লেডিজ টয়লেট : প্রথম অধ্যায়
0 210◊
তাহার শ্বশুরগৃহ দুই শ্বশুর এক শাশুড়ি এক বর আর অকেশনাল এক মাসতুতো দেওর আর পিসশাউড়িতে জমজম করিতেছে।
সে প্রত্যহ চাকুরি করিতে হাসপাতালে যায়। কিন্তু যাহা হয়, উত্তম টয়লেটের সর্বদাই সর্বত্র অভাব। কোথাও মলেস্টপ্রবণ সহকর্মী কোথাও বা সুইপার মদ খাইয়া উলটাইয়া থাকে। সে তাই টয়লেটে যাইতে পায় না বাড়ির বাইরে। সে প্রান্তিক স্টেশনে নামিয়া হাসপাতালে যাইবার গাড়িতে চড়ে, সেখানে সুলভ কমপ্লেক্স থাকিলেও যাইবার উপায় নাই, সঙ্গের লটবহর কোথায় রাখিবে?
প্রাতঃকালে এজমালি টয়লেটে যাইতে চাহিলে খানাকামরা পার হইতে হয়। সেথা টপকাইতে হয় বিবিধ হার্ডল। রসবতী-সহচরী, শাশুড়িমা, শ্বশুরমশাই, জ্যাঠাশ্বশুর। প্রত্যহ সকালে উঠিয়া কলঘরে যাইতে গেলেই তাহার কলেজ যাওয়া দেওর চেঁচাইয়া বলিয়া উঠে , “বউদি, আমি আগে চান করবো”। শাশুড়ি, শ্বশুরের বয়স হইয়াছে তাঁহারা বেগ চাপিতে পারিবেন কেন? দ্বিতলে যদিও দুটি কলঘর রহিয়াছে, তবুও উপযুক্ত তিথিনক্ষত্তরের সমাবেশ হয় নাই বলিয়া পূজা হয় নাই বিধায় সে কলঘর ইউজ করা চলিবে না কোনওমতেই।
তা, সে বড় লক্ষী মেয়ে, তাই সকালবেলায় পেচ্ছাপ চাপিয়া, পায়খানা চাপিয়া ঘরদোর সাব্যস্ত করিতে থাকে, আপিসের ব্যাগও গোছাইয়া ফ্যালে, তাহার পর অপেক্ষা করিতে থাকে, কখন কলঘর ফাঁকা হয়। ফাঁকা পাইলে সে চান আর বাকি জৈবিক ক্রিয়া একসঙ্গে সারিয়াসুরিয়া বাহির হয়।
তাহারও পর, মাসে দু-একদিন মাসিক চলিলে তখন অতিরিক্ত দুইবার কলঘরে যাইতেই হয় তাহাকে। প্রথমে শ্বশুরমশাই জিজ্ঞাসা করিয়া থাকেন “বউমা, তুমি আজ তিনবার কলঘরে গেলে কেন?”... সে আমাদের বড়ই লক্ষীমন্ত মেয়ে, তাই সে কেবলই এক ভ্যাবলা হাসি হাসে। শাশুড়ি বলিয়া উঠেন, “আমার ঘরে লক্ষী-নারায়ণ আছেন, এই কলঘরের জামা পরে ঢুকবে না ঘরে”। ঘাড় নাড়িয়া সিঁড়ির গোড়ায় রাখা ব্যাগ নিয়া সে আপিস যায়।
বিকালে পিতৃগৃহে, মায়ের কাছে ফিরিয়া কলঘরে ঢুকিয়া বলে “বাব্বাহ, বাঁচলুম”। জামা বদলাইতে কোনওদিন মনে থাকে, কোনওদিন থাকে না।
