এক রোববারে পায়ে পায়ে মেটিয়াবুরজ
0 286গত রবিবার ২১ জানুয়ারি, ২০১৮ অ্যাসোসিয়েশন স্ন্যাপ, এবং আলাপ ও অভিযান পাবলিশার্সের যৌথ উদ্যোগে পায়ে হেঁটে মেটিয়াবুরজের কিছু ঐতিহাসিক জায়গা ঘুরে দেখার কর্মসূচী নেওয়া হয়। বিগত প্রায় এক বছর ধরে ‘প্রতিবেশীকে চিনুন’ উদ্যোগের অংশ হিসাবে কলকাতা ও তার বাইরে একাধিক কর্মসূচী নেওয়া হয়েছে, এ ছিল তারই সর্বশেষ সংযোজন। খাতায়-কলমে কলকাতার অংশ হওয়া সত্ত্বেও অধিকাংশ শহরবাসীরই পা পড়ে না মেটিয়াবুরজে। জান্তে-অজান্তে অপর করে রাখা শহরের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তই ছিল এককালে লখনউয়ের শেষ নবাব, নির্বাসিত শাসক ওয়াজিদ আলি শাহের শেষ জীবনের আবাসস্থল, যেখানে তিনি গড়ে তুলেছিলেন সাধের ‘ছোটা লখনউ’। প্রায়-বিস্মৃত ইতিহাসের পাতাগুলো চাক্ষুষ করা এবং অচেনা প্রতিবেশীকে চেনার শুরুয়াত—এই উদ্দেশ্যেই রবিবারের সকালের আলস্য কাটিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন ৫৭ জন শহরবাসী। পায়ে পায়ে খুঁজে নেওয়া কলকাতার বুকে অগোচরে থেকে যাওয়া আরেক কলকাতাকে।
হেরিটেজ ওয়াক দিয়ে দিন শুরু হল। আমরা এসে পৌঁছলাম সাবেক ওয়াজিদ আলি শাহের পরিখানায়, যা বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজারের আবাসস্থল। আশেপাশে মাথা তুলেছে রেলকর্মীদের কোয়ার্টার, অফিসার্স ক্লাব ইত্যাদি। ফেলে আসা দিনের প্রায় কোনো চিহ্নই আর অবশিষ্ট না থাকলেও তার মধ্যে থেকেই বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য অথচ অজানা তথ্য তুলে ধরলেন লেখক শামিম আহমেদ, এই ওয়াকের গাইড এবং ওয়াজিদ আলি শাহের জীবনকেন্দ্রিক উপন্যাস আখতারনামা-র লেখক। পরিখানা সংলগ্ন ঘাটে গিয়ে সকলেই কল্পনা করার চেষ্টা করলেন নির্বাসিত রাজার শেষ সম্বল এই জনপদের তখনকার ছবি।
পরিখানা থেকে আমরা পা বাড়ালাম বালু ঘাট বা সুরিনাম ঘাটের দিকে। অবহেলায় পড়ে থাকা এই ঘাট থেকেই একসময় মাদ্রাজ, উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও বাংলা থেকে হাজারে হাজারে চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক হিসাবে ক্রীতদাসদের পাঠানো হয়েছিল দক্ষিণ আমেরিকার সুরিনাম, ফিজি এবং ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের বিভিন্ন দেশে। পরবর্তীকালে ভারত ও সুরিনাম দুই দেশের উদ্যোগে সেই শ্রমিকদের স্মৃতিতে তৈরি হয় স্মারক।
বালুঘাটের পরের গন্তব্য বিচালি ঘাট। সিবতাইনাবাদ ইমামবাড়ার ঠিক উল্টোদিকের এই ঘাট থেকে এখন শুধুমাত্র ওপারে হাওড়া পর্যন্ত ফেরি পারাপার হলেও প্রায় দেড়শ বছর আগে এই ঘাটেই প্রথম এসে ভিড়েছিল ওয়াজিদ আলি শাহের জাহাজ। এখান থেকেই জাহাজে চেপে ইংল্যান্ডে রানির কাছে তদ্বির করতে গিয়েছিলেন ওয়াজিদ আলি শাহের মা এবং অন্যান্য পারিষদরা।
বিচালি ঘাট থেকে যখন ইমামবাড়ায় এসে পৌঁছনো হল, ঘড়িতে তখন প্রায় দেড়টা। একসাথে ইমামবাড়ার দালানে খাওয়াদাওয়ার পর আধুনিক ইতিহাসের ছাত্র এবং এলাকার স্থানীয় হাজিক নাওয়াজ আনসারি ঘুরে দেখালেন ইমামবাড়া, দেখালেন ওয়াজিদ আলি শাহ এবং তাঁর পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের সমাধি। ঐতিহাসিক তথ্যের সাহায্যে লখনউয়ের শেষ নবাব ও তাঁর ছেলের শেষজীবনের বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরলেন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের কাছে।
মধ্যাহ্নভোজের পর লেখক শামিম আহমেদ তাঁর লেখা রাজা ওয়াজিদ আলি শাহের জীবনকেন্দ্রিক উপন্যাস ‘আখতারনামা’ থেকে পড়ে শোনান নির্বাচিত অংশ। এর পাশাপাশি নবাবের শিল্প-সাহিত্য-সঙ্গীতের প্রতি অনুরাগ এবং আরও বিভিন্ন অজানা দিক সম্পর্কেও আলোকপাত করেন লেখক।
‘প্রতিবেশীকে চিনুন’ উদ্যোগের চেনা ছকেই ইমামবাড়া ঘুরে দেখা এবং শামিম আহমেদের বই পড়ার পর শুরু হল মত বিনিময়ের পালা। বিভিন্ন পেশা, বয়স ও অভিজ্ঞতার মানুষ একে একে বললেন তাঁদের প্রাপ্তির কথা, প্রতিবেশীকে জানার এই উদ্যোগে শামিল হয়ে কেমন লাগল সেই কথা, এবং সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ—সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের যে চেষ্টা দেশজুড়ে চলছে, তার বিরুদ্ধে কিভাবে একজোট হয়ে লড়াই করা যায়, সে বিষয়ে তাঁদের ব্যক্তিগত উপলব্ধির কথা। বিভিন্ন মত ও তর্কের মাধ্যমে উঠে এল নানান প্রসঙ্গ, এই লেখায় সেইসবের উল্লেখ সম্ভবপর না হলেও, ছবিতে তুলে ধরা যেতে পারে কিছু টুকরো মুহূর্ত।
ছবি : সুদীপ চক্রবর্তী
Tagsadolescence age of consent age of marriage caa child marriage corona and nursing covid19 Covid impacts on education domestic violence early marriage education during lockdown foremothers gender discrimination gender identity gender in school honour killing human rights intercommunity marriage interfaith marriage lockdown lockdown and economy lockdown and school education lockdown in india lockdown in school lockdown in schools love jihad marriage and legitimacy memoir of a nurse misogyny nrc nurse in bengal nursing nursing and gender discrimination nursing in bengal nursing in india online class online classes during lockdown online education right to choose partner school education during lockdown social taboo toxic masculinity transgender Women womens rights
Leave a Reply