06-02-2024 23:41:56 pm
Link: https://ebongalap.org/a-dalit-account-meena
গোওথমা মীনা একা নন। অনেক দলিত মহিলার তাঁর মত ছোটবেলা, শিক্ষা এবং কর্মজীবন কেটেছে। হিংসা, হেনস্থা, বৈষম্য সবকিছুর বিরুদ্ধে প্রতিমুহুর্তে লড়াই করতে হয়েছে তাঁকে। কখনও জাতপাত, কখনও লিঙ্গ, কখনও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি – কোনও না কোনও অজুহাতে ভারতীয় সমাজে প্রান্তিক, সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর মহিলারা যৌন ও অন্যান্য সবরকম হেনস্থার শিকার হয়েছেন – শুধু পুরুষের থেকে নয়, উচ্চবর্ণের মহিলাদের থেকেও। দলিত ও সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর এমন মহিলাদের কথা, তাদের প্রতিদিনের বাস্তব তুলে আনতে চেয়েছে ‘দ্য ব্লু ক্লাব’। দলিত মহিলাদের কন্ঠস্বর ও দলিত অধিকার আন্দোলনকে সামনে নিয়ে আসা এবং মহিলাদের, বিশেষ করে প্রান্তিক গোষ্ঠীর মহিলাদের চলচ্চিত্রনির্মাণ ও তার যন্ত্র-প্রযুক্তিগত খুঁটিনাটির প্রশিক্ষণ দিতেই সাংবাদিক ও ফিল্মমেকার প্রিয়দর্শিনী তৈরি করেছে দ্য ব্লু ক্লাব । ব্লু ক্লাব এর ভিডিও এবং শর্ট ফিল্মগুলির মধ্যে দিয়ে উঠে এসেছে এইমুহুর্তে ভারতে দলিত মহিলাদের বাস্তব পরিস্থিতি এবং দলিত আন্দোলনের টুকরোচিত্র।
ব্লু ক্লাবের ‘আনটাচেবল নোটস’ সিরিজের একটি ভিডিও গোওথমা মীনার সাক্ষাৎকার লাইফ ইন এ স্লাম অ্যান্ড #মিটু মোমেণ্টস। এইমুহুর্তে কেন্দ্রীয় সরকারের শিল্পবাণিজ্য মন্ত্রকের একজন কর্মী মীনা সারা দেশে ও বিশ্বে জাতিবিদ্বেষবিরোধী ও দলিত অধিকার আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত। তাঁর মত এমন অনেক দলিত মহিলার অধিকারের পাশে দাঁড়াতে ২০০৯ এর সেপ্টেম্বরে মীনা তৈরি করেন অল ইন্ডিয়া ইণ্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস এসসি/এসটি এমপ্লয়ি এসোসিয়েশন। তাঁর ছোটবেলায় বস্তিজীবনে দৈনন্দিনতার লড়াই এবং পরবর্তী জীবনে প্রতিমুহুর্তের হেনস্থার মুখোমুখি হয়ে কীভাবে পরিস্থিতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালেন মীনা, সেই গল্পই বলেছেন এই সাক্ষাৎকারে। পাশাপাশি, #মিটু আন্দোলনে দলিত মহিলাদের অবস্থান ও তাঁদের কন্ঠস্বর ফুটিয়ে তোলে তাঁর এই জবানবন্দী। তাই মীনা একা নন; তাঁর গল্প ভারতের অনেক দলিত মেয়ের বাস্তব। মীনার লড়াই তাদের সাহস আর প্রেরণা হয়ে উঠতে পারে। ভিডিওটির ইংরেজি সাবটাইটেল-এর বাংলা তর্জমায় মীনার বয়ানে তাঁর জীবন ও লড়াইয়ের গল্প ‘এখন আলাপ’-এর পাতায়।
লাইফ ইন এ স্লাম অ্যান্ড #মিটু মোমেণ্টস : সাক্ষাৎকার
পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে পরিবারে আমি সবার ছোট। আমার বাবা যখন মারা যান, আমরা সবাই খুব ছোট তখনও। কিন্তু আমাদের মা চিরকালই অসমসাহসী মানুষ। সবকিছু সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার এমন ক্ষমতা আমি আর দেখিনি। মায়ের সেভাবে প্রথাগত শিক্ষা নেই, এমনকি বাইরের দুনিয়া সম্পর্কে সেরকম ধারণাও নেই; তবু কী অসীম দক্ষতায় তিনি সবকিছু চালাতেন! আমার জীবনের প্রথম আদর্শ ছিলেন আমার মা, এখনও তাই আছেন।
পাঁচটা ছোট ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে এই প্রকান্ড শহরে একা একজন মহিলা। কিছুই জানেন না কীভাবে কী করতে হয়। কিন্তু হাল ছাড়েননি কোনদিন। রোজ ঘুম থেকে উঠতেন ভোর চারটেয়। তারপর গোবর সংগ্রহ করতে যেতেন এলাকার গোয়াল থেকে। ছ’টা পর্যন্ত সেই গোবরে ঘুঁটে দিতেন। তারপর আমাকে ঘুম থেকে ডাকতেন। মনে আছে, তখন আমার ব্রেকফাস্ট ছিল দুটো ছোট ছোট লেরো বিস্কুট আর এক গ্লাস কালো কফি। তারপর আমাকে পাঠাতেন আরও কিছুটা গোবর নিয়ে আসার জন্য। একটা বড় অ্যালুমিনিয়ামের গামলায় আমাকে গোবর ভরে আনতে হত। কিন্তু গামলাটার জায়গায় জায়গায় অসংখ্য ফুটো। গামলা মাথায় নিয়ে ফেরার পথে সেই ফুটো দিয়ে গোবর পড়ে আমার গোটা মুখে লেগে যেত। ঐ অবস্থায় আটটা অবদি মায়ের সাথে ঘুঁটে দিতাম আমি। এত দুর্গন্ধ বেরোত যে স্কুলে যাওয়ার আগে ভাল করে স্নান করতে ইচ্ছে হত। কিন্তু সমস্যা হল মা কখনই সাবান দিতে চাইতেন না। আসলে, ছোট্ট সাবানের টুকরোটার দাম তখন ছিল ৩০ পয়সা ক’রে। মায়ের হিসেব ছিল সংসারের জন্য কিছুটা পয়সা বাঁচাতে হলে সপ্তাহে একবার বা খুব বেশি হলে দু’বার সাবান ব্যবহার করা যাবে। এখন ভাবলে মনে হয়, কী দক্ষতার সঙ্গে সংসারখরচের হিসেব রাখতেন মা!
যাইহোক তারপর আমি কোনরকমে শুধু জলের ঝাপটা দিয়েই মুখ পরিষ্কার করে নিতাম। একটু গন্ধের রেশ থেকে যেত, কিন্তু উপায় কী! তারপর বাড়ির জামা বদলে স্কুলের ইউনিফর্ম পরে নিতাম এবং বেরিয়ে পড়তাম স্কুলের পথে।
ছেলেমেয়ে স্কুলে যাওয়ার সময় তাদের মায়েরা সাধারণত চিন্তা করে ঠিকমত পেন, খাতাবই এইসব নিয়েছে কি না। কিন্তু আমার মায়ের প্রধান চিন্তা ছিল আমি আমার অ্যালুমিনিয়ামের থালাটা নিতে ভুলে গেলাম কি না! আজকাল এই থালার ব্যাপারটা আর নেই, কিন্তু আমাদের জীবনে এই থালা ছিল ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ একটা জিনিস। তার দাম ছিল তখনকার দিনে ছ’টাকার আশেপাশে। আমার বইপত্রের সঙ্গে স্কুলের ব্যাগে এই থালাটা ঢোকাতে কোনদিন ভুলতেন না মা। