সুন্দরবনের বালি দ্বীপে নারী দিবস পালনের সংক্ষিপ্ত সময়পঞ্জী
0 101আমরা চলেছি পায়ে পায়ে,
দিনের আলোর উদ্ভাসে
লক্ষ-কোটি হেঁসেলের অন্ধকারে
সহস্র ধূসর কলকারখানায়
যেন ছোঁয়া লেগেছে এক হঠাৎ বেরিয়ে আসা সূর্যের
আশ্চর্য ঔজ্জ্বল্যের,
মানুষ শুনছে আমাদের ডাক
রুটি আর গোলাপ, রুটি আর গোলাপ।
(আমেরিকান কবি জেমস ওপেনহাইমের কবিতা 'ব্রেড অ্যান্ড রোজেস' -এর প্রথম স্তবকের বঙ্গানুবাদ। অনুবাদ : শর্মিষ্ঠা দত্তগুপ্ত)
- ২০১১ সালের ৮ মার্চ ‘এবং আলাপ’ বালি পাঠাগারে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন করে। গোসাবার বালি দ্বীপে সেই প্রথম নারী দিবস পালিত হয়। এর দু-বছর আগে, অর্থাৎ ২০০৯ সাল থেকে ‘এবং আলাপ’ ওই অঞ্চলে দুটি স্কুলের শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী, তাদের অভিভাবিকা, ও অনান্য মানুষজন, বিশেষত মহিলাদের নিয়ে লিঙ্গসাম্য নিয়ে ও মেয়েদের প্রতি হিংসার বিরুদ্ধে বেশ কিছু সচেতনতা শিবির করে। ২০১১-এ ওখানে ১০০-১৫০ মেয়েদের নিয়ে প্রথম নারী দিবসের অনুষ্ঠান হয় ছোট্ট করে। সে বছরই জুন মাসে লিঙ্গ সমতার লক্ষ্যে স্থানীয় সংগঠন ‘সুন্দরবন বিজয়নগর দিশা’-র সূচনা হয়।
- ২০১২ সালে ৮ মার্চ উপলক্ষে ‘এবং আলাপ’ নাবালিকা বিবাহ নিয়ে স্থানীয় সমীক্ষা চালানোর জন্য দু-দিনের একটি প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করে প্রতিচী ট্রাস্ট-এর সহযোগিতায়। ‘সুন্দরবন বিজয়নগর দিশা’-র সদস্যরা এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বালি ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে নাবালিকা বিবাহ নিয়ে সমীক্ষা চালায়। ২০১২ সালের মে-জুন মাসে কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে এলাকার ঘরে-ঘরে গিয়ে দিশা সদস্যরা তথ্য সংগ্রহ করেন। ওই সমীক্ষার মাধ্যমে বালি দ্বীপে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে ধারাবাহিক প্রচারের কাজের সূচনা হয়।
- ২০১৩ সালের ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ‘এবং আলাপ’ ও ‘সুন্দরবন বিজয়নগর দিশা’ একটি বড় সভার আয়োজন করে। ‘বালি সাংস্কৃতিক মঞ্চ’ থেকে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মেয়েরা, স্বাস্থ্যকর্মী ও আইসিডিএস কর্মী মেয়েরা অনেকে বক্তব্য রাখেন। এলাকার কিছু ছাত্র-ছাত্রী একটি দেওয়াল-পত্রিকা তৈরি করে যেটি মঞ্চের পাশে প্রদর্শিত হয়। প্রায় ৪০০-৫০০ মানুষ সভায় অংশগ্রহণ করে এবং প্রত্যেকের হাতে ‘সুন্দরবন বিজয়নগর দিশা’-র সদস্যরা একটি করে লাল গোলাপ তুলে দেয়। গোলাপ এবং রুটির দাবিতে যেহেতু ১০০ বছর আগে ৮ই মার্চ কর্মরতা মেয়েরা পথ হেঁটেছিলেন, সেই দাবির স্মরণে বালির অনুষ্ঠানে সকলের হাতে গোলাপ দেওয়া হয়েছিল।
- ‘এবং আলাপ’ ও ‘সুন্দরবন বিজয়নগর দিশা’ ২০১৪ সালের ৮ মার্চ বালিতে বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ‘সুন্দরবন বিজয়নগর দিশা’-র সম্পাদিকা সেদিন ৮ই মার্চের ইতিহাস তুলে ধরেন সকলের সামনে। রুটি ও গোলাপের দাবিতে রচিত ইংরেজি গানটির বাংলা ভাষান্তর করে শোনান ‘এবং আলাপ’-এর সম্পাদিকা। উপস্থিত মেয়েরা নিজেরা ভাগ করে নেন তাঁদের জীবনের, বিশেষত কাজের জায়গার নানা অভিজ্ঞতা।
