• জঙ্গলে গেলে বাঘের আক্রমণে মৃত্যু, না গেলে অনাহারে মৃত্যু


    1    239

    December 29, 2017

     

    ‘শুধু সুন্দরবন চর্চা’র সম্পাদক মাসখানেক আগে আমাকে জানিয়েছিলেন যে তিনি সুন্দরবনের মহিলাদের ওপর একটা সংখ্যা বের করবেন৷ তাতে আমার একটা লেখা দিতে হবে৷ আমি সম্মতি জানিয়েছিলাম৷ তখন আমার মনে সুন্দরবনের অসংখ্য দুর্দশাগ্রস্থ বিধবাদের করুণ মুখ ভেসে উঠল৷ যাঁদের স্বামীরা জঙ্গলে কাঁকড়া ধরতে এবং মধু ভাঙতে গিয়ে বাঘের আক্রমণে মারা গেছেন৷ জোয়ান স্বামীর অকাল মৃত্যুতে শোকে উন্মাদ মাকে চোখের জল মুছতে মুছতে কিশোর পুত্রের জঙ্গলে যাওয়াকে মেনে নিতে হচ্ছে৷ জঙ্গলে পাঠিয়ে মা অব্যক্ত যন্ত্রণা বুকে নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন৷ এমন অনেক মহিলা আছেন যাঁরা তাঁদের অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে জঙ্গলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন৷ নিঃস্ব সমস্ত স্বামীহারাকে ভাগী হিসেবে না নেওয়াতে, কান্নাকাটি করে নাবালক সন্তানকে সাথী করে নৌকোতে উঠতে হয়েছে৷ এদের কথা আমার সদ্য প্রকাশিত বইতে (সুন্দরবনের কাঁকড়ামারা) উল্লেখ আছে৷ তাই আমি ঠিক করলাম ‘শুধু সুন্দরবন চর্চা’-র জন্য নতুন কোনও ঘটনার সন্ধান করবো৷

    ২১শে নভেম্বর (২০১৪) ভোরবেলা বাড়ি থেকে বেরিয়ে চার ঘন্টার বাস যাত্রায় রামগঙ্গা খেয়াঘাটে পৌঁছলাম৷ খোঁজ নিয়ে জানলাম আমার গন্তব্যস্থলের ভুটভুটি সবেমাত্র ছেড়ে গেল৷ পরেরটার জন্য আমাকে প্রায় ঘন্টাখানেক অপেক্ষা করতে হবে৷ বড়চূড়া নদীর ওপর রামগঙ্গা খেয়াঘাট৷ অন্যান্য যাত্রীদের সঙ্গে খেয়াঘাটে অপেক্ষা করছিলাম৷ যথাসময়ে যাত্রীভরা ভুটভুটি ঘাটে এসে থামল৷ থামতেই, যাত্রীরা তাড়াহুড়ো করে নামতে শুরু করলেন৷ মিনিট দশেকের মধ্যে ভুটভুটি খালি হল এবং নতুন যাত্রীতে ভরেও গেল৷ শীতের দুপুর৷ বয়স্ক মানুষ এবং প্রায় সব মহিলারা ভুটভুটির চালে উঠে বসল৷ এগার-বারো ক্লাসের দুজন ছেলের সাহায্যে আমিও ভুটভুটির চালে উঠে বসলাম৷ শীতের সময় হলেও, দুপুরের রোদের বেশ তেজ ছিল৷ তাই কেউ কেউ ছাতা, গামছা, খবরের কাগজ দিয়ে মাথাকে রোদ্দুর থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছিলেন৷ আমি দুজন সহযাত্রীর সঙ্গে গল্প করতে করতে চলেছি৷ ভুটভুটি যে ঘাটগুলোতে থামছে, সেই ঘাটগুলোর নাম এবং সেগুলো কোন্ কোন্ গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে পড়ে জেনে নিচ্ছিলাম৷ এক একটা দ্বীপ এক একটা গ্রাম পঞ্চায়েত৷ আমাদের ভুটভুটি তিনটে গ্রাম পঞ্চায়েত ছুঁয়ে, ছটা খেয়াঘাটে যাত্রী নামিয়ে আমার গন্তব্যস্থলে পৌঁছল৷

