• দলিত কর্মী ও লেখিকা সিন্থিয়া স্টিফেনের সঙ্গে কথোপকথন


    0    232

    February 2, 2019

     

    [মূল ইংরেজি সাক্ষাৎকারটি ১১/১/২০১৯ তারিখে ফেমিনিজম ইন ইন্ডিয়া-য় প্রকাশিত হয়েছিল। সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন অ্যালিস আব্রাহাম। হায়দ্রাবাদের অ্যালিস সাহিত্যের ছাত্রী। জেন্ডার, সেক্সুয়ালিটি, ইণ্টারসেকশনালিটি নিয়ে গবেষণায় উৎসাহী। ভালোবাসেন খেতে ও বই পড়তে। 'সিস ব্রাক্ষ্মিনিকাল প্যাট্রিয়ার্কি'-র পতনের অপেক্ষায় দিন গুনছেন।

    ইংরেজি থেকে বাংলায় সাক্ষাৎকারটি অনুবাদ করেছেন স্মিতা খাটোর। স্মিতা 'পিপলস আর্কাইভ অফ রুরাল ইন্ডিয়া'য় কর্মরত। কাজে অকাজে ইতিউতি ঘুরে বেড়ানো তাঁর প্রিয়।]

     

    দলিত কর্মী সিন্থিয়া স্টিফেন একাধারে প্রাবন্ধিক, সমাজনীতির গবেষক এবং স্বতন্ত্র সাংবাদিক। দলিত বিদ্যাচর্চা, সংরক্ষণ এবং শিক্ষানীতি সংক্রান্ত কাজকর্মে জড়িত। দলিত নারীর অবস্থা, নারী আন্দোলন, ব্রাহ্মণ্যবাদী পিতৃতন্ত্র, জাতিবৈষম্য এবং আরও বহু বিষয়ে অসংখ্য প্রবন্ধ রচনা করেছেন। ব্যাঙ্গালোর নিবাসী সিন্থিয়া ট্রেনিং, এডিটরিয়াল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেস ট্রাস্ট (টিইডিএস) সংস্থার সভাপতি।

    অ্যালিস আব্রাহাম: আপনার দলিত খ্রিস্টান হিসাবে বেড়ে ওঠার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে আমাদের বলুন।

    সিন্থিয়া স্টিফেন: এটা বেশ মজার প্রশ্ন। সত্যি কথা বলতে দলিত হিসাবে আমি বড় হইনি মোটেই। এমন একটা পরিবারে আমি বেড়ে উঠেছিলাম যেখানে কেউ কখনও আমাকে পরিবারের দলিত ঐতিহ্যের কথা বলেনি, তাই আমার মধ্যেও দলিত চেতনার স্ফুরণ হয়নি।

    আমার মা-বাবা সমাজে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। প্রথম সারির একটা স্কুলে শিক্ষকতা করতেন মা, আর বাবা পেশায় ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন, যদিও তিনি অল্প বয়সে মারা যান। সুতরাং, আমরা বেশ স্বচ্ছলভাবেই বেড়ে ওঠার সুযোগ পেয়েছি। চল্লিশের কোঠায় পৌঁছে আমি নিজের অবস্থান বিষয়ে সচেতন হলাম।

    আগে আমি ভাবতাম ‘দলিত’ বুঝি বাইরের কিছু, আমার সঙ্গে তার কোনও সংযোগ নেই। তবে, যেহেতু আমি গ্রাম্য পরিবেশে দরিদ্র মানুষজনের মধ্যে বড় হয়েছি এবং আমার মা নিজেও দারিদ্র্যের মধ্যে বেড়ে ওঠার কারণে সর্বদাই বাস্তব মাটিতে পা রেখে চলেছেন, তাই তিনি আমাদের শক্ত হাতে বড় করেছিলেন, পরিশ্রম ও নৈতিক মূল্যবোধকে পাথেয় করে বেঁচে থাকার শিক্ষা দিয়েছিলেন। প্রিভিলেজ অবশ্যই ছিল, কিন্তু সেই সঙ্গে স্বাবলম্বী হওয়ার শিক্ষাও পেয়েছিলাম।

