• উত্তরপ্রদেশের প্রত্যন্ত গ্রামের স্কুলপড়ুয়ারা রুখে দিল নাবালিকা বিয়ে


    0    290

    November 16, 2020

     

    শুধুমাত্র একটা ফোনকলই তেরো বছরের প্রীতিকে অকালে বিয়ে হয়ে যাওয়া থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল। দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষিত হবার কিছুদিন পরেই, জুন মাসে, প্রীতির বাবা-মা চুপচাপ ওর বিয়ে দেবার ব্যবস্থা করে ফেলেছিলেন। প্রীতির বাবা ছিলেন ওদের পাঁচজনের পরিবারের একমাত্র রোজগেরে মানুষ। তিনি মনে করেছিলেন লোকজনের নজর এড়িয়ে সংসারের একটা পেটের বোঝা কমিয়ে ফেলার এটাই আদর্শ সময়। কিন্তু তাঁর সেই পরিকল্পনা সফল হয়নি।

    ‘বিয়ের তারিখ পাকা করবার জন্য বরের বাড়ির লোকজন এসেছিল’ — স্মৃতিচারণ করছিল তেরো বছরের প্রীতি। সে বুঝতে পারছিল, যা করার করতে হবে খুব তাড়াতাড়ি। কিন্তু ওর নিজের কোনো মোবাইল ছিল না, যাতে ও কারোকে খবর দিতে পারে। স্কুলের অনলাইন ক্লাসগুলোর জন্য প্রীতি ওর দাদার মোবাইলটা ব্যবহার করত। যেহেতু দাদার নিজস্ব কাজ মিটলে তবেই ও মোবাইলটা হাতে পেত, সেহেতু ক্লাসগুলোতেও ওর হাজিরা ছিল খুবই অনিয়মিত। যে দিন ওর বিয়ের তারিখ পাকা করা হল, তার পরদিনই প্রীতি সেই ফোন নিয়ে চুপিচুপি তার আনুপশহর(উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহর জেলার একটা ছোট শহর)-এর বাড়ি থেকে বেরিয়ে তার স্কুলের এক শিক্ষিকাকে ফোন করে এবং বলে যে, ‘ওরা আমাকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। প্লিজ আমাকে সাহায্য করুন। আমি বিয়ে করতে চাই না।’

    ইংরেজি আর অঙ্ক শেখার পাশাপাশি সেখানে প্রীতিকে নীরবে মেনে নেওয়ার বদলে জোরগলায় তার প্রাপ্য অধিকার দাবি করতে শেখানো হয়।

    সেই শিক্ষিকা, মধু শর্মা, সঙ্গে সঙ্গে প্রীতির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং যাতে তাঁরা এখনই মেয়ের বিয়ে না দেন, সে ব্যাপারে তাঁদের বুঝিয়ে-সুঝিয়ে রাজি করান।

    প্রীতি এখন তার অনলাইন ক্লাসগুলোতে ফিরে গেছে। আজও তার উপস্থিতি একইরকম অনিয়মিত, কারণ তার বাড়িতে একাধিক স্মার্টফোন নেই। তবে আপাতত তার বিয়ে নিয়ে উদ্যোগটা বন্ধ হয়েছে।

    তেরো বছর বয়সি এই মেয়েটা উত্তরপ্রদেশের যে গার্লস স্কুলে পড়তে যায়, তার নাম ‘পরদাদা পরদাদি এডুকেশনাল সোসাইটি’স ইন্টার কলেজ’। এই স্কুলটির দেড়হাজার ছাত্রীকে শেখানো হয় কীভাবে একজন ‘নারীবাদী’ হওয়া যায়। স্কুলটি উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহর জেলায় — যে বুলন্দশহর মেয়েদের নিম্নমুখী চাইল্ড সেক্স রেশিও (প্রতি হাজার পুংশিশুর সাপেক্ষে ৮৯৬ জন শিশুকন্যা, যেখানে জাতীয় স্তরে সেই রেশিও হল ৯৪০), দুর্বল স্বাস্থ্য ও সাক্ষরতার দিক থেকে পেছিয়ে থাকার জন্য কুখ্যাত।

    ছবিসূত্র: গুগল

    মাত্র পাঁচ বছর বয়সে প্রীতি ওই স্কুলে ভর্তি হয়েছিল। ইংরেজি আর অঙ্ক শেখার পাশাপাশি সেখানে প্রীতিকে নীরবে মেনে নেওয়ার বদলে জোরগলায় তার প্রাপ্য অধিকার দাবি করতে শেখানো হয়। বাড়িতে নানা রকম অপ্রীতিকর প্রশ্ন তুলতেও শেখানো হয় মেয়েদের — ‘কেন আমাকে ভাইয়ের থেকে কম খেতে দেওয়া হয়’? কিংবা, ‘কেন আমি পড়াশুনা বন্ধ করে দেব’?

    ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য গ্রাম নিয়ে গড়ে ওঠা প্রায় সাড়ে তিন লাখ জনসংখ্যার এই আনুপশহরের সামাজিক পরিবেশ কিন্তু মহিলাদের জন্য মোটেও অনুকূল নয়। প্রবল দারিদ্র্য এবং অপরাধমূলক কার্যকলাপের জন্য কুখ্যাত এই অঞ্চলের মহিলাদের প্রায়শই নানান বৈষম্য, লাঞ্ছনা আর হিংসার শিকার হতে হয়। মেয়েদের মধ্যে নিরক্ষরতার হারও অত্যন্ত বেশি এবং এখানকার খুব অল্প সংখ্যক মহিলাই ক্লাস এইট পাস করতে পারে। উত্তরপ্রদেশের গ্রামাঞ্চলে অন্তত ৫৪ শতাংশ মেয়ের আঠারো বছরের আগে বিয়ে হয়ে যায়।

    এই স্কুলটা একেবারে স্বতন্ত্র। প্রত্যেকদিন সকালে, প্রার্থনার সময়, মেয়েদের একটি সমবেত প্রতিজ্ঞা করতে হয় — ‘হম জরুর সাদি করেঙ্গে লেকিন দশভি পুরে করনে কে বাদ’ (আমরা অবশ্যই বিয়ে করব, কিন্তু দশম শ্রেণি সম্পূর্ণ করার পর)। অবৈতনিক শিক্ষার পাশাপাশি ‘পরদাদা পরদাদি’ সংস্থার তরফে বই-খাতা, স্কুলের পোশাক, শিক্ষাসামগ্রী, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নানা পরিষেবা, যাতায়াতের জন্য যানবাহনের ব্যবস্থাসহ দৈনিক তিনবার খাবারও সরবরাহ করা হয়, সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। প্রতিদিনের উপস্থিতিপিছু দৈনিক স্কলারশিপ হিসেবে ছাত্রীদের অ্যাকাউন্টে দশ টাকা করে জমাও করে দেওয়া হয় — তাদের উচ্চশিক্ষার খরচ বাবদ। নবম শ্রেণির পর থেকে টাকার অঙ্কটা বাড়িয়ে পনেরো করা হয়। ‘পরদাদা পরদাদি এডুকেশনাল সোসাইটি’-র সিইও রেনুকা গুপ্তা বললেন, ‘আমাদের সমস্ত ছাত্রীরাই সমাজিকভাবে বঞ্চিত পরিবারের। সেই কারণেই আমরা এজাতীয় সুযোগ-সুবিধেগুলো দিয়ে থাকি, যা মেয়েদের স্কুলে পাঠানোর ব্যাপারে অভিভাবকদের উৎসাহ বাড়াতে সাহায্য করে।’

    এহেন বুলন্দশহরের ঠিক কেন্দ্রে অবস্থিত এই স্কুলটি মেয়েদের জন্য খুব কমসংখ্যক নিরাপদ এবং সুস্থ পরিসরগুলোর মধ্যে একটা। কিন্তু তারপর এল অতিমারী এবং সব ক’টি মেয়েকেই নিজের নিজের বাড়িতে বন্দী হয়ে থাকতে বাধ্য করা হল, যেখানে এদের মধ্যে অনেকেই নিরাপদ নয়।

    বুলন্দশহর প্রায়শই মহিলাদের ওপর ঘটে চলা নানা অপরাধের জন্য খবরের শিরোনামে এসে থাকে। গত মাসেই তেরো বছরের বালিকাকে এক গ্রামের চারজন পুরুষ ধর্ষণ করায় উত্তরপ্রদেশের এই জেলাটি সংবাদ-শিরোনামে এসেছিল। তার কয়েক সপ্তাহ আগে, চাচেরি গ্রামের পনেরো বছর বয়সি একটি মেয়েকে তার এক আত্মীয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে গণধর্ষণের অভিযোগ দশ যুবকের বিরুদ্ধে। তার কিছুদিন আগে আরেকটি আঠারো বছর বয়সি মেয়ে আত্মহত্যা করে। এক বছর আগে তার ধর্ষণ হয়েছিল, সে পুলিসে অভিযোগও জানিয়েছিল, কিন্তু অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিস কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি।