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী আমাদের স্কুলে দুপুরে মিড ডে মিল দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু একটা বাচ্চাকে একবারই মাত্র খাবার দেওয়া হবে, এটাই ছিল নিয়ম। ভারি সমস্যা! আমাকে তো মায়ের জন্যও কিছুটা নিয়ে যেতে হবে। আমি যেটা করতাম, প্রথমে নিজের জন্য থালায় খাবারটা নিতাম। হলুদ কারির ওপরে ছোট ছোট কালো পোকা ভাসত, সেগুলো তুলে তুলে ফেলে দিতাম, তারপর সবটা খেয়ে নিতাম ঝটপট। আমার ক্ষুধার্ত জিভে সেই কারির স্বাদ অমৃতের মত ঠেকত।
নিজের ভাগটা শেষ করে থালা ধুয়ে নেবার উপায় ছিল না। কারণ থালা জলে ভিজে থাকলে সন্দেহ হতে পারে আমি প্রথমবারের খাবার খেয়ে নিয়ে থালা ধুয়ে এসেছি। তাই একটা অন্য উপায় বের করেছিলাম আমি। খাওয়া হয়ে যাওয়ার পর, চারপাশটা একবার দেখে নিয়ে জিভ দিয়ে নিজের এঁটো থালাটা চেটে পরিষ্কার করে ফেলতাম। তারপর চুপচাপ ইনচার্জের সামনে থালা হাতে দাঁড়িয়ে পড়তাম। কখনও ওনার সন্দেহ হত যে আমাকে আগেও দিয়েছেন, কিন্তু আমিও এমন ভাব করতাম যেন এটাই আমার প্রথম বার। যেই না উনি খাবারটা ঢেলে দিতেন, আমি সাবধানে সেটা ব্যাগে ভরে নিয়ে মাথায় চাপিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটা লাগাতাম।
কিন্তু এতকিছু সত্বেও মা সবসময় খেয়াল রাখতেন আমাদের মর্যাদা বা আত্মসম্মান যেন না খোয়ায়। তার জন্য যদি আমাদের হতদরিদ্র দশা হয়, বা রাস্তায় রাস্তায় ফেলে দেওয়া জিনিস কুড়িয়ে বাঁচতে হয়, তাহলেও। মায়ের এই জেদটাকেই সম্মান করি আমি।
আমাদের স্কুলে পাঠিয়ে মা চলে যেতেন আবর্জনা কুড়োতে। ছেঁড়া কাগজ, বোতল, লোহা-লক্কড় এইসব কুড়িয়ে কাছেই একটা রিসাইক্লিং ফেসিলিটিতে বিক্রি করতেন। সকালেই মা বলে রাখতেন স্কুল থেকে বেরিয়ে কোথায় মায়ের সাথে দেখা করতে হবে। আট বছর বয়স থেকে আমি মায়ের সাথে আবর্জনা কুড়োতে যেতাম। তখনই জীবনের সবচেয়ে ভয়ানক কয়েকটা অভিজ্ঞতা হয় আমার। বাড়ির কাছেই এক কসাইখানা থেকে আমি বাতিল হাড়গোড় নিয়ে আসতে যেতাম। আমি এই কাজটা বেছেছিলাম তার কারণ আধাদিনেই আমি প্রায় ১০ কেজির কাছাকাছি হাড় জোগাড় করতে পারতাম। ৮০-র দশকে ১ কিলো হাড়ের দাম ছিল ৫০ পয়সা। অর্থাৎ আধবেলা কাজ করলে অন্যান্য আবর্জনা ছাড়াও আমি শুধু হাড়ের বোঝা থেকেই ৫ টাকা এমনকি একটু বেশি খাটলে ১০ টাকাও পেতে পারতাম। তখন আমার আট বছর বয়স। তখনই প্রথম আমার মনে হয় টাকা রোজগার করাটা এমন কিছু বড় ব্যাপার নয়।
