• কবিতাই জমিলকে কাছে এনেছিল


    0    138

    December 26, 2020

     

    আমার গল্পটা চল্লিশ বছর আগের সামাজিক বাতাবরণে, ততটা হিংস্রতার মুখোমুখি হতে হয়নি। একটু কি আলো ছিল তখনও? ক্রমেই অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে চারপাশে?

    কবিতাই আমাদের দুজনকে কাছে এনেছিল। প্রথমে বন্ধুত্ব। একজন ভালো বন্ধু, শুভাকাঙ্খী।

    পঁচাত্তর থেকে যোগাযোগ চিঠির মাধ্যমে। প্রথমত ওর চিঠি আমাকে সম্মোহিত করেছিল। অসাধারণ হাতের লেখা, অতুলনীয় চিঠির ভাষাবন্ধন। তখন খুব চিঠি লেখার অভ্যেস ছিল আমাদের। মুখোমুখি দেখা সাতাত্তরের শেষে। এমনিতে একটু লাজুক প্রকৃতির হলেও জমিলের ব্যক্তিত্বের ঋজুতা আর সংস্কারহীন মুক্তচিন্তা ওর প্রতি আকর্ষণ বাড়িয়েছিল। ওর নামটা যে আরবী ভাষায় সেটা কখনো মনেই আসেনি। আসেনা। আসে তখন, যখন বিয়ে নামক সামাজিক বন্ধনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। ধর্মকে হাতিয়ার করে কিছু স্বার্থাণ্বেষী তখন সমাজের অভিভাবক হয়ে মাঝখানে দাঁড়ায়। আমার গল্পটা চল্লিশ বছর আগের সামাজিক বাতাবরণে, ততটা হিংস্রতার মুখোমুখি হতে হয়নি। একটু কি আলো ছিল তখনও? ক্রমেই অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে চারপাশে?

    আটাত্তরে জেব্রাক্রসিং নামে একটা কবিতা পত্রিকা সম্পাদনা করতে শুরু করলাম আমি। জমিল তখন মুর্শিদাবাদে থাকতো। মাঝে মাঝে কলকাতায় আসতো। হয়তো কোনো অনুষ্ঠানে কবিতা পড়তে বা বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষা দিতে। তখন আমাকে পত্রিকার ব্যাপারে সাহায্য করতো। বিভিন্ন কবির কাছে লেখা আনতে যাওয়া, প্রেসে গিয়ে প্রুফ দেখা। কখনো কখনো কফিহাউসে নিছক আড্ডা। যার বেশিরভাগই লেখালেখিকে কেন্দ্র করে।

    ওদের বাড়ি্তে মুক্তচিন্তার একটা সুন্দর আবহ ছিল। সৈয়দ মুস্তফা সিরাজ ছাড়াও পরিবারের আরও অনেকেই সাহিত্যের সঙ্গে যুক্ত। জমিলের পরিবার যেখানে ধর্মের অন্য নাম সাহিত্য সংস্কৃতি, সেই পরিবারে যুক্ত হওয়া আমার জীবনের একটা অসাধারণ প্রাপ্তি।

    বন্ধুত্বের সুতো ধরেই একটু করে জমিলকে জেনেছি আর মনে হয়েছে এই মানুষটা সারাজীবন সঙ্গে থাকলে আমার ভালো লাগবে, আমি ভালো থাকবো। একসময় দুজনেরই মনে হলো, এই যে দিনের শেষে দু’জন দুটো বাস ধরে দুই ঠিকানায় ফিরে যাচ্ছি, এটা খুব কষ্ট দিচ্ছে। এবার গন্তব্যটা এক হওয়া দরকার। আশি সালে ও তখন ডব্লিউবিসিএস কমপ্লিট করে চাকরিতে জয়েন করেছে। জলপাইগুড়িতে পোস্টিং। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম।

