• রোজার মাসে দু-চারটে রান্নাঘরের কথা


    3    619

    June 20, 2017

     

    ময়না ও মুনিয়ারা। ছবি - লেখক

    টালির চাল, ঝাঁপের বেড়া উত্তরের কনকনে হাওয়া আটকাতে পারে না; তাই শরীরে ওমের প্রয়োজনীয়তা খুব বেশী। মুনিয়ার ছোট শরীর কুণ্ডলী পাকাতে থাকে, পরিচিত কোল হাতড়ায় ওমের খোঁজে। চারিদিকে শূন্য, আধোঘুমে পঞ্চায়েত থেকে পাওয়া কম্বলটা গায়ে জড়িয়ে নিয়ে সে লম্ফর খুঁজতে থাকে। চারিদিকে অন্ধকার দেখে চীৎকার করে ‘কোথায় গেলি’? শীতের শনশনে হাওয়ার সাথে চারিদিক থেকে ভেসে আসে খুট-খাট-খুট শব্দ, রাত দুটো হবে, পাশের বাড়ির টিউবওয়েল ককিয়ে ওঠে ক্যাঁচ-ক্যাঁচ। ছ্যাঁত-শ শব্দে ডালের ফোঁড়ন পারছে কেউ; এখন প্রায় সব বাড়িগুলির লম্ফর হ্যারিকেনগুলো উঠোনের কোণায় একচিলতে রান্নাঘরে মাটির উনুনের পাশে। মুনিয়া ভাত ফোটার শব্দ চেনে, ডালের ফোড়নের ঝাঁজে ঘুম আসে না তার।

    - ‘ময়না আমায় না জানিয়ে চলে এসছিস, আমি কতো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম জানিস’?

    - ‘ঘরে গিয়ে শো, জার লাগবে, ঠাণ্ডার ধাত আছে কাল ইস্কুলে যেতে পারবি না’।

    - ‘আমিও তোদের সাথে আজ সেহেরি খাবো’।

    ময়না চোখ কটমট করে তাকায়, কুয়াশা মেশানো হলদে আলোতেও তার প্রখর দৃষ্টি, কিছুটা হতাশা নিয়ে মুনিয়া আঁচলের খুটটা ছেড়ে তক্তায় ফিরে আসে। পাড়ার মেয়ে-বৌগুলোর রান্না যখন প্রায় শেষ, মসজিদের মাইক থেকে ভেসে আসে পুরুষকণ্ঠ ‘রোজাদারেরা উঠুন উঠুন, সেহেরীর সময় চলে যাচ্ছে, ঘুম থেকে জেগে উঠুন আর সকলকে জাগিয়ে দেন’। মুনিয়া ভাবে কি ফালতু লোক রে বাবা; ঘণ্টাখানেক আগে পাড়ার মেয়েমানুষগুলো উঠে যুদ্ধ শুরু করেছে, এখন উনি উঠুন উঠুন করে তাড়া লাগাচ্ছে। জেগে থাকা মানুষেরা নতুন করে উঠতে যাবে কেন? 

    ময়না রান্নাবান্না সেরে ঘরে এসে স্বামী-শ্বশুরকে ঘুম থেকে ওঠানোর জন্য চীৎকার করে বলে, ‘ওগো শুনছো মসজিদে কিন্তু বলা হয়ে গিয়েছে, শিগগিরি ওঠো নইলে কাল রোজা কাজা যাবে যে’। স্বামী-শ্বশুর ওজু করে পিঁড়িতে বসে লম্পরটার সামনে, ময়না খাবারের হাঁড়িকুঁড়ি ওখানেই এনে জড়ো করেছে যাতে অন্ধকারের মধ্যে বারবার দৌড়াদৌড়ি করতে না হয়। ও রাতের দু’-পিস মাছ একটু তরকারী সাবডে রেখেছিল, এ রাতে ভাত, ডাল, একটা ভাজি করে নিয়েছে। রোজাদার পুরুষমানুষ বাইরে ঘাটে-মাঠে কাজ করে, তাঁদের খাবারের জোগান দেওয়া কর্তব্য। তাড়াহুড়ো করে বাড়ির লোকেদের খাইয়ে তার পাতে শুধু ডাল-ভাত-ভাজি। খাবারটা মুখে তুলতে গিয়ে মুনিয়ার কথা মনে পড়ে যায়। হাঁক পাড়ে ‘মুনিয়া রে...... জেগে আছিস; আয় বেটা দু-মুখ সেহেরি খেয়ে যা’। মুনিয়া প্রবল আনন্দে ময়নার ভাতে ভাগ বসায়। দুজনে নিয়ত বাঁধে কাল রোজা রাখার। ফজরের নামাজ সেরে ময়না মুনিয়াকে কোলে আঁকড়ে শীতের ভোরের শেষ জারটুকু আটকে দেয়।

