• আলেয়া


    0    86

    October 12, 2018

     

    বারবার এই সন্দেহ মনে জেগেছে যে, আততায়ী সঙ্গেই আছে৷ শোবার ঘরের জানলার তাকে অফহোয়াইট সিমেন্টের মধ্যে ছোট ছোট কমলা, হলুদ আর সবুজ পাথরের মোজাইক৷ রাতে শোবার আগে পর্দা টানতে গিয়ে একটা ধাক্কা লেগেছিল৷ ....দক্ষিণের দুটোর মধ্যে একটা জানলার তাকের ওপর নিশ্চিতভাবে লেগে আছে হালকা রক্তের দাগ৷ সেই রক্তের আভাস দিয়ে টেনে টেনে কেউ যেন কিছু আঁকতে চেয়েছিল৷ অনির্দিষ্ট কিছু৷ কিন্তু নিশ্চয়ই আসল ব্যাপারটা তা নয়৷ নিশ্চয়ই এটা একটা প্রাকৃতিক ঘটনা! কাকতালীয়ভাবে মনে হচ্ছে যেন ছবি আঁকার প্রয়াস৷ আরও আশ্চর্য যে, একটা ছোট্ট ধূসর পালক আংশিকভাবে সেঁটে আছে সেই শুকনো রক্তে৷ আর পালকটার খোলা অংশ তিরতির করে কাঁপছে ফুরফুরে বাতাসে৷ তাহলে? কালকেও তো এই দাগ, পালকের এই ইনস্টলেশন ছিল না! আজকে কী করে এলো? তার মানে রাতের মধ্যেই সংঘটিত হয়েছে কোনো হত্যালীলা৷ আক্রমণ, হনন ও ভক্ষণ৷ নিঃশব্দে খুন হয়ে গেছে কেউ একজন৷ আর তারই শেষ পালকটা অন্যজনের হিংস্র বীরত্বের প্রতীক হয়ে জয় পতাকা ওড়াচ্ছে রক্তলিপ্ত বধ্যভূমিতে৷

    রক্ত মুছতে হবে৷ ভদ্রস্থ, শান্ত, পরিচ্ছন্ন করে তুলতে হবে ঘরের পরিবেশ৷ হাপিস করে দিতে হবে হত্যার সামান্যতম প্রমাণটুকুও৷ তবেই সহজ হবে জীবন৷ স্বর্গীয় আনন্দে পূর্ণ হয়ে উঠবে সবকিছু৷ কিন্তু কিছুতেই পরিষ্কার করা হয়ে উঠছে না৷ এর জন্য দায়ী দুটি বিপরীতমুখী শক্তি .... ভয়, অনিশ্চয়তা, বিতৃষ্ণা জায়গাটাকে ছুঁতেই দিচ্ছেনা৷ অথচ মুছতে গেলে তো ছুঁতেই হবে৷ আবার অন্যদিকে আছে, সুবিন্যস্ত-সুগঠন কোনও কিছু থেকে চোখ ফেরাতে না পারার অপারগতা৷ সৌন্দর্য্য চেতনার পীড়ন৷ ইঞ্চি ছয়েকের সাদাটে পটভূমি৷ তার উপর রক্তের পেঁচিয়ে থাকা টান৷ তাতে সেঁটে থাকা কম্পিত শেষ পালক৷ ....অদ্ভুত এক সম্পূর্ণতা৷ একে মুছে পরিষ্কার করে ফেলতে খুবই বাধছে৷ আবার যে মুহূর্তে ওটা বধ্যভূমি, সেই মুহূর্তে হত্যাচিহ্ন মোছার জন্য স্পর্শাতঙ্ক ও অনীহা বাধা দিচ্ছে৷ পরিস্থিতির বিচলন না ঘটানোই ভালো৷ ইনস্টলেশনটি অপরিবর্তনীয় ফসিলেও পরিণত হতে পারে, আবার রোদ-বৃষ্টি-বাতাসে প্রাকৃতিকভাবে মুছেও যেতে পারে৷

    দুরু-দুরু আতঙ্ক আর অস্বস্তির কাঁপুনি অনুভব করতে করতেই শুতে যেতে হচ্ছে৷ .... যে বাড়িতে আততায়ী ঘুরে বেড়ায় সেখানে শোওয়া এবং ঘুমানো একটা বিরাট জিজ্ঞাসাচিহ্ন৷ শুতে গিয়ে যে বালিশটায় মাথা রাখতে হচ্ছে তার পাশের বালিশে মাথা রেখে ঘুমোচ্ছে যে রোমশ শরীর তার হাত-পা ইত্যাদি ছড়িয়ে ছিটিয়ে অনেক জায়গা নিয়ে নিয়েছে৷ ঘুমন্ত অস্তিত্বটাকে কিছু বোঝানোও যাবে না৷

