• যতবার তুমি রফিউদ্দিন, ততবার আমি শর্মিলা


    2    826

    January 9, 2021

     

    জানিনা যে সংগ্রাম শুরু করেছিলাম তার শেষটা কোথায়! শুধু মহাশ্বেতা দেবীর কন্ঠস্বরটুকু কানে বাজে,

    “শর্মিলা, সংগ্রাম কখনও ফুরোয় না”।

    ২০০৩ সাল। এসএসসি দিয়ে কাকদ্বীপের একটি স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করলাম। সেখানেই তার আগের বছর যোগ দিয়েছে রফিউদ্দিন আহমেদ। সৈনিক স্কুল থেকে পড়া এই সেকুলার মানুষটি সহজেই মনের অনেকটা জায়গা দখল করে নিল। একসাথে কলকাতার বাড়ি ফিরতে ফিরতে গড়ে উঠল বন্ধুত্ব, সেখান থেকে প্রেম ও বিয়ের সিদ্ধান্ত।

    শর্মিলা ঘোষ নামের যে দিদিমণি স্কুলে যোগদান করেছেন তাঁর মুসলমান শিক্ষকের সাথে অবৈধ সম্পর্ক আছে।

    কিন্তু আমার পরিবার এবং কর্মক্ষেত্র দু’জায়গা থেকেই এই হিন্দু-মুসলিম বিয়ে নিয়ে বিরোধ শুরু হয়ে গেল। সারা স্কুল আর কাকদ্বীপ জুড়ে শোরগোল পড়ে গেল। আমার বাড়িতেও তুমুল হৈচৈ। মুসলমান ছেলেকে বিয়ে করবে কুলীন কায়েত বাড়ির শিক্ষিতা ও কর্মরতা একমাত্র মেয়ে! আমার বাবা ও পরিবারের কিছুজন প্রবল শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল। এদিকে স্কুল কর্তৃপক্ষ বলল হিন্দু-মুসলিম বিয়ে হলে স্টুডেণ্টদের ওপর খারাপ প্রভাব পড়বে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক তৎকালীন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতাদের মদতে এই সম্পর্ক অবৈধ বলে ঘোষণা করে দিল। সহকর্মীরা অনেকে পাশে ছিলেন আবার অনেকে ছিলেনও না। রোজ স্কুল বসার আগে স্কুলের সামনেই মাইকে ঘোষণা হতে লাগল শর্মিলা ঘোষ নামের যে দিদিমণি স্কুলে যোগদান করেছেন তাঁর মুসলমান শিক্ষকের সাথে অবৈধ সম্পর্ক আছে। কাকদ্বীপ চৌরাস্তার মোড়েও মাইকে প্রচার চলল।

    আমরা কিন্তু স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট-এ পার্ক সার্কাসে বিয়েটা সেরে ফেললাম। যে চরম দুঃসময়ে সবাই হাত ছেড়ে দিয়েছিল, ঠিক সেই সময় রফি আমার হাতটা খুব শক্ত করে ধরল। আমার তরফ থেকে কোনও বন্ধু-বান্ধব যায়নি আমার বিয়েতে। রফির মেসের ভাই দাদা ও বন্ধুরা অবশ্য সানন্দে হাজির ছিল। বিয়েতে মেনু ছিল সিঙাড়া ও রসগোল্লা।

    আসল লড়াই শুরু হল এর পর—কাকদ্বীপ ফিরতেই রফিকে ঘিরে ধরে স্কুলের সামনেই খুব মারধোর করা হল। থানা এফআইআর নিল না, জিডি হল। ফেরার পথে আবার ঘিরে ধরে হুমকি। বিয়ে করার কারণে এক বছর এক মাস আমাকে স্কুলে ঢুকতেই দেওয়া হল না। স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করল, অজুহাত বিশৃঙ্খল আচরণ। বাড়ি পেতেও বিস্তর সমস্যা। শেষ পর্যন্ত সাহায্য করলেন স্কুলেরই এক শিক্ষক মহাশয়। ভাড়া দিলেন নিজের বাড়িতে। কিন্তু বাড়ি থেকে বেরোলেই মারধোর, হুমকি, বেরোনো প্রায় বন্ধ হয়ে গেল। বন্ধ হয়ে গেল বাজার-দোকান করা। ওরা স্যারের (আমার বাড়িওয়ালা) বইয়ের দোকান বন্ধ করে দিল। ইঁট ও বাঁশ দিয়ে স্যারের বাড়ির বেরোনোর রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হল। শর্ত একটাই, রফি ও শর্মিলাকে ওদের হাতে তুলে দিতে হবে। তবু স্যার ওদের চাপের কাছে মাথা নত করেননি।

