19-04-2024 21:38:45 pm
Link: http://ebongalap.org/short-film-juice-review-bengali
The strongest one is the one who stands alone - Henrik Ibsen
A wise woman wishes to be no one's enemy. A wise woman refuses to be someone's victim - Maya Angelou
সিনেমা দেখার সময় আমি সাধারণত লিঙ্গ-অজ্ঞানবাদীর (Gender agnostic) চশমাটি পরে থাকি৷ যদি না ছবিটি সপাটে লিঙ্গ বৈষম্যের কথা বলে৷
নীরজ ঘায়াবান সম্বন্ধে উৎসাহ জেগেছিল মাসান ছবিটি দেখতে বসে৷ নিটোল একটি প্রেমের গল্পে ভারতবর্ষের জটিল অর্থনৈতিক-সামাজিক-রাজনৈতিক বিন্যাসটি যেভাবে ধরেছিলেন পরিচালক, তাতে মুগ্ধ হয়েছিলাম। কি বিষণ্ণ, কি সহজ, কি নির্মম আর লিরিকাল ছবিটি! বেড়ালের মতো জুলজুল করে মাসান দেখতে দেখতে মনে হয়েছিল এই দাপট যাঁর করায়ত্ত (বা ফ্রেমায়ত্ত!) তাঁকে নজরবন্দী রাখতে হবে! এনার অন্যান্য কাজের জন্য চোখ-কান খোলা রাখব, এই ছিল অঙ্গীকার৷
চোখ-কান খোলা ছিলই, এছাড়া কালে কালে তথ্য সহজলভ্য হল৷ ২০১৭-র শেষ প্রান্তে মোবাইলের কোলে সেঁধিয়ে গেল নীরজের নতুন 'ছোট-ছবি' জুস (রস) ৷ সাড়ে চোদ্দ মিনিটের টানটান গল্প৷ সূক্ষ্ম ভাঁজে বৈষম্যের সপাট গল্প৷ খুলে রাখা চশমা আপনিই নাকে উঠে গেল!
গল্পটা দিয়েই শুরু করা যাক৷
উত্তর ভারতীয় একটি মধ্যবিত্ত (বাড়িতে একটি মাত্র এয়ার কুলার৷ এসি নয়৷ এই এয়ার-কুলার পরে, গল্পের চলনে একটি চরিত্র হয়ে উঠবে) পরিবার৷ গ্রীষ্মের সন্ধ্যায় বাড়িটিতে জড়ো হয়েছে অনেকগুলি পরিবার৷ স্বামী-স্ত্রী-ছেলে-মেয়ের দল৷
পুরুষ বা স্বামীদের জায়গা বাড়ির বৈঠকখানায়৷ সেখানে বাড়ির একমাত্র এয়ার-কুলারটি অবস্থিত৷ আড্ডায় ঘুরে ফিরে আসছে বাচাল এক পুরুষের মহিলা উপরওয়ালার আলোচনা, যাঁর কাজে ইনি একেবারেই সন্তুষ্ট নন! মেয়েদের জায়গা অন্দরমহলে৷ তারা বাইরের কাজে নিযুক্ত হলেই গোল পাকায়৷ এই মর্মে সব পুরুষ অতিথি সহমত হচ্ছে না৷ প্রসঙ্গ ঘুরে চলেছে প্রসঙ্গান্তরে৷ মহিলা উপরওয়ালা থেকে হিলারি ক্লিন্টন৷ তা থেকে ডিসেন্ট্রির৷ হালকা-ফুলকা আড্ডা৷ সুপাচ্য খাবার সহযোগে, এয়ার কুলারের ঠান্ডায় কুল কুল পুরুষ-পুরুষ আড্ডা!
স্ত্রীদের স্থান বাড়ির রান্নাঘরে৷ সেখানে গরমের দাপটে স্ত্রীরা নাজেহাল৷ একখানা ফ্যান যদি বা জোগাড় হল আলমারির মাথা থেকে, অচিরেই সেটি দেহ রাখল৷ অতএব গরমের অস্বস্তি সহ্য করেই চলছে রান্নার আয়োজন৷ আড্ডারত স্বামীদের কাছে সেগুলো সময়ে সময়ে পরিবেশিত হয়ে চলেছে৷ কাজের ফাঁকে ফাঁকে এখানেও আলোচনা চলছে৷ তবে তেমন ফুরফুরে ভাব নেই, কথাবার্তায়ও গুমোট, ভ্যাপসা ভাব৷ নানান কঠিন ভাবনার ছায়া প্রত্যেকের কথায়৷ নব বিবাহের শারীরিক উত্তাপ মরে গেলে স্ত্রীরা কী নিয়ে বাঁচবে? সন্তান? সন্তানপালনের দায়িত্ব যেহেতু নারীর, তা সামলে মায়েদের চাকরি করা সম্ভব কি? সম্ভব হলেও তা কি আরো বিপর্যয় ডেকে আনবে না? গুরুতর বিষয়ে সংশয়াকীর্ণ আলোচনা!