    জমিলের পরিবারের লোকজন যাঁরা কলকাতায় থাকতেন, তাঁদের সবার সঙ্গে আমার খুব ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। বিশেষ করে ওর বড়দা সৈয়দ মুস্তফা সিরাজের পরিবারের সবাই আমাকে খুব ভালোবাসতো। আমাদের সম্পর্কটা যে শুধু বন্ধুত্বের নয়, সবাই বুঝতো। আমরা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর জমিল ওর বাড়িতে খুব সহজেই সেটা জানিয়েছিল। তাঁরা স্বাগত জানিয়েছিলেন। ওদের বাড়ি্তে মুক্তচিন্তার একটা সুন্দর আবহ ছিল। সৈয়দ মুস্তফা সিরাজ ছাড়াও পরিবারের আরও অনেকেই সাহিত্যের সঙ্গে যুক্ত। জমিলের পরিবার যেখানে ধর্মের অন্য নাম সাহিত্য সংস্কৃতি, সেই পরিবারে যুক্ত হওয়া আমার জীবনের একটা অসাধারণ প্রাপ্তি।

    ছোটবেলা থেকে আমিও গোঁড়ামি ও সংস্কারমুক্ত পরিবেশে বড় হয়েছি। শিখেছিলাম, আত্মীয়তা হয় সমমনস্কতা দিয়ে, ধর্ম দিয়ে নয়। বাড়িতে ধর্ম নিয়ে বাহ্যিক কোনো আড়ম্বর ছিলনা। বাবা ছিলেন আদ্যন্ত সংস্কারমুক্ত আধুনিক মানসিকতার, সাহিত্য সংস্কৃতিমনস্ক একজন মানুষ। বাড়িতে মায়ের ঠাকুরের আসন ছিল, পুজো করতেন। বাবা উৎসাহও দিতেন না, আপত্তিও করতেন না। বাবার ধর্মবিশ্বাস ছিল অন্যরকম। বলতেন, ঠাকুরদেবতার অস্তিত্ব তো আমাদের দুর্বল মুহূর্তের ভাবনায়। আর মানুষের মাঝখানে যত বেশি ধর্মের গোঁড়ামি আসবে, মানুষে মানুষে বিভেদও তত বাড়বে।  দূরত্ব বাড়বে। ভগবানকে তো আমরা ভাগ করে নিয়েছি। ভগবান সামনে এলেই মানুষ ভাগ হয়ে যায়।

    কিন্তু তবু আমি পারিনি। এমনিতে আমাদের বাড়ির সবাই জমিলকে পছন্দ করতো। আমার একজন ভালো বন্ধু হিসেবেই ওর গ্রহণযোগ্যতা ছিলো। তার বেশি কিছু ভাবতে গেলে তাদেরকে কতখানি মানসিক চাপ নিতে হবে এটা ভেবে মুখোমুখি আমার সিদ্ধান্তের কথা তাঁদের জানাতে পারিনি। জানতাম, সে চাপ সামাজিকতার চাপ। ‘লোকে কী বলবে’-র চাপ। যদিও ছোটবেলা থেকে এটাই শিখেছি সমমনস্ক মানুষের সঙ্গে যে বন্ধন তৈরি হয় তাকে আত্মীয়তা বলে। সেখানে ধর্মের কোনো জায়গা নেই। তবু জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের কথা বাড়িতে জানানোর জন্যে একটু আড়াল প্রয়োজন ছিল আমার। বাড়ি থেকে দূরে যাওয়ার দরকার ছিলো।

    একাশির মার্চে আমরা ‘স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট’-এ রেজিস্ট্রি করে নিলাম। জমিলের পরিবারের কয়েকজন আর আমাদের কিছু বন্ধুর উপস্থিতিতে ।

    আমার বিয়ের কথাটা মা খুব সহজভাবে প্রতিবেশীদের জানিয়েছিলেন, এবং তাঁরাও সহজভাবে নিয়েছিলেন ঘটনাটাকে। নিয়েছিলেন, কিন্তু সঙ্গে এই কথাটা জুড়ে দিতেন সকলেই যে, “জমিলের পরিবার অন্যরকম, ঠিক মুসলমানদের মতো নয়…”

    কবিবন্ধুদের সৌজন্যে এইসময় ‘উত্তরবঙ্গসংবাদ’ পত্রিকায় চাকরির একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেয়ে গেলাম। শিলিগুড়িতে। একা ওই প্রথম অতদূরে চাকরি করতে যাচ্ছি বলে বাড়িতে উদ্বেগ থাকলেও জমিল ওখানে আছে বলে সবাই কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়েছিল। ওখানে পৌঁছে সব কথা জানিয়ে মা বাবা ও দাদাকে চিঠি লিখেছিলাম।

