হাসিরাণিদের কথা
3 417“ভারতীয় মহিলা ও মেনোপজ” গোছের কিছু সার্চ করে গুগল-এর সামনে হত্যে দিয়ে পড়ে আছি। অতঃপর যা দেখিলাম জন্ম-জন্মান্তরে ভুলিব না। এই ‘ভারতীয়’ শব্দটাতেই যত গোলমাল। শুধু ‘মেনোপজ’ বা ‘মেনোপজ নিয়ে আলোচনা’ ইত্যাদি লিখলে গুগল কখনো দেখায় নানান মেডিকাল জার্নাল, নিউজ ক্লিপিং বা একঝাঁক ব্লগ আর অনলাইন ফোরাম। কিন্তু এগুলি সবই ‘ইঞ্জিরি’তে এবং এখানে যুক্ত সদস্য/সদস্যা বা লেখিকারা প্রায় সকলেই অভারতীয়। “ভারতে মেনোপজ” খোঁজ করলে প্রাথমিক ভাবে বেরোয় কেবল প্রিম্যাচিওর মেনোপজের কথাই। অন্তত ভারতবর্ষে ইন্টারনেট আর সোশ্যাল মিডিয়ায় মোটামুটি উপেক্ষিত বিষয়টি; বিশেষ করে বাংলা ভাষায় এর চর্চা একান্ত বিরল। আর সেই নিস্তব্ধতা ভাঙতেই ‘এখন আলাপ’ এর মেনোপজ সিরিজ! তবে এখন পর্যন্ত মেনোপজ সিরিজে যারা লিখছেন, মতামত-অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিচ্ছেন, তারা সকলেই প্রায় সমাজের একটা নির্দিষ্ট অর্থনৈতিক বলয়ের বাসিন্দা। বলয়ের ভরকেন্দ্রটা থেকে খানিক সরে এলে সময়, শরীর, বয়স ইত্যাদির মানে গুলো সামান্য বদলে যায়। বদলে যায় অভিজ্ঞতা আর মতামতও। তাই অভিজ্ঞতার সেই পরিসরটা আরেকটু বাড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে এই লেখা।
যাদের সাক্ষাৎকার নিয়ে এবারের লেখা, তাদের কাছে আক্ষরিক অর্থেই সময়ের দাম আছে। বেশ কিছু বাড়িতে ঘন্টা হিসাবে মাইনে পান তারা। যেমন ধীরু হাজরা। বয়স পঞ্চাশের কোঠায়, কিন্তু গুনলে চুয়াল্লিশের বেশি হিসাব মেলেনা। মিলবেই বা কি করে! আপনার আমার মতো এদের তো প্রতি জন্মদিনে বয়স বাড়ে না - জন্মদিনটা অবধি নেই! জন্ম-মাস আছে একটা, কার্ত্তিক বা অঘ্রান; জন্ম-বার ও আছে কারণ ওইদিন নখ কাটা, মাথায় সাবান দেওয়া ইত্যাদি শাস্ত্রে নাস্তি। তাই নিজের জন্মদিন যেহেতু নেই, বয়সের হিসাব এতদিন হত ছেলেমেয়ের বয়স দিয়ে,
-“অ বুনু, এই আসছে বারে তোমার কত হবে, চব্বিশ? তাইলে আমার ছোটকার হবে পচিশ, আর আমার হবে চার বেশি চল্লিশ - কত বল তো?”
এই চুয়াল্লিশ বছরের একটা আবছা হিসেব আমি বিগত দশ বছর ধরে শুনে আসছি। আগেই বলেছি, এখানে সময়ের দাম আলাদা! সে যাই হোক, ধীরু হাজরাকে আমি চিনি আজন্মকাল। তার হাতের রান্না খেয়ে আর ট্যারাবেঁকা ঝুঁটি বেঁধে আমি বড় হয়েছি। তিনি আর যার যা কিছু হোন, আমার কাছে “ফুয়া”- ছোটবেলার আধখানা উচ্চারণের ডাক। মেনোপজ নিয়ে ইন্টারভিউ নেব শুনে একগাল হাসি নিয়ে বসল;
-“আজ তিন বছর হল বন্ধ হয়ে গেছে। পেটে ব্যাতা হয়, কিন্তু শরীর খারাপ আর হয়নি। তিন বছর হল শরীর খারাপ বন্দ- তুমি কি ইংরাজি নাম বল ওইটা আমার মুকে আসেনা বুনু, - আমরা বলি শরীর খারাপ। তিন বছর হল বন্ধ, মানে কত বয়েস হবে? পঁয়তাল্লিশ পেরিয়ে গেছে, না কি?”