সব দু:খেরই শেষ হয় বলিয়া একদিন দ্বিতলের গৃহপ্রবেশ সাঙ্গ হয়, সে খুব খুশি, “যাক বাবা, ওঁরা তো কেউ উপরে আসবেন না, আমি ঘুম থেকে উঠে পটি পেলে পটি, হিসু পেলে হিসু করতে যেতে পারবো”। নীচের তলার কলঘরে ও সাবান শ্যাম্পু কিচ্ছুই রাখিতে পারিত না, শ্বশুরমশাই বিরক্ত হন বলিয়া।
নতুন কলঘরে ছোট্ট একটা তাকে সাজাইয়া গোছাইয়া সাবান, শ্যাম্পু, ফেসওয়াশ, ফেসপ্যাক রাখে মেয়েটি, আর রাখে ভিওয়াশ - ভ্যাজাইনাল হাইজিন ওয়াশ। সারাদিন ঘাম, কর্মক্ষেত্রেও টয়লেটের অপ্রতুলতার কারণে মাসিকের সময় প্যাড পরিবর্তনের সুযোগ না পাওয়া, ইহার জন্যে যে যোনিতে সংক্রমণ, তাহা হইতে মুক্তির উপায়, এই তো হাতের কাছেই।
সেইবার, ফাল্গুনের শুরু হইতেছে, ভ্যালেন্টাইনস ডে-র দিনকয়েক আগে তাহার স্বামী বাড়ি ফিরিয়াছেন। যথা শীঘ্র আউটডোর ম্যানেজ করিয়া, মস্ত বড় চকোলেট খরিদ করিল বরের জন্য সে, তাহার পর বাড়ির পথ। সারাদিন বস্তুত অনাহার, স্বামীর সঙ্গে একসঙ্গে খাইবে। মাকে পিতৃগৃহে ফোন করিয়া বলিয়া দেয় আজ আর যাইবে না।
বাড়ি ফিরিয়া সে বরের গলা জড়াইয়া সোহাগ করিতে করিতে সবে বলিতেছিল, “আমি সকাল থেকে খাইনি, একসঙ্গে খাবো, কেমন?”
বলিতে বলিতেই দেখে ভিওয়াশের শিশি তাহার খাটের উপর রাখা। তাহার খুব সামান্য ক্ষাত্রতেজ মাথা তুলিয়া ওঠে ঢোঁড়া সাপের মতো। আদর-আহ্লাদ-প্রেম ম্লান হইয়া আসে, চকোলেট দিবার পর বাধ্যতামূলক চুমু খাবার কথা ভুলিয়া, রুক্ষ গলায় বলিয়াই ফ্যালে, “এটা এখানে কেন?”তাহার চিকিৎসক, আধুনিক, শিক্ষিত, বুদ্ধিমান, সুদর্শন স্বামী কহেন - “বাড়িতে বড়রা আছেন”।
--“তো?”
--“ভাই আছে, এখানে মাঝেমধ্যেই বাথরুমে যায়”।
--“তো এটা খাটের উপর কেন?”
--“মানে, বোঝো না? লজ্জাটজ্জা কিছুই কী নেই? ইট মীনস ফর লেডিস প্রাইভেট পার্টস, তুমি ছাড়া আর কে আছে এই বাড়িতে? এইসব দেখিয়ে বেড়াবার মতো সস্তা কবে থেকে হলে?”
-“কিন্তু এটা খাটে না রেখে তুমি তো কাবার্ডেও রাখতে পারতে, অথবা মেঝেয়?”
