ভারতীয় সুন্দরবনের জঙ্গলজীবী মহিলারা
2 947
এ এমন এক জঙ্গল যার তুলনা করা যায় না পৃথিবীর অন্য কোনও জঙ্গলের সাথে৷ একটানা এত বিশাল অঞ্চল জুড়ে ম্যানগ্রোভ যেমন পৃথিবীর অন্য কোথাও নেই, তেমনি এই জোয়ার-ভাঁটার নিত্য আসা যাওয়ার জঙ্গলে বাঘ-এর দেখাও অন্য কোথাও মেলে না৷ শুধু এই ‘বাঘ’ সম্পর্কিত খ্যাতি বা অখ্যাতিই সুন্দরবনকে বিশিষ্টতা দিয়েছে তা নয়৷ পৃথিবীর আর কোনও এমন ভয়ঙ্কর বনের এত কাছে এত ঘন স্থায়ী মানুষের বসতির দেখা পাওয়া সহজ নয়৷ শুধু বসতি নয়, এই বসতির জঙ্গল নির্ভরতাও অবাক করার মত, আজও৷
সুন্দরবন বিষয়ক একটি ত্রৈমাসিকের সম্পাদক হিসাবে গত কয়েকবছর ধরে ভারতীয় সুন্দরবনের কিছু জঙ্গলঘেঁষা প্রান্তিক গ্রামে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছি৷ ‘সুখী’ ক্ষেত্রসমীক্ষকের মত রেকর্ডারে ধরে রাখা সেইসব তথ্য বা অভিজ্ঞতা সুন্দরবনের ‘নতুন’ পরিচয় পাঠকের কাছে তুলে ধরবে এমনটা প্রত্যাশা করি না৷ ব্যক্তিগতভাবে আমার একটি সুবিধার দিক হল এই সময়কালে সুন্দরবন নিয়ে যাঁরা বিভিন্ন আঙ্গিক থেকে কাজ করছেন তাঁদের নিরন্তর সাহচর্য লাভ৷ নিজেদের দেখা (সে দেখা অবশ্য নেহাতই অন্ধের হস্তী দর্শন) আর এইসব সুন্দরবন বিশেষজ্ঞ এবং সুন্দরবনের সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতার নিরিখে এই লেখা৷
আজ এই দুহাজার পনের-ষোল সালেও ভারতীয় সুন্দরবনের জঙ্গলঘেঁষা গ্রামগুলোতে মানুষের জঙ্গল নির্ভরতা অবাক করার মত৷ এই আলোচনায় ভারতীয় সুন্দরবনের জঙ্গল প্রান্তবর্তী গ্রামের মহিলাদের জঙ্গলনির্ভরতা নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করব৷
ভারতীয় সুন্দরবনের জঙ্গলঘেঁষা গ্রামগুলির মহিলাদের জনগণনার পরিসংখ্যানে চোখ বোলালে দেখা যাবে এখানে গড়ে ৮০ শতাংশ মহিলা ‘কর্মহীন’ হিসাবে চিহ্নিত৷
গোসাবা, ক্যানিং বা হিঙ্গলগঞ্জের কোনও জঙ্গলঘেঁষা গ্রামে গিয়ে যদি দিন কতক থাকতে পারেন তাহলে আপনার চোখের সামনে স্পষ্ট হয়ে যাবে উপরের তথ্যটির অসারতা, প্রায় প্রতিটি নিম্নবিত্ত বাড়ির মহিলারা সকাল-সন্ধ্যা জঙ্গলের কোল ঘেঁষা অঞ্চলে চলে যাচ্ছেন জীবনধারণের রসদের সন্ধানে৷ কেউ ধরছেন মাছ, কেউ ধরছেন কাঁকড়া, কেউবা সংগ্রহ করছেন শুকনো কাঠ৷ বস্তুত এদের জীবন বাজি রেখে সংগ্রহ করা এইসব ছোট ছোট উপাদানে সচল হয়ে আছে ঐ সংসার৷
