• খবরে জেন্ডার - ১


    0    291

    June 13, 2017

     

    স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের সাথে অত্রি কর। ছবি - Varta ওয়েবজিনের সৌজন্যে

    জনস্বার্থ মামলা জিতে ইতিহাস সৃষ্টি করলেন ত্রিবেণীর অত্রি কর

    হুগলি জেলার ত্রিবেণীর প্রাথমিক স্কুল শিক্ষিকা অত্রি করের দায়ের করা জনস্বার্থ মামলার ভিত্তিতে ২০১৬ সালের ৫ ডিসেম্বর, ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল তার রায়ে পশ্চিমবঙ্গের পাবলিক সার্ভিস কমিশনকে সমস্ত সরকারি চাকরির ফর্মে ‘রূপান্তরকামী’ অপশন যোগ করার নির্দেশ দেয়। ২০১৪ সালে সুপ্রিম কোর্টের নালসা রায় ঘোষণার দু’ বছর পর এই রায় প্রমাণ করে সরকারী প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতা এবং এইধরনের বিষয়ে সংবেদনশীলতার অভাব। যার বহু ভুক্তভুগির একজন অত্রি কর।
    রূপান্তরকামী হিসাবে অত্রি করের লড়াই আর পাঁচজনের থেকে খুব একটা আলাদা ছিল না। প্রতিদিন রাস্তায়, কলেজে, বন্ধুমহলে বিদ্রুপ, তাচ্ছিল্যের শিকার হওয়া সত্ত্বেও হার মানেননি অত্রি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরাজিতে স্নাতক হওয়ার পর স্নাতকোত্তরে ভর্তি হন তিনি। কিন্তু প্রতিনিয়ত বিদ্রুপ ও অপমান ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে দেয়। অত্রি নতুন করে বাধার সম্মুখীন হন ২০১৬ সালে, যখন স্টাফ সিলেকশন কমিশনের ইন্টারভিউয়ের ডাক আসে। ২০১১/২০১২ সালে যখন ওই চাকরির পরীক্ষা দেন অত্রি, তখনও সুপ্রিম কোর্ট নালসা রায় ঘোষণা করেনি। ফলত অত্রিকে বাধ্য হয়ে ‘পুরুষ’ হিসাবেই পরীক্ষায় বসতে হয়। কিন্তু ২০১৪ সালের নালসা রায়ের পরও ২০১৬ সালের ইন্টারভিউয়ের ফর্মে পুরুষ ও নারী ভিন্ন তৃতীয় কোনও অপশন না থাকায় সমস্যায় পড়েন অত্রি। আবেদনের তারিখ ক্রমশ এগিয়ে আসতে থাকায় নিরুপায় অত্রি ‘পুরুষ’ হিসাবেই ফর্ম জমা দেন এবং কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেন। সেই মামলা পরে ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয় এবং মামলার রায় ইতিহাস তৈরি করে।

    তথ্যসূত্র: Varta ওয়েবজিন। অত্রি করের সাক্ষাৎকার ও Varta-র বিষয়ে বিশদে জানতে এখানে ক্লিক করুন।

    নদিয়ার সুমনা প্রামাণিক

    নদিয়া জেলার রূপান্তরকামী সুমনা প্রামাণিক ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে একজন ফার্স্ট ক্লাস ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে সরকারীভাবে নাম ও লিঙ্গ পরিবর্তনের জন্য আবেদন করেন। নাম ও লিঙ্গ পরিবর্তনের বিষয়টি আজও সামাজিক ট্যাবু জর্জরিত হলেও আইনিভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে বেশ কিছু বছর আগেই। ২০১৪ সালের এপ্রিলে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট তৃতীয় লিঙ্গের অধিকার বিষয়ে রায় দেয়। তা সত্ত্বেও, সুমনাকে খালি হাতে ফিরে আসতে হয়। সুপ্রিম কোর্টের রায় লাগু করার পথে ম্যাজিস্ট্রেটের সংস্কার বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

    ইতিমধ্যেই, রাজ্যের এক নামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফলিত গণিতে স্নাতকোত্তর স্তরে একজন রূপান্তরকামী মানুষ হিসাবেই ভর্তি হন সুমনা। জেলা কালেক্টরের উদ্যোগে গত বছর এপ্রিলে স্কলারশিপের চেকও আসে। কিন্তু চেক ভাঙ্গাতে গিয়েই সমস্যায় পড়েন সুমনা। কারণ চেক দেওয়া হয় তাঁর নতুন নাম অনুযায়ী, কিন্তু তাঁর আধার কার্ড এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ছিল পুরনো নামে।

    শুরু হয় সুমনার হয়রানির দিনলিপি। ব্যাঙ্কের নথীতে নাম ও লিঙ্গ পরিবর্তন করতে গেলে তাঁকে বলা হয় প্রথমে আধার কার্ড সংশোধন করতে হবে। সেই সংশোধন করাতে গেলে সুমনা জানতে পারেন আধারে লিঙ্গ কীভাবে পরিবর্তন হয়, সে বিষয়ে কোনও ধারণাই নেই সংশ্লিষ্ট কর্মীদের। যদি ধারণা থাকতো, তাহলে তাঁরা সুমনাকে বলতেন, এফিডেভিট ছাড়া এরকম কোনও সংশোধন করা সম্ভব নয়। সেই এফিডেভিট, যা নিতে গিয়ে আগেই খালি হাতে ফিরতে হয়েছে সুমনা প্রামাণিককে!