    আমি যে ঘাটে নামলাম তার নাম সত্যদাসপুর খেয়াঘাট৷ স্থানীয় মানুষ এই ঘাটকে সবুজবাজার খেয়াঘাটও বলেন৷ এই ঘাট থেকেই সত্যদাসপুর আদিবাসীপল্লীর শবর পুরুষ ও মহিলারা কাঁকড়া ধরতে এবং মধু ভাঙতে মেসিনবোটে করে সুন্দরবনের বিভিন্ন জঙ্গলে যান৷ এখানে চারটে কাঁকড়ার আড়ত আছে৷ আদিবাসীরা কাঁকড়া ধরে এনে এই সমস্ত আড়তে বিক্রী করেন৷ সবুজ বাজার থেকে স্থানীয় মানুষ তাঁদের সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা করেন৷ এই ঘাট থেকে ডবল সোলিং ইটের রাস্তা ধরে টানা চার কি.মি. হাঁটলে সত্যদাসপুর আদিবাসী পাড়া৷ রাস্তার দুধারে সার বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে ঝাউ আর সোনাঝুরি গাছ৷ এই আদিবাসী পাড়াতে আছে ১৩২টা শবর পরিবার৷ এখানে ৬টা সাঁওতাল পরিবারও থাকে৷ এই পাড়াতে বনদপ্তর থেকে একটা বড় পুকুর কেটে দিয়েছে৷ পুকুরটার আয়তন বিঘে চারেক হবে৷ পুকুরটার চারদিকে ছোট ছোট মাটির ঘর৷ খড়ের চাল৷ দু একটা টালির বাড়িও আছে৷ পাড়ায় একটা টিউবওয়েল আছে৷ দু-এক ঘর ছাড়া কারোর শৌচালয় নেই৷ বিদু্যতের আলো পৌঁছায়নি৷ দু-চার জন সৌর আলো ব্যবহার করেন৷ চারিদিকে ধান খেত৷ ধান পেকে গেছে৷ কোথায় কোথাও ধান কাটা শুরু হয়েছে৷ শবরদের পাড়ায় একটা আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে৷

    আদিবাসী পাড়ার সমস্ত প্রত্যেক পুরুষ ও মহিলা কাঁকড়া ধরতে যান৷ প্রায় প্রত্যেক পুরুষরা মধু ভাঙতে গেলেও সব মহিলা মধু ভাঙতে যান না৷ এই আদিবাসী (ট্যাঙ্ক পুঞ্জর) পাড়া থেকে ২৪ জন মহিলা স্বামী, পুত্র অথবা নিকট আত্মীয়ের সঙ্গে মধু ভাঙতে যান৷ ভারতী মল্লিক (৪৭) নিয়মিত কাঁকড়া ধরতে এবং মধু ভাঙতে যান৷ স্বামী ঝড়ু মল্লিক চোদ্দ-পনেরো বছর আগে মধু ভাঙতে গিয়ে বাঘের আক্রমণে মারা যান৷ স্বামী যখন বেঁচে ছিলেন ভারতী মল্লিক তখন স্বামীর সঙ্গে একই নৌকোতে কাঁকড়া ধরতে এবং মধু ভাঙতে যেতেন৷ স্বামীর মৃত্যুর পর এখন আত্মীয় স্বজনের নৌকোতে যান৷ ভারতী মল্লিকের পাঁচ মেয়ে এবং দুই ছেলে৷ পাঁচ মেয়ের নাম: পাখি, বিনা, অহল্যা, কবিতা ও চৈতালি৷ দুই ছেলে: পরেশ ও স্বপন৷ ভারতী মল্লিক বিয়ের আগে থেকেই দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করছেন৷ স্বামীর মৃত্যুর পর সেই লড়াই আরও তীব্র হয়েছে৷ স্বামীর রেখে যাওয়া একমাত্র সম্পত্তি হল ছোট মাটির একটা কুঁড়ে ঘর৷ খড়ের চাল৷ ঘরে ঢোকার প্রবেশ পথ এত নিচু যে মাথা নুইয়ে তবেই ঘরে ঢোকা যায়৷ কোনও জানালার বালাই নেই৷ আছে একটা ছোট ঘুলঘুলি৷ তার মধ্যেই রান্না-খাওয়া, শোয়া-বসা, সবই করতে হয়৷ ঘরের মধ্যে ঢুকতে নজরে পড়ল কয়েকটা অ্যালুমিনিয়ামের থালাবাটি৷ খেঁজুর পাতার চ্যাটাই, উনুন, একটু জ্বালানি (গাছের শুকনো ডালপালা), কয়েকটা মলিন কাপড়-চোপড়, দু-একটা ছেঁড়া কাঁথা, আংড়ি (কাঁকড়া ধরার শিক), খন্তা (কাঠের হাতলওয়ালা শাবল), পুরোনো খান দুই সিনথেটিকের ব্যাগ ইত্যাদি৷