প্রায় প্রত্যেক গ্রামেই দেখেছি বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই মহিলাদের জঙ্গল নির্ভরতা যেন বেড়ে চলেছে৷ স্বামীর অকালে মৃত্যু কিংবা পুত্রের অবহেলা এদের বেঁচে থাকাকে যখন প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিচ্ছে তখন অনিবার্যভাবে এঁদের হাত পাততে হচ্ছে জঙ্গলের কাছে৷ যৌবনে স্বামীর সঙ্গী হয়ে যিনি গভীর সুন্দরবনে মাছ-কাঁকড়া ধরেছেন, যিনি ভয়াল রয়েল বেঙ্গলের মুখোমুখি হয়ে প্রাণপণ চেষ্টায় ফিরিয়ে আনতে পারেননি স্বামীকে, তিনি বৃ্দ্ধ বয়সে গ্রামের প্রান্ত ঘেঁষা জঙ্গলে ধীর পায়ে জাল টেনে মাছ-কাঁকড়া ধরছেন ভাঁটার সময়—এই দৃশ্য সুন্দরবনের অতি পরিচিত৷ জঙ্গল এখানে মানুষের কাছ থেকে যেমন সবকিছু কেড়ে নেয়, তেমনি পরম মমতায় জোগান দেয় বেঁচে থাকার মহার্ঘ রসদ৷
ইংরেজদের হাত ধরে বন ধ্বংস করে আবাদ করার কাজ যখন প্রায় শেষের পথে তখন জঙ্গলে গিয়ে কাঠ বা মধু সংগ্রহে কোনও সরকারী বিধিনিষেধ ছিল না৷ স্বাধীনতার পরেও অনেকদিন একই অবস্থা চলেছিল৷ সেই যুগে বাঘ-সাপ-কুমিরের হাতে প্রাণ হারানোর সংবাদ অনেকক্ষেত্রেই এসে পৌঁছায়নি তথাকথিত সভ্য সমাজে৷ এখন সময় পাল্টে গেছে অনেকটাই৷ ‘কোর এরিয়া’-র জঙ্গলকে ঘিরে ফেলা হয়েছে প্রায় সব জায়গাতেই হলুদ রঙের নাইলনের জাল দিয়ে এখন জঙ্গলে ঢোকার সময় (কোন মাস থেকে কোন মাস) যেমন নির্দিষ্ট তেমনি নির্দিষ্ট কত জন কি কি জিনিস নিয়ে কত দিনের জন্য থাকতে পারবেন জঙ্গলে, নির্দিষ্ট এটাও যে কোনও জিনিস কতটা পরিমাণে তাঁরা নিয়ে আসতে পারবেন গহন সুন্দরবন থেকে৷ অনেকেই সরকারি বিধিনিষেধ আর বাস্তব পরিস্থিতির মধ্যে আকাশ-পাতাল ফারাকের কথা বলবেন৷ কিন্তু অস্বীকার করে লাভ নেই আজ থেকে তিরিশ বছর বা চল্লিশ বছর আগে জঙ্গলে ঢোকা আর আজকের জঙ্গলে ঢোকার মধ্যে সত্যিই আসমান-জমিন ফারাক৷ জঙ্গল থেকে কাঠ আনা বা বন্য প্রাণী মারা যে বে-আইনি সে কথা আজ সুন্দরবনের ছোট বাচ্চাও জানে, জানে ‘সিজিন’ ছাড়া কাঁকড়া ধরা বা মধু সংগ্রহের নিষেধাজ্ঞার কথাও৷ তবে সবক্ষেত্রে সেসব নিষেধ যে তাঁরা মেনে চলেন বা বলা ভালো মেনে চলতে পারেন এমনটা নিশ্চয়ই নয়৷
একটা কথা খুব স্পষ্টভাবে বোঝা দরকার আক্ষরিক অর্থেই পৃথিবীর কোনও জঙ্গলের সাথে এই জঙ্গলের তুলনা করা চলে না৷ এখানে প্রতি পদে লুকিয়ে আছে মৃত্যুর হাতছানি৷ এই জঙ্গলে একটি পা ফেলে অন্য পাটিকে টেনে তুলতে মাথার ঘাম পা-এ চলে যায়৷ এখানে হাঁটু সমান থকথকে কাদার নিচে লুকিয়ে থাকে সমকোণে আকাশের দিকে চেয়ে থাকা ম্যানগ্রোবের তীক্ষ্ণ শুলো৷ এখানে জোয়ারের জলের সাথে সরু খাঁড়িতেও ঢুকে আসে ভয়ঙ্কর মোহনার কুমির বা কালান্তক কামট৷ এখানে গাছের ডাল থেকে নিঃশব্দে নেমে আসে মারাত্মক বিষাক্ত সাক্ষাৎ মৃত্যুর সমার্থক নানা ধরনের সাপ৷ আর ডাঙায় ক্ষিপ্র ভয়ঙ্কর রয়েল বেঙ্গল৷ সরকারি হিসাবে গতানুগতিক গলদ সংশোধন করে লুকোনো ক্যামেরার নজরদারির পরেও যার সংখ্যা সত্তরের নিচে নামানো যায় নি৷ সন্দেহ নেই এই ভয়ঙ্করের মুখোমুখি হওয়া আর মৃত্যুর মাঝে থাকে কয়েক মুহূর্তের ব্যবধান৷ আমরা (শহুরে গবেষক, প্রাবন্ধিক, পরিবেশবিদরা) যখন বন ধ্বংসের