মেয়েদের ভোটাধিকার আন্দোলনের সালতামামি
0 941মোটামুটি আঠেরোশ শতাব্দীর শুরু থেকেই একটা বিপথগামী হাওয়া বইছিল ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। রাজা দ্বাদশ চার্লসের মৃত্যু দিয়ে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনে রাজনৈতিক রদবদলের ফলে মহিলাদের ভোটাধিকার দেওয়া হল ১৭১৮এ। ১৭৭২-এর মধ্যে তা আইন করে বন্ধও করে দেওয়া হল। কর্সিকাতেও আঠেরশো শতকের মাঝামাঝি এই প্রথা চালু হয়েছিল- তা অবশ্য এক দশকের বেশি টেকেনি।
আঠারশো শতকের মাঝামাঝি থেকেই আমেরিকা ও ইংল্যান্ডে সাংগঠনিক পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছিলেন সাফ্রাজিস্টরা। তারপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নারী আন্দোলনকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গিতে বদল আসে। অধিকাংশ স্বাধীন দেশে যুদ্ধ চলাকালীনই মহিলাদের ভোটাধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া
১৮৯৩-এ মেরী কল্টন ও মেরী লির নেত্রীত্বে উইমেনস সাফ্রেজ লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৯৪-এর সাংবিধানিক পরিবর্তনে ভোটাধিকার পেলেন ঠিকই নিউজিল্যান্ডের সাফ্রাজিস্টরা, কিন্তু নির্বাচনে ভোটপ্রার্থী হয়ে দাঁড়ানোর অধিকার পেলেন না। অস্ট্রেলিয়ায় প্রাথমিকভাবে ভোটের অধিকার মহিলারা পেয়েছিলেন ১৮৯০-এ। যদিও তখনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার অধিকার ছিল না। ১৯০২-এ অস্ট্রেলিয়ার সাফ্রাজিস্টরা ফেডারেল ইলেকশনে অংশগ্রহণের অধিকার আদায় করেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১১টি রাজ্যে মহিলারা ভোট দেবার দাবিতে সফল হয়েছিলেন মার্কিন ১৯১৪ সালে। সমগ্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মহিলাদের ভোটাধিকার স্বীকৃতি পায় ১৯১৯-এ।
ডেনমার্ক ও নেদারল্যান্ড
ডেনমার্কে মহিলারা ভোটাধিকার পান ১৯১৫ সালে। তার পাশের দেশ নেদারল্যান্ডের মহিলারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও ভোটদানের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে জয়ী হলেন ১৯১৯-এ।
ব্রিটিশ যুক্তরাজ্য
যে সাম্রাজ্যে সূর্য অস্ত যায় না, তার বুকের মধ্যিখানের ছোট্ট দ্বীপটিতে এর দাবানল ছড়িয়েছিল অনেকখানি। মিসেস ফসেটের নেত্রীত্বে National Union of Women's Suffrage Societies তৈরি হয়েছে; মিসেস প্যানখারস্ট সেই দল ভেঙে বেরিয়ে নতুন দল Women's Social and Political Union করেছেন ১৯০৩ সালে। ১৯০৭ সালে, এর পাশাপাশি সংগঠিত হয়েছে পুরুষতন্ত্রের মহিলাবাহিনী Women’s National Anti-Suffrage League।
১৯১১এ লন্ডনে Women’s Coronation Procession-এ ভারতের সাফ্রাজিস্ট দলও মিছিলে হেঁটেছিল। ইংল্যান্ডের সাফ্রাজিস্ট মুভমেন্টে সোফিয়া দিলীপ সিংহের ভূমিকা আজ আমাদের অজানা নয়।
ইংল্যান্ডের তাবড় তাবড় পার্লামেন্টারিয়ানরা তো বটেই, এমনকি উজ্বল মহিলারাও এই দাবিতে নিতান্ত খুশি ছিলেন না। ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল ১৮৬৭তে ঘোষণাই করেফেললেন, যে সরকারী অফিসের বিভিন্ন কাজে যে দীর্ঘ কর্মজীবন ব্যয় করেছেন, তাতে ভোটাধিকার না থাকাটা তার কাছে একটা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে কখনোই মনে হয়নি। আর লন্ডনেশ্বরী, যাঁর সম্মানার্থে সাফ্রাজেট পত্রিকা ব্রিটানিয়া নামেও ছাপা হবে, যাঁর উদাহরণ মাঝেমধ্যেই দেবেন সাফ্রাজিস্টরা তাদের আদর্শ ও প্রেরণা হিসাবে, তিনি তো স্পষ্টই বললেন, যে ‘mad wicked folly of women's rights’-এ তাঁর ঘোর আপত্তি আছে।
ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যে মহিলা সাফ্রেজদের দীর্ঘ সংগ্রামের পর মহিলাদের ভোটাধিকার আইনি স্বীকৃতি পায় ১৯১৮-তে। যদিও ১৯১৮ সালের আইনে শুধুমাত্র ৩০ বছরের উর্ধের সেইসব মহিলাদের ভোটাধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল যাঁদের নামে কিছু সম্পত্তি আছে।
