• ইয়ে... মানে বিয়ে!


    0    178

    September 14, 2019

     

    বিয়ে এক

    পঞ্চাশ পেরিয়েছে তো কোন কালে, ষাট হতে চলল বয়েস, তবু দেখি বিয়ে নিয়ে কথা মোটে শেষই হতে চায় না। একসময় আমাদের ভুরভুরে যৌবনে কে কাকে বিয়ে করছে, আর তাতে কত হুল্লোড় হচ্ছে বা হচ্ছে না, সেইটা ছিল আলোচনার বিষয়। তারপর দিনকতক চর্চা করলাম বিয়ে কাকে কী দিল আর ঘাড় মুচড়ে কী আদায় করে নিল, তাই নিয়ে। এখন খুলে বসেছি জেননেক্সটের বিয়ের খাতা, তাদের জীবন এবার যাতে চলে গড়গড়িয়ে বিবাহ পথে, সেই ‘রেল কম ঝমাঝম পা পিছলে আলুদ্দম’! বিয়ে ক্রমাগতই নানাবিধ মোক্ষম মোচড় মেরে এমন সব নতুন সাজে সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে যে ভ্যাবাচ্যাকা ভাবতে হচ্ছে আস্তিনের মধ্যে এই তাসও কোথাও লুকানো ছিল! ওই যে একটা দিল্লীকা লাড্ডুর পুরানো অ্যানালজি - যে খায় সেও পস্তায়, যে না খায় সেও, তা’লে বাবা খেয়ে পস্তানোই ভালো – সেই ট্র্যাডিশনই কি সমানে চলছে? পুরানো বোতলে নতুন মদ্যের মতো পাতির বেহদ্য?

    শুরুতেই বলি, বিয়ে বলতে এই লেখায় পাতির বেহদ্য সেই বিষমকামী বিয়ে নিয়েই কথা হবে, যা এই পবিত্র ভারতভূমিতে শ্বেতকেতু বালকের হাত ধরে এসেছিল সমাজে আল বাঁধার জন্য বা অধিকারের সীমানা নির্দেশ করার জন্য। মার্ক্সবাবু যাকে সম্পত্তি, উত্তরাধিকার, এবং উৎপাদনের প্যাঁচ-পয়জার দিয়ে বুঝিয়েছিলেন, সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও দর্শন যাকে সামাজিক সম্পর্কের কেন্দ্রীয় একক হিসাবে ভাবতে শিখিয়েছে। ফেমিনিস্টরা যাকে বলেছেন নারীর শরীর, সত্ত্বা, ও যৌনতার ওপর দখলদারী, সেই এক ও অমোঘ নারীপুরুষের বিয়ে - ফিশফ্রাই ও রজনীগন্ধায় যাহা ভরপুর।

    একটা কথা খুব সহজে আমরা বলে ফেলি, বিয়ে, সম্পর্ক, প্রেম, যৌনতা ইত্যাদির ক্ষেত্রে, যে ওগুলো হল ব্যক্তিগত রুচি-পছন্দের বিষয়। আমার বিয়েতে রুচি ছিল, অমুকের ছিল না, তমুকের আবার বিয়ের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা খুব খারাপ ছিল, বর ধরে মারত, কিম্বা শ্বশুরবাড়িতে স্রেফ আলুসেদ্ধ ভাত খেয়ে থাকতে হত, তাই বিয়ে থেকে বেরিয়ে গেছিল। যেন সবটাই ব্যক্তির ভালো থাকা না-থাকার কথা, যেন এই সব অভিজ্ঞতার, ইচ্ছার, রুচি বা পছন্দের কোনও প্যাটার্ন নেই, ব্যক্তিগতের বাইরে কোনও সামাজিক-রাজনৈতিক অবস্থান নেই। অথচ আমরা শ্বেতকেতু থেকে মার্ক্স, ঘরের বাগানের সুকুমারি ভট্টাচার্য থেকে ফুকো-বাটলার সবই টুকটাক জানি, তবুও বিয়ে ইত্যাদিকে ব্যক্তিগত পছন্দ, রুচি ইত্যাদি বলে চালিয়ে দিতে চাই।    

