জঙ্গলে গেলে বাঘের আক্রমণে মৃত্যু, না গেলে অনাহারে মৃত্যু
1 239‘শুধু সুন্দরবন চর্চা’র সম্পাদক মাসখানেক আগে আমাকে জানিয়েছিলেন যে তিনি সুন্দরবনের মহিলাদের ওপর একটা সংখ্যা বের করবেন৷ তাতে আমার একটা লেখা দিতে হবে৷ আমি সম্মতি জানিয়েছিলাম৷ তখন আমার মনে সুন্দরবনের অসংখ্য দুর্দশাগ্রস্থ বিধবাদের করুণ মুখ ভেসে উঠল৷ যাঁদের স্বামীরা জঙ্গলে কাঁকড়া ধরতে এবং মধু ভাঙতে গিয়ে বাঘের আক্রমণে মারা গেছেন৷ জোয়ান স্বামীর অকাল মৃত্যুতে শোকে উন্মাদ মাকে চোখের জল মুছতে মুছতে কিশোর পুত্রের জঙ্গলে যাওয়াকে মেনে নিতে হচ্ছে৷ জঙ্গলে পাঠিয়ে মা অব্যক্ত যন্ত্রণা বুকে নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন৷ এমন অনেক মহিলা আছেন যাঁরা তাঁদের অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে জঙ্গলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন৷ নিঃস্ব সমস্ত স্বামীহারাকে ভাগী হিসেবে না নেওয়াতে, কান্নাকাটি করে নাবালক সন্তানকে সাথী করে নৌকোতে উঠতে হয়েছে৷ এদের কথা আমার সদ্য প্রকাশিত বইতে (সুন্দরবনের কাঁকড়ামারা) উল্লেখ আছে৷ তাই আমি ঠিক করলাম ‘শুধু সুন্দরবন চর্চা’-র জন্য নতুন কোনও ঘটনার সন্ধান করবো৷
২১শে নভেম্বর (২০১৪) ভোরবেলা বাড়ি থেকে বেরিয়ে চার ঘন্টার বাস যাত্রায় রামগঙ্গা খেয়াঘাটে পৌঁছলাম৷ খোঁজ নিয়ে জানলাম আমার গন্তব্যস্থলের ভুটভুটি সবেমাত্র ছেড়ে গেল৷ পরেরটার জন্য আমাকে প্রায় ঘন্টাখানেক অপেক্ষা করতে হবে৷ বড়চূড়া নদীর ওপর রামগঙ্গা খেয়াঘাট৷ অন্যান্য যাত্রীদের সঙ্গে খেয়াঘাটে অপেক্ষা করছিলাম৷ যথাসময়ে যাত্রীভরা ভুটভুটি ঘাটে এসে থামল৷ থামতেই, যাত্রীরা তাড়াহুড়ো করে নামতে শুরু করলেন৷ মিনিট দশেকের মধ্যে ভুটভুটি খালি হল এবং নতুন যাত্রীতে ভরেও গেল৷ শীতের দুপুর৷ বয়স্ক মানুষ এবং প্রায় সব মহিলারা ভুটভুটির চালে উঠে বসল৷ এগার-বারো ক্লাসের দুজন ছেলের সাহায্যে আমিও ভুটভুটির চালে উঠে বসলাম৷ শীতের সময় হলেও, দুপুরের রোদের বেশ তেজ ছিল৷ তাই কেউ কেউ ছাতা, গামছা, খবরের কাগজ দিয়ে মাথাকে রোদ্দুর থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছিলেন৷ আমি দুজন সহযাত্রীর সঙ্গে গল্প করতে করতে চলেছি৷ ভুটভুটি যে ঘাটগুলোতে থামছে, সেই ঘাটগুলোর নাম এবং সেগুলো কোন্ কোন্ গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে পড়ে জেনে নিচ্ছিলাম৷ এক একটা দ্বীপ এক একটা গ্রাম পঞ্চায়েত৷ আমাদের ভুটভুটি তিনটে গ্রাম পঞ্চায়েত ছুঁয়ে, ছটা খেয়াঘাটে যাত্রী নামিয়ে আমার গন্তব্যস্থলে পৌঁছল৷
