ভারত জ্বলছে : রোহিথ ভেমুলাকে এক রূপান্তরকামী বন্ধুর চিঠি
0 226রোহিথ, তুমি যখন বেঁচে ছিলে, আমাদের চিঠিতে যোগাযোগ ছিল। তোমার মৃত্যুর আগে এমন একটি চিঠি লিখে গেলে যার উত্তর দিতে আমার সারাজীবন লেগে যাবে।
আমি তোমায় চিঠি লিখছি কারণ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ছাত্রদেরও হত্যাকে ঘিরে ভারত আগে কখনও উত্তপ্ত হয়ে ওঠেনি। হায়দ্রাবাদ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে এহেন অনেক হত্যাই প্রতিবছর ঘটেছে (শুধুমাত্র যে বছর আম্বেদকর ছাত্র সংগঠন ছাত্র- সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল সেই বছর ছাড়া) এবং সেই প্রতিটি হত্যার বিচার চেয়ে তুমি লড়েছিলে। তোমার চিঠি লক্ষাধিক মানুষকে স্পর্শ করেছে কারণ সেই লেখায় তোমার অগনিত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়েছে-- সুন্দর, সৎ, বিস্ময়বোধসম্পন্ন এবং মহানুভবতার বিনয়ে উজ্জ্বল। পৃথিবীকে তুমি এভাবেই দেখতে চেয়েছিলে। আমি আজ লিখতে বসেছি কারণ তোমার চিঠি যারা করেছেন তাঁদের বেশিরভাগই তোমাকে না চিনলেও আঁচ করতে পারছেন আমরা কি হারালাম । সেই কারণেই তাঁরা আজ বিষাদগ্রস্ত।
আমি আজ লিখতে বসেছি কারণ দক্ষিণপন্থীরা জানে যে তোমার আকর্ষণকে খর্ব করতে পারলেই তাদের জয় নিশ্চিত। তাই আমি আজ এমন কিছু কথা লিখতে বসেছি যা অনেক জায়গায় সঠিকভাবে লেখা হয়নি। অসংখ্য সাক্ষী, যেমন ক্যাম্পাসের রক্ষীরা, পুলিশ এবং ডাক্তারেরা জানেন যে তোমার বিরুদ্ধে এবিভিপি-র অভিযোগের কেসটি ছিল সর্বৈব সাজানো মিথ্যা। আমি জানাতে চাই যে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা ছাত্রদের বিচার চাওয়ার আন্দোলনে সামিল ছিলাম কিন্তু রাজনৈতিক চাপের ফলে অন্য অনেক সত্যির সঙ্গে আমার মতামতও চাপা পড়ে যায়।
তোমার এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকা কতটা যন্ত্রণাদায়ক ছিল, আমি তার কণামাত্র জানি। তবুও এই পৃথিবীর প্রতি তোমার ভালোবাসা বিন্দুমাত্র কমেনি। তুমি শুধুমাত্র এই পৃথিবীর মানুষগুলোর প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছিলে কারণ ওরা, আমরা, এমন একটা জগত তৈরি করতে পারিনি যেখানে জাতভেদের সেই প্যাঁচানো কাঁটাটা বিঁধে নেই যার ভয়ংকর গভীর যন্ত্রণা তুমি ভোগ করতে বাধ্য হয়েছিলে, যার বিরুদ্ধে তুমি ক্লান্তিহীন, অস্থির লড়াই লড়েছিলে। সব ধরনের অবিচারের কাঁটা তোমাকে বিঁধতো আর সেই কথাটা আমি মানুষকে জানাতে চাই। আমি এই চিঠিটা তোমার মা আর ভাইকে পাঠাতে চাই, যাতে তাঁরাও জানতে পারেন। আমি কোনদিন ভুলবো না পয়লা মে শ্রমিকদের অধিকারের মিছিলের শেষে রান্নার কাঠ কাটতে কাটতে তুমি সবার থেকে বেশি ঘামছিলে, তোমার মধ্যে সেই অমূল্য এবং দুর্লভ তেজ ছিল। যখন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম রূপান্তরকামী মানুষ হিসেবে আমি আমার হিজড়া বোনেদের নিয়ে এবং তেলেঙ্গানা হিজড়া রূপান্তরকামী সমিতির সঙ্গে প্রথমবার রূপান্তরকামীদের আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার দাবিতে স্বাভিমান-সভার আয়োজন করেছিলাম, সেদিন তুমি আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলে। আম্বেদকর ছাত্র সংগঠনের দ্বারা প্রচারিত রূপান্তরকামীদের মর্যাদার দাবিতে যে প্রথম পোস্টারটি ক্যাম্পাসে টাঙানো হয়েছিল তার জন্য সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম তুমি করেছিলে। সেই পোস্টারটি বিশদ এবং অত্যন্ত সুন্দরভাবে প্রয়োজনীয় তথ্যে ভরপুর ছিল। রাজনৈতিক মিত্রতা থাকলেও এইভাবে সহযোদ্ধা হয়ে ওঠা যথেষ্ট দুর্লভ এবং আমি অনুভব করতে পেরেছিলাম যে কাজটি করার জন্য তুমি পড়াশোনা করেছিলে।(সংক্ষেপিত)
প্রথম প্রকাশ : হিন্দুস্থান টাইম্স, ২১ জানুয়ারি ২০১৬
অনুবাদ : অরিজিতা মুখোপাধ্যায়
অনূদিত লেখাটি এবং আলাপ প্রকাশিত বিপন্ন সময় : বর্ণবাদ, জাতীয়তাবাদ, বাক্স্বাধীনতা ও আজকের ভারত বই থেকে গৃহীত।
Tagsadolescence age of consent age of marriage caa child marriage corona and nursing covid19 Covid impacts on education domestic violence early marriage education during lockdown foremothers gender discrimination gender identity gender in school honour killing human rights intercommunity marriage interfaith marriage lockdown lockdown and economy lockdown and school education lockdown in india lockdown in school lockdown in schools love jihad marriage and legitimacy memoir of a nurse misogyny nrc nurse in bengal nursing nursing and gender discrimination nursing in bengal nursing in india online class online classes during lockdown online education right to choose partner school education during lockdown social taboo toxic masculinity transgender Women womens rights
Leave a Reply