অভিযোগে অভিযুক্ত করি সাধারণ প্রান্তবাসী মানুষদের তখন একবারও ভাবি না ভয়াল এই জঙ্গলের মুখোমুখি হয়ে একান্ত প্রিয়জনকে চিরকালের মত হারিয়ে ফেলার পরও কি কেউ শখ করে যেতে চাইবেন এই ভয়ঙ্কর জঙ্গলে? ২০১৫ সালের জুলাই সংখ্যায় আমাদের পত্রিকায় (শুধু সুন্দরবন চর্চা) বাঘের আক্রমণে নিহত একজন মানুষের মৃতদেহের ছবি ছেপেছিলাম, বীভৎস সেই দেহ দেখে অনেকেই আমাকে তীব্র ভাষায় ভর্ৎসনা করেছেন৷ যে ভয়ঙ্করের ‘ছবি’ পর্যন্ত আমরা সহ্য করতে পারছি না, সে ভয়ঙ্করের মুখোমুখি দাঁড়ানো কত কষ্টের সে বোধ আমাদের কবে হবে কে জানে? এই ঘটনার কথা উল্লেখ করলাম কারণ, যে যুবকের মৃতদেহের ছবি আমরা প্রকাশ করেছিলাম তাঁর স্ত্রী তার ছোট ছোট দুটি বাচ্চাকে মানুষ করার জন্য এখন জঙ্গলজীবী৷ হ্যাঁ ২০১৫ সালেও এই আমাদের সুন্দরবনের প্রকৃত চিত্র৷ এখানে মৃত্যুর সাথে প্রতি রাত কাটানো, জেগে ওঠাও মৃত্যুর সাথেই৷
সাতজেলিয়ার সেই ঠাকুমার কথা খুব মনে পড়ছে, লক্ষ্মী মণ্ডল (নাম পরিবর্তিত)৷ স্বামীকে বাঘের মুখে পড়তে দেখেছেন নিজের চোখে৷ চুলকাটির জঙ্গলে বাঘ যখন তাঁর স্বামীকে নৌকা থেকে তুলে নিয়ে যায় তখন সারাদিন কাঁকড়া ধরে ফিরে নৌকায় রান্না করছিলেন লক্ষ্মী৷ বাঘের পিছু ধাওয়া করে জঙ্গলের মধ্যে বেশ কিছুদূর গেলেও গামছা ছাড়া কিছুই ফিরিয়ে আনতে পারেন নি৷ সেই দুর্ঘটনা এখন আর লক্ষ্মী ঠাকুমাকে আতঙ্কিত করে না৷ খুব স্বাভাবিক মুখে বলে যান সেই বিবরণ—“ঐ জঙ্গলের ধারে কাঁকড়া মারি আসি আমরা বসি আছি নৌকায়, তোমার ঠাকুর্দা একটা বিড়ি ধরায়ে ওধারে বসিছে, আমি এধারে রান্নার জোগাড় করতিছি—এমন সময় এধারে ওধারে হেতাল গাছ ছিল, লাফ দিয়ে আসি পড়ল—এখ বারি, নিয়ি হাঁটা দিল৷”
এখন ঠাকুমার দুই ছেলে আলাদা ঘর করে থাকে৷ এক মেয়ের আগেই বিয়ে হয়েছিল, সে থাকে হাসনাবাদে৷ ঠাকুমাকে দেখার কেউ নেই৷ ঠাকুমা যে ঘরে থাকেন সেটা দেখলে আমাদের শহুরে সত্ত্বা শিউরে ওঠে৷ গাঁড়াল নদীর বাঁধের পাশে খাস জমিতে তাঁর ছোট্ট একটি ছিটে বেড়ার ঘর৷ বাঁধ এখানে আইলার সময় ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছিল৷ কোনওরকমে বাঁশ আর বালির বস্তা দিয়ে আটকানো রয়েছে৷ সরকারি নথিতে ‘আইলা প্রজেক্ট’ হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে জায়গাটা৷ মাপজোক হয়েছে সেও প্রায় বছরখানেক আগে৷ ব্লক পিচিং-এর পাকা বাঁধ হবে এখানে৷ কিন্তু সেই দুই হাজার নয় সালের আইলার পর আজ পর্যন্ত সে কাজ হয়ে ওঠেনি৷ আজ যখন ভরা জোয়ারে বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসে প্রবল ঢেউ, দুর্বল বাঁধের মাথায় মাথায় হয়ে থাকে দুরন্ত নদীর জল, তখন ঠিক তার নিচে লক্ষ্মী ঠাকুমা তাঁর ছোট ঘরটিতে ভেজা কাঠ কোনও রকমে জ্বালিয়ে ফুটিয়ে নিতে চান তাঁর একবেলার অকিঞ্চিৎকর আহার৷ হ্যাঁ নিজের চোখেই দেখেছি সরকারি হিসাবে তিনি ‘বি.