হাতের আঙুলে হিসেব করতে করতে ফুয়া জিগ্যেস করে। ধীরু হাজরা-র কাছে মেনোপজ এখন বয়সের মাপকাঠি।
যদিও ধীরু হাজরা নামে কেউ তাকে চিনবেনা ভুবনডাঙায়। ও হল সরকারি সইসাবুদের নাম। সবাই ডাকে ফুচি বলে। প্রতিদিনের মত কাজে বেরোনোর আগে বাড়ির টুকিটাকি সারতে ব্যস্ত তিনি। পিছনে দুর্গা মন্দির আর সামনে পীরের থান রেখে সরু এঁদো গলির মধ্যে একটেরে বাড়ি। দুটি ঘর, স্নানের জায়গাটুকু পলিথিনাবৃত। টিন ও খড়ের প্রলেপ ভেদ করে বরষার জল নিকানো মাটি কাদা করছে। সিঁধ কেটেছে ইঁদুর - সেটা ইঁট দিয়ে ঠেকানো। সাপ, ব্যাঙ, ছুঁচো যখন তখন ঢুকে পড়ে। একটি ঘর তাই বস্তুত অকেজো। অন্য ঘরেই মাথা গুঁজে একটি ছোট সংসার- পাশাপাশি মানুষ, কাচের বয়মের নীল মাছ ও দেওয়ালের দেব দেবীরা। বাইরে মাটির দেওয়াল থেকে টবে ঝোলানো একরাশ ক্যাক্টাস আর মানিপ্ল্যান্ট। ঘরের ভিতর সোঁদা অন্ধকার। কাজে বেরোবার আগে ক্ষিপ্রহাতে ঘর গুছিয়ে ঠাকুর-দেবতাদের ধূপ-নকুলদানা দিতে দিতে কথা। তার মাঝেই কেশবিন্যাস আর সাজ-সজ্জাও চলল।
“তা, পিরিয়ডস হলে যেমন চলতি কথায় নানারকম নামে ডাকা হয়, বন্ধ হওয়াকে কি বলে? কেউ কেউ যেমন বলে ‘উঠে যাওয়া’...”- রেকর্ডার অন করে বাবু হয়ে খাটে বসে আছি। আর ফুয়া সংসারের হাজারটা হাতের কাজ করতে করতে উত্তর দিচ্ছে।
-“আমরা বলি- শরীর খারাপ বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যস! বন্ধ হলে এমনি কিছু নয়, এক এক সময় পেটে খুব ব্যথা হয়। ডাক্তার দেখিয়েছি।”
পিরিয়ডস হলে যেমনি ছোঁয়া-টোয়ার ব্যাপার থাকে, সে তো জানি। অনেক মানামানি, নিয়ম, তা বন্ধ হলে কি সেরকম কিছু আছে? ফুয়া একগাল হেসে বলল যে ওসব কিছু নেই। বরং পিরিয়ডসের নিষেধাজ্ঞায় যেসব পুজো ঠিক সময়ে করে ওঠা যায়নি, এখন তা নির্ঝঞ্ঝাট ভাবে করে ফেলা যায়। যাইহোক আমাদের গল্প গড়ালো আরও,
-“আমার তো নিজে নিজেই বন্ধ হয়েছে, আবার আমার দিদি-র অপারেশন করে বন্ধ করল। আমার বউদির বন্ধ হওয়ার পরেও হঠাৎ দু-তিন দিন খুব হল, বুঝলে? আমার দিদির মেয়েটার শরীর খারাপ হল- কি ভয় পেয়েছে! আমায় বলছে মাসি, আমার কী হয়ে গেল! আমি বললাম চিন্তার কিচ্ছু নেই, প্রথম বার, তাই এরকম লাগছে। তোমারও তো প্রথমবার আমিই ছিলাম, মনে আছে বুনু? মা ছিল না, আমি সব দেখিয়ে দিলাম, পরিষ্কার করলাম, প্যাড লাগিয়ে দিলাম, বললাম ভয়ের কিছু নেই...”
