• নজরে বিজ্ঞাপন : রান্নাঘরে কে – ‘হোমমেকার’ না কফিমেকার?


    1    143

    November 4, 2018

     

    সংসার সুখের হয় ‘gadget’ এর গুণে - আজকের দুনিয়ায় এ আর অজানা কিছু নয়। তাই আধুনিক সময়ে যাবতীয় সাংসারিক গ্যাজেট তথা প্রোডাক্ট এর সঙ্গে অলিখিত নিয়মে জুড়ে গেছেন সংসারসুখের চাবিকাঠি – রমণীরা। প্রথম যুগের ওয়াশিং মেশিন থেকে ইস্তিরির বিজ্ঞাপনের কথাই ভাবুন, আধুনিক সংসারের মুশকিল-আসান হয়ে যা যা এসেছে – সেই সব কিছুর আদর্শ ক্রেতা মহিলারা। কারণ গেরস্থালির সুবিধার্থে যাকিছু ‘প্রোডাক্ট’ তা তো মহিলাদের প্রতিই ক্যাপিটালিস্ট অনুকম্পা!

    কিন্তু কয়েক দশকে এই আদর্শ ক্রেতাটির চরিত্র বদলেছে - ৬০-এর দশকের ম্যাগাজিনের সাদাকালো বিজ্ঞাপনে বুফোঁ খোঁপার মহিলাটি এখন জিন্স-কুর্তা-ল্যাপটপ নিয়ে বেরিয়ে এসেছে বাড়ি থেকে। তবে কিনা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের লক্ষ্মণরেখা তো পেরোনো মুশকিল। তাই ডাটার গুঁড়ো মশলা থেকে বাটার চটি, হারপিক থেকে হীরের গয়না - আধুনিকা ক্রেতাও এই গন্ডীতেই আটকা পরে থাকে। যেমন এমটিআর এই সাউথ ইন্ডিয়ান ব্রেকফাস্ট মিক্স-এর বিজ্ঞাপনটি –

    ঘরের ঘরণী আধুনিকা। বাড়িতেও সচ্ছলতার বাড়বাড়ন্ত। কিন্তু নিয়মকানুন একই। ঘুমন্ত স্বামীকে হাসিমুখে ‘ব্রেকফাস্ট মে কেয়া লোগে’ জিজ্ঞেস করা দিয়ে দিনের শুরু। তারপর একে একে সন্তান-সন্ততি ও আত্মীয়বর্গের আদুরে আদেশ – কেউ ধোসা, কেউ ইডলি, বড়া বা উপমা। মোটামুটি দক্ষিণী ব্রেকফাস্টে যা যা থাকতে পারে, প্রায় কোনটাই বাদ নেই। আর তারপর হুকুম তামিল করার পালা। এখানেই বিজ্ঞাপনে নাটকীয় মোড় – দুই হাতের মানবী এমটিআর এর দয়ায় হয়ে ওঠেন দশভুজা। নিমেষে একের পর এক ফরমায়েশ তৈরি করে টেবিলে সাজিয়ে ফেলেন। খেতে বসে স্বামীটির বোধোদয় এবং তারপরে আলগা প্রশংসার চাউনি – যথেষ্ট। বউমার মুখে তৃপ্তির হাসি। তবে তৃপ্তিটা রান্নার শৈলীর নাকি কর্তব্য পালনের, তা বলা মুশকিল!

    এই পড়ে পাওয়া চৌদ্দ আনা প্রশংসার পরেই আবার কাজের পালা শুরু – হাসিমুখে টেবিল গোছানোরত এরকম বউমার ছবি ফিরে ফিরে আসে হেল্দি টেস্টি তেলের বিজ্ঞাপনে। পরিবারের সকলের স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন আধুনিকা সাধারণ রান্নার তেলের বদলে লুচি ভাজেন ওমেগা-থ্রি ওয়ালা তেলে। তেল বদল হয়, কিন্তু সংসারের ঘানি টানার কর্তব্য বদলায় না। রেডিমেড সানরাইজ সরষে গুঁড়ো, আধুনিক ব্লেন্ডার বা চুটকিতে মুসকিল আসান মাইক্রোওয়েভ – গ্যাজেট বা প্রোডাক্ট যাইই হোক, ব্যবহার করেন মা কিম্বা বউ কিম্বা মেয়ে অথবা খুউউউব বেশি হলে বাড়ির কাজের মেয়েটি। কিন্তু রান্নাঘরের চৌকাঠ ডিঙিয়ে পুরুষদের ঢুকতে দেখা যায় না। তবেই না দু’হাতের মানুষকে দশহাতের দেবী বনে যেতে হয় - বাথরুম পরিষ্কার থেকে ইটালিয়ান কুইসিন, ছেলের জন্মদিন থেকে অফিসের ডেডলাইন - সব সামলে দেবেন বলেই তো তিনি অনন্যা!

    সংসার আর রান্নাঘর কেন্দ্রিক মেয়েদের এই নিয়মমাফিক ছবিটা কিছুটা হলেও বদলে দিয়েছে হাভেলস কিচেন এপ্লায়েন্স এর বিজ্ঞাপনটি।

    প্রবাসী ছেলের জন্য মেয়ে দেখতে এসেছেন ছেলের মা। বিদেশ বিভুঁই-এ বউমাবিহীন সংসারে ছেলের কিরকম দুর্দশা তাই বলছেন - "এক কাপ গরম কফি কে লিয়ে ভি বাহার যানা পরতা হ্যায়..."। তাই ‘সেটল হওয়া’ তথা সংসারের-কাজ-করার-লোক নিয়ে যাওয়ার উপদেশ মায়ের। যে মেয়েকে দেখতে এসেছেন, সে জিনস-টপ-হিপ-হপ নয়, শালোয়ার-কামিজ-খোলাচুল-বিন্দি নিয়ে একেবারে ‘সংস্কারী’। ছেলের মায়ের কথা বেশ মন দিয়েই শোনে সে, তারপর মুচকি হেসে উঠে যায়। মেয়েটি টেবিলে এনে রাখে কফি মেকার- "টোয়েণ্টি ফোর আওয়ারস কফি মেকার। ইসিকে সাথ সেটল হো যাইয়ে”। তাছাড়া ভিসার ঝামেলাও নেই – মেয়েটির বুদ্ধিদীপ্ত সংযোজন। থতমত খেয়ে যান বলিয়ে-কইয়ে মা, ছেলে মুখ নীচু করে। "আন্টি, আমি কোন কিচেন এপ্লায়েন্স নই"- হতবাক হবু-শাশুড়ীর সামনে কফিমেকার রেখে বিজ্ঞাপনের ফ্রেম থেকে থেকে বেরিয়ে যায় মেয়েটি; কে জানে, হয়তো বেরিয়ে পরে ‘হোমমেকার’ এর চাপিয়ে দেওয়া কর্তব্যবোধ থেকেও!

     
     



    Tags
     



    1 Comment

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    You may use these HTML tags and attributes: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>

     



    তথ্য নীতি | Privacy policy

 
Website © and ® by Ebong Alap / এবং আলাপ, 2013-24 | PRIVACY POLICY
Web design & development: Pixel Poetics