    এহেন বুলন্দশহরের ঠিক কেন্দ্রে অবস্থিত এই স্কুলটি মেয়েদের জন্য খুব কমসংখ্যক নিরাপদ এবং সুস্থ পরিসরগুলোর মধ্যে একটা। কিন্তু তারপর এল অতিমারী এবং সব ক’টি মেয়েকেই নিজের নিজের বাড়িতে বন্দী হয়ে থাকতে বাধ্য করা হল, যেখানে এদের মধ্যে অনেকেই নিরাপদ নয়। ভারতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়া এবং মার্চ মাসের শেষ থেকে স্কুল বন্ধ হয়ে যাবার ফলে ১.৫ বিলিয়ন শিশুর স্কুল যাওয়া স্থগিত হয়ে যায়। প্রাইভেট স্কুলগুলো অনলাইন পড়াশোনা চালু করে, কিছু কিছু সরকারী স্কুলও তাদের অনুসরণ করে। যদিও দেশের একটা বড় অংশ, যেখানে ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’ এখনও একটা স্বপ্ন মাত্র, এই অনলাইন পড়াশোনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত রয়ে গেছে, ফলে মেয়েদের সমস্যাসঙ্কুল জীবন আরো কঠিন হয়ে পড়েছে। স্কুলছুট হওয়া আর অল্পবয়সে বিয়ের আশঙ্কা দ্রুত দুঃসহ বাস্তবে পরিণত হচ্ছে।

    লকডাউন শুরু হবার কয়েক সপ্তাহ পরেই পনেরো বছর বয়সি রিঙ্কিকে গায়ে একটা শাড়ি জড়িয়ে তার হবু শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সামনে বসতে বাধ্য করা হয়েছিল। ওইদিন বিকেলে, কোনোক্রমে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এক প্রতিবেশীর ফোন থেকে সে তার স্কুলের শিক্ষিকাকে ফোন করে। রিঙ্কির সেই শিক্ষিকা সঙ্গে সঙ্গে পুলিস আর শিশু কল্যাণ সমিতির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁদের চাপে পড়ে রিঙ্কির অভিভাবকেরা এই মর্মে মুচলেকা দিতে বাধ্য হন যে তাঁরা মেয়ের আঠারো বছর বয়স হবার আগে তার বিয়ে দেবেন না। কিছুদিন পর সেই শিক্ষিকার কাছে আবার রিঙ্কির ফোন আসে। তার বাবা-মা সেই একই পাত্রের সঙ্গে তার ছোট বোনটির বিয়ে দেবার চেষ্টা করছিল। ‘পরদাদা পরদাদি’-র শিক্ষিকা মধু শর্মা বললেন, ‘শিশু কল্যাণ সমিতির তরফে রিঙ্কির পরিবারের ওপর নজর রাখা হয়েছিল, যাতে তার বাবা-মা আবার তার বিয়ে দিয়ে দিতে না পারেন। ওর বাবা-মা ভেবেছিল, পাত্রপক্ষের সঙ্গে যখন যোগাযোগ হয়েই গেছে, অন্তত একটা মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেওয়া যাক।’

    সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ থেকে এই মর্মে সতর্কতা জারী করা হয়েছে যে অতিমারীর ফলে আগামী কয়েক দশকে অতিরিক্ত আরও তেরো মিলিয়ন (এক কোটি তিরিশ লক্ষ) নাবালিকা বিয়ে ঘটতে চলেছে।

    নাবালিকা বিয়ের ক্রমবর্ধমান সংখ্যার মধ্যে অবশ্য ততটা বিস্ময়ের কিছু নেই। ২০১৫ সালের ভূমিকম্পের পর নেপালে নাবালিকা বিয়ে আর নারী পাচারের ঘটনা নাটকীয় হারে বেড়ে গিয়েছিল। যে দেশগুলি ইবোলা ভাইরাসের সংক্রমণের শিকার হয়েছিল, সেগুলিতে মেয়েদের স্কুলছুটের পরিমাণ হয়ে গিয়েছিল প্রায় তিনগুণ। ২০০৪ সালের সুনামির পর ইন্দোনেশিয়া, ভারত আর শ্রীলঙ্কার প্রচুর মেয়েকে সুনামিতে বিপত্নীক পুরুষদের সঙ্গে জবরদস্তি বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়েছিল বিশেষত বিয়ে করে পরিবার শুরু করার জন্য রাষ্ট্রের তরফে প্রাপ্য ভর্তুকি পাবার উদ্দেশ্যে। বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নদীতে ভাঙন আর বন্যাজনিত চরম দারিদ্র্যের কারণে বহু পরিবারে নেহাত বাঁচার তাগিদেই নাবালিকা মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়, এই সংক্রান্ত বহু তথ্যপ্রমাণ রয়েছে।