    চোখে ঘুম আসে না যদিও, ময়না ভাবতে থাকে সকাল হলেই গোয়াল করতে হবে। ছোট দেওর আর অসুস্থ শাশুড়ির জন্য গরম ভাত-তরকারী রাঁধতে হবে। এই মাসটা তরকারীতে নুনের পরিমাণ নিয়ে খুব ঝামেলা হয়। অনেক কথাও শুনতে হয়, নুন চাখতে মুনিয়ার সাহায্য নিতে হবে। কাল রোদ উঠলে এক বস্তা ধান ভাপাতে হবে। ভাঁড়ারে চাল কমে আসছে, সময়মতো ধান সেদ্ধ করে না ভাঙ্গাতে পারলে; লোকের বাড়ি চাল ধার চাইতে যেতে হবে, চাল কেনা অলুক্ষণে যে! আলোচালগুলোকে পশ্চিমপাড়ায় নিয়ে গিয়ে ঢেঁকিতে ভেঙে আটা করতে হবে। শ্বশুরের নির্দেশ রোজা ঠাণ্ডাতে যেন মাঝে মধ্যে একটু পিঠেপুলি হয়। এসব দায়িত্ব একা কাঁধে সামলাতে সামলাতে ময়না তিরিশ বছর বয়সেই ঝুঁকে পড়েছে। বছর কুড়ি হল রোজা রাখছে নিয়ম করে তবুও চুলোর পাড়ে, রোদে, ঢেঁকির পাড় দিতে গিয়ে শ্বাস আটকে আসে; তেষ্টায় বুক ফেটে যায়। কিন্তু এসব ময়নাকে হয়তো আজীবন করে যেতে হবে ভেবে একটা নিশ্বাস ফেলে। মুনিয়া সেই নিশ্বাস অনুভবে নিয়ে নিজেকে বড় করার তাগিদ অনুভব করে কারণ ছোট্ট বয়স হলেও সে জানে, সে অনাকাঙ্ক্ষিত। আর এই পরিবারটিতে মুনিয়া আর ময়না এক ক্ষমতার বাঁধনে। কৈশোরেই পরিণত বুদ্ধির মুনিয়ার কখনো কখনো মনে হয়, ময়নাই আসলে তার মেয়ে, যাকে আগলে রাখার দায়িত্ব তাকে সত্বর গ্রহণ করতে হবে।