এই স্ত্রীয়ের দল অমিমাংসিত প্রশ্নের সন্তাপে ক্লিষ্ঠ৷ অনুশোচনায় বিষন্ন৷ ঘামে সিক্ত৷ ঘনঘন আদেশ পালনে ক্লান্ত বিবাহিত-নারী, মা-হয়ে-যাওয়া-নারীর ভ্যাপসা আড্ডা!
দুই পক্ষ গন্ডী-বিভক্ত৷ পারস্পরিক স্বতন্ত্রতা বজায় রাখা আছে৷ এ পক্ষের কেউ 'ওদের দিকে' যায় না৷ আর ওরা থাকে ওধারেই৷ পারিবারিক স্থিতিশীলতা বজায় আছে৷ কোন পক্ষের কোন প্রশ্ন নেই৷ পুরুষের আছে বাইরের শ্রম৷ টাকা রোজগার৷ সংসারের রুটি সরবরাহকারীর দায়িত্ব৷ ফলত এয়ার-কুলারের আরাম, আদেশ দেওয়ার অধিকার ও মুখে মুখে খাবার পেতে থাকার দাবী এনাদের হস্তগত৷
নারীর আছে রান্নাঘর৷ ছেলে মেয়ে সামলানোর গুরুভার৷ সংসারে খাবার জোগায় যে তার আদেশ পালনের কর্তব্য৷ ছেলেমেয়েদের খেলাধূলাও লিঙ্গ নির্ধারিত৷ ছেলে-সন্তান ভিডিও গেম খেলে৷ সে খেলায় মেয়েরা ব্রাত্য৷ খেলার ভাগ চাইলে মেয়েশিশুটির ওপর বর্ষিত হয় চোটপাট৷ দুষ্টু ছেলের ধমকানি শুনে অবনত হয়ে যায় বেটির চোখ (সে বেঁচে আছে, পেয়েছে শিক্ষার অধিকার, এই না কত? মনোরঞ্জন চাওয়া একটু বাড়াবাড়ি নয় কি?)! খানিক পর, একা হয়ে যাওয়া বেটিকে ডেকে নেওয়া হয় রান্নাঘরে৷ সেখানে তখন মায়েদের কাজের চাপ বেড়েছে৷ বেটিকে মায়েদের কাজে হাত লাগাতে হয়৷ সে খাবারের থালা সাজায় খাবার টেবিলে৷ চোখগুলি অনুজ্জ্বল৷ ক্লান্ত ও শান্ত৷
লিখতে লিখতে হঠাৎ আটের দশকে পড়া দু’-এক ছত্র কবিতার লাইন মনে পড়ে গেল৷ কবি শ্যামল ভট্টাচার্যের লাইন— ‘অনেকদিন তো রইলে ঘরে মেয়ে, লজ্জানত, শান্ত এবং বধীর্/এবার না হয় উজান বেয়ে নদীর, বাইরে এলে মাথায় আকাশ নিয়ে!'
(পাঠকগণ এ আমার আলগা স্মৃতিচারণ৷ ভিডিও গেম এই কন্যাসন্তানের জন্য আকাশ উড়ান বা মুক্তি এমন কোন সরল কথা বলতে চাইছি না!)
