• যদি দুষ্মন্তের দেওয়া আংটিটা হারিয়ে যায়


    2    440

    February 9, 2021

     

    সে এক যুগ ছিল যখন রাজা দুষ্মন্ত ও অপ্সরাকন্যা শকুন্তলার গান্ধর্ব বিবাহ হয়েছিল। তারপর সে কী কান্ড! রাজার তো স্মৃতিভ্রংশ ঘটল, আর শকুন্তলাও রাজার আংটি হারিয়ে ফেললেন। ব্যস! তাদের বিয়েও নাকচ হল সমাজের কাছে। পাঠক নিশ্চয়ই ভাবছেন, হঠাৎ এ প্রসঙ্গ কেন? আসলে গান্ধর্ব বিবাহ এ যুগেও হয় কিনা, তবে কাহিনী কিঞ্চিৎ পৃথক। সমাজ যখন কোনো নারী-পুরুষের ভালোবাসাকে স্বীকৃতি দেয় না, তখনই তাদের এই গান্ধর্ব বিবাহ(ধরুন স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্টে বিবাহ) বেছে নিতে হয়। ঠিক যেমনটা আমাদেরও নিতে হয়েছিল আজ থেকে বছর তেরো আগে।

    যে মানুষগুলো আমায় পঁচিশটা বছর স্নেহ, মায়া, মমতা দিয়ে আগলে রাখলেন, তাঁদেরকেই চরম কষ্ট দিয়ে ভালোবেসে ফেললাম অন্য ধর্মের একটি ছেলেকে। বাড়ি কেন,  পাড়ার চেনাজানা মানুষজন যাঁরা আমায় ব্যক্তিগতভাবে চিনতেন, সবাই প্রশ্ন তুললেন—‘আমাদের ধর্মে কি আর ভাল ছেলে ছিল না’?

    যে সমাজে এক থালা ভাত খাওয়া লজ্জার, জোরে হাসি দৃষ্টিকটু, বেশি কথা বলা বাচালতা এবং এমনকী ধর্ষণ হলে ধর্ষকের চরিত্র অপেক্ষা ধর্ষিতার চরিত্র নিয়ে বেশি সমালোচনা হয়, সেখানে নিজের পছন্দে বিয়ে করার অসভ্যতা যদিবা একটু আধটু মেনে নেওয়া যায়, ভিনধর্মে বিয়ে করার দুঃসাহসিকতা কোনো সমাজ মেনে নেবে না। যদিও মেনে না নেবার তীব্র আঘাতটা পরিবারের প্রিয় মানুষগুলোর কাছ থেকেই প্রথম আসে, কিন্তু সেক্ষেত্রে আমার কাছে তারা ১০০% নিরপরাধ। যে সমাজ কাঠামোয় আমার পরিবারের মানুষজন থাকতেন, তাঁদের এমনটাই বিশ্বাস ছিল যে বাড়ির একমাত্র মেয়ে অন্য ধর্মে বিয়ে করলে তাঁরা হয় মেয়েকে চিরদিনের জন্য হারাবেন, নাহলে তাঁরা নিজেরাই একঘরে হবেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমার, যে মানুষগুলো আমায় পঁচিশটা বছর স্নেহ, মায়া, মমতা দিয়ে আগলে রাখলেন, তাঁদেরকেই চরম কষ্ট দিয়ে ভালোবেসে ফেললাম অন্য ধর্মের একটি ছেলেকে। বাড়ি কেন,  পাড়ার চেনাজানা মানুষজন যাঁরা আমায় ব্যক্তিগতভাবে চিনতেন, সবাই প্রশ্ন তুললেন—‘আমাদের ধর্মে কি আর ভাল ছেলে ছিল না’?
    সত্যিই তো, ভালোবাসা হবার আগে জাত-ধর্ম দেখে, ভাল ছেলে দেখে (অর্থাৎ বিয়ের বাজারে যেমনটা বোঝায়) হওয়া উচিত ছিল। হ্যাঁ, ২০০৪ সালে যখন কম্পিউটার ক্লাস করতে গিয়ে ওর সঙ্গে আলাপ হল, আমিও এমনটাই জানতাম।

    তখন আমি ইংরেজি অনার্স নিয়ে সবেমাত্র গ্র্যাজুয়েশন করে মাস্টার্স-এ ভর্তি হয়েছি। আর ও বিএসসি করে মিডিয়া স্টাডিজ নিয়ে পড়াশোনা করার কথা ভাবছে। কথায় কথায় কখন যেন আবিষ্কার করলাম ওই ছেলেটির সাথে আমার মানসিক জাতে যেন বড় বেশি মিল হচ্ছে। নাম জিজ্ঞাসা করে জানলাম সাইফুল্লাহ।

