নজরে বিজ্ঞাপন : হেয়ার ডাই ও একটি প্রেমালাপ
0 479(এই লেখায় দুটি বিজ্ঞাপনের কথা বলা হয়েছে। লেখাটি পড়ার আগে পাঠককে অনুরোধ করছি নিচে দেওয়া এই দুটি বিজ্ঞাপন দেখে নিতে।)
৮০'র দশকে হেয়ার ডাই এর একটি বিজ্ঞাপন
হেয়ার ডাই-এর একটি নতুন বিজ্ঞাপন
পাত্র-পাত্রী:
কর্ণ: বয়স ২৮, আই-টি সেক্টর, পাবদা মাছ দেখলে আলুথালু হয়ে পড়ে।
টিকলি: বয়স ২৮, আই-টি সেক্টর, শুকরের মাংসের জন্য হাঁটতে পারে অনেকটা পথ!
স্থান:
টিকলির শয়নকক্ষ। আপাতত টিকলির একদা সিপিএম, এখন সিনিক – অধ্যাপক বাবা ও প্রাক্তন বামপন্থী মা দুজনেই নিজ নিজ কর্মস্থানে। বাড়িতে আর দ্বিতীয় কোনও প্রাণী নেই, বারান্দায় কয়েকটা ফুলগাছ ছাড়া।
কাল:
বিকেল চারটে। মোবাইলের ঘড়িতে। টিকলির বাড়িতে কোনও দেওয়াল ঘড়ি নেই। টিকলির মা ও টিকলি দুজনেই মনে করে দেওয়াল ঘড়ি অতি প্রিমিটিভ, অতএব গেঁয়ো ব্যাপার।
টিকলি ও কর্ণ টিকলির পাঁচ ফুট বাই তিন ফুটের খাটটিতে এখন আদরে আদর তুমি নীলিমায় নীল!
-----
টিকলি: এই তোকে একটা ইণ্টারেস্টিং জিনিস দেখাতে চাই। একটা জম্পেশ ডিসকোর্স হতে পারে।
কর্ণ: কিন্তু আমার যে খুব চুমু পাচ্ছে!
টিকলি: আমি তো বলিনি ডিসকোর্স আর চুমু ‘মিউচুয়ালি এক্সক্লুসিভ’!
কর্ণ আকর্ণ বিস্তৃত হাসি হাসল। টিকলি তার ফোনে মেলে ধরল দু’খানা বিজ্ঞাপন। একটি আট-এর দশকের। অন্যটা হালের।
কর্ণ: বিজ্ঞাপনের-একাল-সেকাল মার্কা কোনও ক্লিশে ডিসকোর্সে আমি কিন্তু নেই।
টিকলি: উফ, সবেতেই তুই ক্লিশে দেখিস কেন? যত বুড়োটেপনা!
কর্ণ: ডিসকোর্স এর বিষয় কী? কোন শটে লুকিয়ে আছে চোরাগোপ্তা টুটু বসু বা সাম্প্রদায়িকতা? সে সব খুঁজে বার করে ফেবুতে পোস্ট? যাতে ইকো চেম্বার এর হাততালি মেলে?
টিকলি চোখ সরু ক’রে কর্ণকে মাপল, তারপর আর কথা না বলে ক্লিপিং চালাল।
কর্ণ এতক্ষণ খচরামি করলেও বিজ্ঞাপন দুটো মন দিয়েই দেখল। ভ্রূ কুঞ্চিত, ঠোঁটে একটা হাল্কা শ্লেষযুক্ত ব্যাঁকা ভাব।
টিকলি: বুঝলি? বল...
কর্ণ: বিবর্তন।
টিকলি: বিশদ করুন।
কর্ণ: বিবাহিত নারী বয়সকে বাক্সবন্দী করে বরের বাহুলগ্না
টিকলি: বেশক। বর্তমানে?
কর্ণ: বড় ব-এর ভঙ্গিমায় বউ এর বাহুলগ্না
টিকলি: বাইশে বাইশ পেলি।
কর্ণ: তা আলোচনাটা কী নিয়ে?
টিকলি: এটা কি এক ধরনের স্টিরিওটাইপিং এর অবসান বলা যেতে পারে?
