নজরে অল আউট : 'টাফ মম' ও মেয়েদের মর্যাদা
0 106আজকাল বেশ কিছু বিজ্ঞাপনে মেয়েদের ক্ষমতায়নের প্রশ্ন উঠে আসছে। ‘অল আউট’ মশা তাড়ানোর ধূপের এই বিজ্ঞাপনটি এমনই একটি বিজ্ঞাপন। বিজ্ঞাপনে আমরা দেখি যৌথ পরিবারের সবাই ডিনার খেতে বসেছে। পরিবারের একটি ছোট ছেলে তার মায়ের ব্যাগ থেকে দশ টাকা চুরি করার জন্য তার মা তাকে কিছু একটা শাস্তি দিচ্ছে। খাবার দিচ্ছে না, বা এমন কিছু। ছেলে-র সঙ্গে এই রকম ব্যবহার করবার জন্য মায়ের শাশুড়ি, স্বামী তাকে বকছে। স্বামীটি তো স্ত্রীকে বেশ কুৎসিত কথাই বলছে। যেমন, 'ও তো ওর নিজের বাবার ( মানে স্বামীটির) টাকাই নিয়েছে, তোর বাবার তো নেয়নি' ইত্যাদি। তার মানে মা যে কোনও রোজগার করেন না, স্বামীর পয়সায় খান, ফলে টাকাটা এক ভাবে তাঁরও ‘চুরি’ করা টাকা, এই ইঙ্গিত স্পষ্ট। বোঝা যাচ্ছে পরিবারের ভেতরে বউ-এর সঙ্গে এই রকম ব্যবহার করা যায় এবং করা হয়ে থাকে। যৌথ পরিবারের অন্য মহিলারাও স্বামীটির সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন। এবং খিস্তিগুলো মহিলার বাপের বাড়ির ওপরে গিয়ে পড়ছে, ‘ছোটলোক পরিবারের মেয়ে’, ‘মা তোকে কিছু শেখায়নি?’ ইত্যাদি। বলা বাহুল্য, গালিগালাজগুলো সবই সেই ছেলে আর পরিবারের বাকি ছোটদের সামনেই চলছে। টেবিলে দুটি ছোট মেয়েও আছে। এমন সময় পরিবারের কর্তা ঘটনাটার নিয়ন্ত্রণ হাতে নিয়ে তাঁর পূত্রবধূর পক্ষ নেন, শিশুটির আজকের অপরাধের শাস্তি না দিলে যে তার ভবিষ্যৎ অন্ধকার হতে পারে সে কথা বলেন। বউমাকে বলেন, তুমি ঠিক করেছ। টেবিলে খেতে বসা বাচ্চা মেয়েগুলো দু’জনে দু’জনের দিকে ইঙ্গিতপূর্ণ ভাবে তাকায়।
এরপর বিজ্ঞাপনদাতারা আমাদের বলেন, যে মায়েরা শক্ত হাতে সংসার সামলান, তাঁদের পাশে দাঁড়াতে, কারণ সেই মায়েরাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আগামী দিনগুলোকে সুরক্ষিত করছেন। আজকাল বিজ্ঞাপনে কোনও ব্র্যান্ডের ফিলসফির ওপর বিজ্ঞাপন করবার চল হয়েছে, এই বিজ্ঞাপনটি সেই জাতীয়। মশার হাত থেকে সুরক্ষাকে পরিবারের গভীরতর সুরক্ষা কামনার সঙ্গে জড়িয়ে ব্র্যান্ডের মান বাড়ানোর চেষ্টা।
আপাতদৃষ্টিতে বিজ্ঞাপনটি মহিলাদের ক্ষমতায়নের কথাই বলে। গল্পে স্পষ্ট ভাবে না হলেও একটা ইঙ্গিত আছে যে সন্তানটি পুত্র বলে হয়তো মায়ের ওপর স্বামী আর বাকিদের ক্রোধটা বেশি, টেবিলে তিনটি শিশুর মধ্যে সে একাই পুং। আবার মহিলারা সবাই মিলে মায়ের পেছনে লেগেছেন এর মধ্যে পিতৃতন্ত্র কী ভাবে মেয়েদের মধ্যে দিয়ে কাজ করে সেই চিহ্নও আমরা খুঁজতে পারি। লক্ষ্যণীয় যে শেষ কথাটি একজন পুরুষ বলেন। যখন মহিলার শাশুড়ি বাচ্চাটিকে বলেন, তোর মা তো তোকে খেতে দেবে না, আমিই তোকে খাইয়ে দিচ্ছি, তখন কর্তা এমন ভাবে তাঁর স্ত্রীকে বলেন, ‘তোর নিজের খাবারের তুই খেয়াল রাখ,’ তাতে মনে হয় পরিবারে কোনও মহিলাই সম্মানের ভাত খান না। তাই পুত্রবধূর এই মর্যাদাও আসলে পুং সন্তানের সুশিক্ষার জন্যেই জরুরি মনে করা হচ্ছে।
আমরা সেই প্রশ্নেও আবার ফিরে আসি, বিজ্ঞাপনটিতে মেয়েদের একটা মর্যাদার ইঙ্গিত থাকলেও, আবার কি একটি মেয়ের জীবন ডুবে যাচ্ছে মায়ের ভূমিকায়?
Tagsadolescence age of consent age of marriage caa child marriage corona and nursing covid19 Covid impacts on education domestic violence early marriage education during lockdown foremothers gender discrimination gender identity gender in school honour killing human rights intercommunity marriage interfaith marriage lockdown lockdown and economy lockdown and school education lockdown in india lockdown in school lockdown in schools love jihad marriage and legitimacy memoir of a nurse misogyny nrc nurse in bengal nursing nursing and gender discrimination nursing in bengal nursing in india online class online classes during lockdown online education right to choose partner school education during lockdown social taboo toxic masculinity transgender Women womens rights
Leave a Reply