সাক্ষাৎকারঃ ধীরু হাজরা
বিলক্ষণ মনে আছে। একলা বাড়িতে চাপ চাপ রক্তের মধ্যে হাঁ করে দাঁড়িয়েছিলাম- কে ছিল সেদিন ফুয়া ছাড়া? আমার মা আমাকে বলেছিল যে সামনের এক বছরের মধ্যে আমার পিরিয়ডস হতে পারে, আমি যেন ভয় না পাই। ফুয়ার মা ফুয়াকে বলেছিল যে এই মাসে মাসে রক্তপাত বন্ধও হয়ে যাবে, ফুয়া যেন ভয় না পায়।
-“আমার মা-র বন্ধ হল, আমি দেখেছি- মা বলেছিল যে চল্লিশ বছর হয়ে গেলে মেয়েদের বন্ধ হয়ে যাবে। আর কোনও সমস্যা থাকবে না।”
সমস্যা থাকবেনা কথাটা বলতে বলতেই ফিক করে হেসে ফেলল ফুয়া- “এর আগে তো সাদা শাড়ি পরতাম না। আমি তো সাদা খুব ভালোবাসি, তুমি জান, কিন্তু সাদা শাড়ি সত্যি করেই পরতাম না, বুনু। ভয়ে। ভয়ে পরতাম না। এখন পরি।” বলেই বুলু, মোহিনী, মন্দিরা, পাড়ায় কার কার পিরিএডস হয়, কার মেনোপজ শুরু হল তার এক লম্বা ফর্দ দিতে লাগল। ও ফুয়া, তুমি এত জানলে কি করে গো?
-“অমা! জানবে না? রোজ সকালে কলতলায় আর বিকেলে রাস্তার উপরের ভাঙা ভ্যানগাড়িতে আড্ডা বসে তো! গল্প হয়। আমাদের কথা হয়। আমার ভ্যান দাঁড় করানো থাকে না? ওখানে সন্ধ্যাবেলায় আমরা সবাই গল্প করি। ছোট মেয়েরাও আসে, বড়রাও আসে। বুলু, মোহিনী, মুন্দিরা, মুন্দিরার মা- সব কলে জল নিতে আসে। মুন্দিরার মায়ের এখন বন্ধ হবে। একটু একটু করে হচ্ছে। কোনো সময় হয়, আবার কোনো সময় হয়ই না। আমাদের মেয়েদের মধ্যে এসব চলে। সব কথা খোলাখুলি। কার কি, বাড়িতে কি কেমন চলছে- সব- বাড়ির কি অবস্থা দেখেছ বুনু! বরষায় খুব কষ্ট।”
বলেই আকাশের অবস্থা এক ঝলক দেখে নিয়ে আবার শুরু করে ফুয়া-
“যাদের এখনো হয় ওদের পেটে ব্যথা হয়। আমার আবার খুব গা বমি-বমি করে। খেতে ঘেন্না লাগে। মাথাটা ঘুরে। তখন মন করেনা যে কিছু খেতে ইচ্ছে হচ্ছে। দু-একদিন থাকে, আবার চলে যায়।”শুধু কি এই? এই সান্ধ্য প্রমীলা বৈঠকের একটি বিষয় হল প্রেম-অপ্রেম-যৌনতা, যাকে ফুয়া আমায় সহজ করে বলেছে “মেলামেশার ইচ্ছে”। সেসব নিয়ে কত কথা, ঠাট্টা, আবার ছোটদের জন্য নির্দেশবাণীও বটে। পিরিয়ডস বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে অনেকে বলে তাদের আর শারীরিক সম্পর্ক করতে ভালো লাগেনা, আবার অনেকের বরেরাই তাদের আর চায়না, ইচ্ছা করেনা।