    এই লেখার জন্য হাতে গোনা কিছু মানুষের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি, মোট পনেরো জন। তারা অকপটে নিজেদের ব্যক্তিগত বিয়ের সিদ্ধান্ত ও তার সঙ্গে বিয়ে সংক্রান্ত রাজনৈতিক অবস্থানের সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেছেন, যার মধ্যে অধম অহমও একজন। এই দলের মানুষেরা নিজেদের মূল্যায়ন অনুসারে বিস্তর সুযোগসুবিধা নিয়ে বেড়ে উঠেছেন, এঁদের শরীর নারীচিহ্নিত ও নারী হিসাবেই নিজেকে আইডেন্টিফাই করেন, সবাই হিন্দু, বাঙালি, উচ্চবর্ণ বা মধ্যবর্ণ, দু’জন নিম্নবর্ণ হলেও অন্যান্য সুযোগের দৌলতে ‘হ্যাভ’-এর দলে পড়েন। সবাই উচ্চ, উচ্চ-মধ্য বা মধ্যবিত্ত শ্রেণীতে আছেন, শহরে জন্মেছেন বা থাকছেন, উচ্চশিক্ষার সুযোগ ও পছন্দমতো কাজের সুযোগ পেয়েছেন। সকলে আবশ্যিক বিষমকামিতা প্র্যাকটিস করেন না বটে, কিন্তু প্রত্যেকেই পুরুষের সঙ্গে যৌনসম্পর্কে আছেন বা ছিলেন। অর্থাৎ সোজা বাংলায় সবাই বিয়ের জন্য ‘এলিজিবল’। এ দলের মধ্যে অনেকেই নিজেদের ফেমিনিস্ট হিসাবেও চিহ্নিত করেন।

    এই পনেরোজনের মধ্যে পাঁচজন বিবাহিতা, যাদের ভেতরে একজন ডিভোর্সের পর আবার বিয়ে করেছেন, পাঁচজন আদৌ বিয়ে করেননি, ডিভোর্স ক’রে বিয়ে থেকে বেরিয়েছেন পাঁচজন, যার মধ্যে একজন দু’বার বিয়ে ও দু’বার ডিভোর্স করেছেন। এই দলের সবাই শহরবাসী, দু’জন ছোট শহরে জন্মালেও এখন কাজের সূত্রে বড় শহরে আছেন, দু’জন বড় শহরে জন্মে কাজের সূত্রে আরও বড় শহরে গেছেন, একজন চলে গেছেন বিদেশে। সবাই উচ্চশিক্ষিত, মাস্টার্স থেকে ডক্টরেট অবধি ডিগ্রিধারী, একজনই কেবল কলেজ শেষ করতে পারেননি, কিন্তু স্বশিক্ষিত ও সচেতন। প্রত্যেকে কর্মরত, যার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষিকা, ডাক্তার, এনজিও কর্মী, অ্যাক্টিভিস্ট, লেখক, গবেষক, প্রকাশক, সাংবাদিক, কর্পোরেট কর্মী, স্বাধীন ব্যবসায়ী সবই আছে। এঁদের মধ্যে একা থাকেন ছ’জন, পাঁচজন স্বামীর সঙ্গে, দু’জন পুরুষ সঙ্গীর সঙ্গে, আর মা/বাবার পরিবারে থাকেন বাকি দু’জন।  এঁদের বয়েস তিরিশ থেকে ষাটের মধ্যে, তিনজন তিরিশ থেকে চল্লিশ, ছ’জন চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ, আর বাকি ছ’জন পঞ্চাশ থেকে ষাটের কোঠায় পড়েন। এঁদের মধ্যে তিনজন এইমুহূর্তে কোনও ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে নেই, বাকিরা বিবাহিত বা অবিবাহিত ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে আছেন।

    আগামী কয়েক কিস্তি জুড়ে এঁদের আলাপের মধ্যে দিয়ে উঠে আসা বিয়ের ছবি কীভাবে নির্মিত আর বিনির্মিত হতে-হতে গেছে সেকথা জানাবার চেষ্টা করব। প্রতি কিস্তির আপাত-নিরীহ ও সরল ‘মূল প্রশ্ন’ ধরে কেন বিয়ে করেছি বা করিনি, বা কেন করলেও বেরিয়ে এসেছি-র আপাত-ব্যক্তিগত আলাপ থেকে, বিয়ে বলতে রাজনৈতিকভাবে কী বুঝি বা কিছু বুঝি কিনা, বিয়ের নির্মাণের মধ্যে মনোগ্যামি, সন্তান, স্পেস, প্রেম ও যৌনতার ধারণা, এস্থেটিকস ও এথিক্সের ধারণা, কম্প্যানিয়নশীপের চাহিদা, প্রতিষ্ঠানের অমোঘতা, সুরক্ষা, পাবলিক সেলিব্রেশন, সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা সবই এসেছে ঘুরে ফিরে। ফেমিনিজমের সঙ্গে বিয়ের কোনও সম্পর্ক আছে কিনা, যা পলিটিক্যাল তাই পারসোনাল হল নাকি ফাঁক থেকে গেল কোথাও, বিবাহিত হিসাবে নিজেকে আদৌ প্রিভিলেজড বলে ভাবি কিনা, এসব নিয়েও কিঞ্চিৎ চর্চা হয়েছে।