    ঘুমন্ত অচেতনা শুধু নিজেকেই চেনে৷ জানে স্বার্থপর আরাম-মগ্নতা, যা তার নিজস্ব জীবনের কাছে একান্ত, অকাট্য দাবী৷ তাই যতই ঠেলাঠেলি করা হোক না কেন, জ্যান্ত প্রস্তরীভূতটি নড়বে না৷ কী আর করা! অতি সংগোপনে, অতি সন্তর্পণে, অতি সূক্ষ্ম দেহধারণ করে সামান্যতম বিছানা অংশকে অবলম্বন করা, আর কি৷ এবং আশা করা যে, সর্বঅশান্তিহর ঘুম আসবে হড়পা বানের মতো৷ ভাসিয়ে নেবে, ডুবিয়ে দেবে৷ ভুলিয়ে দেবে আততায়ীর আনাগোনার প্রতি সতর্কতা, কিংবা ঘাতকের নিশ্চিত অস্তিত্ব সম্পর্কে সন্দেহের জ্বালা এবং অনিশ্চয়তার নিপীড়ন৷ কখনো বা মনে হতে পারে, জেগে থাকলে খারাপ কিছু ঘটবে না৷ পুলিশ কিংবা গার্ডকে জেগে থেকেই নাইট ডিউটি করতে হয়৷ নিজেকে রক্ষা করতে গেলে কি তেমনই করা উচিত? এই সিদ্ধান্তটা নিজেকেই নিতে হবে৷ জাগবে, নাকি ঘুমোবে? কখনও কখনও ঘুমের একটা ঢুল আসে৷ কিন্তু বাতাসের পায়ে কে যেন হেঁটে যেতেই ঘোর কেটে যায়৷

    সকাল বেলা রোমশ শরীর পাশ থেকে ওঠে৷ অবলীলায় পার্শ্ববর্তী সূক্ষ্ম দেহধারীকে ডিঙিয়ে চান ঘরে ঢুকে যায়৷ ফ্রিজ হাতড়ে খাবার খেয়ে অশ্রাব্য অলেখ্য কতগুলো মন্তব্য করতে করতে চলে যায় অফিসে৷ বড় বড় পর্দা ঢাকা ছায়াচ্ছন্ন ঘরগুলোতে ফিসফিসে কথা কিংবা খুস খাস পদশব্দ মেলে৷

    উল্টোদিকের ফ্ল্যাট থেকে সেনবৌদির ফোন -

    -- আলেয়া ঘুম ভাঙল? তোমার দরজার কাছে বাজার দিয়ে গেছে৷ দুধ আর নিউজ পেপারটাও নিয়ে নিও৷

    -- হুঁ৷

    -- একা আছো?

    -- হ্যাঁ, মানে.... না৷

    -- ওহো! কেউ আছে বুঝি? তোমার কর্তা তো দেখলাম অফিস চলে গেল৷

    -- হ্যাঁ, ...হ্যাঁ৷

    -- আচ্ছা ঠিক আছে৷ তুমি ব্যস্ত আছ৷ ফোন রাখলাম৷ পরে কথা হবে৷

    বেলা গড়ায়৷ কাজের মহিলা এসে চা করে, খাবার বানায়৷ হঠাৎ জানতে চায় -

    -- বৌদি, তোমার টিয়াটা গেল কোথায়?

    -- উড়িয়ে দিলাম৷

    -- কেন?

    -- যদি কেউ ওকে মেরে ফেলে?

    -- সেকি! খাঁচার দরজা ভালো করে আঁটা থাকলে....

    -- শোনো, কোনও খাঁচারই কোনও গ্যারান্টি নেই৷ ওর ডানা আছে৷ উপায় আছে বাঁচার৷ শুধু একটু সহায়তা দরকার ছিল৷ সেটুকুই করেছি৷ ও উড়ে গেছে৷ নিজের ভালোমন্দ ও বুঝে নেবে৷ লোহার বাসর ঘরেও সূঁচের মতো ফুটো থাকে৷ হতে পারে একটা ফুটো, কিন্তু ওই একটাই যথেষ্ট৷ ....সবার তো আর ডানা থাকেনা৷ খাঁচার দরজা খুলে দিলেও তারা বাঁচেনা৷