    ময়নার রমজান মাসে কণামাত্র বিরাম নেই; দিন-রাত চরকির মতো ঘুরছে। সারাদিন চুলোর পাড়ে, কাপড় কাচাকুচি, অন্য কাজে বিরাম নেই। গলায় তেষ্টা যখন আটকে আসে, মাথা ঘুরে যায় কড়া রোদে, তখন অনেকবার মনে হয় রোজা মুখে মরে গেলে নেকি হতো। সারাদিন ইফতারের অপেক্ষা নিয়ে, সূর্য পশ্চিম দিকে হেললে হাত-পা তখন প্রায় অসাড়। তখন তাকে আরও জোরে ছুটতে হয় ইফতারের জোগাড়যান্তিতে। আদা-নুন-আখের গুড়, লেবু-গুড়ের শরবত, চিঁড়ে-দই-মুড়কি-কলা, যদি সামর্থে কোলায় তবে একটু মিষ্টি, ফলমূল, নুনছোলা-চপ-ফুলুরি। তবে এসব ইফতার সাজিয়ে বাড়ির পুরুষের সামনে দেওয়া, ময়না নিজের জন্য কেবল রাখে আদা-নুন-গুঁড়, আর শরবৎ। বাকি ইফতার বাড়ির লোকের পাতে পড়ে থাকে, তারা যখন তাড়াহুড়ো করে মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়তে চলে যায়। সে উচ্ছিষ্ট খেয়ে ময়নাও বাড়ির দাওয়ায় নামাজ পড়ে নেয়। তারপর ভাত বসিয়ে দেয় উনুনে। বিকেলবেলা তরকারী রেঁধে এগিয়ে রাখে কিছু কাজ। মুনিয়াদের সংসারসহ আশেপাশে সকলেরই রান্নাঘরে রমজান মাসভোর সাদা-মাটা কলমিলতা, পাটশাক, চুনোমাছের চচ্চড়ি, পোনা মাছের ঝোল ইত্যাদি সন্ধ্যে রাতের ও সেহেরীর খাবার। আর সাতাশে রাতে অতিরিক্ত সিমুই, পায়েস, মিষ্টি, মিলাদ। ঈদের দিন চালের আটার রুটি, মাংস, পায়েস আর নতুন জামাকাপড়ের সহযোগে পালন করা হয়। বহু বছর যাবত এমনটাই চলে আসছে। 

    ময়না খাঁচায় বন্দী পরিবারিক জীবনের দায়িত্ব পালন করতে করতে ক্রমশ ঝুঁকতে থাকে, মুনিয়া শিরদাঁড়ার সাথে ডানা শক্ত করতে থাকে উড়ে যাবার জন্য। চাঁদের নিয়ম মেনে প্রতিবছর রমজান মাস আসে। পালিতও হয় নিয়ম মেনে। তবে ‘রোজা-ঠাণ্ডার’ সময়টা এগোতে এগোতে ‘রোজা-গরমে’ এলেও ময়নাদের খাঁচাগুলো একই নিয়মে চলে। মুনিয়া একদিন উড়তে উড়তে দেখে প্রান্তিক মুসলমান নারীর ২৪ দিনের রোজা[i], ৩০ দিনের হাড়ভাঙা খাটনি, উচ্ছিষ্ট ভোগ, নিত্য দিনের অদৃশ্য হাজারো গৃহশ্রম। মুনিয়া দেখে এই জ্যৈষ্ঠ মাসে কড়া রোদে বড় কলশীতে পানি বইতে গিয়ে নার্গিস রোজা মুখে অজ্ঞান হয়ে যায়। এতে তার কতো নেকি হয় জানা নেই, তবে জ্ঞান ফিরলে সে রোজা কাজা হতে দেয় না। তা দেখে নার্গিসের মেয়ে শবনমের খুব রাগ হয়, মায়ের গোঁড়ামিতে; সেও ভাবে নার্গিস আসলে বাচ্চা মেয়ে, অকারণে জিদ করে, খুব তাড়াতাড়ি বড় হয়ে নার্গিসকে সামলানো তার কর্তব্য।

