সেকেন্ড ইনিংস
3 183অবন্তী, আমি আর মালবিকা৷ এক স্কুল৷ এক বয়স৷ ভিন্ন-ভিন্ন যাপন৷ মনে পড়ে গেল একটা ঘটনা৷ অবন্তীর বাড়ি গেছিলাম একটু বোধহয় বেশিই সকাল-সকাল৷ ওর সঙ্গে জরুরি কাজ সেরে অফিসে বেরিয়ে যাব, তাই৷ সাড়ে আটটা প্রায়। ডোরবেলের ঘন্টাধ্বনি বাজতে না বাজতেই সুমন্ত মানে ওর বর দরজা খুলল৷ চোখেমুখে একটু কুণ্ঠা আর সন্ত্রস্ত ছাপ৷
‘—কী হল তোমাদের? ভালো আছো তো?’
এর উত্তরে আমাকে বসার ঘরে বসিয়ে, সুমন্ত পাল্টা প্রশ্ন করে
‘চা খাবে তো? আমারও এক কাপ জোটে তাহলে৷ কখন থেকে বানাই বানাই ভাবছি আর ল্যাক খেয়ে আছি৷’
—‘কেন, অবন্তী ওঠেনি? দুজনে মিলে চা খেতে...’
—‘না, অ্যাকচুয়ালি, বোঝ তো, এখন মেনোপজের সময় বার বার মুড সুইং করে ওর৷ কালও অনেক রাত অবধি জেগে ছিল৷
আমাকেই একটু মানিয়ে গুছিয়ে নিয়ে চলতে হয় আর কী!’
বিদ্যুচ্চমকের মতো আমার মনের মধ্যে খেলে গেল, এরও বেশ কয়েকদিন আগে আমরা তিনজন কফি নিয়ে আমার বাড়ির বারান্দায় বসেছি৷ রাস্তা দেখা যায়, একটু ঝুঁকলেই৷ এক কিশোরী যেতে যেতে হঠাৎ থেমে, সঙ্গের মহিলা কে, ওর মা-ই হবেন সম্ভবত, ইশারায় স্কার্টটা দেখতে বলল, মহিলাও মাথা নেড়ে ‘না’ জানালেন৷ মনে আছে, আমরা একসঙ্গে কেমন একটা হাঁফছাড়া নিশ্বাস ফেলেছিলাম৷ একই সঙ্গে, আমাদের চোখে-চোখে খেলে গেছিল একটাই কথা, ‘বাঁচা গেছে৷’ অবন্তী বলছিল, সেই দেখা ও ভাবার সূত্র ধরেই বলছিল, ‘সুমন্তটা একটু ওভার-ডু করে, বুঝলি?’ জিজ্ঞাসু মুখে আমাদের৷ ‘দেখ না, সমানে ইন্টারনেট ঘাঁটাঘাঁটি করছে আর পড়ে শোনাচ্ছে, মেনোপজের সময় কী কী সিম্পটম, কী কী মেডিসিন নেওয়া দরকার...৷’ কোথাও যেন এককুচি অস্বস্তি লেগেছিল অবন্তীর গলায়৷ জানি না, এটা কোনও সংস্কারবশত কি না৷ হাওয়া ঘোরাতে আমি বললাম, ‘মালবিকা গান কর না’, মালবিকা ধরল, ... যেদিন সকল মুকুল গেল ঝরে... অনেকক্ষণ ধরে গাইল এই গান৷ প্রথম লাইনটা যে কতবার ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে, তারপর চুপ করে থাকল৷ আমরাও চুপ৷ মালবিকার গলার স্বরে এই হাহাকার আগে শুনিনি তো! মালবিকার চোখে জল৷ ‘কী হল রে?’ জিগ্যেস করতেই ও ফুঁপিয়ে উঠল, বাড়িতে কী অদ্ভূত ঠাণ্ডা ব্যবহার পাচ্ছি রে আমি!’ ‘কেন?’ ‘মনতোষ আমার মেনোপজ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বেডরুম আলাদা করে নিয়েছে৷ ফুরিয়ে যাওয়া ডায়েরির মতো, আমার পাতাগুলোতে যেন কোনও এন্ট্রি নেই আর এখন৷ টগবগে অল্পবয়সীদের শরীর দেখলে, এমন কী আমার স্টুডেন্টগুলোকেও যখন দেখি পিরিয়ডের ব্যথায় কাতর হচ্ছে, খুব হিংসে হয়, জানিস!