কর্ণ: অবসান! গুরু আমি তো জানতাম তুমি ইংলিশ মিডিয়াম! তা সে যাক, ঘটনা হল, বাজার সে বড়া কুছ ভি নহি হ্যায়! এই প্রোডাক্ট এর বাজারে এখন পুরুষকে ঢোকালে লাভ। সমাজও মেনে নিচ্ছে বস! যৌবন ধরে রাখার দায়িত্ব কি একা মেয়েদের? কভি নহি! আমরা সমানাধিকারে বিশ্বাসী। যৌবন ধরে রাখায় দায় পুরুষকেও নিতে হবে। ব্যস! পুরুষকে প্রোটাগনিস্ট করে হয়ে গেল এক পিস! কেউ বলতে পারবে না ‘মিসোজিনিস্ট’, মেয়েদের অবজেক্ট করে তুলছে এই বিজ্ঞাপন। সমাজ যেমন যেমন খেতে চায় বিজ্ঞাপন ঠিক তেমন তেমন বানায় গুরু! বাজারের খেলা অতি সূক্ষ্ম হে ললনা! আয় আমার বুকে আয়!
টিকলি: তাহলে কি বলা যেতে পারে অন্তত বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে নারী অবমাননা বন্ধ হয়েছে?
কর্ণ: অবমাননা! আজ তুমি ফাটিয়ে দিচ্ছ! যাইহোক, নারী অবমাননা বন্ধ করার দায় কার? পুরুষের? কীভাবে? নিজে অবমাননার ভাগী হয়ে? এ তো বেড়ে লজিক! আগে মেয়েদের অবজেক্টিফাই করেছে বিজ্ঞাপন। এখন করছে পুরুষকে। তো বদলটা কী হল? এতে খুশিই বা হচ্ছিস কেন? বাজার বাজারের নিয়মে মানুষকে অবজেক্টিফাই করে চলেছে, চলবেও। সময়ের নিয়ম মতন। কিন্তু আসলে কি কিছু পাল্টালো?
টিকলি: পরের পয়েণ্টে যাই?
কর্ণ: আরও আছে? মাড় গেড়েছে!
টিকলি: হোয়াই ডু উই নিড টু লুক ইয়ং এট অল? কমবয়সী কেন লাগতেই হবে? হোয়াই হেয়ার ডাই? তোর ভালোবাসা পেতে আমায় চুল কালো ক’রে যুবতী সাজতে হবে?
কর্ণ: “যুবতী কিছুই বোঝে না, কেবল প্রেমের কথা বলে!” - বল তো কার লাইন?
টিকলি: আঃ, কথার উত্তর দে!
কর্ণ: “হোয়াট ডু উই টক এবাউট হোয়েন উই টক এবাউট লভ?’’ – বল তো কোথাকার লাইন?
টিকলি: ইনাআরিতু। বার্ডম্যান। কথা ঘোরাচ্ছিস নাকি?
কর্ণ: না। আসল কথায় আসতে চাইছি। ছবিটার মূল বিষয় একলাইনে বলতে পারবি?
টিকলি: পসিবিলিটি এন্ড টেরিফায়িং আনসার্টেনটি। ক্ল্যাশ বিটুইন হিউম্যান ডিসায়ার অ্যান্ড ইনটেলেক্ট!
কর্ণ: আমি কিন্তু বাংলা মিডিয়ম। তা সে যাক। এই ক্ল্যাশটাই মানুষের যাপন রে পাগলি। যুগে যুগে মানুষ চেয়েছে সুন্দর থাকতে। যৌবন ধরে রাখতে। আবার মনে মনে বিষণ্ণ হয়ে বুঝেছে, সকলই ফুরায়, সকলই ফুরায়... বাজার সন্তর্পণে ঢুকে পড়েছে মানুষের এই আদিম হাহাকারটি ব্যবহার করতে। ব্যস গপ্পো শেষ। এর মধ্যে জেন্ডার এঙ্গেল খুঁজবি কি না তুই ভেবে দ্যাখ! তোর ভাবনা আমি প্রভাবিত করতে চাই না। আমি শুধু বলি সুন্দর মেয়ে আমার হেব্বি লাগে।
টিকলি: হাউ আনসেরেব্রাল!
দুজনেই হেসে কুটিপাটি হয়।
বেহিসেবী, অকারণ এই হাসির কোনও হেয়ার ডাই এর প্রয়োজন পড়ে না।
Tagsadolescence age of consent age of marriage caa child marriage corona and nursing covid19 Covid impacts on education domestic violence early marriage education during lockdown foremothers gender discrimination gender identity gender in school honour killing human rights intercommunity marriage interfaith marriage lockdown lockdown and economy lockdown and school education lockdown in india lockdown in school lockdown in schools love jihad marriage and legitimacy memoir of a nurse misogyny nrc nurse in bengal nursing nursing and gender discrimination nursing in bengal nursing in india online class online classes during lockdown online education right to choose partner school education during lockdown social taboo toxic masculinity transgender Women womens rights
Leave a Reply