• 'একুশ' নিয়ে এত কথা কিসের?


    0    426

    November 7, 2020

     

    আমাদের ব্লগ আর সোশ্যাল মিডিয়া পেজ-এ ‘মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ না ২১?’ এই নিয়ে ‘কোন্দল’ বেশ জমে উঠেছে। প্রায় ২৮,০০০ মানুষের কাছে ইতিমধ্যেই আমরা পৌঁছতে পেরেছি এবং ১২০০-র বেশি মানুষ সরাসরি তাঁদের বক্তব্য জানিয়েছেন। আমাদের সংস্থার নাম আমরা ‘এবং আলাপ’ রেখেছিলাম তার কারণ আমরা আলাপ আলোচনায় উৎসাহী। আমরা এমন এক সময়ে বাস করি যখন মতামত প্রকাশ ক্রমশই কঠিন হয়ে উঠছে। স্বাধীন আলোচনার ওপর নানান ধরনের বাধা-নিষেধ, আক্রমণ নেমে আসছে। আমাদের ধারণা আমাদের দেশে গণতন্ত্র চালু রাখতে হলে নির্ভীক আলোচনা, সরকারি আইনের সমালোচনা এমনকী বিরোধিতার একটা আবহাওয়া টিকিয়ে রাখা খুব জরুরি। তাই এই ‘কোন্দল’কে এগিয়ে নিয়ে যেতে আমরা উৎসাহী। এই আলোচনা তুলে ধরার সময় আমাদের সম্পাদকীয়তে আমরা বলেছিলাম, আমাদের সংগঠনের মধ্যেও সবাই এই প্রস্তাবিত আইনি পরিবর্তন নিয়ে একমত নই। বারবার আমরা তাই আলোচনার মধ্যে দিয়ে আমাদের নিজেদের এবং সংগঠনের বাইরে সাধারণ মানুষের মত জানবার চেষ্টা করেছি। বেশি করে জানতে চেয়েছি স্কুল শিক্ষক, অল্পবয়সি ছেলেমেয়ে এবং তাদের নিয়ে যে সংস্থাগুলো সারা বছর কাজ করে, এদের কথা

    আমার মনে হয় এই প্রস্তাব নিয়ে যারা সন্দিগ্ধ তাদের একজন হিসেবে, আমার নিজের মতটা সবার সামনে বলা দরকার। তাহলে এই কোন্দলে আমি কোন দলে আর কেন সেই বিষয়টা পরিষ্কার করে বলা যাবে এবং হয়ত আমার ধারণাগুলো আবার কিছু ভাবনাতেও সাহায্য করবে।

    কেন এই প্রস্তাব নিয়ে আমরা মাথা ঘামাচ্ছি

    প্রথমেই বলি কেন এই প্রস্তাব নিয়ে আমরা মাথা ঘামাচ্ছি। আমরা অনেকে যারা নারী আন্দোলন কর্মী, তারা মেয়েদের বিয়ের বয়স কম রাখার জন্য বা অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়ার জন্য ক্ষেপে উঠিনি। বরং ঠিক উল্টোটা। মেয়েরা এবং মেয়েদের আন্দোলনই গোটা দেশ জুড়ে নাবালিকা বিবাহ আটকানোর জন্য প্রত্যেক দিন লড়ে যাচ্ছে। আমরা ‘এবং আলাপ’-এর পক্ষ থেকে কিছু গ্রামে যে সব নারী সংগঠন গড়ে তোলায় সহায়তা করেছি, সেখানেও নাবালিকা বিবাহের বিরুদ্ধে মেয়েদের সামাজিক এবং আইনি প্রতিরোধ তৈরি করাই একটা প্রধান কর্মসূচি হিসেবে উঠে এসেছে।

    আমরা মূলত লিঙ্গ বৈষম্য নিয়ে কাজ করি এবং এই বিষয়টাকে আমরা কেবলমাত্র মেয়েদের সমস্যা হিসেবে দেখি না। তাই আমরা স্কুল-কলেজ-শহর-গ্রাম নানা জায়গায় নানান সময় নানা কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে ছেলেদের কাছেও পৌঁছেছি, এবং রোজ পৌঁছচ্ছি। কাজেই মেয়েদের বিয়ের বয়স বাড়িয়ে ছেলেদের বিয়ের বয়সের সমান করা হোক  – এর মধ্যে যদি লিঙ্গ সাম্যের চেষ্টা কেউ দেখতে পান, আমরা তার বিরোধী নই। আসলে আমরা কিছু অন্য কথা বলবার, দেখবার এবং দেখাবার চেষ্টা করছি। এই বিতর্কটিকে সামনে নিয়ে আসার পেছনে আমার দুটো মূল প্রশ্ন  আছে:

    ১. লকডাউনের সময় এই আইন পরিবর্তনের প্রস্তাব কেন?