    চল্লিশ পেরিয়ে চারপাশে পরপর এমন সব ঘটনা ঘটছিল যা আমাকে নতুন করে, নতুন আলোয়  ভাবতে শেখালো। একবার, আমি একটা চাকরির জন্য আবেদন করেছিলাম; সত্যি কথা বলতে প্রার্থীদের মধ্যে যোগ্যতার নিরিখে আমিই ছিলাম আদর্শ, নিশ্চিত জানতাম এই চাকরি আমিই পাচ্ছি! অথচ দেখলাম অল্পবয়সী, অনভিজ্ঞ একটি ব্রাক্ষ্মণ মেয়েকে দিব্যি সেই চাকরিতে নিয়ে নেওয়া হল। তখন থেকেই ব্যাপারটা তলিয়ে দেখতে শুরু করলাম।

    বায়োডেটা জমা দেওয়ার সময় অফিসের জনৈক মহিলা আমাকে বলেছিলেন, “আমাদের এই প্রতিষ্ঠানে আমরা দলিতদের প্রসঙ্গ তুলি না।” হঠাৎ এসব বলছেন কেন তা তখন ঠিক বোধগম্য হয়নি। নিজের দলিত পরিচয় উন্মোচন করতে আমার বহুবছর লেগেছিল। দুই তরফের দাদু-দিদার সকলেই যে দলিত ছিলেন তা নয়, তবে সমাজ অবশ্য আমাদের দলিত বলেই গণ্য করত। তখনও এর কারণ ঠাওর করে উঠতে পারিনি। এই বিষয়টি গভীরভাবে খতিয়ে দেখতে শুরু করার পর, এ নিয়ে পড়াশোনা করার পর আমার জীবনের মোড় ঘুরে গেল। দলিত-খ্রিস্টান পরিচয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিষয়গুলি নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হল। পাকাপাকিভাবে ব্যাঙ্গালোরে চলে আসার পর আমি সিএসআই চার্চ এবং অন্যান্য মুক্তমনা, উদার খ্রিস্টান সংগঠনগুলির সঙ্গে কাজকর্মে জড়িয়ে পড়লাম।

    অ্যালিস: কোন ঘটনাগুলো আপনার জীবনকে সর্বাধিক প্রভাবিত করেছে? নিজের সম্প্রদায়ের জন্য কাজ করার প্রেরণা পেয়েছিলেন কাদের থেকে বা কোন বই থেকে?

    সিন্থিয়া: অবশ্যই সবচেয়ে বড় প্রভাব বাবাসাহেব আম্বেদকর। এছাড়া জ্যোতিরাও ফুলে আর সাবিত্রীবাঈ ফুলে। ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় মা আমাকে পন্ডিতা রমাবাইয়ের জীবনী কিনে দিয়েছিলেন। তিনি নারীর ক্ষমতায়নের জন্য আজীবন কাজ করে গেছেন বলেও তাঁর জীবন ও কৃতিত্ব আমাকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করেছে।

    অ্যালিস: ভারতে মূলধারার নারীবাদের মধ্যে কোনগুলিকে আপনার সমস্যার জায়গা বলে মনে হয়? আপনার মতে কি #মিটু আন্দোলন যথেষ্ট ইনক্লুসিভ, সর্বজনীন হয়ে উঠতে পেরেছিল? সব মহিলারাই সামিল হতে পেরেছিলেন?

    সিন্থিয়া: ঘটনা হল, যে নারীরা ক্ষমতায়নের মধ্যে দিয়ে গেছেন, যাঁরা ইতিমধ্যেই সমাজে দৃশ্যমান, তাঁরাই এগিয়ে আছেন এবং তাঁদের বক্তব্য সবার কাছে পৌঁছেছে। আমার মতে #মিটু একটি শক্তিশালী আন্দোলন। কিন্তু আর পাঁচটা বিষয়ের মতো এক্ষেত্রেও প্রভাবশালী শ্রেণি ও বর্ণের মানুষের কথাই শোনা গেছে। অথচ এই আন্দোলনের ভিত তৈরি হয়েছিল প্রান্তিক গোষ্ঠীভুক্ত নারীর হাত ধরেই – মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আফ্রিকান-আমেরিকান তারানা বার্ক বা ভারতবর্ষের প্রেক্ষাপটে [দলিত প্রেক্ষিত থেকে উঠে আসা] রায়া সরকার। আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলি সূচিত হয়েছিল দলিত নারীদের ঘিরেই।