    ভারতী মল্লিককে দেখলে রুগ্ন মনে হয়৷ প্রকৃত বয়সের চেয়ে বেশি বয়স্ক দেখায়৷ শরীরে খড়ি ফুটে আছে৷ চুল রুক্ষ৷ চোখ-মুখ শুষ্ক৷ সারা শরীরে অযত্নের ছাপ স্পষ্ট৷ বাপের বাড়ি আঠারোগাছি (গদামথুরা)৷ বাবা জঙ্গলে মাছ কাঁকড়া ধরে সংসার চালিয়েছেন৷ একা খাটতেন৷ দশজন খেত৷ বাবা-মা পাঁচ বোন ও তিন ভাই৷ অভাবের সংসার৷ বাপের বাড়িতেই জঙ্গলে যাওয়ার হাতেখড়ি৷ সেয়ানা হওয়ার আগেই বিয়ে হয়েছে৷ বিয়ের সময় ঝড়ু মল্লিক ভারতীর বাবাকে ১৫০ টাকা পণ দিয়েছিলেন৷ ভারতীর ভাই বোনেরা কেউ কোনদিন স্কুলে যায়নি৷ ভারতী মল্লিককের সাত ছেলেমেয়েরাও কোনদিন স্কুলের মুখ দেখেনি, পাড়ার মধ্যে আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকা সত্ত্বেও৷ বিয়ের আগে থেকেই ভারতী জলে-জঙ্গলে খাটায় অভ্যস্ত৷ বিয়ের পর থেকে আজও সে অভ্যাসের কোন ছেদ পড়েনি৷ বড় মেয়েটা যখন একটু বড় হল, বাচ্চাগুলোর দায়িত্ব তার ওপর দিয়ে ভারতী মল্লিক স্বামীর সঙ্গে জঙ্গলে কাঁকড়া ধরতে এবং মধু ভাঙতে যেতেন৷ তারপর বড় ছেলেটা হাতে ধরা হতে সেও জঙ্গলে যাওয়া শুরু করল৷

    মাত্র ৪৭ বছর বয়সে বাঘের আক্রমণে ঝড়ু মল্লিকের অকাল মৃত্যুর ফলে ভারতী মল্লিকের জীবনে অন্ধকার নেমে এলো৷ কীভাবে এখন সাতজন ছেলেমেয়েকে নিয়ে বেঁচে থাকবেন? ভারতী মল্লিক শোকে বিহ্বল হলেও, কর্তব্যচ্যুত হননি৷ বড় ছেলেকে হাত ধরে নিয়ে সাহসে বুক বেঁধে জঙ্গল যাত্রা অব্যাহত রাখলেন৷ ভারতী মল্লিক বলেন, জঙ্গলে গেলে বাঘের আক্রমণে মৃত্যু, না গেলে অনাহারে মৃত্যু৷ মৃত্যু তাদের নিত্যসঙ্গী৷ এইভাবে ভারতী দেবী সাত ছেলেমেয়ে নিয়ে শুধু বেঁচে আছেন তাই নয়, চার মেয়েকে বিয়েও দিয়েছেন৷ বড় ছেলে বিয়ে করেছে৷ শাশুড়ির মতো বৌমার বাড়িও গোদামথুরায়৷ বৌমার নাম কুমারী মল্লিক৷ তার এক ছেলে এক মেয়ে৷ ছেলেটা বড়, বছর ছয়েক৷ জন্ম থেকে দেখতে পায় না৷ তাকে ডাকে অন্ধমনি বলে৷ মেয়েটা ছোট৷ বড় ছেলে, পরেশ মল্লিক, এখন থাকে ভিন্ন ভাতে৷ ভারতীর সঙ্গে থাকে ছোট ছেলে স্বপন, এবং ছোট মেয়ে চৈতালি৷ বড় ছেলের ছেলেটা (অন্ধমনি) ঠাকুমার খুব নেওটা৷ ঠাকুমা বাড়িতে থাকলে তাঁর কাছেই থাকে৷ নাতিটার জন্য ভারতীয় বড় কষ্ট৷ সে যে চোখে দেখতে পায় না৷ কী করে তার চলবে? কে তোকে দেখবে? বড় হয়ে কাঁকড়া না ধরলে, মধু না ভাঙলে যে উনুনে হাঁড়ি চড়বে না৷