আমি যে ঘাটে নামলাম তার নাম সত্যদাসপুর খেয়াঘাট৷ স্থানীয় মানুষ এই ঘাটকে সবুজবাজার খেয়াঘাটও বলেন৷ এই ঘাট থেকেই সত্যদাসপুর আদিবাসীপল্লীর শবর পুরুষ ও মহিলারা কাঁকড়া ধরতে এবং মধু ভাঙতে মেসিনবোটে করে সুন্দরবনের বিভিন্ন জঙ্গলে যান৷ এখানে চারটে কাঁকড়ার আড়ত আছে৷ আদিবাসীরা কাঁকড়া ধরে এনে এই সমস্ত আড়তে বিক্রী করেন৷ সবুজ বাজার থেকে স্থানীয় মানুষ তাঁদের সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা করেন৷ এই ঘাট থেকে ডবল সোলিং ইটের রাস্তা ধরে টানা চার কি.মি. হাঁটলে সত্যদাসপুর আদিবাসী পাড়া৷ রাস্তার দুধারে সার বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে ঝাউ আর সোনাঝুরি গাছ৷ এই আদিবাসী পাড়াতে আছে ১৩২টা শবর পরিবার৷ এখানে ৬টা সাঁওতাল পরিবারও থাকে৷ এই পাড়াতে বনদপ্তর থেকে একটা বড় পুকুর কেটে দিয়েছে৷ পুকুরটার আয়তন বিঘে চারেক হবে৷ পুকুরটার চারদিকে ছোট ছোট মাটির ঘর৷ খড়ের চাল৷ দু একটা টালির বাড়িও আছে৷ পাড়ায় একটা টিউবওয়েল আছে৷ দু-এক ঘর ছাড়া কারোর শৌচালয় নেই৷ বিদু্যতের আলো পৌঁছায়নি৷ দু-চার জন সৌর আলো ব্যবহার করেন৷ চারিদিকে ধান খেত৷ ধান পেকে গেছে৷ কোথায় কোথাও ধান কাটা শুরু হয়েছে৷ শবরদের পাড়ায় একটা আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে৷
আদিবাসী পাড়ার সমস্ত প্রত্যেক পুরুষ ও মহিলা কাঁকড়া ধরতে যান৷ প্রায় প্রত্যেক পুরুষরা মধু ভাঙতে গেলেও সব মহিলা মধু ভাঙতে যান না৷ এই আদিবাসী (ট্যাঙ্ক পুঞ্জর) পাড়া থেকে ২৪ জন মহিলা স্বামী, পুত্র অথবা নিকট আত্মীয়ের সঙ্গে মধু ভাঙতে যান৷ ভারতী মল্লিক (৪৭) নিয়মিত কাঁকড়া ধরতে এবং মধু ভাঙতে যান৷ স্বামী ঝড়ু মল্লিক চোদ্দ-পনেরো বছর আগে মধু ভাঙতে গিয়ে বাঘের আক্রমণে মারা যান৷ স্বামী যখন বেঁচে ছিলেন ভারতী মল্লিক তখন স্বামীর সঙ্গে একই নৌকোতে কাঁকড়া ধরতে এবং মধু ভাঙতে যেতেন৷ স্বামীর মৃত্যুর পর এখন আত্মীয় স্বজনের নৌকোতে যান৷ ভারতী মল্লিকের পাঁচ মেয়ে এবং দুই ছেলে৷ পাঁচ মেয়ের নাম: পাখি, বিনা, অহল্যা, কবিতা ও চৈতালি৷ দুই ছেলে: পরেশ ও স্বপন৷ ভারতী মল্লিক বিয়ের আগে থেকেই দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করছেন৷ স্বামীর মৃত্যুর পর সেই লড়াই আরও তীব্র হয়েছে৷ স্বামীর রেখে যাওয়া একমাত্র সম্পত্তি হল ছোট মাটির একটা কুঁড়ে ঘর৷ খড়ের চাল৷ ঘরে ঢোকার প্রবেশ পথ এত নিচু যে মাথা নুইয়ে তবেই ঘরে ঢোকা যায়৷ কোনও জানালার বালাই নেই৷ আছে একটা ছোট ঘুলঘুলি৷ তার মধ্যেই রান্না-খাওয়া, শোয়া-বসা, সবই করতে হয়৷ ঘরের মধ্যে ঢুকতে নজরে পড়ল কয়েকটা অ্যালুমিনিয়ামের থালাবাটি৷ খেঁজুর পাতার চ্যাটাই, উনুন, একটু জ্বালানি (গাছের শুকনো ডালপালা), কয়েকটা মলিন কাপড়-চোপড়, দু-একটা ছেঁড়া কাঁথা, আংড়ি (কাঁকড়া ধরার শিক), খন্তা (কাঠের হাতলওয়ালা শাবল), পুরোনো খান দুই সিনথেটিকের ব্যাগ ইত্যাদি৷
ভারতী মল্লিককে দেখলে রুগ্ন মনে হয়৷ প্রকৃত বয়সের চেয়ে বেশি বয়স্ক দেখায়৷ শরীরে খড়ি ফুটে আছে৷ চুল রুক্ষ৷ চোখ-মুখ শুষ্ক৷ সারা শরীরে অযত্নের ছাপ স্পষ্ট৷ বাপের বাড়ি আঠারোগাছি (গদামথুরা)৷ বাবা জঙ্গলে মাছ কাঁকড়া ধরে সংসার চালিয়েছেন৷ একা খাটতেন৷ দশজন খেত৷ বাবা-মা পাঁচ বোন ও তিন ভাই৷ অভাবের সংসার৷ বাপের বাড়িতেই জঙ্গলে যাওয়ার হাতেখড়ি৷ সেয়ানা হওয়ার আগেই বিয়ে হয়েছে৷ বিয়ের সময় ঝড়ু মল্লিক ভারতীর বাবাকে ১৫০ টাকা পণ দিয়েছিলেন৷ ভারতীর ভাই বোনেরা কেউ কোনদিন স্কুলে যায়নি৷ ভারতী মল্লিককের সাত ছেলেমেয়েরাও কোনদিন স্কুলের মুখ দেখেনি, পাড়ার মধ্যে আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকা সত্ত্বেও৷ বিয়ের আগে থেকেই ভারতী জলে-জঙ্গলে খাটায় অভ্যস্ত৷ বিয়ের পর থেকে আজও সে অভ্যাসের কোন ছেদ পড়েনি৷ বড় মেয়েটা যখন একটু বড় হল, বাচ্চাগুলোর দায়িত্ব তার ওপর দিয়ে ভারতী মল্লিক স্বামীর সঙ্গে জঙ্গলে কাঁকড়া ধরতে এবং মধু ভাঙতে যেতেন৷ তারপর বড় ছেলেটা হাতে ধরা হতে সেও জঙ্গলে যাওয়া শুরু করল৷
মাত্র ৪৭ বছর বয়সে বাঘের আক্রমণে ঝড়ু মল্লিকের অকাল মৃত্যুর ফলে ভারতী মল্লিকের জীবনে অন্ধকার নেমে এলো৷ কীভাবে এখন সাতজন ছেলেমেয়েকে নিয়ে বেঁচে থাকবেন? ভারতী মল্লিক শোকে বিহ্বল হলেও, কর্তব্যচ্যুত হননি৷ বড় ছেলেকে হাত ধরে নিয়ে সাহসে বুক বেঁধে জঙ্গল যাত্রা অব্যাহত রাখলেন৷ ভারতী মল্লিক বলেন, জঙ্গলে গেলে বাঘের আক্রমণে মৃত্যু, না গেলে অনাহারে মৃত্যু৷ মৃত্যু তাদের নিত্যসঙ্গী৷ এইভাবে ভারতী দেবী সাত ছেলেমেয়ে নিয়ে শুধু বেঁচে আছেন তাই নয়, চার মেয়েকে