-“আমার তিনটে বন্ধু, ওদেরও বন্ধ হয়ে গেছে, ওদের বর মরে গেছে। ওদের ঐসব ভালোই লাগেনা। বলে, আরামে আছি... এবার আরামেই থাকব। অন্য কোনো ছেলের ভালো লাগুক, কাছে আসুক, আমরা চাইনা। মানে হল, শরীরে কোনো এনার্জি থাকে না, একদম না।”
কিন্তু যাদের বর আছে? তাদের এনার্জি বা ইচ্ছে না থাকলেও বরেরা কি জোর করে? না মেনে নেয়? ফুয়া বলে, “ছেলেদের মন ওঠেনা। কিন্তু আমরা বলে দিই যে ওসব বাইরে বাইরে- আমাদের আর এনার্জিও নেই, ইচ্ছেও নেই।”
এইখানে একটা ছোট্ট ‘ইন্টারভেনশন’ হতে পারত, যদি আমাদের আড্ডায় থাকত হাসি মাসি। হাসিরাণি দাস, বয়স চল্লিশ, মেনোপজ হতে ঢের দেরি, আর প্রাত্যহিক জীবনের প্রতি পদে তার মূল্যবান মতামত ছাড়া আমি অচল। গলা বসে গেলে তুলসি-গোলমরিচের ঝাল হোক, বা পিরিয়ডসে বারবার গরম জল- রান্না ও জীবন দুই নিয়েই তার কাছে দশ বছরে অনেক শিখেছি, তা মেনোপজ নিয়েই বা শেখার কিছু থাকবে না কেন?
ফুয়ার সাথে কি কি কথা হল, সেসব মোড়ায় বসে বলছি আর হাসি মাসি মাছ কুটছে। “মেলামেশার ইচ্ছে”-র কথা যেই উঠল, ওমনি ঘাড় নেড়ে বলল যে কথাটা পুরো সত্যি নয়। কিরকম?
-“মেলামেশা করতে ভালোলাগেনা। অনেকেরই তাতে চলে যায়। কিন্তু সবার পক্ষে তা চলে না।” বলে হাসিমাসি বঁটিতে আঁশ ছাড়াতে লাগল। “মেয়েদের হয়তো ইচ্ছে করেনা, কিন্তু স্বামী থাকলে কিছুটা জোর করেই মত দিতে হয়, মেলামেশা করতে হয়। তবে এটা নির্ভর করে।” তার মানে ফুয়া যেরকম একেবারেই ব্যাপারটা নাকচ করে দিল সেটা সর্বৈব সত্য নয়। ফুয়ার কাছে এসব “নোংরামি”, একটা বয়সে ভালোলাগেনা, ফুয়া বলেছিল- “আমার একটা বন্ধু তো এসব দিকেই নেই- ইচ্ছেই নেই। ও দেখতে শুনতে ভালো, গায়েও ভালো আছে। একজন বলল কিরে, বর নেই তো একটা প্রেম তো করতে পারিস? ও বলে ধুর ধুর, ভালোই লাগেনা। বিরক্তি লাগে... এবার একটু খাব, ঘুরব, আরাম করে চলে যাব”। মেনোপজ তাহলে “চলে যাওয়া”-র একটা সিঁড়ি? বয়স হওয়ার প্রস্তুতি? এরপর আর ইচ্ছেটিচ্ছে থাকতে নেই?
যদিও হাসিমাসি মনে করে যে ইচ্ছে থাকা না থাকার সাথে বয়সের বা নোংরামির তেমন যোগ নেই। তাহলে কিসের উপর ডিপেন্ড করে বল তো?