    [i]মাসিক, ঋতুস্রাবের সময় মেয়েরা রোজা রাখতে পারেন না।

    ধর্মীয় মজলিশে। ছবি - লেখক

    বেহাদ লাজিজ্‌ খানা, বিরিয়ানি, পোলাও, কাবাব, ভুনা, কিমা, তন্দুরি, হালুয়া, ফিরনী, হালিম...... আরও কতো নাম পড়েছিল মুনিয়া বইয়ের পাতায়; খানদানী মুসলমানি খাবার সব। উড়তে উড়তে ডানা যখন বেশ কিছুটা শক্ত, সে পাড়ি দিয়েছিল বড় শহরে। কোলকাতা এসে প্রথমবার বিরিয়ানি, তন্দুরি, কাবাব খেয়েছিল, প্রথম দিকে খুব ভালো কিছু যে লেগেছিল তেমনটা নয়। ময়নার হাতের চালের রুটি, মুরগীর মাংসের ঝোল এসবের চাইতে বেশী সুস্বাদু। তবে একটু একটু করে জিভের স্বাদ পাল্টেছে তার, বিরিয়ানি ভালো লাগতে শুরু করে একটা সময়ে। কয়েক বছর আগে রোজার সময় নাখোদা মসজিদের আশেপাশে ঘুরতে গিয়ে চোখ চড়কে, চারিদিকে এতো খাবারের সম্ভার, খুসবু; প্রথমবার হালিমের কথা শুনেছিল সে। রোজার সময়ে সেটি নাকি ওখানকার সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ পদের একটা। চারিদিকের খাবারের এতো সম্ভার দেখে মুনিয়ার মনে একটু হিংসার উদ্রেক হয়েছিল। বারবার তাদের গ্রামের রমজান মাসের স্মৃতিগুলো ঘুরে ফিরে ভীড় করেছিল। সে গ্রামে একমাস যাবত ঈদের অপেক্ষা, তবে ঈদের দিন এলেও কখনো স্থায়ী ঈদ আসেনি। ঐ অপেক্ষার দিনগুলোতে মানুষ নিয়ম মোতাবেক উপোস করতো, যা রোজা হিসাবে নেকি আদায় করতো। তবে বেনিয়মি রোজা/ উপোস সারা বছর দায়ে পড়ে চলত।

    তার গ্রামে চাঁদের নিয়ম মেনে মানুষেরা পয়লা চাঁদ দেখে ভোরে সেহেরী খেত, আজও খায়। ডাল-ভাত, ভাগ্যে বেশী কিছু জুটলে মাছ অথবা ঘরে পোষা মুরগীর মাংস। রাত দুটো থেকে মেয়েমানুষগুলো রান্নাবাটা করে, ফজরের আজানের আগে সবাই সেহেরী খেয়ে নেয়। রোজার মাসটা মেয়েমানুষগুলোর জন্য বাড়তি পরিশ্রম নিয়ে আসে কারণ তিন বেলার জায়গাতে পাঁচবেলা নিয়ম করে রাঁধতে হয়। ঐ মেয়েগুলো কি কোনদিনও কাবাব বানাতে পারবে? বিরিয়ানির মশলা কি, তা কি তারা জানে? মুনিয়া বাড়ি ফিরে অনেকবার তার মা-খালাকে বিরিয়ানি রাঁধার কথা বলবে ভেবেছে; তবে তাদের কোটরে ঢোকা চোখ আর সারাদিন মেশিনের মতো চলা রুগ্ন শরীরের সামনে সেটা আব্দারের বদলে অত্যাচার হবে বলে মনে হয়েছে। মুনিয়া হয়তো কোনোদিনো বোঝাতে পারবে না তার বন্ধুদের, মুসলমান সম্পর্কে যেসব অনুমানগত ধারণা তারা পোষণ করে চলে সেগুলো আসলে কতো বিরক্তিকর। মুসলমান হলেই বিরিয়ানির সাথে সম্পর্কযুক্ত হয়ে পড়ে না, অথবা নানাপদের মাংস রান্নাতে পারদর্শী হয় না। ফিরনী, হালুয়া মিষ্টান্নের নাম যদিও বা শুনে থাকে হয়তো অনেকেই তা চেখে দেখার সুযোগ জীবনে পায় না। তবে ময়না সিমুই রান্নাটা ভালো করে, বাড়ির গরুর দুধে, সে স্বাদ মুখে লেগে থাকে। এসবের মাঝে বেশ কিছু বছর হল মুনিয়া কিছু বিড়ম্বনার মধ্যে দিয়ে চলছে। 