বিয়েও দিয়েছেন৷ বড় ছেলে বিয়ে করেছে৷ শাশুড়ির মতো বৌমার বাড়িও গোদামথুরায়৷ বৌমার নাম কুমারী মল্লিক৷ তার এক ছেলে এক মেয়ে৷ ছেলেটা বড়, বছর ছয়েক৷ জন্ম থেকে দেখতে পায় না৷ তাকে ডাকে অন্ধমনি বলে৷ মেয়েটা ছোট৷ বড় ছেলে, পরেশ মল্লিক, এখন থাকে ভিন্ন ভাতে৷ ভারতীর সঙ্গে থাকে ছোট ছেলে স্বপন, এবং ছোট মেয়ে চৈতালি৷ বড় ছেলের ছেলেটা (অন্ধমনি) ঠাকুমার খুব নেওটা৷ ঠাকুমা বাড়িতে থাকলে তাঁর কাছেই থাকে৷ নাতিটার জন্য ভারতীয় বড় কষ্ট৷ সে যে চোখে দেখতে পায় না৷ কী করে তার চলবে? কে তোকে দেখবে? বড় হয়ে কাঁকড়া না ধরলে, মধু না ভাঙলে যে উনুনে হাঁড়ি চড়বে না৷
স্বামীর মৃত্যুর পর দেনা করে গ্রাম-খাওয়াতে হয়েছিল৷ স্বামীর মৃতদেহ বন দপ্তরের পক্ষ থেকে দাহ করা হয়৷ নচেৎ দেনা আরও বেড়ে যেত৷ গ্রাম-খাওয়াতে আট হাজার টাকা দেনা করতে হয়৷ সংসার চালাতেও কিছু কিছু দেনা হয়৷ মোট ২৫ হাজার টাকা দেনা ছিল৷ বাঘের আক্রমণে স্বামীর মৃত্যুর জন্য ভারতী মল্লিক বন দপ্তর থেকে ৩০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছিলেন৷ সেই টাকা থেকে সমস্ত দেনা শোধ হয়েছে৷ এখন আর ধার বাকি নেই৷ ভারতী কাঁকড়া ধরে আর মধু ভেঙে যে আয় করেন তাতে কোনভাবে চলে যায়৷ ছোট ছেলে এবং মেয়ে তো কাছে থাকেই৷ নাতির খাওয়া পরার সিংহভাগও ঠাকুমাকে বহন করতে হয়৷ ঠাকুমা খুশি মনেই সেটা করেন৷ ছোট ছেলের জঙ্গলে যাওয়ার বয়স এখনও হয়নি৷ তবুও সে যেতে চায়৷ একবার লুকিয়ে ভাগী হিসেবে কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিল৷ ছোট ছেলে জঙ্গলে যেতে চাইলে মায়ের ডর লাগে৷ স্বামীর বাঘের আক্রমণে ক্ষতবিক্ষত দেহটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে৷ তখন সারা শরীর শিউড়ে ওঠে৷ মা জানেন আজ না হোক, দুদিন পরে ছেলেকে বাঘের ডেরায় ঢুকতে হবে৷ এটাই শবরদের নিয়তি৷ ছোট মেয়ে চৈতালিকে বিয়ে দিতে হবে৷ বড় হচ্ছে৷ ছোট ছেলেকেও সংসার পাততে হবে৷ জঙ্গল-নির্ভর জীবনই একমাত্র ভরসা৷ ভারতী মল্লিকের একটা বি.পি.এল. কার্ড ছিল৷ আইলায় সেটা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়৷ নতুন কার্ডের জন্য ধরাধরি করেছে৷ এখনও হয়নি৷ তাই দু'টাকা কিলো চাল তার জোটে না৷ তাঁর বিধবা ভাতা মঞ্জুর হয়েছে৷ টাকাটা ব্যাংকে আসে৷ খুশিমতো তোলা যায়৷ এক চিলতে ধান জমি আছে৷ চাষ করতে পারলে বস্তা তিনেক ধান পাওয়া যায়৷ বড় ছেলে ভিন্ন ভাতে থাকলেও তাকে অর্ধেক দিতে হয়৷ বড় ছেলেও চাষে মাকে সাহায্য করে৷