    না, ওঁরা ক্ষুব্ধ হয়ে সম্পর্ক ছেদ করেননি। বাবা খুব সুন্দর একটা চিঠি লিখেছিলেন আমাকে ও জমিলকেও। আশীর্বাদ করে জমিলকে স্বাগত জানিয়েছিলেন আমাদের পরিবারে। অন্যরকম একটা আত্মীয়তাকে গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেছিলেন। এখন ভাবলে খুব অবাক লাগে, আমার বিয়ের কথাটা মা খুব সহজভাবে প্রতিবেশীদের জানিয়েছিলেন, এবং তাঁরাও সহজভাবে নিয়েছিলেন ঘটনাটাকে। নিয়েছিলেন, কিন্তু সঙ্গে এই কথাটা জুড়ে দিতেন সকলেই যে, “জমিলের পরিবার অন্যরকম, ঠিক মুসলমানদের মতো নয়…” ইত্যাদি।

    আমাদের আত্মীয়স্বজন অনেকেই প্রথম প্রথম আড়ালে কটূক্তি করতে ছাড়েনি। পরবর্তী সময়ে তারাই আবার আমাদের স্বেচ্ছায় গ্রহণ করেছে।

    জমিলের পরিবারে এরপর ধর্মের বেড়া ভেঙে আরো অনেকগুলো এরকম বিয়ে হয়েছে। অন্য ধর্মের মেয়েরা যেমন এ বাড়িতে এসেছে, জমিলের মেজদার মেয়েরও বিয়ে হয়েছে হিন্দু পরিবারে। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের বেশ কয়েকজনের বিয়ে হয়েছে সামাজিক অনুষ্ঠান করে, ভিন্নধর্মের দুই পরিবারের সহযোগিতায়। না, কোনো সামাজিক বাধার মুখোমুখি হতে হয়নি কোনো ক্ষেত্রেই। ধর্মের ঝান্ডা নিয়ে নীতিপুলিশরা তখনও এত প্রকটভাবে আত্মপ্রকাশ করেনি। তাই হয়তো আমাদের পরিবারের আত্মীয়তার পরিধিতে বৈচিত্র্য এসেছে।

    আজ থেকে চল্লিশ বছর আগে কি চারপাশের মানুষ একটু বেশি মুক্তমনের ছিলেন? কোথায় গেলেন তাঁরা? পরবর্তী প্রজন্মের কাছে কি তাঁরা তাঁদের এই উদারতা, মানবিক সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধা পৌঁছে দিতে পারেননি? ‘সাম্প্রদায়িকতা’ নামের একটা জগদ্দল পাথর কবে, কীভাবে মানুষের বুকের ওপর চেপে বসলো, যাতে কেউ আর শুদ্ধ বাতাসে নিশ্বাস নিতে পারছে না? আমাদের বড় হয়ে ওঠার দিনে যে শব্দটার কোনো অস্তিত্ব ছিল না। আসলে আমরা এতটাই আত্মকেন্দ্রিক আর স্বার্থপর হয়ে পড়েছি যে আমাদের পাশের বাড়ির মানুষগুলোকেও আর চিনতে চাইছিনা। ক্রমেই পারস্পরিক অপরিচয়ের অন্ধকার বৃত্ত দিয়ে ঘিরে ফেলছি নিজেদের।

    ছুটির দিনে আমি আর জমিল দুজনে ফ্ল্যাটওনারদের সঙ্গে কথা বলতে যেতাম। ফ্ল্যাট ও দামের ব্যাপারে দুপক্ষ সহমত হওয়ার পরেও শেষমুহূর্তে জমিলের নাম শুনে মালিকপক্ষ পিছিয়ে যেতো।

    আমাদের মেয়ে আকাশলীনা যখন স্কুলে যেতে শুরু করলো, তখন সহপাঠীদের কাছে ‘তোর মা নাকি হিন্দু?’ এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে। যেহেতু বাড়িতে হিন্দু-মুসলমান প্রসঙ্গটা ও কখনও শোনেনি, তাই প্রশ্নটাতে একটু বিব্রত বোধ করেছে। হয়তো নিজেকে একটু আলাদা মনে হয়েছে আর একটু বড় হওয়ার পর যখন আমি ওকে জিজ্ঞেস করেছি, এই প্রশ্নটা শুনে ওর খারাপ লাগে কিনা, বা সংকুচিত হয় কিনা, বলেছে, না। আমার নিজেকে স্পেশাল লাগে।