এরকম একদিন, ওখানকার কসাই ভূপতি আমাকে বলে ওর দোকানের ভেতরে আমার জন্য কিছু হাড় জড়ো করে রেখেছে। আমি ভেতরে গিয়ে সেগুলো নিয়ে আসতে পারি। আমি তো শুনে খুবই আনন্দিত, ওকে ধন্যবাদ দিয়ে দোকানে ঢুকে গেলাম। আমার ঝোলাটা মাটিতে নামিয়ে হাড়গুলো তুলছি নিচু হয়ে, এমন সময়ে পেছন থেকে এসে আমায় জড়িয়ে ধরল ভূপতি। ওই বয়সে আমি বুঝতে পারিনি ঠিক কী হচ্ছে আমার সঙ্গে। ভূপতি আমাকে জড়িয়ে আমার গায়ে গা ঘষতে শুরু করল। আমার কেন জানিনা মনে হল খারাপ কিছু একটা হচ্ছে। আমি এক ঝটকায় ওকে সরিয়ে দিয়ে বললাম, “আমার মা দোকানের বাইরেই জিনিসপত্র কুড়োচ্ছে। একবার যদি দেখে তোমাকে আর আস্ত রাখবে না। দাঁড়াও, আমি চট করে দেখে আসি মা আসছে কি না।” ভূপতি মেনে নিল আমার কথা। বলল, “তাই নাকি! বেশ বেশ, তাহলে দেখে এস তো, ভূপতিদাদা তোমাকে দু’টাকা দেবে এখানে এলেই”। অর্থাৎ, একদিকে ও নিজেকে আমার দাদা বলছে কিন্তু আসলে ওর উদ্দেশ্য আমাকে ধর্ষণ করা। আমি আর কথা না বাড়িয়ে ঝোলাটা তুলে নিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে এলাম দোকান থেকে। রাস্তায় বেরিয়েই চিৎকার করে বললাম, আর একবার এরকম হলে আমি ওকে খুন করে ফেলব। এসব পরিস্থতি থেকেই আমি একটু একটু করে শিখেছি এরকম পুরুষদের থেকে নিজেকে কীভাবে বাঁচাতে হয়। আমি জানতাম, আমাকে কেউ বাঁচাতে আসবে না। আমার সুরক্ষার দায়িত্ব আমাকেই নিতে হবে। যৌন হেনস্থার প্রতিরোধ করা সম্ভব তখনই যখন আমরা নিজেরা প্রথমেই তার প্রতিবাদ করার সিদ্ধান্ত নিই।
মাথায় আবর্জনার বোঝা নিয়ে আমি যখন শুভান বাই -এর এর দোকানে সেগুলো বেচতে যেতাম, বোঝার ভারে পুরো রাস্তাটা টলমল করে এগোতে হত। ভাঙা কাচ, লোহার টুকরো থেকে খোঁচা লেগে মাথায় ঘা হয়ে যেত, এখনও সেই দাগ আছে। দোকানে ঢুকতেই ওদের বাড়ি থেকে ভেসে আসত বিরিয়ানির সুগন্ধ। সেই গন্ধ নাকে আসা মাত্র আমি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পড়তাম। তখন কিন্তু একবারও টাল না খেয়ে সোজা হেঁটে গিয়ে বোঝা নামিয়ে রাখতাম। এক দাদু ছিল ওই দোকানের কর্মচারী, সে আমার জন্য নিজের ভাগ থেকে একটু বিরিয়ানি বাঁচিয়ে রাখত রোজ। তার পেট ভরুক আর না ভরুক, আমাকে সে বিরিয়ানি খাওয়াত। আমি বই পড়তে ভালবাসতাম বলেই মনে হয় ওনার এত মমতা ছিল আমার ওপর। আমি আবর্জনা কুড়োতে যেতাম যখন, তখনও বগলে একটা বই থাকত সবসময়। সেখান থেকে মাঝে মাঝে ওই দাদুকে গল্প পড়ে শোনাতাম। উনিও আমায় আরও পড়াশোনা করার জন্য উৎসাহ দিতেন।