    আমরা এখন করোনা অতিমারীর সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। এই সময়ে আমরা এও দেখছি যে বেশ কিছু আইনের প্রস্তাব রাতারাতি পেশ করা হচ্ছে এবং পাস করিয়ে নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি এই সময়ে আমরা এটাও দেখছি যে নাবালিকা বিবাহ খুব বাড়ছে। ১৪, ১৫, ১৬ বছর বয়সে বিয়ে দেওয়ার যে প্রবণতা অনেকটাই কমে গিয়েছিল সেগুলোও এই জুন-জুলাই-অগাস্টে আবার খুব বেড়ে গিয়েছে এবং আরো বাড়ছে। এখন লকডাউন উঠে গেলেও লোকের হাতে কাজ নেই, খাবার নেই, কাজেই এটা বন্ধ হবে না। বরং ক্রমশ বাড়বে। স্কুল খুলছে না, ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত, এই অবস্থায় এটা কমার কোনও কারণ নেই। কিন্তু এই বিপন্নতার মধ্যে কিশোরী মেয়েদের সহায়তার জন্য আমরা সরকারকে খুব একটা কিছু করতে দেখছি না। করা দূরস্থান, খুব একটা কিছু বলতেও দেখছি না কীভাবে নাবালিকা বিয়ের বিকল্প প্রচার ও অন্যান্য কর্মসূচি গ্রামে গ্রামে নেওয়া যায় তা নিয়ে। এই প্রসঙ্গে একটা খুব দুঃখজনক ঘটনার উল্লেখ করতে চাই।

    সুন্দরবনের বালি দ্বীপে আমাদের কাজের সূত্রে পরিচিত কিশোরী পূজাকে (নাম পরিবর্তিত) আজ থেকে আট-ন’ বছর আগে তার বাড়ির লোকেরা ইচ্ছার বিরুদ্ধে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেবার সঙ্গে সঙ্গেই বিয়ে দেওয়ার তোড়জোড় করছিল। সে বিয়েতে রাজি ছিল না এবং আরো পড়াশোনা করতে চেয়েছিল। আমাদের সংগঠন তাকে সাহায্য করতে পেরেছিল পড়াশোনা চালিয়ে যেতে। বর্ধমানে হোস্টেলে থেকে প্রথমে গ্র্যাজুয়েশন এবং তারপর বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়ে এমএ পাশ করে পূজা। এরপর গ্রামে ফিরে পূজা নিজের পছন্দে তারই এক সহপাঠীকে বিয়ে করে এবং গ্রামেই তারা দুজনে কাজ করছিল। লকডাউনের সময় আমরা শুনলাম পূজা সন্তানসম্ভবা। ওর এলাকায় এই লকডাউনে গর্ভকালীন স্বাস্থ্য পরিষেবা বলতে ভরসা আশা কর্মীরাই। নদী পেরিয়ে দু-একবার গোসাবা সরকারি হাসপাতালে গিয়ে চেক আপ করাতে পেরেছে এই ক-মাসে, ‘ছবি’ও তোলানো হয়েছে। যদিও সরকারি হাসপাতালের পাশ-করা ডাক্তারের দেখা সে কোনোবারেই পায় নি। তারপর কিছুদিন আগে ষষ্ঠীর সকালে প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে সে হাসপাতালে ভর্তি হয়। গোসাবা হাসপাতালে সেদিন কোনো ডাক্তার ছিল না। নার্সরাই তাকে দেখেছে। পরের দিন ডাক্তার আসবেন, শুনেছে। কিন্তু পরের দিন যখন প্রসবের সময় এগিয়ে এসেছে, সংকটের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তখনও কোনো ডাক্তার ছিল না। দ্বীপবাসী এই মেয়েটিকে শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত সংকটের মধ্যে আবার নদী পেরিয়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয় এবং সেখানে মৃত সন্তানের জন্ম দেয় পূজা। যাঁরা এই আইন পরিবর্তনের পক্ষে কথা বলছেন তাঁরাও তো এটাই চান যে পূজার মত মেয়েরা পড়াশোনা করুক, নিজের পায়ে দাঁড়াক এবং স্বাধীনভাবে বাঁচুক। তাহলে এই মেয়েটির নাবালিক-বিবাহ রুখে দেওয়ার ও নিজের পায়ে দাঁড়ানোর লড়াই কি এইজন্য যে পরিণত বয়সে সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় উপযুক্ত পরিষেবার অভাবে প্রত্যন্ত দ্বীপের একটি এমএ পাশ মেয়েকে মৃত সন্তানের জন্ম দিতে হবে? অথচ এই বিয়ের বদলের প্রস্তাব আনার পেছনে সরকারের ঘোষিত কারণ হলো দেশে শিশুমৃত্যু ও মাতৃ-মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা! পূজার মতো মেয়েদের কাছে এটা পরিহাস নয়?