    জমিলের ট্রান্সফারেবল চাকরির কারণে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় থাকতে হয়েছে। সেসব জায়গায় অফিস কোয়ার্টারে থেকেছি। কিছু বুঝিনি। আসল সমস্যার মুখোমুখি হলাম কলকাতায় ফ্ল্যাট কিনতে গিয়ে। আকাশলীনা যখন উঁচু ক্লাসে, তখন ওর পড়াশুনার কারণেই আমি ওকে নিয়ে ভাড়াবাড়িতে থাকতাম, নতুন পোস্টিং হলে জমিল একাই যেতো। প্রতি সপ্তাহে বাড়ি আসতো। কাগজে বিজ্ঞাপন দেখে ফ্ল্যাটওনারদের সঙ্গে আমি যোগাযোগ করতাম । লেখালেখির সুবাদে অঞ্জলি দাশ নামটা সামান্য পরিচিতি পেয়েছিল বলে বিয়ের পরেও পদবী পালটাইনি। জমিলও সেটা চায়নি। শুধুমাত্র জমিলের অফিসিয়াল ডকুমেন্টে ওর স্ত্রী হিসেবে নামের শেষে সৈয়দ পদবী দেওয়া হয়েছিল, আইনি জটিলতা এড়াতে। ছুটির দিনে আমি আর জমিল দুজনে ফ্ল্যাটওনারদের সঙ্গে কথা বলতে যেতাম। ফ্ল্যাট ও দামের ব্যাপারে দুপক্ষ সহমত হওয়ার পরেও শেষমুহূর্তে জমিলের নাম শুনে মালিকপক্ষ পিছিয়ে যেতো। একবার যাদবপুর বাসস্ট্যান্ডের কাছে একটা ফ্ল্যাট আমাদের পছন্দ হলো, দামও ঠিকঠাক। ভদ্রমহিলা সম্ভবত ইউনিভার্সিটিতে পড়াতেন। আমরা গেলাম দেখা করতে। আমাদের সঙ্গে কথা বলে উনি এতটাই ইম্প্রেসড, যে একঘন্টা ধরে আড্ডাও হলো, কথাবার্তা ফাইনাল হয়ে গেল। আসার আগে নাম ঠিকানা ফোন নম্বর লিখে নিলেন। পরদিন যে ব্রোকার ছেলেটি এটা হ্যান্ডল করছিল সে ফোন করে জানালো, ফ্ল্যাটটা পাওয়া যাবে না। কারণ জিজ্ঞেস করাতে, প্রথমে কিছুতেই কারণ বলতে চায় না, শেষপর্যন্ত আমাদের পীড়াপীড়িতে সঙ্কোচের সঙ্গে জানালো, ‘দাদার নামটা জেনে ভদ্রমহিলা আপত্তি জানিয়েছেন’। তাঁর অজুহাত, মুসলমানকে ফ্ল্যাট বিক্রি করছি শুনলে ফ্ল্যাটের অন্য বাসিন্দারা আপত্তি করবে।

    এইরকম ঘটনা আরো দু’একবার হওয়ার পর আমার জেদ চেপে গেল। যোগাযোগের শুরুতেই ‘আমি অঞ্জলি সৈয়দ বলছি, আমার স্বামীর নাম জমিল সৈয়দ’ এটা জানিয়ে রাখতাম। অবশেষে সন্তোষপুরের ফ্ল্যাটটা যাঁর কাছ থেকে কিনলাম সেই ভদ্রলোক কবিতা পড়তেন, আবৃত্তি করতেন। হয়তো সেও একটু ‘অন্যরকম’ বলেই এটা সম্ভব হয়েছিল। আমাদের অভিজ্ঞতার অন্ধকার দিক এটাই। স্বাভাবিক এবং আলোর দিক হলো আমরা আমাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে খুব স্বস্তিতে আর মানসিক আরামে বাস করি।

    এবার বলি আর একটা সম্পর্কের কথা।

    আমাদের মেয়ে আকাশলীনার সঙ্গে তার সহপাঠী অর্পণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রেম, অতঃপর বিয়ের সিদ্ধান্ত।