    স্বামীর মৃত্যুর পর দেনা করে গ্রাম-খাওয়াতে হয়েছিল৷ স্বামীর মৃতদেহ বন দপ্তরের পক্ষ থেকে দাহ করা হয়৷ নচেৎ দেনা আরও বেড়ে যেত৷ গ্রাম-খাওয়াতে আট হাজার টাকা দেনা করতে হয়৷ সংসার চালাতেও কিছু কিছু দেনা হয়৷ মোট ২৫ হাজার টাকা দেনা ছিল৷ বাঘের আক্রমণে স্বামীর মৃত্যুর জন্য ভারতী মল্লিক বন দপ্তর থেকে ৩০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছিলেন৷ সেই টাকা থেকে সমস্ত দেনা শোধ হয়েছে৷ এখন আর ধার বাকি নেই৷ ভারতী কাঁকড়া ধরে আর মধু ভেঙে যে আয় করেন তাতে কোনভাবে চলে যায়৷ ছোট ছেলে এবং মেয়ে তো কাছে থাকেই৷ নাতির খাওয়া পরার সিংহভাগও ঠাকুমাকে বহন করতে হয়৷ ঠাকুমা খুশি মনেই সেটা করেন৷ ছোট ছেলের জঙ্গলে যাওয়ার বয়স এখনও হয়নি৷ তবুও সে যেতে চায়৷ একবার লুকিয়ে ভাগী হিসেবে কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিল৷ ছোট ছেলে জঙ্গলে যেতে চাইলে মায়ের ডর লাগে৷ স্বামীর বাঘের আক্রমণে ক্ষতবিক্ষত দেহটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে৷ তখন সারা শরীর শিউড়ে ওঠে৷ মা জানেন আজ না হোক, দুদিন পরে ছেলেকে বাঘের ডেরায় ঢুকতে হবে৷ এটাই শবরদের নিয়তি৷ ছোট মেয়ে চৈতালিকে বিয়ে দিতে হবে৷ বড় হচ্ছে৷ ছোট ছেলেকেও সংসার পাততে হবে৷ জঙ্গল-নির্ভর জীবনই একমাত্র ভরসা৷ ভারতী মল্লিকের একটা বি.পি.এল. কার্ড ছিল৷ আইলায় সেটা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়৷ নতুন কার্ডের জন্য ধরাধরি করেছে৷ এখনও হয়নি৷ তাই দু'টাকা কিলো চাল তার জোটে না৷ তাঁর বিধবা ভাতা মঞ্জুর হয়েছে৷ টাকাটা ব্যাংকে আসে৷ খুশিমতো তোলা যায়৷ এক চিলতে ধান জমি আছে৷ চাষ করতে পারলে বস্তা তিনেক ধান পাওয়া যায়৷ বড় ছেলে ভিন্ন ভাতে থাকলেও তাকে অর্ধেক দিতে হয়৷ বড় ছেলেও চাষে মাকে সাহায্য করে৷

    ভারতী মল্লিক জানিয়েছেন এবছর (২০১৪) চৈত্র মাসে মধুর মরশুমে তাঁর পাঁচ হাজার টাকা আয় হয়েছে৷ মধু ভাঙার দলে পাঁচজন ছিলেন৷ দলের বাকি চার জনের নাম (১) অবিনাশ নায়েক, (২) গুরি নায়েক, (৩) শম্ভু নায়েক এবং (৪) সন্তোষ নায়েক৷ এই চারজনই একই পরিবারের৷ এ দলে ভারতী মল্লিক একমাত্র মহিলা৷ ছেলেদের দলে থেকে ভারতী দেবীকে যে কাজগুলো করতে হয় সেগুলো হল:

    ১৷ মৌলদের সঙ্গে গস্তে যাওয়া৷ অর্থাৎ মৌমাছির চাক খুঁজতে খুঁজতে জঙ্গলের ভেতর ধীরে ধীরে অগ্রসর হওয়া৷ ২৷ 'বোড়ে' (মশাল) তৈরির জন্য 'বগড়া' (হেঁতাল) পাতা সংগ্রহ করা৷ কাঁচা এবং শুকনো পাতা মিশিয়ে মশাল বাঁধা৷ ৩৷ মৌমাছির চাকে জ্বলন্ত মশাল ধরে থাকা৷ কখনও কখনও চাক কাটা৷ ৪৷ চাক কাটার সময় চাকের তলায় এ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়ি ধরে থাকা৷ ৫৷ জঙ্গল থেকে মধুর হাঁড়ি কাঁকালে করে নৌকাতে নিয়ে যাওয়া৷ ৬৷ কখনও কখনও লাঠি-বাড়ি হাতে পাহারা দেওয়া৷ ৭৷ দিনে দুবার—দুপুরে এবং সন্ধে নৌকাতে রান্না করা৷