ভারতী মল্লিক জানিয়েছেন এবছর (২০১৪) চৈত্র মাসে মধুর মরশুমে তাঁর পাঁচ হাজার টাকা আয় হয়েছে৷ মধু ভাঙার দলে পাঁচজন ছিলেন৷ দলের বাকি চার জনের নাম (১) অবিনাশ নায়েক, (২) গুরি নায়েক, (৩) শম্ভু নায়েক এবং (৪) সন্তোষ নায়েক৷ এই চারজনই একই পরিবারের৷ এ দলে ভারতী মল্লিক একমাত্র মহিলা৷ ছেলেদের দলে থেকে ভারতী দেবীকে যে কাজগুলো করতে হয় সেগুলো হল:
১৷ মৌলদের সঙ্গে গস্তে যাওয়া৷ অর্থাৎ মৌমাছির চাক খুঁজতে খুঁজতে জঙ্গলের ভেতর ধীরে ধীরে অগ্রসর হওয়া৷ ২৷ 'বোড়ে' (মশাল) তৈরির জন্য 'বগড়া' (হেঁতাল) পাতা সংগ্রহ করা৷ কাঁচা এবং শুকনো পাতা মিশিয়ে মশাল বাঁধা৷ ৩৷ মৌমাছির চাকে জ্বলন্ত মশাল ধরে থাকা৷ কখনও কখনও চাক কাটা৷ ৪৷ চাক কাটার সময় চাকের তলায় এ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়ি ধরে থাকা৷ ৫৷ জঙ্গল থেকে মধুর হাঁড়ি কাঁকালে করে নৌকাতে নিয়ে যাওয়া৷ ৬৷ কখনও কখনও লাঠি-বাড়ি হাতে পাহারা দেওয়া৷ ৭৷ দিনে দুবার—দুপুরে এবং সন্ধে নৌকাতে রান্না করা৷
ভারতী মল্লিক দুভাবে কাঁকড়া ধরতে যান৷ কাঁকড়া ধরে দিনের দিন ফিরে আসেন৷ সে ক্ষেত্রে একটা মেসিন বোটে পনেরো বিশজন (পুরুষ ও মহিলা) এক সাথে যান৷ সবাই আংড়িতে (শিকে) কাঁকড়া ধরেন৷ প্রত্যেকে নিজের ধরা কাঁকড়া আলাদা করে রাখেন৷ নৌকোর মালিককে দৈনিক মাথা পিছু ৫০ টাকা ভাড়া বাবদ দিতে হয়৷ এধরনের অভিযানে ভারতী দেবীর দৈনিক গড় আয় (নৌকোর ভাড়া দিয়ে) ১০০ থেকে ১৫০ টাকা৷ আবার যখন 'বাসায়' যান৷ অর্থাৎ ৭-৯ জনের একটা দল নৌকোতে একটানা ৮-১০ দিন থাকে, তখন খাওয়া-দাওয়ার খরচ-খরচা বাদ দিয়ে গড়ে দেড় থেকে দু'হাজার টাকার বেশি আয় হয় না৷ এই রকম ট্রিপে মহিলার চেয়ে পুরুষের সংখ্যা সব সময় বেশি থাকে৷ এ ক্ষেত্রে সকলের কাঁকড়া একত্রে থাকে এবং সকলে সমান ভাগ পায়৷ ভাড়া বাবদ নৌকোর একভাগ৷ এখানে একটা কথা মনে রাখতে হবে কাঁকড়া ধরার সঙ্গে জোয়ার ভাঁটার এবং তিথি নক্ষত্রের ঘনিষ্ট সম্পর্ক থাকে৷ মাসে পনেরো-বিশ দিন কাঁকড়া ধরা হয়৷ মধু ভাঙার মরশুম চৈত্র-বৈশাখ৷ বন দপ্তরের আইন অনুযায়ী বছরে তিন মাস এপ্রিল, মে ও জুন সুন্দরবন এলাকার মধ্যে মাছ-কাঁকড়া ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ৷ মধু ভাঙার মরশুম দু'মাস (এপ্রিল এবং মে)৷