    নবনীতাদি শুনে বলেছিলেন, ‘এর চেয়ে ভালো প্রস্তাব আর কী হতে পারে। পুরোহিত হিন্দুশাস্ত্র মেনে, অগ্নিসাক্ষী রেখে বৈদিক মন্ত্রোচ্চারণে ব্যানার্জীর সঙ্গে সৈয়দের বিয়ে দিচ্ছে, এটা একটা দারুণ ব্যাপার।’

    আমরা তো সানন্দে ওদের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালাম। আপত্তি এলো অর্পণের পরিবার থেকে। আকাশলীনাকে ওদের খুব পছন্দ ছিলো, কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ালো নামের শেষে জুড়ে থাকা ‘সৈয়দ’ পদবী। নবনীতাদি খুব ভালোবাসতেন আকাশলীনাকে। ওদের বিয়ের ব্যাপারে উৎসাহ এবং উদ্বেগ দুইই ছিল ওঁর। বললেন, ‘তোদের জানেনা বলেই অর্পণের পরিবারের লোকের এই আপত্তি। ওঁদেরকে একদিন বাড়িতে ডাক’। কথাটা অর্পণের খুব মনে ধরেছিলো। আমাদের অনেক শুভাকাঙ্খী মধ্যস্থতা করে অর্পণের মা বাবাকে রাজি করাতে চাইলে ও আপত্তি জানালো। ওরও বক্তব্য ছিলো, ‘ওঁদের মনে একটা ভুল ইমেজ আছে, সেটা দূর করা দরকার। আপনাদের সঙ্গে মা বাবার পরিচয় হলে সেটা পালটে যাবে। আমি চাই ওঁরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সম্মতি দিন’।

    আমাদের আমন্ত্রণে অর্পণের মা বাবা এলেন আমাদের বাড়ি। গল্প হলো, মতবিনিময় হলো নানা বিষয় নিয়ে, একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া হলো। ছেলেমেয়ের বিয়ে নিয়েও কথা হলো। তিন-চারদিন পর পরিবারের আরও কয়েকজনকে নিয়ে বিয়ের দিনক্ষণ স্থির করতে এলেন ওঁরা। ওঁদের একটাই দাবী ছিলো, বিয়ের অনুষ্ঠান আমাদের ইচ্ছেয় যেমন ‘স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট’-এ হবে, পাশাপাশি হিন্দুশাস্ত্রমতেও হবে।

    নবনীতাদি শুনে বলেছিলেন, ‘এর চেয়ে ভালো প্রস্তাব আর কী হতে পারে। পুরোহিত হিন্দুশাস্ত্র মেনে, অগ্নিসাক্ষী রেখে বৈদিক মন্ত্রোচ্চারণে ব্যানার্জীর সঙ্গে সৈয়দের বিয়ে দিচ্ছে, এটা একটা দারুণ ব্যাপার।’

    সেটাই হয়েছিল। সামাজিক অনুষ্ঠান করে দুই পরিবারের সমস্ত আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধবের উপস্থিতিতে ওদের বিয়ে হয়েছিল। ওরা ভালো আছে। আর হ্যাঁ, আমরা দুই পরিবার খুব সুন্দর আত্মীয়তার বন্ধনে বাঁধা পড়েছি। ছোট বৃত্ত ভেঙে আত্মীয়তার পরিধি বাড়লেই না আমরা ভালো থাকতে পারবো। 

    ‘মানুষে মানুষে সম্পর্কের সাঁকো গড়ে উঠলে দীপ্র বাঁশি বাজে চরাচরে, এ পৃথিবী বাসযোগ্য হয়…’ আমার কৈশোরের অটোগ্রাফের ডাইরিতে লিখে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের বিখ্যাত কবি শামসুর রহমান। মন্ত্রের মতো আত্মস্থ করেছিলাম এই বাক্যটি। এই বিশ্বাসটুকু সবার কাছে পৌঁছে দিতে চাই বলেই, আমার জীবনের এই ছোটো দুটো ঘটনা লিখে জানালাম।

     
     



    Tags
     


    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    You may use these HTML tags and attributes: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>

     



    তথ্য নীতি | Privacy policy

 
Website © and ® by Ebong Alap / এবং আলাপ, 2013-24 | PRIVACY POLICY
Web design & development: Pixel Poetics