    বর্তমানে সুমনা আইনি লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সুমনার এই লড়াই প্রমাণ করে সমাজের নিগড়ে যে সংস্কার বাসা বেঁধে আছে, তাঁকে উৎখাত করা নিছক সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পক্ষে সম্ভব না। সুমনাদের নিরন্তর লড়াই ও সেই লড়াইয়ের প্রচার ছাড়া আইন আইনের জায়গাতেই রয়ে যাবে।

    তথ্যসূত্র: Varta ওয়েবজিন। এই রিপোর্ট ও Varta-র বিষয়ে বিশদে জানতে এখানে ক্লিক করুন।

    মধ্যপ্রদেশের গুলিয়া বাঈ

    আসুন আলাপ করা যাক গুলিয়া বাঈয়ের সাথে। মধ্যপ্রদেশের বেতুল জেলার ৩৯ বছরের আদিবাসী নারী গুলিয়া বাঈ শিশু-সুরক্ষা, শিক্ষা এবং অন্যান্য সামাজিক বদলের দাবীতে নিরন্তর লড়ে যাচ্ছেন।

    গুলিয়ার বড় মেয়ে মণিকা নবম শ্রেণীতে অকৃতকার্য হলে তার বাবা তাকে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে জানিয়ে দেন মেয়ের পড়াশুনা সেখানেই শেষ। গুলিয়া বাঈ নিজের উদ্যোগে স্বামীর সাথে লড়াই করে মেয়েকে ফের স্কুলে ভর্তি করেন। আজ মণিকা দশম শ্রেণীর ছাত্রী। শুধু নিজের মেয়ের ক্ষেত্রেই নয়, তাঁদের এদমাড়ানা গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে মিড ডে মিলের খারাপ মান নিয়েও সরব হন গুলিয়া বাঈ এবং পুরুষশাসিত পরিচালন সমিতিকে খাবারের মানোন্নয়নে বাধ্য করেন। গুলিয়া বাঈয়ের উদ্যোগেই স্থানীয় প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষকসংখ্যা দুই থেকে বেড়ে পাঁচ হয়েছে।

       আগে গ্রামসভার মিটিং-এ মহিলাদের উপস্থিতি প্রায় ছিল না বললেই চলে। পুরুষ সদস্যদের চোখরাঙানি উপেক্ষা করে গুলিয়া বাঈ-ই গ্রামের মহিলাদের নিয়ে গ্রামসভায় যোগ দেওয়ানো শুরু করেন। আজ তাঁদের গ্রামসভায় অংশগ্রহণ ও সিদ্ধান্ত নেওয়ায় মহিলারা সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে থাকেন।

    তথ্যসুত্র : Youth Ki Awaz ওয়েবজিন।

    তিন ডাকাবুকো সাংবাদিকের মুখোমুখি

    ২০০২ সালে যাত্রা শুরু করে ১৫ বছরে পা দিল খবর লহেরিয়া, দেশের একমাত্র সংবাদপত্র যার সমস্ত বিভাগের দায়িত্ব সামলান মহিলারা। দিল্লীর স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘নিরন্তর’-এর উদ্যোগে শুরু হওয়া এই সংবাদপত্র আজ প্রতি সপ্তাহে পৌঁছে যায় উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের ৬০০টি গ্রামে। ভারতের প্রথম বুন্দেলি ভাষার সংবাদপত্র খবর লহেরিয়া আজ প্রকাশিত হয় সাতটি স্থানীয় ভাষায়।   

    ১৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে খবর লহেরিয়া তাই পৌঁছে গিয়েছিল এমন তিনজন মহিলার কাছে, যাঁরা ভারতের গ্রামেগঞ্জে সংবাদ সংগ্রহের মতো কঠিন কাজ প্রতিদিন সাহসের সাথে করে চলেছেন। রিয়া সিং, সমিয়া শ্রীবাস্তব এবং আকাঙ্ক্ষা শুক্লা বুন্দেলখন্ডের বান্দা জেলায় সাংবাদিকতার কাজ করেন, যেখানে সিংহভাগ মানুষ আজও মনে করেন মেয়েদের জন্য সেই কাজই সবথেকে উপযুক্ত, যে কাজ করতে যতটা সম্ভব কম জনসমক্ষে আসতে হয়।

    ‘নব কর্ম যুগ’-এর সাংবাদিক রিয়াকে ‘শুভানুধ্যায়ীরা’ পরামর্শ দিয়েছিলেন ‘বিউটি পার্লার, ষ্টেশনারী বা শাড়ির দোকানে’ কাজ করার জন্য। বান্দার মেয়ে সম্যিয়ার ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি খুব একটা আলাদা ছিল না। আজ নিউজের অ্যাঙ্কর হিসাবে সম্যিয়া এক সুপরিচিত মুখ। সাংবাদিকতার পেশায় লিঙ্গবৈষম্যের উদাহরণ দিতে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়েন আকাঙ্ক্ষা। সিটি স্টার নিউজের সাংবাদিক আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রুজু করা হয়েছে। আসল সত্যকে মানুষের সামনে তুলে আনার লক্ষ্যে সাংবাদিকতায় আসা আকাঙ্ক্ষা প্রতিদিন অনুভব করেন, যে তাঁর লড়াইটা আসলে কতটা কঠিন।      

    তিন সাংবাদিকের সাক্ষাৎকারের কিছু মুহূর্ত, খবর লহেরিয়া-র সৌজন্যে।  

     

     

     
     



    Tags
     


    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    You may use these HTML tags and attributes: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>

     



    তথ্য নীতি | Privacy policy

 
Website © and ® by Ebong Alap / এবং আলাপ, 2013-24 | PRIVACY POLICY
Web design & development: Pixel Poetics