    আরেকটা কথা বলে রাখতে চাই, এই যে মানুষেরা যাঁরা বিয়ের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত এবং অভিজ্ঞতার কথা এতো খোলাখুলি বলার সাহস দেখিয়েছেন, এঁদের সম্পর্কে যতদূর সম্ভব জাজমেন্টাল না হবার চেষ্টা করলে ভালো হয়। আর যেহেতু এইসব কথোপকথন খুবই ঢিলেঢালা আড্ডার মতো ঘটেছে তাই কথাও হয়েছে খুব ছড়িয়ে-ছিটিয়ে, ফলে সবার বক্তব্য সোজাসুজি ট্রান্সস্ক্রিপশন করে বসিয়ে দেওয়া যায়নি, তার ওপর পরিচয় প্রকাশিত হয়ে যাবারও আশঙ্কা ছিল। এঁরা যা বলেছেন তা একেকটা বিষয় অনুযায়ী গুছিয়ে ছোটো করে আনতে হয়েছে, তাই মূলত ‘আমি’-র বচনে কথা হলেও, একাধিক সময়ে সমমনস্ক একাধিক ‘আমি’ একসঙ্গে কথা বলেছেন, যেজন্য কোথাও কোনও কোটেশন মার্কা পড়েনি।    

    চলুন, এবার তবে দ্যাখা যাক কাকে বলে ইয়ে...মানে বিয়ে!

     

    বিয়ে দুই

     

    এই কিস্তির মূল প্রশ্ন - বিয়ে মানে কী?

    ...বিয়ে একটা সুবিধাজনক ব্যবস্থা, পরিবারের ধারণা এখান থেকে শুরু হচ্ছে, আবার এটাই পরিবারের জন্ম দিচ্ছে। একধরনের সম্মানজনক সম্পর্ক যাকে সবাই মিলে মাথায় তুলে রেখেছে, আমরাও তাই ভাবার সুযোগ কম পাই, প্রশ্ন করা অবধি পৌঁছতেই পারি না। একটু দূরে দাঁড়িয়ে ভাবতে পারলে বোঝা যায় এটা মেয়েদের জন্য ‘এসেনশিয়াল’ কিছু নয়, বরং ব্যক্তিগত ‘চয়েস’ বলা যেতে পারে।

    ...একটা ‘ভার্সন অফ কাপলহুড’, মানে এক প্লাস এক। এটা তো আমরা ঐতিহাসিকভাবে জানি যে কিছু প্রতিষ্ঠান অন্যদের থেকে মর্যাদা বেশি পায়, বিয়ে আর পরিবার সেভাবেই গুরুত্ব পেয়ে এসেছে। এই ইতিহাসটাই বিয়ের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে দেয় আমাদের, কখনো সরাসরি ইনফ্লুএন্স করে, কখনো কোভার্টলি। আমাদের চেতনার মধ্যে যে কাপলহুডের ধারণা গভীরভাবে ঢুকে বসে আছে, বিয়ে সেটাকে ভ্যালিডিটি দেয়।

    ...আইডিয়ালি এই সমাজে বিয়ের প্রতিষ্ঠানটা থাকাই উচিত নয়। এটা মেয়েদের জন্য তো বটেই, এমনকি পুরুষদের জন্যও এমন একটা বন্ধন যেখানে সবচেয়ে বড়ো হয়ে ওঠে সমাজের চাহিদা। বিয়ের নামে প্রেম-ভালবাসা-সম্মানের যে টোপ মেয়েদের গেলানো হয়, সেটা না থাকলে মেয়েরা হয়ত নিজের ইচ্ছায় পিতৃতন্ত্রের বশ্যতা স্বীকার করত না। ইদানিং আবার বিয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে বাজার বা মার্কেট ইকনমি, বিয়ে এখন একটা ইভেন্ট। পিতৃতন্ত্রের সঙ্গে এখন হাত মিলিয়েছে ভোগবাদী ক্যাপিট্যালিসম।