    এমনকি ভারতের বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়নের সঙ্গে সম্পর্কিত আইনি সংস্কারগুলিও দলিত সম্প্রদায়ের নারীদের সংগ্রামের ফলেই বাস্তবায়িত হতে পেরেছিল। আদিবাসী সম্প্রদায়ের মেয়ে মথুরা তাঁর কাস্টোডিয়াল রেপ-এর বিরুদ্ধে ন্যায়বিচারের জন্য যে সংগ্রাম করেছিলেন তার জেরেই ধর্ষণের বিরুদ্ধে নারীমুখী আইন পুনর্লিখনের পথ প্রশস্ত হয়। এটা একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা করেছিল।

    নারী আন্দোলনের ইতিহাসে আরেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব, দলিত নারী কর্মী ভাঁওরী দেবী, তিনি রাজ্য সরকারের নারী ক্ষমতায়ন প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এলাকায় একটি বাল্যবিবাহ সম্পর্কে অভিযোগ করলে উচ্চবর্ণের পুরুষেরা তাঁকে গণধর্ষণ করে। এমনকি আদালতের থেকে আসা প্রতিকূল রায়ে একথাও বলা হয় যে এ মামলা সাজানো, কারণ যেহেতু তিনি অস্পৃশ্য, তাই কিছুতেই তাঁর ধর্ষণ হতে পারে না! ন্যায়বিচারের জন্য যে সংগ্রাম করেছিলেন তার জেরেই বিশাখা গাইডলাইন এবং কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের যৌন হেনস্থা (প্রতিরোধ, নিষিদ্ধকরণ ও প্রতিকার) দমন আইন গঠিত হয়। অতএব ভারতবর্ষে লৈঙ্গিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে দলিত নারীদের জীবন ও অভিজ্ঞতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও তা স্বীকৃতি পায়নি এবং উপেক্ষিত থেকে গেছে। #মিটু আন্দোলনেও এই অস্বীকৃতি এবং উপেক্ষা কায়েম থেকেছে।

    অ্যালিস: তাহলে কি আপনার মনে হয় একটা পৃথক দলিত নারীবাদী আন্দোলন প্রয়োজন? ‘দলিত নারীবাদ’ শব্দবন্ধের বিষয়ে আপনার কী মত?

    সিন্থিয়া: উত্তরটা স্পষ্ট। মূলধারার নারীবাদী আন্দোলনে দলিত নারীবাদীরা কি ততটাই সামিল হতে পারছেন? তাঁরা কি আদৌ স্বীকৃতি পাচ্ছেন? আন্দোলন কি তাঁদের স্বরকেও তুলে ধরছে? আমার মনে হয় না। প্রথম থেকেই এই প্রবণতা রয়েছে। প্রান্তিক বর্গ থেকে আসা মহিলারা যাঁরা বিভিন্ন আন্দোলনে শরিক হয়েছেন তাঁরা সর্বদাই পেছনের সারিতে রয়ে গেছেন। প্রভাবশালী তথা উচ্চবর্ণের মহিলারাই নেতৃত্বে থেকেছেন, আন্দোলনের লক্ষ্য এবং গতিপ্রকৃতি স্থির করেছেন। আমি, রুথ মনোরমা, ফাতিমা বার্নার্ড এবং অন্যান্য আরও অনেকে নারী আন্দোলনের এই কায়েমি প্রবণতাকে প্রশ্ন করতে শুরু করি, দলিত মহিলাদের জীবনের নানান দিক যেগুলো উচ্চবর্ণের মহিলাদের নেতৃত্বাধীন নারীবাদী গোষ্ঠীগুলির আলোচনার পরিসরে আসছিল না সেই বিষয়গুলিকে তুলে ধরতে শুরু করি। এই প্রয়াসগুলির ফলেই মূলধারার নারীবাদের পরিসরে আলোচিত সমস্যাগুলির থেকে আমাদের অর্থাৎ দলিত নারীদের সমস্যাগুলি যে আলাদা সেই বিষয়ে ক্রমশ সচেতনতা তৈরি হতে থাকে।