    হিসেব করে দেখা গেছে, সারা পৃথিবীতে প্রতি বছর প্রায় বারো মিলিয়ন(এক কোটি কুড়ি লক্ষ) অর্থাৎ প্রতি তিন সেকেন্ডে একটি করে মেয়ের আঠারো বছর বয়সের আগেই বিয়ে হয়ে যায়।  সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ থেকে এই মর্মে সতর্কতা জারী করা হয়েছে যে অতিমারীর ফলে আগামী কয়েক দশকে অতিরিক্ত আরও তেরো মিলিয়ন(এক কোটি তিরিশ লক্ষ) নাবালিকা বিয়ে ঘটতে চলেছে। আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড ভিশন’ তাদের সতর্কবার্তায় জানাচ্ছে, করোনাভাইরাস অতিমারীর কারণে আগামী দুবছরে অতিরিক্ত চার মিলিয়ন (চল্লিশ লক্ষ) নাবালিকার ওপর অকাল-বিয়ের খাঁড়া ঝুলছে, কারণ ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্য অনেক পরিবারকেই তাদের মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দিতে বাধ্য করবে। এই রিপোর্টে আরও সতর্ক করা হয়েছে যে, অতিমারী-জনিত আর্থিক এবং তজ্জনিত মানসিক চাপ বেড়ে যাবার কারণে আগামী তিনমাসে ৮৫ মিলিয়ন(সাড়ে আট কোটি) শিশু তাদের বাড়িতে এবং সামাজিক গোষ্ঠীতে শারীরিক, মানসিক এবং যৌন নির্যাতনের শিকার হতে চলেছে।

    ‘অতিমারী এসে শিক্ষাকে খুবই জটিল একটা পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে’, বলছিলেন রেনুকা গুপ্তা, ‘আমাদের স্কুলের মেয়েরা সব ঘরের ভিতর আটকা পড়ে গেছে এবং যেহেতু ওদের বেশিরভাগেরই মোবাইল ব্যবহার করার সুযোগ নেই, তাই ওদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলাও খুবই মুশকিলের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনলাইন ক্লাস চলছে বটে, কিন্তু স্মার্টফোন না থাকার কারণে অনেকেই শুধুমাত্র সম্প্রতি স্কুল থেকে বিলি করা নোটের ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হচ্ছে।

    স্কুলের পাশেই যে বাসস্টপ, সেখানে একটা ভারি সুন্দর ছবি— স্কুলের পোশাক পরা একটি মেয়ে এবং বড় হয়ে সে যা যা হতে পারে – রাজনীতিক, ডাক্তার, খেলোয়াড়, বৈজ্ঞানিক, শিক্ষক, পুলিস ইত্যাদি। 

    তিনি আরও বললেন, ‘আমাদের স্কুল থেকে ছাত্রীদের যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাটি দেওয়া হয়ে থাকে, তা হল পরস্পরকে সাহায্য করা। এবং এই শিক্ষাই এমন অনেক ঘটনাকে সামনে নিয়ে আসে যার কথা হয়তো শিক্ষিকারা বা স্কুল কর্তৃপক্ষ জানতেই পারতেন না’। গুপ্তা এমন কয়েকটি ঘটনার উদাহরণ দিলেন যেখানে ছাত্রীরা বাড়িতে সামান্য সমস্যার আভাস পেলেই তাদের কোনো না কোনো বন্ধুকে খুঁজে নিয়ে ব্যাপারটা জানিয়েছে। তিনি বললেন, ‘ওদের মধ্যে যাদের স্মার্টফোন আছে, আমরা তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলি আর নিয়মিত সহপাঠীদের খবরাখবর নেওয়ার ব্যাপারে উৎসাহ দিতে থাকি’।