তো সে যাক৷ এই 'আমরা বনাম ওরা'র প্রেক্ষিত যখন প্রতিষ্ঠিত তখন আপনি মনে মনে ভাবতে থাকেন, এবার নিশ্চয়ই এই বাড়িতে একটা প্রতিবাদ সংগঠিত হবে! কিন্তু কে বা কারা হবে অগ্নি সংযোগকারী বিপ্লবী? এই নারীর দল! অসম্ভব! এদের তো আছে সুস্থির সংসারের মোহ আবরণ! এরা তো কাঙাল নয়! একমাত্র কাঙাল ও প্রেমিকই তো পারে লন্ডাতে ভন্ডাতে! এদের জীবনে প্রেম বা যৌনতা আছে? সম্ভবত না৷ কারণ তারা সংলাপের মাধ্যমে আমাদের জানিয়ে দিয়েছে তাদের বিবাহ সংক্রান্ত শারীরিক উত্তেজনার দিন সমাগত৷ তাই এখন সন্তানধারণ ও পালনই একমাত্র পথ জীবনে টিকে থাকার৷
রান্নাঘরের ভ্যাপসা কথপোকথন যখন চলছে তখন অপেক্ষাকৃত দুই অল্পবয়সী নারী তাদের মোবাইল ফোনে কিছু একটা দেখতে থাকে ও মুচকি হাসতে থাকে৷ কী দেখে ওরা জানা যায় না৷ ওরা কি পর্নোগ্রাফি দেখে? নাকি নিছক নিরামিশ 'ফরওয়ার্ডেড জোক?'
জানতে পারি না আমরা৷ জানতে ইচ্ছে করে৷ এই ছোট ছোট উত্তরহীন প্রশ্নের ছটাতেই এগোতে থাকে সাধারণ ঘরেলু গৃহবধূদের গল্প৷ পিকচার অভি বাকি হ্যায় মানতে হ্যায় উস্তাদ, লেকিন বিপ্লব আর কত দূরে নীরজ?
বিপ্লব আসে না৷ বৈঠকখানা থেকে আসে নতুন নতুন আদেশ৷ কোন এক পুরুষ অতিথির জন্য চাই ফলের রস! আড্ডায় বিঘ্ন ঘটানো বাচ্চাগুলোকে সামলানোর দায়িত্ব নিক স্ত্রীরা৷ তারা করছেটা কী?
স্ত্রী সম্মান পাওয়া নারী কখনই আদেশ উপেক্ষা করে না! আদেশের পর আদেশ পালন করতে থাকে নারীর দল৷ চুপচাপ৷
স্ত্রী সম্মান পাওয়া নারীকে মনে মনে আমরা বলেই ফেলি 'সম্মানের অপমানে তুমি কি গিয়েছ খুব ঝুঁকে?' (শঙ্খ ঘোষ, সম্মান)
ঠিক এই যখন পরিস্থিতি, ঠিক তখন নীরজ বৈষম্যের গল্পে আরেকটা দিকনির্দেশ দিয়ে ফেললেন! আর সেই দিগদর্শনটি এত সহজ করে বুনে দিলেন যে আপনি বিস্মিত হয়ে গেলেন! এতক্ষণে তো আপনি ভেবেছিলেন এ এক নিছক পুরুষের হাতে নারীর অবমাননার গল্প! কিন্তু এবার যে গল্প অন্য দিগন্তে ঢুকে পড়ছে! একটা জরুরি সূত্র দেখা যাচ্ছে না গল্পটায়? লিঙ্গ রাজনীতি পেরিয়ে যে সূত্র ধরে পৌঁছে যাওয়া যায় বৈষম্যের মূলে?
মস্তান নীরজের মোচড়ে গল্পে ঢুকল এবার কাজের মেয়েটির আখ্যান৷
মেয়েটিকে ফ্রেমে দেখি না একবারও৷ তার স্বরও শোনা যায়নি এতক্ষণ! এবার শুনি সে বলছে তার অনেক দেরী হয়ে গেছে, তাকে এবার বাড়ি যেতে হবে৷ অর্থাৎ এতক্ষণ সে নিঃশব্দে গৃহিনীদের হুকুম তালিম করেছে৷ প্রতিবাদহীন স্বরহীন অস্তিত্ব এবার জানান দিচ্ছে যে সে আর মেনে নেবে না৷ স্ত্রীয়ের দল জানে তাকে বেশি বেশি খাটানো হয়ে গিয়েছে৷ তাই সামাল দিতে বলে 'চায়ে তো পি কে যাও!' তার দিকে এগিয়ে দেওয়া হয় স্টিলের একখানা গ্লাস৷ স্ত্রীরাও এখন চা খাওয়ার অবকাশ পেয়েছে৷ তাদের হাতে পোর্সিলিনের কাপ৷ মুখে অপরাধী, কাষ্ঠ হাসি৷ মেয়েটির গলার স্বর শুনি এবার৷ স্টিলের মতই শীতল আর কঠিন সে স্বর৷ সে এখনো অবয়বহীন৷ সে বলে 'নেহি চাইয়ে!'