    ভারতী মল্লিক দুভাবে কাঁকড়া ধরতে যান৷ কাঁকড়া ধরে দিনের দিন ফিরে আসেন৷ সে ক্ষেত্রে একটা মেসিন বোটে পনেরো বিশজন (পুরুষ ও মহিলা) এক সাথে যান৷ সবাই আংড়িতে (শিকে) কাঁকড়া ধরেন৷ প্রত্যেকে নিজের ধরা কাঁকড়া আলাদা করে রাখেন৷ নৌকোর মালিককে দৈনিক মাথা পিছু ৫০ টাকা ভাড়া বাবদ দিতে হয়৷ এধরনের অভিযানে ভারতী দেবীর দৈনিক গড় আয় (নৌকোর ভাড়া দিয়ে) ১০০ থেকে ১৫০ টাকা৷ আবার যখন 'বাসায়' যান৷ অর্থাৎ ৭-৯ জনের একটা দল নৌকোতে একটানা ৮-১০ দিন থাকে, তখন খাওয়া-দাওয়ার খরচ-খরচা বাদ দিয়ে গড়ে দেড় থেকে দু'হাজার টাকার বেশি আয় হয় না৷ এই রকম ট্রিপে মহিলার চেয়ে পুরুষের সংখ্যা সব সময় বেশি থাকে৷ এ ক্ষেত্রে সকলের কাঁকড়া একত্রে থাকে এবং সকলে সমান ভাগ পায়৷ ভাড়া বাবদ নৌকোর একভাগ৷ এখানে একটা কথা মনে রাখতে হবে কাঁকড়া ধরার সঙ্গে জোয়ার ভাঁটার এবং তিথি নক্ষত্রের ঘনিষ্ট সম্পর্ক থাকে৷ মাসে পনেরো-বিশ দিন কাঁকড়া ধরা হয়৷ মধু ভাঙার মরশুম চৈত্র-বৈশাখ৷ বন দপ্তরের আইন অনুযায়ী বছরে তিন মাস এপ্রিল, মে ও জুন সুন্দরবন এলাকার মধ্যে মাছ-কাঁকড়া ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ৷ মধু ভাঙার মরশুম দু'মাস (এপ্রিল এবং মে)৷

     

    শুধু সুন্দরবন চর্চা পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত। বানান ও ভাষা অপরিবর্তিত রেখে পত্রিকার সম্পাদকের অনুমতিক্রমে পুনঃপ্রকাশিত। 

     
     



    Tags
     



    1 Comment
    • এইরকম অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছি একবার । ভাগ করে নেওয়া যাক আপনাদের সাথে । সেবার তিন বন্ধু ছুঁয়ে এলাম এক ভিন্ন সুন্দরবন । উত্তর ২৪ পরগণার । হাসনাবাদ, নেবুতলা, দুলদুলি ছুঁয়ে সামসেরনগর । জলজংগলনদী ঘেরা এক জনপদ । ওখানে স্থানীয় কয়েকজন মানুষের সাহায্য নিয়ে কথা বলতে পেরেছিলাম সেই সব মানুষদের সঙ্গে যাদের স্বামীরা গেছে বাঘের পেটে । আমার এক বন্ধু আধা-সাংবাদিক । কথাবার্তা চালালো ওই । আমি কিছু অসহায় মুখের ছবি করলাম ফ্রেমবন্দী । লেখাগুলো বন্ধুর কাছে আজও আছে । কোথাও প্রকাশ পেয়েছে কিনা জানিনা । ছবিগুলো সযত্নে রাখা আছে আমার কাছে । আর আছে ওঁদের দারিদ্র্যের সেই হাহাকার, বেচেঁ থাকার আর্তি । মাটির কুঁড়েঘর ভেঙ্গে পড়ছে । পোশাক অতি মলিন, শতচ্ছিন্ন । রোজকার খাবার হরিমটর । রোজগার শূন্য । আমাদেরকে সরকারি এবং /অথবা সাংবাদিক মনে করে উজাড় করে দিচ্ছিলেন ওঁদের দিবারাত্রির কাব্য । খুব অসহায় এক বোধ নিয়ে ফিরেছিলাম সেবার । জলজঙ্গলের সৌন্দর্য্যে হতবাক হওয়ার কথা মাথায় আসেনি । আজ আপনার লেখাটা পড়তে গিয়ে সেইদিনের কথা মনে পড়ে গেলো ।
      কিছুটা উদাস হলাম বৈকি, নাগরিক অভ্যাসে ।

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    You may use these HTML tags and attributes: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>

     



    তথ্য নীতি | Privacy policy

 
Website © and ® by Ebong Alap / এবং আলাপ, 2013-24 | PRIVACY POLICY
Web design & development: Pixel Poetics