    আর আমি তো চিত্রা মুখোপাধ্যায়। তাহলে তো ধর্মে মিলছে না! বেশ, তবে এ বন্ধুত্ব হোক, ভালোবাসা তো আর হতে পরে না! অথচ সময়ের চেয়ে বেশি রসিক আর বুঝি কেউ নেই। যতই সময় যেতে লাগল, ততই ওই মনের জাত ধর্মের গণ্ডি পেরিয়ে জায়গা দখল করতে লাগল। ওর লেখা কবিতা, প্রবন্ধ শুনতে শুনতে মনে হত এই বুঝি আমার সেই আকাঙ্ক্ষিত পুরুষ। তার দিক থেকেও তেমন অনুভূতি। শুরু হল মনের সাথে লড়াই। ধরেই নিলাম এ মিলন অসম্ভব। তাই খেলাচ্ছলে দুজনেই দূরত্ব বাড়ালাম দুজনের থেকে। সাইফুল মিডিয়া স্টাডিজ পড়ায় মন দিল আর আমি মাস্টার্স। সঙ্গে আমি যোগ দিলাম সোনারপুরের কামরাবাদ স্কুলে প্যারা টিচার হিসেবে। জীবন স্বাভাবিক ছন্দেই ছিল। কিন্তু কোথায় যেন কী একটা দম বন্ধ করা কষ্ট চলছিল। ক্লাসে পড়াতে গিয়ে মনে হত আমি কি আদৌ ওদের শিক্ষক হবার যোগ্য? পড়াচ্ছি জাত-ধর্ম ভেদাভেদ এসব মানুষের তৈরি, অথচ বাস্তবে তাকেই এত গুরুত্ব দিচ্ছি যে ভালোবাসার একমাত্র মানুষটাকে ইচ্ছাকৃতভাবেই ত্যাগ করতে চাইছি। ইতিমধ্যে সাইফুলের সাথে আবার দেখা রাস্তায়। তখন ২০০৭ সাল। দুটো বছর এর মধ্যে  পেরিয়ে গেছে। এইবার ঘটে গেলো সেই দুর্ঘটনা—দুজনেই শপথ নিয়ে বসলাম, একবার, শুধু একবার চেষ্টা করে দেখি। নাহলে নিজেদের কাছে অপরাধী হয়ে যাব। ভালোবাসার পথ চলা শুরু হল।

    এক্ষেত্রেও আমি ‘এক্সট্রা প্রিভিলেজ’ পেলাম দুই বাড়ি থেকেই। মেয়ের শরীর যখন আছে, তখন নিশ্চয়ই আমি গর্ভধারণ করে ফেলেছি বলেই এত বিয়ের তাড়াহুড়ো! কিংবা বড়লোক বাড়ির ছেলেকে চরিত্রহীন মেয়ে ফাঁসিয়েছে। ভাবতে অবাক লাগে এসব কালিমা মেয়েদেরই জন্য, সে সবর্ণে হোক বা অসবর্ণে।

    সাহস করে একদিন বলেই ফেললাম মায়ের কাছে। আমি মাকে এটুকুই বোঝাতে পেরেছিলাম যে আমি নিতান্ত নিরুপায় হয়েই এই সম্পর্কে জড়াতে চাই। এ ভালোবাসাকে ভোলার কোনো রাস্তা নেই। মা বুঝলেন বলেই মনে হল। কিন্তু পরের দিন থেকে আমার মা তাঁর একমাত্র মেয়েকে এই বিপদের হাত থেকে রক্ষা করতে সবরকম প্রতিরোধের পথ বেছে নিলেন। জীবনে সেই প্রথম উপলব্ধি করলাম আমার জীবনের সিদ্ধান্ত নেবার কোনো অধিকার আমার নেই, সে অধিকার আছে শুধু সমাজের। তাই আমার মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ হল। আমার চলাফেরা নিয়ন্ত্রিত হল। এককথায় আমি গৃহবন্দী হলাম। এদিকে সাইফুল্লাহও বাড়িতে জানাল। দুই বাড়ি থেকেই বিরোধিতার পাহাড় ভেঙে পড়ল।