    এই সহযোগিতার মনোভাবটাই একাধিক নাবালিকা বিবাহ রুখে দিতে পেরেছে।

    অনলাইন ক্লাস চালু হবার কিছুদিন পর, পনেরো বছর বয়সি প্রিয়াংশীকে ক্লাস মনিটর বানানো হয়েছিল। শিক্ষিকা যখন দেখলেন, একটা মেয়ে, যে প্রথম দিকে নিয়মিত ক্লাস করত, কিন্তু কিছুদিন ধরে যার দেখা পাওয়া যাচ্ছে না, তখন তিনি প্রিয়াংশীকে ব্যাপারটা খোঁজ নিয়ে দেখতে বললেন। প্রিয়াংশীর কথায়, ‘আমি যখন ওকে ফোন করলাম, ও কিছুই বলতে চায়নি। শুধু বলেছিল যে ওর সময় নেই তাই ক্লাস করতে পারছে না। আমার সন্দেহ হচ্ছিল যে ব্যাপারটার মধ্যে কিছু গোলমাল আছে। সুতরাং আমিও ওকে মাঝেমধ্যেই ফোন করতে থাকলাম’। হাল না ছেড়ে প্রিয়াংশী ওকে ততক্ষণ পর্যন্ত ফোন করতে থাকে, যতক্ষণ না ও স্বীকার করে যে ওর বাবা-মা ওর বিয়ের ব্যবস্থা করছে। একটুও সময় নষ্ট না করে প্রিয়াংশী ব্যাপারটা তার শিক্ষিকাকে জানায়। তিনি তৎক্ষণাৎ পুলিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিয়েটা আটকে দিতে সক্ষম হন।

    পড়াশুনার ক্ষেত্রেও কিন্তু ‘পরদাদা-পরদাদি’-র ছাত্রীরা উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব দেখিয়েছে। বুলন্দশহর জেলা বা গোটা উত্তরপ্রদেশে যেখানে মোটের ওপর ৮৫ শতাংশ ছাত্রছাত্রী দশম বা দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় পাশ করে, সেখানে এই সংস্থার পাশের হার একশো শতাংশ। স্কুলে ছাত্রীদের উপস্থিতির হারও ৮২ শতাংশ যেখানে রাজ্যের বাদবাকি স্কুলগুলোতে মেয়েদের উপস্থিতির হার মাত্র ৬২ শতাংশ। স্কুলছুটের পরিমাণও এখানে মাত্র ১৫.৪ শতাংশ, যা জেলার অন্যান্য স্কুলের তুলনায় (৪৭.৩ শতাংশ) খুবই কম।

    শ্রীমতি গুপ্তা শিক্ষার ব্যাপারে তাঁদের নিজস্ব মডেল এবং মনুষ্যত্বের বিকাশের ওপরেই জোর দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ওদের খুব অল্প বয়স থেকেই নারীর ক্ষমতায়ন এবং লিঙ্গসাম্যের শিক্ষা দিয়ে থাকি। এতে করে ছাত্রীদের নিজেদের ভিতরে থাকা শক্তিকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো যায়’।

    স্কুলের পাশেই যে বাসস্টপ, সেখানে একটা ভারি সুন্দর ছবি— স্কুলের পোশাক পরা একটি মেয়ে এবং বড় হয়ে সে যা যা হতে পারে – রাজনীতিক, ডাক্তার, খেলোয়াড়, বৈজ্ঞানিক, শিক্ষক, পুলিস ইত্যাদি।  সেখান থেকেই প্রীতি কুড়িয়ে নিয়েছে তার জীবনের স্বপ্ন। বড় হয়ে সে পুলিসে যোগ দিতে চায়। ‘আমি একজন পুলিস হতে চাই, যাতে মেয়েদের ওপর ঘটতে থাকা অন্যায়গুলোর আমি প্রতিকার করতে পারি’ – সপাটে বলল তেরো বছরের ছোট্ট মেয়েটা।

    প্রিয়াংশী অবশ্য এখনও তার ঠিক করেনি বড় হয়ে কী হতে চায়। কিন্তু সে চায় যে স্কুলের ঐ দেওয়ালে তার নামটাও একদিন উঠবে, যেখানে রয়েছে অ্যানি বেসান্ত, কল্পনা চাওলা আর যামিনী কৃষ্ণমূর্তির ছবি।

    (ছাত্রীদের সুরক্ষার জন্য সমস্ত নাম পরিবর্তিত)

    প্রথম প্রকাশ : news18.com । ১৬ই সেপ্টেম্বর, ২০২০

    https://ebongalap.org/2020/11/why-the-revision-in-legal-age-of-marriage-women-india/

    অনুবাদ: সীমান্ত গুহঠাকুরতা

     
     



    Tags
     


    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    You may use these HTML tags and attributes: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>

     



    তথ্য নীতি | Privacy policy

 
Website © and ® by Ebong Alap / এবং আলাপ, 2013-24 | PRIVACY POLICY
Web design & development: Pixel Poetics