    -- উঃ! বৌদি, কী যে বল না তুমি! বাপরে বাপ! আচ্ছা, আমার তোতাটা এনে দেবো তোমায়? পুষবে? ওর একটা চোখ কিন্তু কানা৷ ঘাড়টাও একটু একপেশে হয়ে গেছে৷ বেড়ালের থাবা খেয়েছিল কিনা৷’

    -- না না৷ না গো৷ এত অসহায়কে রক্ষা করা যায় না৷ ওকে বাঁচিয়ে রাখার ক্ষমতা আমার নেই৷ এখানে অনেকের আনাগোনা চলে৷ .... আনাজের ব্যাগটা ঢোকানোর সময় মনে হলো, একটা পায়ের শব্দ যেন সাবধানে সিঁড়ি দিয়ে উঠে আসছে৷ আর সেন্টের তীব্র মিষ্টি একটা গন্ধ পাচ্ছিলাম৷ অচেনা গন্ধ। অচেনা পায়ের আওয়াজ৷ কেন কেউ আসছিল বল তো? এই টপ ফ্লোরে অজানা কারোর আসার দরকারটাই বা কী?

    সেন বৌদির দরজাতেও নক করলো না৷ আমার দরজাও ছুঁলো না৷ আসার আগেই নিচে নেমে গেলো৷ অনেকক্ষণ আই-হোলে চোখ লাগিয়ে রেখেছিলাম৷

    -- আরে! বৌদি যে কী বলে না৷ হয়তো সে তোমার নিচের তলায় এসেছিল৷ তলা গুলিয়ে ফেলে ভুল ক’রে উঠে এসেছে৷ তারপর নিজেই ভুল বুঝতে পেরে ফিরে গেছে৷ নিচের গার্ডদের ফোন করে জিজ্ঞাসা করো না৷

    -- কোনও দরকার নেই৷ তুমি কি ভাবছ, গার্ডরা সকলে বিশ্বাসযোগ্য?

    -- তো? আমিও তাহলে বিশ্বাসযোগ্য নাও হতে পারি?

    -- উঃ! তুমি না টগর, পারোও বটে! তুমি যাও৷ তোমার দেরি হয়ে যাচ্ছে না? মেয়েকে স্কুলে পৌঁছে দিতে হবে তো?

    -- হ্যাঁ, ঠিক বলেছো৷ দেরি হয়ে যাচ্ছে৷ চললাম৷’

    টগরমণি ছুটলো এইসব সময়নাশা কর্মনাশা গণ্ডগোল পেছনে ফেলে৷ আর তারপর? দুঃসহ সময়ের ভার আরও ওজনদার হতে থাকে আততায়ীর টেনশনে৷ দেয়াল থেকেও চুপিসারে কেউ বেরিয়ে আসতে পারে৷ কেউ আলেয়ার জন্য কাউকে সুপারিও দিতে পারে৷ ঘরবন্দী কয়েদী সে৷ খুন করতে কী বা অসুবিধা হবে?

    কিন্তু অনেক বছর আগে এরকমটা সে ছিল না৷ ....অনেক বছর আগের কথাই আজ হঠাৎ ঘরের বাতাসে ফিসফিসিয়ে উঠছে৷ গাঁটছড়া বাঁধার পরে পরে বেড-পার্টনারের চোখে আলেয়ার একটা উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ছিল৷ সে কাগজের ট্রেনি রিপোর্টার৷ কাজ ছিল ইন্টারভিউ নেওয়া৷ আর বেড-পার্টনারের চাকরি তখনও ছিল দোদুল্যমান৷ আলেয়ার ছন্নছাড়া ভাবটা তাকে রাগিয়ে তুলত৷ কোনও ডিসিপ্লিন না থাকলে জীবনে কখনও দাঁড়ানো যায়!

    সেদিন ছিল এক উঠতি অভিনেত্রীর ইন্টারভিউ৷ ভাড়া ঘরের চৌকাঠ পেরিয়ে আলেয়া যখন বেরোচ্ছে তখনই সেই সহবাসীটি চিৎকার করে বলেছিল,

    -- স্যান্ডাক পরে যাবে না ইন্টারভিউ নিতে৷ চামড়ার জুতো বা চটি পরে যাও৷

    -- এটা ছাড়া এই মুহূর্তে অন্য কোনো জুতো বা চটি তো নেই আমার৷

    -- কেন নেই?

    -- মানে, টাকা ....