    তাঁদের ধারণা মানসিক অর্থনৈতিক নানা দিক থেকে চাপ সৃষ্টি করলে তাঁদের মেয়ে তাঁদের কাছে ফিরে আসবে।

    আমার পরিবার থেকেও প্রবল চাপ তখন, তাঁরা লোকাল পার্টি ও স্কুল কর্তৃপক্ষকে সমর্থন দিচ্ছেন এই হেনস্থায়। তাঁদের ধারণা মানসিক অর্থনৈতিক নানা দিক থেকে চাপ সৃষ্টি করলে তাঁদের মেয়ে তাঁদের কাছে ফিরে আসবে। গোটা বিরোধের পরিস্থিতিটা তৈরিতে তাঁদের একটা বড় ভূমিকা ছিল। আমার শ্বশুরবাড়িতেও আমাকে খুব যে স্বাগত জানানো হয়েছিল তা নয়, তবে কোনোরকম বাধার সম্মুখীন হইনি। আমাদের বিপদে পড়তে হয় এমন কিছু তাঁরা করেননি। বা ধর্মান্তরিত হওয়ার জন্য আমাকে কোনোরকম চাপ দেননি আমার শ্বশুর শাশুড়ি।   

    আমরা কাকদ্বীপ থেকে বেরোতে পারছিলাম না। ওদিকে সাংবাদিক বন্ধুরা একের পর এক খবর করছেন—আমার স্কুল থেকে বরখাস্ত হওয়ার ঘটনা, রফিকে মারধোরের ঘটনা, প্রতিদিনের হেনস্থা। এই রকমই একটি খবর দেখে সাংবাদিক সুকুমার মিত্র যোগাযোগ করলেন মহাশ্বেতা দেবীর সাথে। তিনি নিজে যোগাযোগ করলেন স্থানীয় এসডিপিও এবং স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সাথে। তাঁর তৎপরতায় সশস্ত্র পুলিশ পাহারায় কিছুদিনের জন্য কলকাতা এলাম। এই সময় পাশে এসে দাঁড়াল এপিডিআর-এর মতো মানবাধিকার সংগঠনগুলি, পাশে দাঁড়াল আলতাফ আহমেদ। আমি মহিলা কমিশনের দ্বারস্থ হলাম, তারা চিঠি পাঠাতে লাগল স্কুল কর্তৃপক্ষকে। মধ্যশিক্ষা পর্ষদেও জানাই আমি।

    বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি আর কোর্ট ঘর করতে করতে অর্থনৈতিক শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়লাম। পরিবারের বিরোধিতা, সহকর্মীদের একাংশ ও ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিত্বদের থেকে লাঞ্ছনা আমাকে চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে। আমি নিজেকে শেষ করে দেবার সিদ্ধান্ত নিই। আমাকে ভর্তি করা হয় কাকদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। সেখানেও হাসপাতাল ঘিরে ফেলে কিছু রাজনৈতিক মদতপুষ্ট সমাজবিরোধী। মধ্যরাতে কলকাতায় চিত্তরঞ্জনে জোর করে শিফট করে দেওয়া হয়, কারণ স্কুল কর্তৃপক্ষের ভয় ছিল মরে গেলেই ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে প্রবল চাঞ্চল্য তৈরি হবে, সমস্যা হবে এলাকাতেও।

    রফি একা আমাকে আগলে রাখে। আমি অচেতন। মৃত্যুর সাথে যুদ্ধটা রফিই করছিল।

    না আমি মরিনি, রফিউদ্দিন যমরাজের সঙ্গে যুদ্ধ করে জিতে গেছিল যে!