    ...এদেশে একটা মেয়ে বিয়ে করে গোটা পরিবার বা গোষ্ঠীকে আর বরটা এমনকি বউটাকেও বিয়ে করে না, সে বিয়ে করে কিছু সুবিধাকে। তবে প্রতিষ্ঠানটা খুব শক্তিশালী, এটা স্বীকার করতেই হবে, সেজন্যই তার নিয়মকানুনগুলো এতো স্ট্রিক্ট। ওখানে ঢুকতে হলে বা ওর মধ্যে থাকতে হলে সেগুলো মানতে হবে, নইলে তুমি সুবিধাগুলো পাবে না।

    ...মানুষ তো সামাজিক প্রাণী, তারা পরস্পরের সঙ্গে ইন্টারডিপেন্ডেন্সের খুঁটি চায়। বিয়ে যেন সেই খুঁটি, যা সুরক্ষা দেবে, স্থিতিও দেবে, এ সম্পর্ক ‘চিরকাল’ চলবে। বিয়ের মধ্যে দিয়ে যেমন সন্তান ও সম্পত্তি উৎপাদন করা হয়, তেমনি ধর্ম, বর্ণ, জাতি, সম্প্রদায় এসবেরও উৎপাদন ও পুনরুৎপাদন ঘটতে-ঘটতে চলে। আমরাও সম্পর্কে ঢোকার সময় ‘পিপল লাইক আস’-ই খুঁজি, আমরাও দলগুলোকে জোরদার করি, এক্সক্লুসিভিটি আরও বাড়াই।

    ...বিয়ে হচ্ছে সামাজিকভাবে স্বীকৃত একটা সহ-বসবাস ও সহবাসের অধিকার। সংগঠিত প্রতিষ্ঠান হিসাবে বিয়ের একটা আবশ্যিক দিক হচ্ছে ছাপ্পা মেরে বলে দেওয়া এই নারীটি ওই পুরুষেরই সম্পত্তি, কিম্বা এই দুটি নারীপুরুষ পরস্পরের সঙ্গেই শুধু শোবে, আর কারও সঙ্গে নয়। অর্থাৎ প্রথমে সামাজিকভাবে দুটি মানুষকে অন্য সবার থেকে আলাদা করে নিয়ে তাদের একটি একক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করা হল, তারপর আইনের নানা ব্যবস্থা তার সঙ্গে জুড়ে আরও শক্তপোক্ত হল সেই প্রতিষ্ঠা। ছোটবেলা থেকে আমাদের খাওয়ানো হয়েছে সমাজের একক হল পরিবার, সেই পরিবার দাঁড়িয়ে আছে বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানের ওপর, যা ঘটে নারী ও পুরুষের মধ্যে। এই পাঠকে চ্যালেঞ্জ করার কথা কেউ কেন ভাববে, বরং মেনে চললে অনেক সুবিধা আছে।

    ...বিয়ের ইন্সটিটিউশন দাঁড়িয়ে আছে নারীর যৌন শ্রম, ইমোশনাল শ্রম আর প্রজনন শ্রমের ওপর। রাষ্ট্র, সমাজ, পরিবার, ধর্ম, সবাই নারীটিকে কন্ট্রোল করে চলেছে বিয়ের মাধ্যমে।  বিয়ের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে থাকলে মেয়েদের ওপর শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক, এমন কি যৌন অত্যাচারও সামাজিক সম্মতি তো পায়ই, এমন কি আইনসম্মতও হয়ে যায়। নইলে ম্যারিটাল রেপ নিয়ে আমাদের কোনও আইন আজও নেই কেন?

    ...বিয়ে কেবল একটাই ইন্সটিটিউশন নয়, একদিকে এটা সোশ্যাল, অন্যদিকে লিগাল ইন্সটিটিউশনও। বেশিরভাগ সময় দুটো মিলেমিশে থাকে, কিন্তু কেউ চাইলে আলাদা করে দেখতেও পারেন। আমরা অনেকেই নানা লিগাল ইন্সটিটিউশনের মধ্যে বাধ্য হয়ে ঢুকি, রাষ্ট্র নইলে আমাদের নাগরিক অস্তিত্বই মেনে নেবে না। বিয়ের আইনি প্রতিষ্ঠানে ঢোকাটা তেমনি একটা বাধ্যতামূলক অবস্থান হতে পারে, কিন্তু সামাজিক প্রতিষ্ঠানটার মধ্যে ঢোকা মানে আমি বিয়ের যাবতীয় বৈষম্যমূলক, দমনপীড়নমূলক, পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থাগুলোকে মানতে মানতে যাচ্ছি, এবং পুষ্ট করছি।