ভোটদানের আংশিক ও বৈষম্যমূলক অধিকারলাভের পর আরও দশ বছর লড়াই চলে। অবশেষে ১৯২৮-এ ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যের মহিলারা পুরুষদের মতো ২১ বছর বয়সে ভোট দেওয়ার অধিকারলাভ করেন।
তুরস্ক
পশ্চিম এশিয়ায়, তুরস্ক প্রথম দেশ হিসাবে মহিলাদের ভোটাধিকারকে স্বীকৃতি দেয় ১৯৩০ সালে। মুস্তাফা কামাল আতাতুর্ক অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর তুরস্ককে সেক্যুলার গণতান্ত্রিক দেশ হিসাবে গড়ে তোলার অংশ হিসাবে মহিলাদের ভোটাধিকারকে স্বীকৃতি দেন।
ভারত
অ্যানি বেসান্ত, ডরোথি জিনরাজাদাস এবং মার্গারেট কাজিন্স মহিলা সাফ্রেজ আন্দোলনের অংশ হিসাবে উইমেন’স ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন (WIA) প্রতিষ্ঠা করেন ১৯১৭ সালে।
এর পরের বছর সরোজিনী নাইডুর নেতৃত্বে WIA কর্তৃক মহিলাদের ভোটের দাবিতে দাখিল করা পিটিশন ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে ভারতে নিযুক্ত মন্টেগু-চেমসফোর্ড কমিশনের কাছে পাঠানো হয়।
সাউথবরো ফ্র্যাঞ্চাইজি কমিটি তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে যায় ১৯১৮-তে। কিন্তু মহিলাদের ভোটদানের সপক্ষে মাত্র দুটি প্রদেশ থেকে পিটিশন জমা পড়ায় কমিটি সিদ্ধান্ত নেয়, ভারতীয় মহিলারা ভোটদানে আগ্রহী নন। জয়েন্ট সিলেক্ট কমিটির সাথে লড়াই করার পর, পার্লামেন্ট মহিলাদের ভোটদানের অধিকারের বিষয়টি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের উপর ন্যস্ত করে।
১৯২০-২১-এ দেশের মধ্যে ত্রাভাঙ্কোর-কোচিনের দেশীয় রাজ্য প্রথম মহিলাদের ভোটাধিকারকে স্বীকৃতি দেয়। মাদ্রাজ প্রথম মেয়েদের ভোটদানের অধিকারে সিলমোহর দেয়। ওই বছরেই বম্বে রাজ্যেও মহিলাদের ভোটাধিকার স্বীকৃত হয়।
মুথুলক্ষ্মী রেড্ডী দেশের প্রথম মহিলা হিসাবে মাদ্রাজে কাউন্সিলার পদে নির্বাচিত হন ১৯২৭-এ।
বাঙলায় কামিনী রায়, কুমুদিনী মিত্র এবং মৃণালিনী সেনের নেতৃত্বে নির্বাচনে মেয়েদের ভোটাধিকার অর্জন এবং দেশগঠনের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে অংশীদার হওয়ার লক্ষ্যে ১৯২০ সালে ‘বঙ্গীয় নারী সমাজ’ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯২১ সালে বাঙলার প্রাদেশিক সরকার মেয়েদের ভোটাধিকার দানের আবেদন খারিজ করে দেয়। ১৯২৫ সালে বাঙলার মহিলারা আংশিক ও শর্তসাপেক্ষ ভোটাধিকার অর্জন করেন। বিবাহিত, শিক্ষিত এবং সম্পত্তির মালিকানা আছে এমন মহিলারাই প্রথমবার বঙ্গদেশে ভোটদান করেন তার পরের বছর, ১৯২৬ সালে।
স্বাধীনতালাভের পর সমগ্র দেশে মহিলাদের ভোটাধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
সম্পাদনা : শ্রমণা দাস ও সুদীপ চক্রবর্তী
Tagsadolescence age of consent age of marriage caa child marriage corona and nursing covid19 Covid impacts on education domestic violence early marriage education during lockdown foremothers gender discrimination gender identity gender in school honour killing human rights intercommunity marriage interfaith marriage lockdown lockdown and economy lockdown and school education lockdown in india lockdown in school lockdown in schools love jihad marriage and legitimacy memoir of a nurse misogyny nrc nurse in bengal nursing nursing and gender discrimination nursing in bengal nursing in india online class online classes during lockdown online education right to choose partner school education during lockdown social taboo toxic masculinity transgender Women womens rights
Leave a Reply