    চারিদিকে প্রচার করা হয়েছিল আমাদের বিয়েটা নাকি নকল! ক’দিন বাদেই ভেঙে যাবে। বিয়ে কবে ভাঙে সেই আশায় তারা তীর্থের কাকের মতো বসে রইল

    ফিরলাম কাকদ্বীপ, কিন্তু আমার না মরা মনে হয় ওদের খুশি করতে পারল না। ততদিনে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ থেকে তদন্ত কমিশন বসে। এরপর সাসপেনশন খারিজ হয়ে যায়। কিন্তু তার পরেও স্কুলে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না। বারবার লোকাল পার্টির লোকজন নিয়ে বসা এবং ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানানো হতে থাকে। কিন্তু কেন ক্ষমা চাইব? কোন অপরাধের ক্ষমা? আমি ক্ষমা চাইনি। বলেছিলাম, আইনের আশ্রয় নেব।

    এরপর নানা মহল থেকে অনেক চাপ আসতে থাকে কর্তৃপক্ষের ওপর এবং শেষ পর্যন্ত তারা বাধ্য হয় স্কুলে ঢুকতে দিতে। এক বছর এক মাস বাদে স্কুলে তো ঢুকলাম, কিন্তু অস্পৃশ্যের মতো ব্যবহার করা হত আমার সাথে। চারিদিকে প্রচার করা হয়েছিল আমাদের বিয়েটা নাকি নকল! ক’দিন বাদেই ভেঙে যাবে। বিয়ে কবে ভাঙে সেই আশায় তারা তীর্থের কাকের মতো বসে রইল, আমার পরিবারও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে প্রচুর সমর্থন পেয়েছি ছাত্রছাত্রীদের থেকে। আমার কাকদ্বীপের এই স্টুডেণ্টরা আমার আত্মীয়, আত্মার সাথে সম্পর্কিত। আমার সাসপেনশনের সময় স্কুল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির স্টুডেণ্টরা। তাদের সাথে আজও যোগাযোগ রয়েছে আমাদের।

    কী ভাবছেন, হিন্দু মুসলমান লড়াইটা এখানেই শেষ হলো!

    না। বাকি রয়ে গেলো অনেক কিছুই।

    নাম দিলাম প্রথম প্রতিশ্রুতি। পদবীহীন। ধর্মহীন। শুধু মানব সন্তানই তার পরিচয়, মানবধর্মই তার ধর্ম।

    এরপর এল সেই ভাল খবরটা, আমাদের সন্তান আসছে। কিন্তু চরম মানসিক নির্যাতনে নষ্ট হয়ে গেল আমার প্রথম সন্তান। আমার ওষুধের তালিকা বাড়তে থাকল, রফিই তখন আমার সব আত্মীয়ের ভূমিকা পালন করছে। তারপর দ্বিতীয়বার মা হবার খবরে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে গৃহবন্দী করলাম, কারণ জানতাম তা না হলে এই সন্তানকেও ওরা পৃথিবীর আলো দেখতে দেবে না।

    মুসলমানের সন্তানকে জন্ম দিই কেউ চায়না যে!

    আমার কোল আলো করে আমার কন্যা সন্তান জন্ম নিল, নাম দিলাম প্রথম প্রতিশ্রুতি। পদবীহীন। ধর্মহীন। শুধু মানব সন্তানই তার পরিচয়, মানবধর্মই তার ধর্ম। কাগজে কলমেও তার স্কুলের ফর্মে ‘রিলিজিয়ন’ কলামটা ‘NIL’ রেখেছি আমরা।

    তবে আমাদের পরিবারের দিক থেকে হিন্দু মুসলমান উভয়পক্ষই শিক্ষিতা হিন্দু পাত্রী ও শিক্ষিত মুসলমান পাত্র তাদের সম্প্রদায় থেকে হাতছাড়া হবার বেদনা মনে পুষে রেখেছেন। আমার শাশুড়িমা হাসপাতালে দেখতে আসেন নাতনিকে। কিন্তু ওই পর্যন্তই। আজ বারো বছর বয়স আমার মেয়ের, কিন্তু আমার শ্বশুরমশাই তাকে দেখেননি, আমি আমার শ্বশুরবাড়ি গেলেও আমার কন্যা তার পৈতৃক ভিটে দর্শন করেনি। তাঁরা ডাকেননি, আমরাও যাইনি।

