• নজরে বিজ্ঞাপন : ''হিরোগিরি - ইয়ে পিনে মে নেহি, ইয়ে দেনে মে হ্যায়''


    0    224

    November 21, 2018

     

    গত কয়েক দিনে দুটো বাংলা ছবি আর একটা হিন্দি ছবি দেখতে গিয়ে এই বিজ্ঞাপনটা বেশ কয়েক বার দেখলাম। আমি প্যাডম্যান ছবিটা দেখিনি। ইউটিউব লিঙ্কে দেখছি এই বিজ্ঞাপনটা ওই ছবিটির একটি অংশ। সেটা ঠিক বুঝেছি না ভুল, সেই প্রসঙ্গে না গিয়ে, এই বিজ্ঞাপনটিকে স্বতন্ত্র ভাবেই আলোচনা করা যাক।

    এককথায় বিজ্ঞাপনটা জরুরি বিজ্ঞাপন। তার কারণ, আগের তুলনায় অনেক বেশি প্রকাশ্যে এলেও এবং স্বীকৃতি পেলেও, স্যানিটারি প্যাডের ব্যবহার এখনও প্রয়োজনের তুলনায় কম, এবং বাড়াটা দরকার।  আমার মনে আছে, আজ থেকে চল্লিশ পঞ্চাশ বছর আগে, কিশোর হিসেবে আমাদের কী সাংঘাতিক কৌতুহল ছিল এই ‘গোপন’ জিনিসটা নিয়ে। প্রথম দিকে যখন ‘কেয়ার ফ্রি জ্যায়সে সুরক্ষা দেতে কোঈ নহীঁ” জিঙ্গলটা আমরা শুনেছিলাম, তখন কী হাসাহাসি করতাম সেটা নিয়ে। এই “কেয়ার ফ্রি” আর তার আগে স্কুলে ছেলেদের ফোলানো বেলুন “নিরোধ”-এর মাধ্যমে আমরা নিষিদ্ধ দুনিয়ায় ঢুকছিলাম। 

    “প্যাডম্যান” বিজ্ঞাপন, যদি আমরা এই বিজ্ঞাপনটাকে এই নামেই ডাকি, একটা জরুরি কাজ করে - প্যাড একটা বাজে খরচ, সংসারের খরচে এটাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার দরকার নেই, এই ধারণাটাকে সরাসরি আক্রমণ করে। বাজে ক্ষতিকর নেশার ওপর খরচের নিন্দা করে। প্যাডের ওপরে খরচটা যে বাজে খরচ নয়, সেটা বারবার বলা দরকার। কারণ, অনেক সময় পুরুষরাই পরিবারের খরচটা নিয়ন্ত্রণ করেন। কাজেই সিগারেট বেশি ‘জরুরি’ হয়ে উঠতেই পারে।

    আজকের বাজার আমাদের ‘বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা’-র কথা বলে। কিন্তু মার্ক্স যে কথাটা বলে গিয়েছিলেন সেটা সত্যি, একজন মানুষ অনেক সময় কিছু একটা বাছে ঠিকই, কিন্তু যে সামাজিক পরিবেশের মধ্যে দাঁড়িয়ে বাছে, সেটা তার নিয়ন্ত্রণে নেই। যাঁরা সমাজের কাজ করেন তাঁরা অনেক সময় বলেন, কী ভাবে প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবারের বদলে গরিব পরিবার, বাচ্চা বুড়ো অনেকেই ক্ষতিকর চিপস, কোলায় পয়সা খরচ করছেন। তার কারণ হল, সমাজে ও মিডিয়ায়, এই চিপস, কোলাকেই ভালো থাকার, খুশির, আনন্দের উপকরণ বা পরিচয় বলে যে অহোরাত্র ঘোষণা চলছে, তার প্রভাব। সিগারেটের ক্ষেত্রে হালে নিষেধাজ্ঞা জারি হলেও যুগ যুগ ধরে নেশার সঙ্গে পুরুষালি ভাব, সুখ ইত্যাদির যোগাযোগ ও বিজ্ঞাপন, সমগোত্রীয়দের মধ্যে মিশতে হলে এর প্রয়োজন, তা ছাড়া নেশার নিজস্ব টান এই সবই কাজ করে। এখানে ব্যক্তির “প্রয়োজন”কে সামাজিক প্রভাবের বাইরে দেখা কঠিন। কাজেই এই রকমের বিজ্ঞাপন বহু বার দেখিয়ে যাওয়া জরুরি।

    এই বিজ্ঞাপনের সমালোচনাও হতে পারে। নারীবাদীরা কেউ কেউ বলতে পারেন, মেয়েদের কথা মেয়েরাই বলবে, আবার সেই পুরুষ কেন? আমার মনে হয়, মেয়েদের কথা মেয়েদের নিজেদের নিশ্চয় বলা দরকার, সেটা সামনে তুলে আনা জরুরি। কিন্তু তার মানেই এই বিজ্ঞাপনটা বাতিল করা দরকার, তা নয়।

    দ্বিতীয়ত, পরিবেশবাদীরা বলতে পারেন, এই একবার ব্যবহারের প্যাড পরিবেশের পক্ষে খারাপ, এর বদলে বারবার ধুয়ে নেওয়া যায় সেই রকম কাপড়ের ব্যবহার বেশি দরকার - কিন্তু তাতে তো বাজারের লাভ নেই, তাই সেই কথা কেউ বলবে না।

    এ কথাও ঠিক হতে পারে, কিন্তু সেটা হলেও, মাসিক যে নোংরা কিছু নয়, তাই নিয়ে ফিসফিস করবার দরকার নেই, এই প্রচারটা জরুরি। আমার ভাবতে অবাক লাগে কী করে কোটি কোটি মহিলা মাসিকের ম্যানেজমেন্ট এই রকম ভাবে পুরুষচক্ষুর আড়ালে করে চলেছেন যুগ যুগ ধরে। এবং এই গোপনীয়তার ফলে অসুখও হচ্ছে, যে কথা এই বিজ্ঞাপন আমাদের বলে। তাই মাসিকের সামাজিক স্বীকৃতি অনেক বেশি দরকার।

    ইদানিং মন্দিরে ঋতুমতী মহিলাদের প্রবেশ নিয়ে যা শুনছি, চমকে চমকে উঠছি। অনেক কাজ বাকি আছে। যে দেশে আমরা ছেলেরা হিসি দিয়েই দেশটাকে নরক করে তুলেছি, সেখানে মাসে মাসে পুরুষের রক্ত ঝরলে কী হত ভাবলে শিউরে উঠতে হয়। রক্তগঙ্গা তখন ঘরে ঘরে বইত, মা-মাসিরাই পরিষ্কার করতেন নিশ্চয়!

    শেষ কথা, এককথায় বিজ্ঞাপনটা আমার ভালো লেগেছে।

     
     



    Tags
     


    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    You may use these HTML tags and attributes: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>

     



    তথ্য নীতি | Privacy policy

 
Website © and ® by Ebong Alap / এবং আলাপ, 2013-24 | PRIVACY POLICY
Web design & development: Pixel Poetics