    এইসব স্ট্রাগল যখন চলছে ঠিক তখনই এখানে সেখানে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে প্রিয়াঙ্কা আর রিজওয়ানুরের ঘটনা। পেপার খুললেই তখন প্রথম পৃষ্ঠা থেকে শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত ধর্মীয় উদারতা ভরা ভাষণ, চোখে জল আনা, পায়ে গতি আনা দারুণ সব সম্পাদকীয়। পড়লেই মনে হবে এমন সেকুলার দেশ বুঝি আর একটাও নেই।

    যদিও পাঠক নিশ্চয়ই বুঝবেন এক্ষেত্রেও আমি ‘এক্সট্রা প্রিভিলেজ’ পেলাম দুই বাড়ি থেকেই। মেয়ের শরীর যখন আছে, তখন নিশ্চয়ই আমি গর্ভধারণ করে ফেলেছি বলেই এত বিয়ের তাড়াহুড়ো! কিংবা বড়লোক বাড়ির ছেলেকে চরিত্রহীন মেয়ে ফাঁসিয়েছে। ভাবতে অবাক লাগে এসব কালিমা মেয়েদেরই জন্য, সে সবর্ণে হোক বা অসবর্ণে। আমার ভিতরের আমিটা রাগে ফেটে পড়ল। স্থির সিদ্ধান্ত নিলাম—যারা আমাদের ভালোবাসাকে তাদের ধর্ম বাঁচাবার অছিলায় নিচে নামাচ্ছে, তাদের জন্য আর কোনো স্যাক্রিফাইস নয়। অন্যদিকে সাইফুল্লার বাড়ি থেকে বিয়েতে শর্তসাপেক্ষে মত প্রকাশ করা হল যে ধর্মান্তরিত হয়ে আমি ওবাড়ির বউ হতে পারি। শুরু হল নিজেদের মধ্যে লড়াই। সাইফুলের কাছে ওর পরিবারের সম্মতি পাবার এই পথটা বড়ই সহজ মনে হল। কিন্তু আমার তা মনে হল না। বললাম বিয়ে করতে হলে স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্টে হবে। নাহলে থাক।

    আমি বাড়ি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম, কিন্তু সাইফুলের সাথে নয়। একাই। কারণ তখন লড়াইটা দাঁড়িয়ে গেলো নিজের আত্মসম্মানের, আত্মপরিচয়ের।

    এইসব স্ট্রাগল যখন চলছে ঠিক তখনই এখানে সেখানে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে প্রিয়াঙ্কা আর রিজওয়ানুরের ঘটনা। পেপার খুললেই তখন প্রথম পৃষ্ঠা থেকে শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত ধর্মীয় উদারতা ভরা ভাষণ, চোখে জল আনা, পায়ে গতি আনা দারুণ সব সম্পাদকীয়। পড়লেই মনে হবে এমন সেকুলার দেশ বুঝি আর একটাও নেই। আমার মা যখন দুশ্চিন্তায় না খেয়েই রাতে শুয়ে পড়ছেন, তখন আমাদের টেলিভিশনের জনপ্রিয় চ্যানেলে টোডি পরিবারের ধর্মীয় অনুদারতার বিরোধিতা আর রিজওয়ানুরের জন্য ‘আহারে’ করা মানুষের ভিড়। দিব্যি অনুভব করছিলাম ওই বাড়িতে আরেকজন মাও হয়তো সন্ধ্যাকালীন নমাজে মন দিতে পারছেন না ছেলের আসন্ন বিপদের কথা চিন্তা করে। দুই অসহায় মা তখন এক সেকুলার দেশের যাঁতাকলে পিষে যাচ্ছেন। আবার একদিকে নিজের বাড়িতে প্রিয় মানুষগুলোর সাথে যোজন যোজন দূরত্ব, অন্যদিকে ধর্মান্তরিত হবার প্রস্তাবে সাইফুলের আগ্রহ দেখে হতাশা। চরম নিঃসঙ্গতা গ্রাস করতে থাকল আমায়। আমি বাড়ি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম, কিন্তু সাইফুলের সাথে নয়। একাই। কারণ তখন লড়াইটা দাঁড়িয়ে গেলো নিজের আত্মসম্মানের, আত্মপরিচয়ের।