ওরা চলে গেছে অনেকক্ষণ৷ আলো জ্বালাইনি ইচ্ছে করেই৷ হেমন্তের সন্ধেবেলা আমাদের আবাসনের পাশের ঝাঁকড়া ছাতিমগাছ থেকে গন্ধ ভেসে আসছে৷ খুব সেক্সি! শরীর কেমন করে ওঠে৷ কই, আমার ভিতরে তো মেনোপজ কোনও শুকিয়ে যাওয়া নদী রেখে যায়নি! মনে আছে, শুরুর দিকে শারীরিক সমস্যা ছিল৷ হঠাৎ পিরিয়ড বন্ধ রইল কিছুমাস৷ তারপর আচমকা রক্তমুখী হল শরীর৷ এই অনিয়ম যথেষ্ট বিব্রত করত৷ তাছাড়া, কান-মাথা হঠাৎ ঝাঁ-ঝাঁ করে-ওঠা, গরমে জ্বলেপুড়ে যাওয়া এসব তো আছেই৷ শরীরই যা একটু-আধটু অসুবিধে ঘটাত৷ মন কিন্তু, দিব্যি ফুল ফোটাতে দ্বিধা করত না৷ মেনোপজ হলে যৌনতা মরে যায়, এটা সম্ভবত একটা মিথ৷ আমিও তো কেমন একটা আতঙ্কে সিঁটিয়ে গেছি, প্রথম-প্রথম। মনখারাপে, কবিতাও লিখে ফেলেছিলাম একটা—
‘এমন শুকনো, বালি-কাঁকরগুলোকে চিবিয়ে জল করে দিতে
ইচ্ছে হয়৷
একটা সময় পুরো ভিজে-ভিজে থাকতাম৷
নদী আছে, কাছেই শব্দ পাচ্ছি, কিন্তু
ঢেউ জাগলে, আমার কী!’
আস্তে আস্তে ধাতস্থ হলাম৷ এই যে আমরা বান্ধবীরা আলোচনা করছি৷ এই যে কারো স্বামী, স্ত্রীর মেনোপজ নিয়ে চিন্তিত, একটু দূর থেকে প্রত্যক্ষ করতে গিয়ে, আরেকটা অন্যস্তরের উপলব্ধি হল আমার৷
আমি তো জানতামই না মায়ের পিরিয়ড হয় কখন, কিংবা থেমেই বা গেল কবে থেকে! কাজেকর্মে, চালচলনে কোনও তারতম্য লক্ষ করিনি৷ প্রায়ই বাড়িতে আসা মাসিপিসিদেরও এসব নিয়ে গল্পগুজব করতে শুনিনি৷ এটা কি ওঁদের অর্থাৎ বাড়ির মেয়েদের প্রতি অমনোযোগের কারণেই গোচরে আসত না, নাকি, শরীরের আর পাঁচটা ক্রিয়াকলাপের মতো এই অবস্থাগুলিকেও সহজ, নির্বিকার মনে মেনে নিয়েছিলেন ওঁরা৷
মেনোপজের সহশব্দ, অকপট, বলি, আমার কাছে একটিই, যৌনমুক্তি৷ এই শব্দটির অনেক জটিল ও গহন বিস্তার মাথায় রেখেই বলছি আমি, আমার সর্বাগ্রে এইটিই মনে হয়েছে, যৌনমিলনে আর কোনও শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকবে না, সতর্কতা নিতে হবে না এখন থেকে! তবু, তবুও আমার কন্যা স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে গিয়ে দোকানে আমাকে যখন জিগ্যেস করেছে, ‘মা, তুমি কোন ব্র্যান্ড ইউজ কর?’ ‘আমার তো বন্ধ হয়ে গেছে’, বলতে গিয়ে গলা কেঁপে ওঠেনি একটুও, মনে হয়নি নারীত্বে তিলমাত্র ছেদ পড়ল, লিখি যদি, সত্যের অপলাপ হবে বই কি!
মেনোপজ কি মনেরও হয়? জানি না! তবে আজও মাঝরাতে নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়ের চন্দ্রকোষ যদি বেজে ওঠে কোথাও, কখনও, আবার আমি গর্ভবতী হয়ে পড়ি৷
Tagsadolescence age of consent age of marriage caa child marriage corona and nursing covid19 Covid impacts on education domestic violence early marriage education during lockdown foremothers gender discrimination gender identity gender in school honour killing human rights intercommunity marriage interfaith marriage lockdown lockdown and economy lockdown and school education lockdown in india lockdown in school lockdown in schools love jihad marriage and legitimacy memoir of a nurse misogyny nrc nurse in bengal nursing nursing and gender discrimination nursing in bengal nursing in india online class online classes during lockdown online education right to choose partner school education during lockdown social taboo toxic masculinity transgender Women womens rights
Comments (3)
-
-
সেরিব্রাল মেনোপজ – এই রকমটাই বলে ছিলেন দিব্যেদু পালিত কোথায় যেন । তো, মনের মেনোপজ হয় বৈকি ।
সেতার শুনে গর্ভবতী – আইডিয়াটা বেশ । শরীরের সঙ্গে যৌনতার যোগ আছে ঠিকই । সেটাই শেষ কথা নয় । ও বোধহয় লুকিয়ে থাকে মস্তিষ্কের কোন এক আঁধার কুঠুরিতে । শরীর নয়, মনই শেষ কথা বলে ।
এই আর কি ? -
Bah! Chaitalidi, khub bhalo laglo. Sesh-ta ekta alada murchhona ene dilo.
Leave a Reply
-
it is not just a female problem. men too suffer from low testosterone (male menopause) as they grow old and have erection problem, low sexual desires etc. Perhaps this is what made the old ideas of sanhuam in banaprastha and sanyas possible. men have more difficulty–they can’t talk among themselves about this like we do, so they suffer in silence.