    -- চোপ ইডিয়ট! ইচ্ছে করে কষিয়ে জুতো পেটা করি৷

    সময় দ্রুত বয়ে যাচ্ছিল বলে হতভম্ব আলেয়া পথে নেমে পড়েছিল৷ চিত্র-সাংবাদিক সহকর্মীর সঙ্গে নির্দিষ্ট সময়ে পথেই দেখা হবে৷ সামনে কাজটা আছে৷ অদ্ভুত ঐ উষ্মা-বিস্ফোরণের আঘাত মন থেকে মুছতে মুছতে দ্রুত এগোতে হচ্ছিল৷ কিন্তু খুব দেরি হয়ে যাচ্ছিল৷ ট্রেনিদের জন্য অফিস গাড়ি দেয়নি৷ বাতাসে ভর করে ছুটছিল ওরা৷ মন্টি ক্যামেরার ব্যাগ নিয়ে, আর আলেয়া নোটবুক, পেন, টেপরেকর্ডার নিয়ে৷ নির্দিষ্ট সময়ের পনেরো মিনিট বাদে ওরা পৌঁছেছিল৷ হাট করে দরজা খোলা মধ্যবিত্ত পুরোনো বাড়িটায় ঢুকতে ঢুকতেই শুনতে পাওয়া যাচ্ছিল পুরুষ গলার হুঙ্কার৷ স্বরটি দাবী করছিল উঠতি অভিনেত্রীর দিক থেকে আজকের ইন্টারভিউ ক্যানসেল করা হোক৷ নতুবা মান থাকে না৷ সাক্ষাৎকার কখনও নির্দিষ্ট সময়ের পর থেকে শুরু হতে পারে না৷ পৃথিবীর কোথাও এটা হয় না৷ কোনো এক নারীকণ্ঠ খুবই বোঝানোর চেষ্টা করছিল পুরুষটিকে যে, তার খুব ইচ্ছা ইন্টারভিউটা দেওয়ার৷ এটা তার প্রথম সাক্ষাৎকার যেটা কাগজে বেরোবে৷ এটার উপর তার অনেক কিছু নির্ভর করছে৷ খুব জরুরি এটা৷ মাত্র পনেরো মিনিট দেরির জন্য ইন্টারভিউ ক্যানসেল করা তার কাছে বিলাসিতা৷

    এইরকম ঘনীভূত গোলমালের মধ্যে মন্টি আর আলেয়া হাজির হল৷ উঠতি আর্টিস্ট ক্লিষ্ট মুখ সহাস্য করে ফেলল৷ সাক্ষাৎকার তাকে দিতেই হবে৷ অপরপক্ষেরও সেটা নিতেই হবে৷ মেয়েটি বললো,

    -- আমার শ্বশুরমশাই অসুস্থ৷ চলুন আমরা রুফ গার্ডেনে গিয়ে বসি৷ প্লিজ, আপনারা দুজনে দু’টো চেয়ার নেবেন একটু?

    -- হ্যাঁ, হ্যাঁ শিওর৷

    তিনজন তিনটে সবুজ প্লাস্টিকের চেয়ার নিয়ে হুড়মুড়িয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠছিল৷ অন্ধকার সরু সিঁড়িটা ওদের পৌঁছে দিচ্ছিল খোলা ছাদে৷ যেখানে, ‘রুফ গার্ডেনে’ অতি অবহেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল গুটিকয় নয়নতারা, বেল, গাঁদা আর দোপাটির টব৷ কিন্তু সিঁড়ির মাঝামাঝিতেই ‘ধপাস... দম্!’ ...একটা আওয়াজ এবং কিছু একটা বস্তু অভিনেত্রীর গায়ে এসে পড়ল সপাটে৷

    মন্টি ততক্ষণে ছাদে৷ তার পেছনে আলেয়া। আলেয়ার ভয়ার্ত জিজ্ঞাসা

    -- কী হল?

    একই সঙ্গে সে পেছন ফিরে দেখলো, অভিনেত্রী টাল সামলাচ্ছে৷ আর তার হাতের চেয়ারের ওপর একটি ধেড়ে-ধ্বস্ত কাবলি জুতো৷ হি হি হি হি করে শুকনো হাসিতে ফেটে পড়ে মেয়েটি জানাল, তার বেটার হাফটি তার সঙ্গে মস্করা করছে৷

    -- ও ভীষণ কিউট, জানেন৷ কী যে করে না! আসুন আসুন৷ শ্বশুরমশাইকে নিয়ে শাশুড়ি মা ব্যস্ত৷ তাই দেখুন না, গাছগুলোর কী দশা হয়েছে! এখানেই আমরা বসি, হ্যাঁ? চিলেঘরের ওপাশে পাঁচ-ছ’টা ডালিয়া ফুটেছে৷ ছবি তুললে ওখানে তুলবেন, প্লিজ৷’