    মূলধারার নারীবাদে আলোচনার পরিসর সর্বদাই নিয়ন্ত্রিত হয়েছে পিতৃতন্ত্র ও হিংসা এই দুই বিষয়কে ঘিরে। কিন্তু আমাদের বিশ্লেষণ সূক্ষ্মতর এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ। আমাদের নির্দেশিত সমাধানগুলিও অনেক বেশি বাস্তবসম্মত এবং কার্যকরী। অবশ্য এমনটা কখনই নয় যে মূলধারার নারীবাদী আন্দোলন ইতিমধ্যে কর্মসংস্থান, সম্পত্তির অধিকার এবং আরও বহু ক্ষেত্রে যে অবদান রেখেছে এবং যা কিছু অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে তাকে আমি নস্যাৎ করছি। কিন্তু সেসব মহিলাদের কথা কে ভাববে যাদের সম্পত্তিই নেই? জমির অধিকারের সঙ্গে দলিত মহিলাদের উপর নেমে আসা হিংসার প্রত্যক্ষ যোগ আছে। এজন্যই, দলিত নারীদের একটি ভিন্ন অবয়বের নারীবাদ প্রয়োজন। যে নারীবাদ দলিত নারীর নিজের স্বর হয়ে উঠবে, যার মাধ্যমে সরাসরি নিজের কথা বলতে পারবেন তাঁরা, সমাজের সবর্ণ নারীদের মধ্যস্থতায় কথা বলতে হবে না।

    শ্বেতাঙ্গ নারীবাদী আন্দোলনের মধ্যে বর্ণবৈষম্যের সম্মুখীন হওয়া কৃষ্ণাঙ্গ নারীরা ‘মানবীবাদ’ (‘উওম্যানিজম’) শব্দটি প্রস্তাব করেন। লাতিন আমেরিকান মহিলাদের মধ্যেও এমনই একটি শব্দ ‘মুহেরিজম’ (Mujerism) –এর চল আছে, ‘মুহের’ শব্দটির অর্থ নারী। একটা সময়ে আমিও ‘দলিত মানবীবাদ’ (দলিত উম্যানিজম) শব্দটি প্রস্তাব করেছিলাম, তারপর অনুধাবন করি এই লব্জ যথেষ্ট ইনক্লুসিভ বা সর্বজনীন নয়। তাই আমি ‘প্রান্তিক ভারতীয় মানবীবাদ’ এর মতো একটা নাম প্রস্তাব করছি। এটি ভারতের বিভিন্ন প্রান্তিক সমাজ তথা গোষ্ঠীর নারীদের অভিজ্ঞতা এবং উপলব্ধিকে অন্তর্ভুক্ত করবে।

    অ্যালিস: আমার পরবর্তী প্রশ্নটি সাম্প্রতিককালে ট্যুইটারে ‘ব্রাক্ষ্মিনিক্যাল প্যাট্রিয়ার্কি' শব্দবন্ধ ব্যবহারের প্রতিক্রিয়ায় যে ব্যাপক শোরগোল সৃষ্টি হয়েছিল, সেটিকে ঘিরে। এই শব্দবন্ধ ব্যবহারে সর্বাধিক বিরোধিতা এসেছিল সমাজের সম্পন্ন, উচ্চশিক্ষিত স্তর থেকেই। জাতিভেদ, বর্ণবাদ ও পিতৃতন্ত্রের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় সম্পর্ককে এখনও এই যে জোর গলায় অস্বীকার করার প্রবণতা রয়েছে সে ব্যাপারে আপনার কী মতামত?

    সিন্থিয়া: এই ঘটনাটা ঘটায় আমি খুব রোমাঞ্চিত হয়েছিলাম। প্রাথমিক আগ্রাসী আদানপ্রদান প্রশমিত হওয়ার পরে দেখা গেল সবাই এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা, বিশ্লেষণ এবং সুলুকসন্ধান করতে শুরু করলেন। আম্বেদকর, জ্যোতিরাও ফুলে, সাবিত্রীবাঈ ফুলে, শর্মিলা রেগে এবং অন্যান্যদের কাজ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হল। এমনকি বছর দশেক আগে এই বিষয়ে লেখা আমার একটা নিবন্ধও এই বাজারে নিউজচ্যানেলের আলোচনায় উঠে এলো। সত্যি কথা বলতে ব্রাহ্মণ্যবাদী পিতৃতন্ত্র নিয়ে বহু বছর ধরেই কথোপকথন হচ্ছিল। উমা চক্রবর্তী এই বিষয়ে পথপ্রদর্শক, তবে এই আলোচনা প্রধানত বিদ্যায়তনিক পরিসরেই সীমিত ছিল।