    মুনিয়া, ময়নার মতো নামেও সন্দেহ হয়, আসলে তারা মুসলমান তো? তথ্য বলে তারা ছোটজাত থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলমান হয়েছে। বাপ ধর্মগ্রন্থ সামনে রেখে বলে ‘তাই নাকি? নবীজি বাদে বাকি যারা ইসলামধর্ম গ্রহণ করেছিলো সবাই তো ধর্মান্তরিত ছিল। কই তাদের সহি মুসলমান হওয়া নিয়ে তো কোন প্রশ্ন ওঠে না, তুর্কিরা তুরকিস্তানের মতো মুসলমান, বালুচের মুসলমান নিজেদের মতো; বাঙালী মুসলমানরাও বাঙালির মতো। আর নাম নিয়ে এতো চিন্তিত কেন, বাঙালী নামের সাথে আরবি নামের সংঘাত জরুরী নয়। এখন সবার নাম যদি বই দেখে আরবি নামে রাখা হয় একই গ্রামে শ’ খানেক ফতেমা বেরোবে; শ’ খানেক খাদিজা, আয়েশা বেরোবে’। এসব বক্তব্যে তার মাথার মধ্যে চলতে থাকা ঘোটেলা প্রশ্নগুলো থামাতে পারে না। তার মনে হয় তবে মুনিয়া, ময়নারা কেন এতো অজানা জ্ঞানের অংশ হয়ে থাকে? এদেশে ‘মুসলমান নারী’ সংক্রান্ত আলোচনাতে এই প্রত্যন্ত বাংলার কৃষক নারীর মুখগুলো এতো ঝাপসা কেন?  

    তার বেগম রোকেয়ার লেখাগুলো আগুনে হরফ লাগে, যিনি বাঙালী মুসলিম নারীর পর্দাপ্রথা পুরুষতন্ত্রের নিগড়ের বিরুদ্ধে হাতে-কলমে সোচ্চার। তবে তাঁর অধিকাংশ লেখায় যে নারীরা উঠে আসে তা কোলকাতার উচ্চবিত্ত মুসলিম নারী। মুনিয়া কোথাও গিয়ে পর্দার বিরুদ্ধে লড়াইটার সাথে সংযোগ স্থাপন করতে পারে না। তার মনে পড়ে ময়না ঈদের আগে বাড়ির কর্তাকে একবার বলেছিল ‘এবারের ঈদে আমার শাড়ি লাগবে নাকো, দুটো ব্লাউজ আর সায়া কিনে দিয়ো, ওগুলো ছেঁড়াখোঁড়া হলে রাস্তা চলতে বড় লাজ লাগে’। নার্গিস তার কর্তার কাছে এই ঈদে শাড়ির উপরে পরবে বলে হিজাব(বড় রঙিন ওড়না) চেয়েছে। গ্রামের বৃদ্ধারা কোনোদিন সায়া ব্লাউজ পরেনি, তারা সায়া-ব্লাউজ পরাটা আধুনিক ফ্যাশান মনে করতো, অভাবী সংসারে ওসব মানায় না। তবে তাদের কোরান হাদিস মুখস্থ ছিল, তারাও ধর্মপ্রাণ ছিল।

    সব শেষে মুনিয়ার কাছে ‘মুসলমান নারী’ নিয়ে যে পাঠ্যজ্ঞানটা আছে সেটার চারিপাশের বাস্তবের সাথে কোন মিল নেই। আর তার চারিপাশের বাস্তবটা নিয়ে মুনিয়া এবং আমাদের পাঠ্যাভাষ, চর্চা নগণ্য, প্রায় হয়ইনি। মানবীবিদ্যার আলোতে পশ্চিমবঙ্গের মুসলমান নারীদের দেখতে হলে জানতে হবে তাদের রান্নাঘর, পোশাকআশাক, দিনযাপনের খুঁটিনাটি। বুঝতে হবে মুনিয়া, ময়না, নার্গিস, শবনমদের সাথে ইসলামের সম্পর্ক থাকলেও বিরিয়ানি, কালো বোরখার সাথে যথেষ্ট দূরত্ব রয়েছে। এমন আরও অনেক কিছু।