    কত ঘটনা....। কত ছবি.... ৷ সব সিনেমার মত ভেসে যায় কিংবা বন বন করে ঘোরে চারপাশে৷ বসে বসে নিজের আঙুলের কর গুনতে গুনতে, হাতের রেখা দেখতে দেখতে চোখ ঝাপসা হয়ে আসে৷ শেষবারের মত দুই হাতের তালুর ভাগ্যরেখা দুটি বিদ্যুতের মত চমকায় এবং অবশেষে মনে হয়, হাতের তালু দুটি গ্লাভসে ঢাকা৷ কোনো রেখার কোনো চিহ্নই নেই৷ কখনও ছুরি-কাচি ধরা ডাক্তারের মত, কখনও বা গ্লাভস পরা ঠাণ্ডা মাথার ঘাতকের মতো রেখাহীন তালু ও আঙুলগুলো তাকে তাড়া করে ফেরে৷ বড় একজিকিউটিভের স্ত্রীরা কোনও ছোট কাজে যুক্ত থাকতে পারে না৷ তাহলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায়৷ তারা অবশ্যই কোনো সৃষ্টিশীল গোছের কাজ করতে পারে৷ তাছাড়া তথাকথিত সমাজসেবা গোছের কিছু চালাতে পারে৷ এগুলোর একটা জাঁক আছে৷ আর এই দু’টোর একটাও যারা পারে না, তারা বাতিল৷ বাঁচারও যোগ্য না৷ অতএব ....৷

    ওপেন-কিচেন বোঝাই হয়ে আছে অস্ত্রশস্ত্রে৷ সেসব ছিটকে ছিটকে আসে এবং অনির্দিষ্ট কক্ষপথে সাঁ-সাঁ করে ঘোরে। ঘোরে আর ঘুরেই চলে৷ স্যাট স্যাট করে কোনও কোনওটা হাতে চলে আসে৷ এইভাবেই এক্ষুনি হাতে এসেছে একটা জবরদস্ত কিচেন নাইফ৷ যে কোনো চামড়া ঢাকা নরম মাংসের মধ্যে ঢুকে গেঁথে যাওয়ার পক্ষে যথেষ্ট৷ দুটো আততায়ী-হাত ধরে আছে সেটা৷

    এমন সময় কলিংবেল৷ মোক্ষম মাহেন্দ্রক্ষণে৷ এক বার, দু’ বার, তিন বার। অর্ধেক বেল বাজে৷ তারপর ওদিক থেকে চাবি ঘুরিয়ে দরজা খুলে ফেলা হয়৷ দড়াম ক’রে৷ .... মালিক ফিরেছে৷

    -- কী হচ্ছিল এখানে? হাতে ওটা কী? কী হলো কী, জবাব পাচ্ছিনা কেন?

    -- কিচেন গোছাচ্ছি৷

    -- চোপ৷ সাতটা’য় পার্টি আছে না? এখনও কেন ড্রেস হয়নি?

    ছুরিটা যথাস্থানে রেখে দিতে হয়৷ যে ঘাতক সারাদিন সারারাত ঘরের মধ্যে ঘুরে বেড়ায় সে এখন দেওয়ালে সেঁধিয়ে গেছে হয়ত৷ গোপন চোখে রক্তের প্যাঁচের মধ্যে পালকের ইনস্টলেশন আস্বাদিত হয়৷ গা শিরশির করে৷

    গাড়িতে উন্নত-থুতনি রোমশ ব্যক্তি একটাও বাক্যব্যয় করে না৷ মাঠ-ঘাট-অন্ধকার পেরিয়ে গাড়ি চলতে থাকে৷

    -- পার্টিটা কোথায়? এত অন্ধকার চারদিকে!

    -- স্টপ কোশ্চেনিং৷ ইডিয়ট৷

    বেপথে অপথে, হালকা থেকে গাঢ় অন্ধকারে গাড়ি ঢুকে চলে৷ কতক্ষণ আর জেগে থাকা যায়? ঢুলুনি লাগে৷ ঢুলুনি থেকে হঠাৎই হড়পা বান ডাকে ঘুমের৷ সর্বঅশান্তিহর নিদ্রা ....৷

     
     



    Tags
     


    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    You may use these HTML tags and attributes: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>

     



    তথ্য নীতি | Privacy policy

 
Website © and ® by Ebong Alap / এবং আলাপ, 2013-24 | PRIVACY POLICY
Web design & development: Pixel Poetics