    এটা একটা ঘটনা মাত্র। এইরকম ভয়াবহ দৈনন্দিন পরিস্থিতিতে হঠাৎ করে মেয়েদের বিয়ের বয়স সংক্রান্ত এই আইন আসে কীভাবে? হঠাৎ এই সময়ে মেয়েদের বিয়ের বয়স পেছিয়ে দেওয়াটা এত জরুরি হয়ে উঠল কেন? ১৮-র আইনই যেখানে মানা যাচ্ছে না বা হচ্ছে না, সেখানে ২১ দিয়ে কী হবে? করোনার ও লকডাউনের সময়ে এই আইনটা হঠাৎ কেন আনা হচ্ছে? — এটাই আমার প্রথম প্রশ্ন।

    ২. কাদের দাবিতে এই আইন হঠাৎ এত জরুরি হয়ে উঠল?

    এ পর্যন্ত আমাদের দেশে মেয়েদের সুরক্ষার জন্য যখনই কোনও আইন এসেছে, কোনওটাই কিন্তু ব্রিটিশ বা স্বাধীন ভারতের সরকার স্বত:প্রণোদিত হয়ে আনেনি। রুকমাবাঈয়ের যে ঘটনা বিখ্যাত, সেখানেও কিন্তু একজন বালিকা বধূ সাবালক হয়ে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন, মুষ্টিমেয় কয়েকজন সমাজ সংস্কারক তাঁর পাশে ছিলেন। তার ফলে ১৮৮০-র দশকে জল অনেকদূর গড়ানোর পর আমরা ১৮৯১-এ পেলাম সহবাসে সম্মতির বয়স নিয়ে আইন — ১২ বছরের কম বয়সী মেয়েদের সঙ্গে সহবাস করা আইনত অপরাধ। ১৯২৯ সালে ‘সারদা আইন’ হল, যখন প্রথম মেয়েদের বিয়ের বয়স আইনি ভাবে ১৪ হল। তার ৩ বছর আগে থেকে বেশ কয়েকটি সর্বভারতীয় নারী সংগঠন প্রচণ্ড লড়াই করে ‘সারদা আইন’কে বাস্তবায়িত করেছিলেন। স্বাধীন ভারতেও তাই। এই যে বিয়ের বয়স ১৮ হয়েছে, অ্যামেন্ডমেণ্ট হয়েছে, সব কিছুই কিন্তু আন্দোলনের ফলে।

    ২৫শে মার্চ ১৯৮০ । 'মথুরা রেপ কেস' পুনর্বিচারের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টের বাইরে 'ন্যাশনাল ফেডারেশন অফ ইণ্ডিয়ান উইমেন' -এর মেয়েরা

    অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ মেয়েরা এই দাবিগুলো তুলেছেন; নারী আন্দোলনের নেত্রীরা আর যাঁরা আইন নিয়ে কাজ করেন তাঁরা এই আন্দোলন গড়ে তুলেছেন; বহু প্রচেষ্টার পর সংসদে প্রস্তাবগুলো পেশ হয়েছে; তারপর দীর্ঘ প্রক্রিয়া ধরে আইন পাস হয়েছে। রাতারাতি সরকারের নিজের উৎসাহে কিন্তু কিছু হয়ে যায়নি।  তাহলে এখন এমন কী ঘটল! ভারতের কোনও রাজ্যে, নারী আন্দোলনের বহূলাংশ কি এই আইন চেয়ে আন্দোলন করছে? আমাদের তো জানা নেই! তাহলে হঠাৎ আগ বাড়িয়ে এই আইন কেন? হঠাৎ এই চিন্তাটা কোথা থেকে এল? এমনকী সাত আট বছর আগে নির্ভয়ার মৃত্যুর পর যে ভার্মা কমিশন হল, তার পর যে অ্যামেন্ডমেন্ট হল, সেটা গোটাটাই ছিল একটা বড় আন্দোলনের ফল। সারা দেশে মেয়েরা আন্দোলনে নেমেছিল, তাই ভর্মা কমিশন গঠন হয়েছিল, তাই শুনানি হয়েছিল এবং আন্দোলনের দাবি অনুযায়ী কিছু অ্যামেন্ডমেন্ট হয়েছিল, কিছু হয়নি। তাহলে হঠাৎ ২০২০ সালে কী হল যে আমাদের সরকার একদিকে লকডাউনের সময়ে হঠাৎ বেড়ে যাওয়া নাবালিকা বিয়ে নিয়ে কোনও কথা বলছে না, অথচ এই সময়ে মেয়েদের বিয়ের বয়স নিয়ে এত ব্যস্ত হয়ে পড়ল! সরকার স্বত:প্রণোদিত হয়ে জুন মাসে টাস্কফোর্স গঠন করেছে, যে আমরা আইন বদলাতে চাই, তোমরা মতামত দাও। তার মানে এটা পুরো উল্টো একটা প্রক্রিয়া — সরকার প্রথমে উদ্যোগ নিয়ে তারপর মতামত চাইছে। এই বদান্যতার কারণটা কী?

    আমাদের দেশের নানান অঞ্চলে ধর্মীয় বা জাতপাতের পবিত্রতা রক্ষার সমাজনীতিতে  আলাদা ধর্মের বা বর্ণের ছেলেমেয়েদের মধ্যে বিয়ে নিয়ে ‘খাপ’ খোলা তলোয়ার, ‘অনার কিলিং’, স্থানীয় রাজনৈতিক দল বা প্রশাসনের সাহায্যে বাপ মায়ের প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদেরও ‘ঘরে’ ফেরানোর ঘটনা নানান মদতে বেড়েই চলেছে।

    আমি মনে করি এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজাটা জরুরি। অনেক সময় আমরা আপাত সহজ একটা উত্তর পেয়ে বাড়তি প্রশ্নকে ফালতু ঝামেলা মনে করি। অনেক পরে বুঝি সেই প্রশ্নগুলো জরুরি ছিল, যখন দেরি হয়ে গিয়েছে। আমাদের মধ্যে অনেকেই বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে মনে করেন, আইন হলেই বা কী! আইন লাগু করে কে? বিয়ের বয়স নিয়ে বর্তমান আইনই বা কতদূর মানা হচ্ছে? নাবালিকা বিবাহ অনেক হয় আমরা জানি, বা পুলিশ আটকায় গুটি কয়েক। কিন্তু মনে রাখা জরুরি, অনেক আইন দরকার মত ব্যবহার করা যায়। এবং সেই ঘটনা ক্রমশ বেশি বেশি ঘটছে। এই আইন কিন্তু ২১ বছর পর্যন্ত কোনও বিয়েকে আইনি অপরাধ করে দেবে এবং অপরাধীদের জেলে পাঠানো যাবে। আমাদের দেশের নানান অঞ্চলে ধর্মীয় বা জাতপাতের পবিত্রতা রক্ষার সমাজনীতিতে  আলাদা ধর্মের বা বর্ণের ছেলেমেয়েদের মধ্যে বিয়ে নিয়ে ‘খাপ’ খোলা তলোয়ার, ‘অনার কিলিং’, স্থানীয় রাজনৈতিক দল বা প্রশাসনের সাহায্যে বাপ মায়ের প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদেরও ‘ঘরে’ ফেরানোর ঘটনা নানান মদতে বেড়েই চলেছে। যৌবন, প্রেম অনেক সময় সংস্কার, প্রতিষ্ঠান আর তাদের পেছনের অসম ক্ষমতার রাজনীতিকে আক্রমণ করে। ১৮ থেকে ২১-এর বাড়তি সময় কি পরিবারের জোর করে বিয়ে দেওয়া বন্ধের কারণে? নাকি বাড়ির অমতে সঙ্গী নির্বাচনের স্বাধীন সিদ্ধান্তকে অপরাধ বলে চিহ্নিত করার তাগিদে? আমার তো মনে হয় এই আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাওয়া আমাদের জন্য জরুরি।

     
     



    Tags
     


    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    You may use these HTML tags and attributes: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>

     



    তথ্য নীতি | Privacy policy

 
Website © and ® by Ebong Alap / এবং আলাপ, 2013-24 | PRIVACY POLICY
Web design & development: Pixel Poetics