    আমি এমনও ভাবছিলাম যে মা বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে বিয়েই করব না সারাজীবন। কিন্তু তাঁরা বললেন কাউকে না কাউকে বিয়ে আমায় করতেই হবে। তারপরেই তাঁরা নিশ্চিত হবেন আমার চরিত্র সম্পর্কে। অর্থাৎ এবাড়িতে থাকলে নিজের চরিত্র সম্পর্কে নিশ্চিত করতে হবে, আর ওবাড়ির বউ হতে গেলে নিশ্চিত করতে হবে নিজের ধর্ম। কোন যুগে দাঁড়িয়ে আমি? সমাজ আমায় কোনোরকম স্বাধীনতা দিতে প্রস্তুত নয়। শুধু শিকল আর শিকল। জানিনা, সেদিন একা একা বাইরে পা রাখলে কোনো নতুন পৃথিবীর সন্ধান পেতাম কিনা, যেখানে মেয়েরা নিজের পরিচয় নিয়ে বাঁচতে পারে। কারণ আমাকে একা বেরোতে হয়নি। সাইফুল আমার দৃঢ়তার কাছে হার মানে। পুরোহিত, যজ্ঞ, কাজী, বিয়ে পড়া এসব ছাড়াই উকিলের রুদ্ধদ্বার ছোট্ট অফিসে আমাদের চার হাত এক হয়। ওর পক্ষ থেকে উইটনেস ছিল ওর অফিসের তিন বন্ধু, আর আমার পক্ষ থেকে উকিলবাবুর দেওয়ালে সুসজ্জিত রামমোহনবাবু আর বিদ্যাসাগরবাবু।

    কদিনের মধ্যেই এই ভিনধর্মের শাশুড়ি মা হয়ে উঠলেন আমার কাছের বন্ধু। সমাজ, কর্মক্ষেত্র যেখানেই বিরোধিতা এসেছে, লড়তে পারার মানসিক জোর মা-ই দিয়েছেন আমায়। আমার শাশুড়ি মা প্রাচীনা হলেও বিচার বিবেচনায় ছিলেন খুব আধুনিক।

    সংসারের শুরুতে আমরা ভাড়া ছিলাম গড়িয়ায়। সেখানেও বিপত্তি। বাড়ির মালিক বিয়ের সার্টিফিকেট দেখতে চাইলে? সার্টিফিকেট হাতে পেতে তখনও তিনদিন বাকি। ছুটলাম উকিলের কাছে। উনি উপায় না দেখে একটা দশ টাকার স্ট্যাম্প পেপারে লিখে দিলেন আমাদের সম্পর্ক। কিন্তু যখন গেলাম, দাদা অর্থাৎ বাড়ির মালিক দেখছি নানান গল্প করছেন কিন্তু সার্টিফিকেটের কথা কিছু বলছেন না। টেনশনে পরে নিজেরাই কথাটা তুললাম। উনি আমার কথা মাঝপথে থামিয়ে বললেন, ‘কাগজ আমার লাগবে না। আমি শিক্ষক। আমি তোমাদের চোখে ভালোবাসার উৎকণ্ঠা দেখেছি। ওটাই তো বড় প্রমাণপত্র’। আমাদের দেশে এমন মানুষ সত্যি বিরল। ওখানে আমরা পুরো এগারো মাস ওই দাদা-দিদির ছত্রছায়ায় ছিলাম। ইতিমধ্যে আমি এসএসসি দিয়ে সরকারি স্কুলে চাকরি পেলাম। এলাম শ্বশুরবাড়ি। সামনে এলেন মাথায় ঘোমটা দেওয়া পাঁচ ওয়াক্ত নমাজ পড়া আমার শাশুড়ি মা। উনি ধার্মিক ছিলেন, কিন্তু ধর্মভীরু নন। আমার খালি হাতে ওনার একজোড়া চুড়ি পরিয়ে দিলেন, বললেন হাত খালি রাখতে নেই। কোনো রাগ না, কোনো উষ্মা না। পরে আমার শ্বশুরবাড়ি থেকে গয়না, বেনারসি সবই দিয়েছিল। কিন্তু সেই স্বীকৃতি মায়ের হাতের ওই বহু ব্যবহারের চুড়ির থেকে কিছুমাত্র বেশি ছিল না। আমার নিজের বাড়িতেও স্বীকৃতি পেলাম। মুখোপাধ্যায় বংশের সমস্ত বন্ধন কাটিয়ে বিয়ে করেছিলাম একরকম চুরি করেই। ওরা আমাদের মেনে নিতে না পারলেও ত্যাগ করতে পারেননি। সমাজের চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে সন্তানের প্রতি ভালোবাসাকে আগে স্থান দিয়েছিলেন। তবে সে মনের জোর শেষ পর্যন্ত আর বাঁচাতে পারেননি।