দুজনের রেকর্ডিং শুনতে শুনতে যে কথাটা খট করে কানে লাগল, তা হল “গা”- গায়ের জোর। ভেবে দেখুন, ফুয়াও কিন্তু তড়বড় করে বলেছে বেশ ক’বার, যে গায়ে আর জোর থাকেনা। থাকার কথাও নয়, কারণ সারাদিন ঘন্টা হিসাবে লোকের বাড়িতে আর বিনাপয়সায় নিজের বাড়িতে কাজ করে শরীর আর চলেনা। মেনোপজের পর যে হরমোনাল বদল হয় তাতে ফ্যাট জমা বা হাড়ে নিউট্রিয়েন্ট পৌঁছোন সবটাতেই তালগোল পাকে। আর সুষম খাদ্যের কথা বললে ফুয়া ফ্যাক করে হেসেই ফেলত, কাজেই ওকথা থাক। কিন্তু গায়ের জোরের ব্যাপারটা হাসি মাসির কাছেও পেলাম-
মেলামেশার ইচ্ছে তাহলে মেনোপজের পরে কাদের থাকে বল তো হাসি মাসি?
-“যারা ভালো করে খাওয়া দাওয়া পায়, গায়ে মনে জোর থাকলে, মন ভালো থাকলে মেয়েদেরও ইচ্ছে করে। সুস্থ মন থাকলে তবেই।”
“সুস্থ মন” কথাটা আমি চাপিয়ে দিইনি, বলিওনি। সত্যি বলতে কি, কথাটা আমার মাথাতেও আসেনি, কারণ আমার ভাবনার প্যারাডাইমটাই তো আলাদা! পুষ্টিকর খাবার, ওষুধ আর সাপ্লিমেন্ট কোনওটাই যাদের প্রাত্যহিক জীবনে নেই, তাদের মেনোপজ, তাদের মেলামেশা, তাদের ইচ্ছে-অনিচ্ছের আমি বুঝি কতটুকু? না চাইতেই যে প্রোটিন-ফ্যাট-ভিটামিন দুবেলা পাচ্ছি, তার অভাবে “এনার্জি থাকে না”-র মানেই বদলে যায়। স্পষ্টভাষিণী হাসি মাসি বলে দিয়েছে, “গায়ে জোর হলে ইচ্ছে হয়”। তাই জন্যই ফুয়ার ওই বান্ধবীকে বাকিরা “প্রেম-টেম” করতে বলেছিল; ফুয়ার মত কোটরে ঢোকা চোখ আর গলার হাড় বার করা চেহারা নয় তার, “গায়ে গতরে ভালো”।
তেমনি আবার যাদের “এনার্জি” আছে তাদের ফুয়ার মত “নোংরামো” বলে খারিজ করতে নারাজ হাসি মাসি। শাশুড়িকে মেনোপজ সংক্রান্ত অসুখেই হারিয়েছেন তিনি- পিরিয়ডস বন্ধ হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই আবার ব্লিডিং শুরু হয়। সাঁইথিয়া থেকে কাঁথি, কোনও হাসপাতালেই তার সম্পূর্ণ চিকিৎসা হয়না। হাসপাতাল থেকে ফিরে মারা যান তিনি। শাশুড়ি ছাড়াও দেখেছেন বাকিদের- “আমার দিদিদের বন্ধ হয়ে গিয়েছে, কোনও অসুবিধে হয়না। বন্ধ হওয়ার পর শরীরটা একটু ভারি ভারি হয়ে যায়। অপারেশন করে বন্ধ করলে বেশি হয়। যেমন আমার এক দিদির অপারেশন করে বন্ধ করল। পরে দেখা গেল তার নানা রকম অসুখ হচ্চে, ওই অপারেশন এর পর থেকেই।”
“শরীর শরীর তোমার মন নাই কুসুম” মনে পড়লে এবার হাসি মাসির কথাই কানে বাজবে। মন আর শরীর হাত ধরে আছে; পেঁয়াজের দাম বাড়লে যার আলুভাতের মধ্যে শুধু লংকাফোড়ন পড়ে, তার এনার্জি-র ক্যালকুলেটর ভিন্ন। চিকিৎসা নিয়ে যদি বা প্রশ্ন করেছি, পুষ্টির কথা মাথাতেই আসেনি। অথচ দেখুন, একজনের কোলে বড় হয়েছি আমি, আরেকজন বিগত দশ বছর দুবেলা আমায় রান্না করে খাওয়ান। সাক্ষাতকারী হিসাবে শেখা এটাই, এই জন্যই এমন সব তথাকথিত বৃত্তের বাইরের মানুষ যাঁরা লিখবেন না এই ব্লগে, তাদের এভাবেই নিয়ে আসতে হবে আলোচনায়। বলয়টাকে বাড়িয়ে দিয়ে ঢুকিয়ে নিতে হবে তুলসিতলার পাশেই উঠোন পেরিয়ে কলতলায় আর রাস্তা পেরিয়ে ভ্যানগাড়ির উপরে বসা সান্ধ্য আড্ডাটি।