পি.এল’-নন৷ তাঁর ছেলেরা দুটাকা কেজি সরকারি চাল পেলেও তিনি আজ অবধি সে কোটায় নাম তুলতে পারেন নি৷ লক্ষ্মী ঠাকুমার সাথে মাস তিনেক আগে বাঁধের ওপর সন্ধ্যে বেলা দেখা, দুটো বড় কাঁকড়া পেয়েছে নদীতে বিক্রি করতে চলেছে ‘খটি’তে৷ আমায় দেখে এক গাল হেসে বললেন “একটা কাঁকড়া নেবা৷”
রাস্তা-ঘাট, স্কুল-কলেজ, কূপ-নলকূপ অনেক কিছুই সুন্দরবনকে নতুনরূপ দিচ্ছে পাল্টে যাচ্ছে প্রতিদিন সুন্দরবনের সেই চিরকালীন পশ্চাদবর্তীতা, তবু এই প্রান্ত সুন্দরবনের জঙ্গলঘেঁষা গ্রামগুলোর মানুষের জঙ্গল নির্ভরতা বাড়ছে বই কমছে না৷
প্রথম প্রথম যখন সুন্দরবনে গিয়ে সজনেখালির উল্টো পাড়ের টুরিস্ট লজ-এ থাকতাম তখন দেখা হয়েছিল তরুণী গৃহবধূ সঞ্চিতা গায়েন-এর সাথে৷ একটা ঝুড়ি কাঁখে নিয়ে নদীর ধার ঘেঁষে ভেসে আসা ক্যাওড়ার ফল কুড়োচ্ছে সে৷ খুব ভোরে উঠে নদী বাঁধের ধারে বসেছিলাম—গল্পে গল্পে সে বলল অনেকদিন বাদে শ্বশুর এসেছে বাড়িতে৷ তাকে সে ক্যাওড়া ফলের টক রান্না করে খাওয়াবে, তাই সকাল থেকে বেড়িয়েছে৷ দারিদ্রে্যর চিহ্ন আঁকা ছিল তার শাড়িতে, শরীরে কিন্তু তার মুখে কোথাও অতৃপ্তির বেদনা দেখিনি৷ দূরে বোঝা বাধা গাছের ডাল—তার দুপুরের রান্নার জ্বালানী৷ ঝুড়ি ভরে গেছে কেওড়ার ফলে, তার শ্বশুরমশাই ভালোবাসেন—উজ্জ্বল মুখে বারবার বলছিল—কাকভোরে উঠে নদীর ধারে ধারে ঘুরে সংগ্রহ করতে পেরেছে এই ফল৷ নদীর জলের সাথে ভেসে আসা এই নগণ্য ফলকে কি বলব? জঙ্গলের দান! একেও কি বলব না জঙ্গল নির্ভরতা৷ আজও তাই সুন্দরবনের সুখ-দুঃখ জুড়ে আছে জঙ্গলই৷
সুন্দরবনের মেয়েদের জঙ্গল নির্ভরতা কোন পর্যায়ে রয়েছে সে তথ্য জানার জন্য প্রয়োজন প্রতিটি জঙ্গল ঘেঁষা গ্রাম থেকে তথ্য সংগ্রহের৷ এতকাল সুন্দরবন নিয়ে আমরা যেসব কথা শুনে এসেছি তার একটি চেনা ছবি হল স্বামীর যখন জঙ্গলে যান তখন তেল সিঁদুর মাথায় না দিয়ে ঘরে থাকেন তাঁদের স্ত্রীরা৷ পৃথিবী এগিয়ে চলেছে—সুন্দরবন কি থেমে আছে সেই অতীতের দু-তিনটি ক্লিসে হয়ে যাওয়া গদ্য-উপন্যাস-আখ্যানের দুনিয়ায়? আজকের সুন্দরবনের মেয়েরা হাত পা গুটিয়ে ঘরে বসে থাকলে তাদের সংসার অচল হয়ে যেত অনেক আগেই৷ জঙ্গলের মধু, কাঁকড়া বা মাছ ধরার দলে মেয়েদের উপস্থিতির সংখ্যাও কিন্তু লক্ষণীয়৷ বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের প্রয়োজন এখানেই যে ঠিক কতজন মহিলা নিয়মিত গভীর জঙ্গলে যান? কতজন তাঁদের গ্রাম লাগোয়া নদীর ওপারের জঙ্গলের পাশে যান বেঁচে থাকার তাগিদে৷