- ২০১৫ সালের ৮ মার্চ উপলক্ষে ‘এবং আলাপ’ ও ‘সুন্দরবন বিজয়নগর দিশা’ যৌথভাবে বয়ঃসন্ধি নিয়ে দু-দিনের একটি কর্মশালা আয়োজন করে। প্রথমদিন অংশগ্রহণ করেন দিশা এবং বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যরা। দ্বিতীয় দিনের কর্মশালা ছিল দুটি স্কুলের বয়ঃসন্ধির ছাত্রছাত্রীদের জন্য। এই কর্মশালা পরিচালনা করেন মন ফাউন্ডেশনের তরফে মনোবিদ মোহিত রণদীপ।
- ২০১৬ সালে ৮ মার্চ উপলক্ষে বালি বেসিক জুনিয়র স্কুলে ‘সুন্দরবন বিজয়নগর দিশা’ ও ‘এবং আলাপ’ যৌথভাবে একটি বিতর্কসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। দ্বীপের চারটি স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা বিতর্কে অংশগ্রহণ করে। বিতর্কের বিষয় ছিল ‘গ্রামের মেয়েরা ঘরে ও বাইরে ছেলেদের চেয়ে অনেক বেশি কাজ করে’। পক্ষে ও বিপক্ষে ছাত্রছাত্রীরা বক্তব্য রাখবার পর, তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে একটি খোলামেলা আলোচনা হয় উদ্যোক্তাদের তরফে। বিশেষ আকর্ষণ ছিল শান্তিনিকেতনের তিনজন ছাত্রীর গান এবং ‘সুন্দরবন বিজয়নগর দিশা’-র কয়েকজনের উপস্থাপনায় ‘চিত্রাঙ্গদা’ নৃত্যনাট্যের একটি অংশ।
- ‘এবং আলাপ’ ও ‘সুন্দরবন বিজয়নগর দিশা’ ২০১৭ সালের মার্চ মাসে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করে বালি বেসিক জুনিয়র স্কুলে। বালি দ্বীপের চারটি স্কুলের ছাত্রছাত্রী, স্বনির্ভর গোষ্ঠী, সংঘ এবং উপসংঘের নেত্রীরা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। ছাত্রছাত্রী এবং বড়দের জন্য বিভিন্ন মজার খেলার আয়োজন করা হয় এবং তার সাহায্যে খেলাচ্ছলে সামাজিক লিঙ্গনির্মাণের চিরাচরিত প্রথা ভাঙার চেষ্টা করা হয়।
- ‘এবং আলাপ’ ও ‘সুন্দরবন বিজয়নগর দিশা’ ২০১৮-তে নারী দিবস পালন করতে চলেছে আগামী ১৬ই মার্চ। এই উপলক্ষে আমরা ‘লিঙ্গসাম্য সম্মান’-এ ভূষিত করব পাঁচজন নিরলস লিঙ্গসাম্য সৈনিককে যাঁরা প্রান্তিক মেয়েদের মধ্যে কাজ করেন। এই সম্মান ২০১৮ থেকেই চালু করা হলো। ১৬ মার্চ-এর অনুষ্ঠান ও লিঙ্গসাম্য সৈনিকদের বিষয় বিশদে জানতে চোখ রাখুন আমাদের ২৩ মার্চ-এর ব্লগে।
Tagsadolescence age of consent age of marriage caa child marriage corona and nursing covid19 Covid impacts on education domestic violence early marriage education during lockdown foremothers gender discrimination gender identity gender in school honour killing human rights intercommunity marriage interfaith marriage lockdown lockdown and economy lockdown and school education lockdown in india lockdown in school lockdown in schools love jihad marriage and legitimacy memoir of a nurse misogyny nrc nurse in bengal nursing nursing and gender discrimination nursing in bengal nursing in india online class online classes during lockdown online education right to choose partner school education during lockdown social taboo toxic masculinity transgender Women womens rights
Leave a Reply