    শ্বশুরবাড়িতে আমার উপর কোনো ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা ছিল না। আমার নিজেরও কোনো ধর্মীয় সংস্কার ছিল না যা এবাড়িতে বাধা হতে পারে। কদিনের মধ্যেই এই ভিনধর্মের শাশুড়ি মা হয়ে উঠলেন আমার কাছের বন্ধু। সমাজ, কর্মক্ষেত্র যেখানেই বিরোধিতা এসেছে, লড়তে পারার মানসিক জোর মা-ই দিয়েছেন আমায়। আমার শাশুড়ি মা প্রাচীনা হলেও বিচার বিবেচনায় ছিলেন খুব আধুনিক। জানিনা কারা বলে হিন্দু মুসলমানের বড় তফাৎ! আমি তো দেখি, ভালোবাসা থাকলে কোনো কিছুই তফাৎ করে না।

    তা বলে এমনটা নয় যে পারিবারিক সমস্যা আমার জীবনে আসেনি। আঘাত পেয়েছি, ভেঙে পড়েছি খুব। আমার নিজের মা আজও আমায় মন থেকে ক্ষমা করেননি। আমার সাথে দূরত্ব বাড়িয়েছেন ক্রমশ। আমি অনাথ হয়ে পড়েছি। অন্যদিকে শ্বশুরবাড়ির মানুষরাও আমার অপরিসীম ভালোবাসার মূল্য দেননি সবসময়। আমাকে ব্রাত্য রাখা হয়েছে পারিবারিক অনুষ্ঠানে। বালিশ আঁকড়ে সারা রাত কেঁদেও সকালে উঠে মনে করেছি হারব না কিছুতেই। কারণ আমি জানি আমার একটুখানি পিছনে সরে আসা পৃথিবীর মানুষের কাছে প্রমাণ করবে বিধর্মী বিয়ের অসারতা। আমার সুখের তেরোটা বছর তখন সুবিধাবাদী, ধর্মবাদী মানুষের হাতে খেলার বোরে হয়ে যাবে।


    আমি এখন দুই কন্যার মা। একজন মীহিকা সম্প্রীতি, একজন হৃদিকা সম্প্রীতি। জানিনা ওরা ধর্মহীন পৃথিবী পাবে কিনা। তবে আমার বিশ্বাস কর্মই মানুষের ধর্ম। তাই ইন্টারফেইথ ম্যারেজ মানেই লড়াই এর গল্প শুধু নয়। সব বাধা পার হয়ে ভালোবাসায় পৌঁছানোর গল্প। কোনো ধর্মদরদী সরকার যদি কখনো ধর্মকে বাঁচাতে আমাদের বিয়েটাই বেআইনি করে দেয়, যদি দুষ্মন্তেরদেওয়া আংটিটা সত্যি হারিয়েই যায়, তাও কুছ পরোয়া নেহি। ভালোবাসা তো রইবে। ওই দিয়ে চিত্রা সাইফুল্লাহদের সংসার গড়তে কোনো অসুবিধা হবে না।

     
     



    Tags
     



    Comments (2)
    • কি যে ভালো বৌ তুমি আমাদের তা হয়তো ঠিক তোমাকে বোঝাতে পারিনি আমরা! তবে ঢাকায় বসে যখন তোমাদের বিয়ের খবর পেয়েছিলাম আমারা কিন্তু মোটেই অবাক হইনি। আর গত দুবছর আগে তোমাকে দেখার পর আমরা জেনেছি এবং বুঝেছি চিত্রই কেবল সাইফুল্লাহর বৌ হতে পার! অনেক ভালোবা তোমাদের জন্য।

    • চিত্রা খুবই সাহসী। চাপে পড়ে ধর্মান্তরিত না হওয়া স্থিরতা ও দৃঢ়তার পরিচয়। যেই প্রেম আর বিয়ে নিয়ে এত ঝঞ্ঝাট ঠিক সেই সময়েই নিজের স্বাধীন চিন্তাধারাকে প্রাধান্য দেওয়ার দৃষ্টান্ত সত্যিই বিরল। চিত্রার শ্বাশুড়ির স্বাতন্ত্র সত্যিই প্রসংশনীয়! শুভেচ্ছা রইল।

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    You may use these HTML tags and attributes: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>

     



    তথ্য নীতি | Privacy policy

 
Website © and ® by Ebong Alap / এবং আলাপ, 2013-24 | PRIVACY POLICY
Web design & development: Pixel Poetics