এই 'নেহি চাইয়ে' বলার প্রেক্ষিতেই আমি আমার 'সুযোগ-ব্যয়' সংক্রান্ত মতামতটি প্রকাশ করতে চাই৷ বাকি গল্পটি বলে দেওয়ার আগে৷
এই সমাজে নারী একটি বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন একক (rational entity)৷ তার বিচারবুদ্ধির উপর আস্থা আছে বলেই আমি তার জন্য দাবী জানাচ্ছি চয়নের অধিকার৷ পুরুষতন্ত্রের প্রভাব কাটিয়ে উঠে সে তার নিজের বোধ ও বিচার অনুযায়ী চয়ন করতে সক্ষম এই সত্য আমি স্বতঃসিদ্ধ হিসেবে মেনে নিয়েছি৷ তারপরেও স্বামী-স্ত্রীর এই অসাম্যের বিবাহবলয়, সমাজে স্থিতিশীল থাকে কীভাবে? এই প্রশ্নটির উত্তর খুঁজব অর্থনীতির সুযোগ-ব্যয়ের ধারণার সাহায্যে৷ অর্থনীতির সূত্র অনুযায়ী, বিনিময় সম্পন্ন হয় যখন, ব্যয়ের সমপরিমাণ বা ব্যয়ের অধিক মূল্য উপায় হয়৷ আমি, একজন বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন নারী সাবলম্বী না হয়ে সন্তান-সংসার বেছে নিলাম৷ এই বেছে নেওয়ার জন্য আমি সুযোগ-ব্যয় (opportunity cost) খরচ করলাম৷ এই খরচ হল সংসারের মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখার জন্য আমি রোজগারের যে সুযোগ হারালাম সেই সুযোগের সমপরিমাণ মূল্য৷ ধরে নিলাম সেটি (X)। যে সময়ে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, সেই সময়ে আমার নিজস্ব বিচারে আমি সুযোগ ব্যয়ের মূল্য নির্ধারণ করলাম৷ আগামীদিনে আমার বিচারপদ্ধতি পাল্টালে আমার এই খরচের হিসেবও পাল্টে যাবে৷ আজ যা মূল্যবান আমার কাছে কাল পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মূল্যহীন হতে পারে বা আরো বেশি মূল্যবান হতে পারে৷ এ আমার নিজের ব্যক্তিগত মূল্যায়ন৷
একই যুক্তিতে, আমার নিজস্ব বোধ অনুযায়ী, সন্তান ধারণ-পালন ও সংসারে কর্মের আমি মূল্যায়ন করেছি৷ ধরে নিলাম সেটা (Y)। এবার এই 'ঘরের' জীবন যেই মুহূর্তে আমি চরণ করছি, সেই মুহূর্তে আমার নিজের বিচার অনুযায়ী Y>X বিচারসম্পন্ন নারী, যার ওপর পুরুষতন্ত্রের প্রভাব আছে, সে যেমন এই সুযোগ চয়ন করছে (অপর একটি সুযোগের সাথে তুল্যমূল্য বিচারে), ঠিক তেমনই এই বিবাহ বলয়ে অবস্থিত অপর পক্ষটি, অর্থাৎ স্বামী, যার উপরেও পুরুষতন্ত্রের প্রভাব আছে, সেই এই তূল্যমূল্য বিচার করছে কারণ তারও আছে নিজস্ব বিচার৷
একা রোজগারের কারণে সেও বহন করছে কিছু পরিমান সুযোগ-ব্যয়৷ কারণ এক্ষেত্রে সংসার হারাচ্ছে স্ত্রীয়ের রোজগারের সুযোগ৷ ধরে নিই সেটি (A)৷ অন্য দিকে অর্থনৈতিকভাবে পরাধীন স্ত্রীয়ের উপর কর্তৃত্ব ফলানোর যে সুযোগ সে আয় করছে তার জন্যেও ধরে নিতে হবে কিছু মূল্য৷ ধরে নিই সেটি (B)৷ এই বিবাহিত পুরুষটির বিচারে B>A।
বিবাহ বলয়ে যে অসাম্যের গন্ধ আমরা পেয়ে থাকি তা স্থিতিশীল রাখার জন্য এই দুটোই প্রয়োজনীয় শর্ত (Necessary condition)। যেকোনো একটি যথেষ্ট শর্ত (Sufficient condition) নয়৷
এর অপর দিকে আছে সেই মেয়ে যে 'মানিয়ে-গুছিয়ে' নেওয়ার সংসারের মধ্যে নিজেকে মাপে মাপ করে রাখতে অনিচ্ছুক৷ তার কাছে, X>Y৷ যতক্ষণ স্ত্রীর বিচারে Y>X এবং স্বামীর বিচারে B>A ততক্ষণ বিবাহ কণ্টকমুক্ত! সাত দুগুণে চোদ্দ, হাতে রইল বৎসরান্তে পুরী ভ্রমণ!