    তবে মেয়ের জন্মের পর থেকে আমার বাড়ির সঙ্গে একটু একটু করে যোগাযোগ তৈরি হয়। আমরা গিয়ে থাকতাম বা ওঁরা আসতেন। এখন বিগত কয়েক বছর ধরে আমরা আমার বাবার কাছেই থাকি। মা চলে গেছেন, বাবা শয্যাশায়ী, আমিই ওঁদের একমাত্র সন্তান, বাবার সব দায়িত্ব এখন আমার আর রফির কাঁধে।

    একজন মহিলা কী রাজনীতি করবে, কাকে বিয়ে করবে, কী খাবে, কী পরবে, সব অন্য কেউ ঠিক করে দেবে।

    এই জাতপাত ধর্মের লড়াই আর মহিলাদের ওপর কর্তৃত্ব ফলানোর সামাজিক অভ্যাসে আমার জীবন তছনছ হয়ে গেছে। মুসলমান ছেলেকে যে হিন্দু নারী বিয়ে করে তার চেয়ে দুশ্চরিত্রা আর কে হতে পারে! এই চরিত্রহীনার তকমা পেতে পেতে ক্লান্ত আমি। কাকদ্বীপে জমি বাড়ি কিনতে না পাওয়া, লোন না পাওয়া, কোনো হোটেলে থাকতে গেলে রেজিস্ট্রির কাগজ দেখানো — শেষ নেই এই অবিচারের। প্রতিদিন প্রতিনিয়ত মুসলমান বিয়ে করার জবাবদিহি চাইছে সমাজ। রাষ্ট্র-সমাজ-পরিবার সবাই এই ইন্টার রিলিজিয়ন ম্যারেজের দিকে তাকিয়ে বসে থাকে, তারা জানতে চায় এই দুটি ভিন্ন ধর্মের মানুষ কতটা সুখ বা অসুখের সংসার করছে! এদের খাদ্যতালিকা, জীবনযাপন কেমন! এরা নমাজ বা পুজো করে কিনা! ভিনধর্মে বিবাহকারীরা যদি নিজ নিজ ধর্মাচার পালন করে তবে সমাজের রক্তচক্ষু থেকে রক্ষা পেলেও পেতে পারে, কিন্তু যদি এরা নাস্তিক বা না-ধার্মিক হয় তাহলে সমাজের প্রতিহিংসা নেবার ইচ্ছেটাও আরো প্রবল হয়।

    ধার্মিকদের মনোভাব তবু বোঝা যায়, কিন্তু তথাকথিত আধুনিক ভণ্ড প্রগতিশীলদের দ্বিচারিতা কাঁটার মতো মনে বিঁধে থাকে। সে কাঁটা উপড়ানো খুব কঠিন। ২০০৪ থেকে ২০২০ এতটুকু পরিবর্তন ঘটেনি। বরং ভিনধর্মে বিয়ে নিয়ে হিংসা আরো বেড়েছে। এখন তো আইন করে এই ভিনধর্মে বিয়ে বন্ধ করার চেষ্টা চলছে।

    এই প্রথম শুনলাম একজন দিদিমণি সালোয়ার কামিজ পরে এলে স্কুল মাদ্রাসা হয়ে যায়!

    মানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতায় রাষ্ট্রের এই হস্তক্ষেপের পাশাপাশি রয়েছে মহিলাদের ওপর দাদাগিরি করার পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা। শুধু পুরুষ নয়, মহিলাদের মধ্যেও এই প্রবণতা রয়েছে। একজন মহিলা কী রাজনীতি করবে, কাকে বিয়ে করবে, কী খাবে, কী পরবে, সব অন্য কেউ ঠিক করে দেবে। সেটা শুধু পছন্দের সঙ্গী বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে নয়, পছন্দের পোশাক পরার মতো তুচ্ছ ব্যাপারেও। যেমন স্কুলে শিক্ষিকাদের পোশাক নিয়ে ফতোয়া দেবার মানসিকতা। আগের স্কুলেও এই জিনিস দেখেছি, আবার পরবর্তীকালে বদলি হয়ে আসা স্কুলেও তাই। আমাকে নিয়ে রফি গেল স্কুলে জয়েন করাতে, আমার পরনে লম্বা হাতাওয়ালা ও বড় সুতির ওড়নাওয়ালা সালোয়ার কামিজ। অফিস ঘরে বসতে দেওয়া হল। আমাকে ঘিরে বসল প্রাক্তন ও বর্তমান টিচার ইন চার্জ, কিছু ভুঁইফোড় মাস্টার ও স্কুলবোর্ডের প্রেসিডেন্ট। বলল ওরা রক্ত দিয়ে স্কুল তৈরি করেছে, স্কুলের ঐতিহ্য নষ্ট করতে দেবে না, স্কুলকে মাদ্রাসা করতে দেবেনা। এই প্রথম শুনলাম একজন দিদিমণি সালোয়ার কামিজ পরে এলে স্কুল মাদ্রাসা হয়ে যায়!