     

     

     
     



    Tags
     



    Comments (3)
    • গল্পটা সুন্দর! তবে একান্ত যাদের উদ্দেশ্যে লেখা তাদের পড়া তো দুর কাছে পৌঁছাবে না, আর যারা পড়বে তারা শোনাতে যাবে না, তাহলে এত সুন্দর লেখাটা কি হবে? যেমনটা হয়…এ ওকে সে তাকে সেয়ার করতে থাকবে।

      সে যাই হোক, ময়নার কথাটা তো শোনালেন ময়নার পুরুষ মানুষটার খোঁজ রাখেন? রমজানের দিনগুলো তার কেমন কাটে? না আমাকে শোনাতে হবে? ছেলেটা সেই ৭-৮ বছর বয়স থেকে পরিবারের কিছু দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছে এখন তা পুরোপুরি চলছে! যখন ছোটো ছিল অল্প হলেও পরিবারের জন্য আয় করতে হয়েছে, আবার কখনো রোজগারের জন্য মাসকে মাস, বছরও কেটে যায়, তার পরিবার ছেড়ে থাকতে হয়েছে। তার ভাগ্যে বিদ্যে যোটেনি! তো সে বেহায়া হবে না তো কি হবে? তাই সে যেমনটা ঠিক মনে করে সে কর্তব্য পালন করে।

      আপনি ঠিকই বলেছেন পুরুষেরা মেয়েদের দিয়ে বেশি কাজ করিয়ে নেয় তবে যন্ত্রনাটা একমাত্র আমি আপনি বেশি করে উপলব্ধি করি, তাদের কতটা মনে হয় কে জানে। মাছ ভাজতে কস্ট হয় জানি কিন্তু মাছ ধরাও সহজ নয়। আরে ভাই…দায়িত্ব পালন করতে গেলে কমবেশি কষ্ট তো হবেই!

      ঘটনাটা ঠিক দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচারের মতো কিন্তু এক্ষেত্রে দুর্বলের উপর দুর্বলের অত্যাচার। মুনিয়ার বাড়ির লোকের আমার আপনার মতো শান্ত মস্তিস্ক নেই যে এতটা ভেবে দেখবে। একান্ত যদি ঐ শ্রেণীদেরকে সাহায্য করতেই হয় তবে এভাবে হবে না। কারণ তাদের কাছে ইসলাম থাকলেও এলেম নেই। আর যদি তাদের এলেম থাকতো আমার আপনার ভাবতে হতো না, কার কেমন দায়িত্ব তা ইসলাম সবার আগে বলে দিয়েছে।

      তাই ঘটনাগুলি ক্রমে আপনার দেওয়া উপদেশ আমাদের কাছে উপলব্ধি হয়েই থাকবে, যেটা হাজার হাজার বছর ধরেই চলছে, সমাধান হওয়া অসম্ভব।
      এই দেখুন না কারো বেতন ৩০০০০ তবুও কোনোরকমে তার ৩০টা দিন কাটে! আবার কারো ৩০০০ তাদেরও দিন কাটে। এর সমাধান এখনো হয়েছে? না যেমনটা চলছে ঠিক?
      সুতরাং সমব্যথা পাওয়টা স্বাভাবিক কিন্তু সমাধানটা কি করে হবে?

    • চমকে গেলাম! এত উপর থেকে জানি আমরা! মুসলমান সমাজের নীচতলার মানুষজনের জীবন-যাত্রার এমন খাঁটি দলিল!

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    You may use these HTML tags and attributes: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>

     



    তথ্য নীতি | Privacy policy

 
Website © and ® by Ebong Alap / এবং আলাপ, 2013-24 | PRIVACY POLICY
Web design & development: Pixel Poetics