শুধু সুন্দরবন চর্চা পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত। বানান ও ভাষা অপরিবর্তিত রেখে পত্রিকার সম্পাদকের অনুমতিক্রমে পুনঃপ্রকাশিত।
Tagsadolescence age of consent age of marriage caa child marriage corona and nursing covid19 Covid impacts on education domestic violence early marriage education during lockdown foremothers gender discrimination gender identity gender in school honour killing human rights intercommunity marriage interfaith marriage lockdown lockdown and economy lockdown and school education lockdown in india lockdown in school lockdown in schools love jihad marriage and legitimacy memoir of a nurse misogyny nrc nurse in bengal nursing nursing and gender discrimination nursing in bengal nursing in india online class online classes during lockdown online education right to choose partner school education during lockdown social taboo toxic masculinity transgender Women womens rights
এইরকম অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছি একবার । ভাগ করে নেওয়া যাক আপনাদের সাথে । সেবার তিন বন্ধু ছুঁয়ে এলাম এক ভিন্ন সুন্দরবন । উত্তর ২৪ পরগণার । হাসনাবাদ, নেবুতলা, দুলদুলি ছুঁয়ে সামসেরনগর । জলজংগলনদী ঘেরা এক জনপদ । ওখানে স্থানীয় কয়েকজন মানুষের সাহায্য নিয়ে কথা বলতে পেরেছিলাম সেই সব মানুষদের সঙ্গে যাদের স্বামীরা গেছে বাঘের পেটে । আমার এক বন্ধু আধা-সাংবাদিক । কথাবার্তা চালালো ওই । আমি কিছু অসহায় মুখের ছবি করলাম ফ্রেমবন্দী । লেখাগুলো বন্ধুর কাছে আজও আছে । কোথাও প্রকাশ পেয়েছে কিনা জানিনা । ছবিগুলো সযত্নে রাখা আছে আমার কাছে । আর আছে ওঁদের দারিদ্র্যের সেই হাহাকার, বেচেঁ থাকার আর্তি । মাটির কুঁড়েঘর ভেঙ্গে পড়ছে । পোশাক অতি মলিন, শতচ্ছিন্ন । রোজকার খাবার হরিমটর । রোজগার শূন্য । আমাদেরকে সরকারি এবং /অথবা সাংবাদিক মনে করে উজাড় করে দিচ্ছিলেন ওঁদের দিবারাত্রির কাব্য । খুব অসহায় এক বোধ নিয়ে ফিরেছিলাম সেবার । জলজঙ্গলের সৌন্দর্য্যে হতবাক হওয়ার কথা মাথায় আসেনি । আজ আপনার লেখাটা পড়তে গিয়ে সেইদিনের কথা মনে পড়ে গেলো ।
কিছুটা উদাস হলাম বৈকি, নাগরিক অভ্যাসে ।