    ...বিয়ে একটা লিভিং অ্যারেঞ্জমেন্ট, যেটা সুবিধাজনক, সুরক্ষিত। শেষ বয়সে কে দেখবে এটা যেমন মায়ের জেনারেশন ভেবেছে তেমনি আমার জেনারেশনও ভাবে। অনেক লোকের মুনাফা জড়িয়ে থাকে বিয়ের সিস্টেমটার সঙ্গে, স্টেট চিনতে পারে কোন নাগরিক কার সঙ্গে কী সম্পর্কে আছে, তাদের ওপর কোথায় কোন চাপ দেওয়া যায় আর কোন স্কিমের লোভ দেখানো যায়। বাজারের প্রবল মুনাফা, বিয়ে তো একটা বিশাল ইভেন্ট এখন, ওদিকে ধর্ম, গোত্র, কুল, জাত মিলিয়ে বিয়ে হচ্ছে বলে এইসব ক্যাটেগরিগুলো আরও মজবুত হচ্ছে। আবার এক পরিবারের সঙ্গে অন্য পরিবারের যোগ হয়ে, বাচ্চার জন্ম হয়ে পরিবার বাড়ছে, তার তো মুনাফাই মুনাফা।

    ...বিয়েটা ঠিক কাজ বলেই সেটা এতো সিকিওরড, এবং এটা এতো সিকিওরিটি দেয় যখন তখন নিশ্চয় এটাই ঠিক কাজ, এইভাবেই গোলগোল করে মানুষের মনে যুক্তি তৈরি হয়েছে। আমার কাছে বিয়ে বস্তুটা খবরদারীর ওপর দাঁড়িয়ে আছে, সেটা সফট হতে পারে বা হার্ড। যে মুহূর্তে প্রতিষ্ঠানের সদস্য হিসাবে নাম লেখালাম, আমি সেই খবরদারীর আওতায় ঢুকে পড়লাম।

    ...বিয়ে একটা সামাজিক অভ্যাস, যেটা দাঁড়িয়ে আছে মনোগ্যামির ওপর। মানুষকে বোঝানো হয় যে এক্সক্লুসিভ প্রেম, সেক্স, সুরক্ষা বা কম্প্যানিয়নশীপ তুমি চাইছ সেটা বিয়ে ছাড়া পাবে না। আবার বিয়ের মাধ্যমে মেয়েদের ওপর বিপুল এক্সপেক্টেশনের বোঝাও চাপিয়ে দেওয়া হয়, পারফেক্ট দশভুজা হয়ে তাকে ঘরে-বাইরে সব সামলাতে হয়, যার চাপে আমি বুঝতেই পারিনা বিবাহিতা হিসাবে আমার প্রিভিলেজটা কোথায়।

    ...দুটো লোকের একসঙ্গে থাকা, রিসোর্স শেয়ার করা, এসব তো আছেই, বিয়ে মানে কিছু বেসিক ইক্যুইটেবল ভ্যালুও শেয়ার করা। সেটা হয় না কারণ মেয়েরা নিজেদের ঔজ্জল্য কমিয়ে দিয়ে স্বামীদের চমক বাড়াতে সাহায্য করে। বিয়ের মধ্যে দুটো পরিবারের কম্প্যাটিবিলিটি জরুরি, সেখানে ক্লাস-কালচারের মতো জাতের প্রশ্নও বিশেষ ভাবে জরুরি, সেটাও কম্প্যাটিবিলিটির অংশ।  

    এই কিস্তির শব্দচাবি

    সামাজিক ও আইনি সুরক্ষা, লেজিটিমেসি, মনোগ্যামি, কাপলহুড, পরিবারের কম্প্যাটিবিলিটি, কম্প্যানিয়নশীপ, স্বীকৃত সেক্স, জাতি-ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণীভিত্তিক এক্সক্লুসিভিটি, যৌন কনট্রোল, পরিবার, বাজারি মুনাফা

     
     



    Tags
     


    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    You may use these HTML tags and attributes: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>

     



    তথ্য নীতি | Privacy policy

 
Website © and ® by Ebong Alap / এবং আলাপ, 2013-24 | PRIVACY POLICY
Web design & development: Pixel Poetics