যেভাবে দেশের অন্য জায়গার মহিলাদের অবস্থান নির্ণিত হয় সরকারি নথিতে সেই ভিত্তিগুলি কিন্তু সুন্দরবনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না৷ মনে রাখা প্রয়োজন এই বনাঞ্চলে ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের দিকগুলি৷ এখানে প্রতিটি ভরা জোয়ার বয়ে আনে বন্যার ভ্রূকূটি, এখানে জঙ্গলে কাটানো প্রতিটি রাত আসলে সাক্ষাৎ মৃত্যুর সাথেই সহবাস৷
ছবির বইতে, সিনেমায় বা তথ্যচিত্রে আমরা যে জঙ্গল দেখতে পাই সুন্দরবনের, তার সাথে প্রকৃত গহন সুন্দরবনের তফাতটা লিখে বা বলে বোঝানো সম্ভব নয়৷ বনবিভাগের বিধিনিষেধের জাল তুলে একবার বে-আইনিভাবে জেলে নৌকায় চেপে গহীন সুন্দরবনে ঢোকার অপরাধ করেছিলাম৷ ছোট খাঁড়িতে দুদিক থেকে নিচু হয়ে আসা জঙ্গল সরিয়ে হাত কুড়ি এগিয়েছে সব নৌকা—কানে এল খট্ খট্ শব্দ৷ নির্ভুলভাবে আমারই দুর্বল দুই দন্ডপাটির পরস্পর সংঘর্ষের অনিবার্য আওয়াজ৷ ফিরে আসার কথা বলার ক্ষমতাও ছিল না—আমার অবস্থা দেখে অসম বয়সী বন্ধু বৃদ্ধ জেলে বিজয়দা ও তাঁর স্ত্রী প্রণতি বৌদি নৌকা ঘুরিয়ে আমাকে বাঁধের ওপর নিরাপদ আশ্রয়ে রেখে চললেন জীবনধারণের খুদ-কুঁড়ো জোগাড় করতে৷ যে জঙ্গলে দশ মিনিট থাকার সাহস সঞ্চয় করে উঠতে পারি না, সেখানে দিন-রাত কাটানো প্রণতি বৌদিদের অধিকাংশ আমাদের সরকারি নথিতে ‘কর্মহীন’৷ ভাবা যায়!
বারণরেখা পত্রিকায় (ফেব্রুয়ারি ২০১৬) প্রথম প্রকাশিত। বানান ও ভাষা অপরিবর্তিত রেখে পুনঃপ্রকাশিত।
Tagsadolescence age of consent age of marriage caa child marriage corona and nursing covid19 Covid impacts on education domestic violence early marriage education during lockdown foremothers gender discrimination gender identity gender in school honour killing human rights intercommunity marriage interfaith marriage lockdown lockdown and economy lockdown and school education lockdown in india lockdown in school lockdown in schools love jihad marriage and legitimacy memoir of a nurse misogyny nrc nurse in bengal nursing nursing and gender discrimination nursing in bengal nursing in india online class online classes during lockdown online education right to choose partner school education during lockdown social taboo toxic masculinity transgender Women womens rights
Comments (2)
-
-
Writing of Jyotirindranarayan Lahiri deserves good appreciation. His description about life of womens in Indian part of Sundarban is very much real. Also his experience and feeling touches our heart.
Leave a Reply
-
এত দরদী-দায়ভার মানুষের জন্যে-মানুষের পাশে থেকে,
এত নির্মেদ অথচ এত স্নেহমেদুর শব্দচয়ন,-
মুগ্ধ করে, আবারও মুগ্ধ হলাম।