    আমার মতে ট্যুইটারের ঘটনাটি একটি চমৎকার দিশানির্দেশ করেছে, গণপরিসরে একটা নতুন বয়ানের সূচনা করেছে, এ নিয়ে তর্কবিতর্কের অবকাশ তৈরি করেছে। বহু পড়ুয়া, সমাজকর্মী এবং সাধারণ মানুষ বুঝতে পেরেছেন যে ব্রাহ্মণ্যবাদী পিতৃতন্ত্র বলতে শুধুমাত্র জাতিব্যবস্থাকে বোঝায় না, বোঝায় একটি প্রবল শক্তিশালী, আধিপত্যবাদী মতাদর্শকে। যে নীরবতা ছিল এটিকে ঘিরে, তা ভেঙে খানখান হয়ে গেছে।

    অ্যালিস: দলিত খ্রিস্টানদের সংরক্ষণ বিষয়ে আপনার মতামত কী?

    সিন্থিয়া: এই অধিকার থেকে আমাদের বঞ্চিত করা হয়েছে একটি অন্যায় অধ্যাদেশ জারি করে, সংবিধান প্রণীত হওয়ার মাত্র আট মাসের মাথাতেই ব্রাহ্মণ্যবাদী ব্যবস্থা সংবিধানের প্রতি অন্যায়টি করে। অদ্যাবধি এই অবস্থার সংশোধন সম্ভব হয়নি কারণ এই অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে আদালতে আপিল করা যায়নি। ইউপিএ সরকারের শাসনকালে, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ভেতর থেকে প্রভূত চাপ তৈরি করা হলেও সরকারের তরফে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণে এতটাই গড়িমসি করা হয় যে শেষ পর্যন্ত দলিত খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে ঘটা এই ঐতিহাসিক বৈষম্যকে ঘোচানোর একটা বড় সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়। ধর্মাচরণের যে স্বাধীনতা সংবিধান দিয়েছে সেই অধিকার প্রয়োগ করার জন্য সরকার কারও সঙ্গেই, বিশেষ করে প্রান্তিক বর্গের অথবা সংখ্যালঘু ধর্মে দীক্ষিত নাগরিকদের প্রতি এই অবিচার করতে পারে না। এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম চলবে।

    অ্যালিস: ভবিষ্যতে আপনার নিজের সমাজ ঘিরে আপনার লক্ষ্য কী?

    সিন্থিয়া: নারীর, বিশেষ করে প্রান্তিক সমাজের নারীর ক্ষমতায়নই আমার জীবনের লক্ষ্য। এই মেয়েদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নই আমার অভীষ্ট। আমি এমন কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চেষ্টা করছি যেগুলি তাদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলবে এবং ব্যক্তিগত স্তরেও প্রত্যয়ী ক’রে নারীর মধ্যে প্রকৃত ক্ষমতায়ন ঘটাতে পারবে। আমার অধিকাংশ প্রকল্পই কর্ণাটক এবং তার আশেপাশের অঞ্চলে চলছে বটে, তবে ভাষাগত দক্ষতা থাকার সুবাদে আমি প্রায় সারা দেশেই কাজ করেছি। আমি পাঁচটি ভাষা বলতে পারি। নিজের কাজকর্ম ঘিরে লেখালেখি এবং সৃষ্টিশীল লেখা দুটোই আরও বেশি করার পরিকল্পনা আছে আমার। আমি বেশ কিছু কবিতাও লিখেছি এবং আগামীদিনে আরও কবিতা এবং কল্পকাহিনি লিখে উঠতে পারব বলে আশা করি।

    আমি আঞ্চলিক ভাষাগুলি থেকে ইংরেজিতে এবং ইংরেজি থেকে আঞ্চলিক ভাষায় অনুবাদ করছি।  এই মুহূর্তে কন্নড় ভাষায় তিনটি এবং তেলুগু, হিন্দি, তামিল আর মারাঠিতে একটি করে প্রকল্প পরিচালনা করছি। জাতিব্যবস্থা এবং বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের কাজগুলিকে অনুবাদ করাই আমার লক্ষ্য যাতে আরও বহু মানুষের মধ্যে সেগুলি ছড়িয়ে পড়তে পারে।

     
     



    Tags
     


    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    You may use these HTML tags and attributes: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>

     



    তথ্য নীতি | Privacy policy

 
Website © and ® by Ebong Alap / এবং আলাপ, 2013-24 | PRIVACY POLICY
Web design & development: Pixel Poetics