    শুরু করলাম সালোয়ার কামিজ পরেই। এবং যা হবার হল। আমাকে দিদিমণিরাই একঘরে করে দিল, বিশেষ করে পার্শ্ব শিক্ষিকা(স্থানীয়)দের থেকে ‘আমরা ওর মতো নই’ শোনা দিয়ে মানসিক অত্যাচারের পর্ব শুরু হয়। আমি আমার জায়গা থেকে একচুলও সরিনি। শেষে আমার সাথে খাওয়া-দাওয়া-কথা-জল বন্ধ হল। তাও আমি নিজের জায়গা থেকে সরিনি। এপ্রুভাল পিছিয়ে দেওয়া হল, বকেয়া বেতনের কাগজ পাঠানো হল না, নানাভাবে হেনস্থা শুরু হল। দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে গেছি। আরে যার জীবনসঙ্গীর নাম রফিউদ্দিন আহমেদ, তার সমাজের কাছে জবাবদিহি সারা জীবন ধরে করতে হয়!

    তবে ভয় হয় একটাই। কী রেখে যাচ্ছি আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে!

    যে যন্ত্রণা তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে আমায়, আমাদের ভালোবাসাকে বিষনজরে দেখেছে, তার বদল কি কোনোদিন হবে না?

     
     



    Tags
     



    Comments (2)
    • যত পড়া এগুচ্ছে, ততই স্তম্ভিত হয়ে যাচ্ছি। আমরা কি মধ্যযুগীয় বর্বর সমাজে বাস করি? এমন বর্বরোচিত আচরণ?

      একজন পুরুষ/ মহিলা কোন্ পোশাক পড়বে, কাকে জীবন সঙ্গী করবে — সেটা নির্ধারণ করবে কতগুলো অশিক্ষিত লোক?
      বামপন্থীদের ভন্ডামী সর্বজনবিদিত। বর্তমানে সাধু সাজে। বরং স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের
      বলবো যথার্থ মুক্তমনা প্রগতিশীল মনস্ক। তারা শর্মিলা ম্যাডামের পাশে দাঁড়ানোর সৎসাহস দেখিয়েছে।

      শর্মিলা দি, আমি এতকথা জানতাম না। আপনার নিরন্তর
      লড়াই আমাকে আপনার প্রতি
      আরো বেশী শ্রদ্ধাবনত করল আজ থেকে। ভালো থেকো।
      ভবিষ্যতে প্রয়োজন পরলে সৌম্যদা সবসময় পাশে থাকবে।

      জয়ী হোক রফি-শর্মিলা ! জয়তু
      ভব:!

    • স্তম্ভিত হয়ে যাচ্ছি। চিরকাল বামপন্থীদের গালগলা ফুলিয়ে বলতে শুনে এসেছি যে তারা এইদেশের প্রগতিশীলতার একমাত্র আগমার্কা ধ্বজাধারী, কেবলমাত্র তারাই নাকি দেশের মানুষকে অন্ধবিশ্বাস ও বৈষম্যবোধের প্রভাব থেকে বাঁচিয়ে রেখেছে। কার্যত দেখছি তাদের নেতাদের মানসিকতা অন‍্যদের চেয়ে কিছুমাত্র আলাদা নয়!

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    You may use these HTML tags and attributes: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>

     



    তথ্য নীতি | Privacy policy

 
Website © and ® by Ebong Alap / এবং আলাপ, 2013-24 | PRIVACY POLICY
Web design & development: Pixel Poetics