বিবাহ বলয়টি নড়বড়ে হয় যখন স্ত্রীর বিচারে X>Y, এবং স্বামীর বিচারে B>A.
যে feminist discourse-এ নারীকে সমাজের বা পুরুষতন্ত্রের বেচারা শিকার বা victim মনে করা হয়, সেই discourse-এর এটা paradox! সমাজের চলনের পরিপন্থী হতে গেলে নিজের বিচার-বুদ্ধি প্রয়োগ করতে হয়৷ পুরুষতন্ত্রের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দিলে হয় না! কারণ প্রতিটি মানুষের (নারী-পুরুষ নির্বিশেষে) উপর আছে পুরুষতন্ত্রের প্রভাব৷ তবু কেউ কেউ পাশার দান উল্টোয়৷ সে নারী হতে পারে বা পুরুষ৷ তার নিজস্ব বিচার-বুদ্ধি প্রয়োগ করে মেপে নেয় প্রতিটি সুযোগের opportunity cost! মা-বাবা-প্রেমিক-স্বামী-পুত্র-সমাজের বিধান আমি মানছি কেন? কারণ এই মেনে নেওয়ার যে opportunity cost তা আমার কাছে সহনীয়৷ এখানে victimhood-এর কোন থিয়োরি নেই৷ কারণ নারী কোনো নির্বোধ পুঁটুলি মাত্র নয়৷ সে একজন rational entity।
এতগুলো কথা বলতে হল কারণ এবার ঢুকব গল্পের ক্লাইম্যাক্সে৷
বৈঠকখানা থেকে ফের ফলের রস পরিবেশনের হাঁক আসে৷ বাড়ির গৃহিণীটি এতক্ষণ বিষন্ন মুখে ফাইফরমাশ খাটছিল৷ এবার সে নির্লিপ্ত মুখে ফ্রিজ খোলে৷ একটা কাঁচের গ্লাস ভর্তি করে ফলের রসে৷ তারপর ঘাম মাখা মুখে টানতে থাকে একটা কুর্সি৷ এক হাতে ফলের রসে টইটুম্বুর গ্লাস, অন্য হাতে চেয়ার৷ তার সখিরা অবাক হয়ে তাকে দেখছে৷ সে চেয়ার ঘসটাতে ঘসটাতে ঢোকে বৈঠকখানায়৷ পুরুষের দল স্তব্ধ হয়ে দেখছে তাকে৷ দুই দল, দুই পক্ষ এখন একাকার৷ একদিক৷
অপরদিকে ওই ঘাম-মাখা, ফলের রস আর চেয়ার সামলানো একক নারী৷ যে আর victim নয়৷ এখন আলাদা৷ একা৷ তার এতদিনের সুযোগ-ব্যয়ের হিসেব ঐ মুহূর্তে গেছে আমূল পাল্টে৷ চেয়ারটা সপাটে রাখে সে এয়ার কুলারের সামনে৷ তার ঘেমে নেয়ে ওঠা মুখটায় আদর বুলিয়ে দেয় পুরুষের অধিকৃত এয়ার-কুলারের ঠান্ডা বাতাস৷ চুল উড়ে যায় প্রতিস্পর্ধার দাপটে৷ আরাম করে ফলের রসে চুমুক দিয়ে সে দেখতে থাকে অন্য দলটিকে৷ সে দলটিতে নারী আছে, আছে পুরুষ৷ তাদের সুযোগ-ব্যয়ের স্থিতিশীলতার হিসেব আর এই বহ্নিশিখাটির সুযোগ-ব্যয়ের হিসেব আজ থেকে আলাদা! স্বামীটির চোখে চোখ রেখে সে নিঃশব্দে জানিয়ে দেয় আজ থেকে তার আর স্টিলের গ্লাসের চায়ের প্রয়োজন নেই৷ তার নিজস্ব বোধে আজ থেকে X>Y৷ শেষ ফ্রেমে স্বামীর চোখ নেমে যায় নিজের কোলের দিকে৷
নীরজকে আমার অভিবাদন৷
JUICE শর্টফিল্মটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
Link: http://ebongalap.org/short-film-juice-review-bengali