ফুয়া বলে “আমাদের ওসব নেই। একেবারেই নেই। চাইওনা। যারা করে করুক, আমাদের মন করেনা।” রোজ সাদা শাড়ি পরতে পারা, রোজ সন্ধ্যা দিতে পারা, কারো বা অনিচ্ছার যৌন সংসর্গ থেকে মুক্তি- “আমার বান্ধবীগুলোর বরও নেই। একসাথে বাজার যাচ্ছি, ঘুরতে যাচ্ছি, ঝাড়া হাত-পা। কোনো কেয়ার নেই। দেখছ না সাদা শাড়ি পরেছি?”
তবুও, “সব মেয়েদের একরকম নয়, নানারকমের মেয়েদের এক এক রকম ব্যাপার। অনেকের ইচ্ছে থাকে না, বাজে লাগে, অনেকের সেরকম নয়...” বলে হাসি মাসি উঠে পড়ে। সেই রেল লাইন পেরিয়ে যেতে হবে সাইকেলে চার কিলোমিটার। বৃষ্টি নামল বলে।
যেখানে পিরিয়ডস নিয়ে নাটক লিখলে শালীনতার প্রশ্ন ওঠে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, যেখানে আজও বিভিন্ন আচার-বিচার বিধিনিষেধে জর্জরিত মেয়েবেলা, সেখানে যে মেনোপজ নিয়ে প্রায় কোন আলোচনা হবেনা এ তো স্বাভাবিক। তাও আবার মেনোপজের পরে যৌন ইচ্ছা! ইন্টারনেটেও এই বিষয়ের চর্চায় ভারতবর্ষ নিয়ে গুগলের মুখে কুলুপ। মেডিকেল জার্নালের বাইরে জীবনের রোজকার আদানপ্রদানে এর বিশেষ অস্তিত্ব নেই। একটিও আলোচনা সভা, সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান বা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার জবানবন্দি চোখে পড়ল না। অথচ সাড়া মিলল। বিকেলে কাজ থেকে বাড়ি ফিরে পরিত্যক্ত ভ্যান রিক্সায় বসা মহিলা-মজলিসের সাড়া মিলল এক ডাকেই। ফুয়া বলল,
-“এস একদিন আমাদের ওখানে, বন্দুদের বলে রেখিচি, আর কি জিগ্যেস করবে করে নিও। এতে তোমার কাজ হবে তো বুনু?”
তাই যাব, বুঝলেন, লেখাটা ছাপা হলেই যাব আর পড়ে শোনাব ভ্যানগাড়ি-সভার সদস্যাদের। ওদের মতামত নিতে হবে তো! বাংলায় লেখা, কাজেই, বুলু, মামন, মোহিনী, মন্দিরা ওরা নিজেরাও পড়তে পারে আর শোনাতে পারে বাকি সবাইকে।
Tagsadolescence age of consent age of marriage caa child marriage corona and nursing covid19 Covid impacts on education domestic violence early marriage education during lockdown foremothers gender discrimination gender identity gender in school honour killing human rights intercommunity marriage interfaith marriage lockdown lockdown and economy lockdown and school education lockdown in india lockdown in school lockdown in schools love jihad marriage and legitimacy memoir of a nurse misogyny nrc nurse in bengal nursing nursing and gender discrimination nursing in bengal nursing in india online class online classes during lockdown online education right to choose partner school education during lockdown social taboo toxic masculinity transgender Women womens rights
খুব ভাল লাগল।
রংগন চক্রবর্তী