আজ আমি ভাবি, আমি এখন যে অবস্থায় আছি, আমার আবর্জনা কুড়ানি বন্ধুদের মধ্যে কতজন সেখানে পৌঁছতে পেরেছে? এটা আজও একটা বড় প্রশ্ন। কে দায়ী এর জন্য? ঐ ছোট ছোট ছেলেমেয়েগুলো, যারা আবর্জনা কুড়িয়ে পেট চালায়? প্রশাসনের দায়িত্ব সমস্ত শিশুকে তাদের মৌলিক অধিকার দেওয়ার ব্যবস্থা করা। কিন্তু সেটা সরকার করেনি। যদি আট বছর বয়সে আমি আধবেলা কাজ করে ২০ টাকা রোজগার করতে পারি, তাহলে নিশ্চিতভাবেই দায়টা আমার নয়। আমাদের শক্তি আছে, সামর্থ্যও আছে। কিন্তু সরকার আমাদের ব্যবহার করেছে, ক্রমাগত আমাদের সুযোগ নিয়েছে। তাই আমার মনে হয়েছিল আমাদের মত লোকেদের প্রশাসনে থাকাটা জরুরি। আমি সবরকম কম্পিটিটিভ পরীক্ষায় পাশ করি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে চাকরি পাই। শিল্পবাণিজ্য মন্ত্রক, যেখানে আমি কাজ করি, সেটা ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেণ্টারের সঙ্গে যুক্ত, বিরাট জায়গা। কিন্তু সেখানে একমাত্র আমি এসসি/এসটি সংরক্ষিত আসনে ঢুকতে পেরেছিলাম। আসলে, মনুস্মৃতি যদি জাতিবৈষম্যের ধারণার কাঁচামাল হয়, তাহলে আমাদের দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলো হল তার কারখানা। যুগের হাওয়া অনুযায়ী এই জায়গাগুলোতে জাত ব্যবস্থার ধাঁচাটা বদলে নেওয়া হতে থাকে। আমি অবাক হয়ে গেছিলাম এসব দেখে। এতদিন ভাবতাম আমার পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতে পারলেই যথেষ্ট। কিন্তু এখন ভাবি আমার কমিউনিটির প্রতিটা লোককে তার অধিকার বুঝে নেবার অবস্থায় নিয়ে যেতে হবে, যেরকম আমি এসেছি।
কিন্তু হা হতোস্মি! আমি যে মহিলা! তার ওপরে ‘শিডিউলড কাস্ট’। অফিসের পরিবেশে বেঁচে থাকাটাই কঠিন হয়ে পড়ে আমার কাছে। আর এরকম জায়গায় দলিত পরিচারিকাদের অবস্থাটা তো আরোই দুরূহ। অফিস চত্বরে এই জাত, লিঙ্গের ভিত্তিতে বৈষম্য থেকে বেরোবার পথ ভাবতে শুরু করি। তখনই বাবাসাহেবের ইউনিয়ন গঠনের উপায়টার কথা মাথায় আসে। ২০০৯ এর ৪ঠা সেপ্টেম্বর আমি অল ইন্ডিয়া ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস এসসি/এসটি এমপ্লয়ি এসোসিয়েশন তৈরি করি। দিল্লী, কলকাতা, মুম্বই, আমেদাবাদ বিভিন্ন শহরে আমাদের সংস্থার শাখাও তৈরি হয়েছে। আমাদের উদ্যোগে অন্তত ৬০ জন দলিত মানুষের চাকরির ব্যবস্থা হয়েছে।
সারা ভারতে কর্মী সংগঠনের ইতিহাসে আমি প্রথম মহিলা প্রেসিডেণ্ট। আমি চেয়েছিলাম আমার মত এরকম আরও দলিত মহিলাদের খুঁজে বের করতে। আমি তাদের কাছে গিয়ে তাদেরকে বোঝাতে চেষ্টা করেছি, তাদের সাথে কথা বলেছি। আমার মনে হয় এবার আমাদের দলিতদের আন্দোলন শুরু করতে হবে হাতে নাতে ফল পাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে। রাস্তাঘাটে মারামারি বা এইরকম জিনিসে মন না দিয়ে একরোখা হয়ে অধিকার আদায় করতে হবে। জীবনের শেষ অবদি এই লড়াইটাই লড়ে যেতে চাই আমি।
Link: https://ebongalap.org/a-dalit-account-meena