্রিক বঞ্চনার বিরুদ্ধেই দাঁড়ায়। প্রায় ৪০ মিনিটের এই আলোচনায় ভারতের কৃষিব্যবস্থা এবং মহিলাদের প্রতি বঞ্চনার সামগ্রিক চিত্রটি, যার সাথে বাড়ির মধ্যেও মহিলাদের প্রতি শোষণের বিষয়টি সরাসরি সম্পর্কযুক্ত – উঠে আসে।
তথ্যসূত্র - খবর লেহরিয়া
হরিয়ানায় উচ্চমাধ্যমিক স্তর শুরু করার দাবিতে ছাত্রীদের অবস্থান, অনশন
হরিয়ানায় নিজেদের শিক্ষার অধিকারের দাবিতে আন্দোলন করে নজির স্থাপন করলেন সেখানকার ছাত্রীরা। দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের গোথড়া সরকারী হাই স্কুলে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের পড়াশুনা শুরু করার দাবি জানানো সত্ত্বেও কোনও লাভ হয়নি। নিজেদের গ্রামে কোনও উচ্চমাধ্যমিক স্কুল না থাকায় ছাত্রীদের বাধ্য হয়ে ৪ কিমি দূরে কানওয়ালিতে পড়তে যেতে হত, এবং এই স্কুলে যাওয়ার পথে একাধিক ছাত্রী যৌন হেনস্থার শিকার হন। শেষমেশ আন্দোলন শুরু করা ছাড়া কোনও উপায় নেই বুঝতে পেরে এবছর মে মাসে প্রায় ৮০ জন ছাত্রী অনির্দিষ্টকালের জন্য অনশনে বসেন। আট দিন পর সরকারের তরফ থেকে স্কুলকে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে উন্নিত করার লিখিত প্রতিশ্রুতি এলে ছাত্রীরা অনশন শেষ করেন।
একই অভিজ্ঞতা রাজগড়ের ছাত্রীদেরও, যাঁদের অধিকাংশেরই গ্রামে উচ্চমাধ্যমিক স্কুল না থাকার কারণে দশম শ্রেণীর পর পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া প্রশ্নচিহ্নের মুখে পড়ে যায়। উচ্চমাধ্যমিক স্তরের পড়াশুনা শুরু করার জন্য যাবতীয় পরিকাঠামো ২০১২ সালের মধ্যে তৈরি হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও স্কুল কর্তৃপক্ষ কোনও অজ্ঞাত কারণে টালবাহানা করতে থাকে। এরপর ১৩ দিন ধরে স্কুলের সামনে ছাত্রীরা অবস্থান বিক্ষোভ করার পর অবশেষে আন্দোলনকারীদের সামনে স্কুল কর্তৃপক্ষ নতিস্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে। রাজগড়ের ছাত্রীরা এখন খুশি, তাঁরা এখন নিজেদের গ্রামেই পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারবেন।
হরিয়ানার এই ঘটনা বহুবিধ কারণে তাৎপর্যপূর্ণ। একদিকে শিক্ষার বেসরকারিকরণ, অন্যদিকে সরকারী শিক্ষাব্যবস্থার পরিকাঠামোকে রুগ্ন করে দেওয়া – এই দুয়ের যাঁতাকলে দেশের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীদের কাছে পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে। অন্যদিকে হরিয়ানার মত রাজ্য, যা প্রধানত বাল্যবিবাহ, কন্যা ভ্রূণহত্যা, নারী পাচার জাতীয় খবরের জন্যেই শিরোনামে আসে, সেই রাজ্যের গ্রামে এইভাবে একাধিক স্কুলে ছাত্রীরা নিজেদের শিক্ষার দাবিতে আন্দোলন করছেন, অনশন করছেন, এবং নিজেদের দাবি ছিনিয়ে আনছেন – এই ঘটনা বাকি দেশেও শিক্ষার দাবিতে সংগঠিত আন্দোলনের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে নজির সৃষ্টি করবে।
তথ্যসূত্র - পিঁজরা তোড়
Tagsadolescence age of consent age of marriage caa child marriage corona and nursing covid19 Covid impacts on education domestic violence early marriage education during lockdown foremothers gender discrimination gender identity gender in school honour killing human rights intercommunity marriage interfaith marriage lockdown lockdown and economy lockdown and school education lockdown in india lockdown in school lockdown in schools love jihad marriage and legitimacy memoir of a nurse misogyny nrc nurse in bengal nursing nursing and gender discrimination nursing in bengal nursing in india online class online classes during lockdown online education right to choose partner school education during lockdown social taboo toxic masculinity transgender Women womens rights
Leave a Reply