স্বামী বাহুবন্ধন ছিন্ন করিয়া স্নানঘরে কবাট দেন। তাহার স্নান সমাপ্ত হইলে, সেও যায়। স্নান করিতে করিতে সাবান ঘষিয়া রাগ তুলিয়া ফ্যালে। মা বলিয়াছেন, যে সয়, সে রয়। ভালবাসি, ভালবাসি বলিতে বলিতে মাথায় জল ঢালিতে থাকে। স্নান শেষ করিয়া আসিয়া দেখে স্বামী খাইতে চলিয়া গিয়াছেন, প্রতিশ্রুতি মনে নাই তাহার। অভিমান হয় বোকা মেয়ের। লীলা মজুমদার পড়িয়াছিল, তবুও ভু্লিয়া যায় “রাগ করে না খেয়ে বাড়ি যায় বোকারা”। নীচে নামিয়া বলে, “আমার খিদে নেই, ফিল্ড ভিজিট ছিল স্বাস্থ্যকর্মীরা খাইয়েছে”।
তা বাদে বারান্দায় বসিয়া উদ্ধারণপুরের ঘাট পড়িতেছিল। শাশুড়ি্মা আসিয়া বলিলেন, “খেয়ে নেবে এসো, আমাদের খাওয়া হয়ে গ্যাছে, তোমার হলেই সব হেঁশেল তুলে দেবো”। সে বইয়ের পাতায় চোখ রাখিয়া বলে, “না মা, একটুও খিদে নেই”।
শাশুড়ি চলিয়া যাইবার মিনিট দশেক বাদেই দুমদাম উপরে উঠিয়া আসেন স্বামী। চিৎকার করিতে থাকেন, “আমাকে অপমান করা ছাড়া কোনও কাজ নেই তোমার? কেন আছো এখানে? এই মূহুর্তে বেরিয়ে যাও বাড়ি থেকে”।
বোকাটে হাসিয়া রচিতা পরিস্থিতি ম্যানেজ করিতে যায়, আদরের চকোলেট হাতে তুলিয়া দিলে ছুঁড়িয়া ফ্যালেন স্বামী। ধাক্কা দিয়া ওকে ফেলিয়া দেন খাটে। সাজানো গৃহস্থালি ছুঁড়িয়া মারেন এদিক সেদিক। তাহার পর বালিশ নিয়া শুইতে চলিয়া যান মায়ের কাছে। দ্বিপ্রাহরিক ছুটির দিনের ঘুমের কোটা পূর্ণ করিতে।
সে বসিয়া বসিয়া ভাবে, কেবলই ভাবে, যাহা শুনিয়াছে তাহার সবটুকু ঠিক কি না। শাশুড়িমায়ের ঘরে যাইতে তাহার সাহস হয় না, যদি সেখান থেকেও অপমান করিয়া তাড়াইয়া দেয়?
স্বামীকে ফোনের পর ফোন করিতে থাকে, ধরে না কেউ। হোয়াটস্যাপও করিয়া ফ্যালে, “এই যে শুনছো আমি চলে যাচ্ছি”। ইহারও কোনও উত্তর আসে না। এমন গর্দভ মেয়ে, আশা করিয়াছিল যেন চলিয়া যাইতেছি বলিলেই কেউ আসিয়া হাত ধরিয়া আটকাইবে।
কেউ আসিল না বলিয়া কতক্ষণ বসিয়া থাকিয়া নিজেকে সাব্যস্ত করে, তাহার পর অফিসফেরত ছাড়িয়া ফেলা জামাকাপড়ই পুনরায় পরিধান করত অফিসের ব্যাগদু'টা নেয়।
প্রত্যাগত সন্ধ্যার মুখে তখন সমুদ্রমন্থনে উঠিয়া আসা লক্ষীদেবীকে তাঁহার বাল্যের পিতৃগৃহের স্মৃতি মনে করাইতে শাঁখ বাজিতেছে। সে রিক্সাকে বলে “স্টেশন চলো, ছটা বারোর ট্রেনটা ধরিয়ে দাও। জলদি”।
অথঃ টয়লেট মঙ্গলকাব্য প্রথম অধ্যায় সমাপ্ত।
Tagsadolescence age of consent age of marriage caa child marriage corona and nursing covid19 Covid impacts on education domestic violence early marriage education during lockdown foremothers gender discrimination gender identity gender in school honour killing human rights intercommunity marriage interfaith marriage lockdown lockdown and economy lockdown and school education lockdown in india lockdown in school lockdown in schools love jihad marriage and legitimacy memoir of a nurse misogyny nrc nurse in bengal nursing nursing and gender discrimination nursing in bengal nursing in india online class online classes during lockdown online education right to choose partner school education during lockdown social taboo toxic masculinity transgender Women womens rights
Leave a Reply