12-07-2024 17:16:10 pm
Link: https://ebongalap.org/adolescence-students-of-the-sunderbans
সুন্দরবনের বালি দ্বীপে বিজয়নগর আদর্শ বিদ্যামন্দির। গ্রামের স্কুল। দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চল। মূলত হিন্দু অধ্যুষিত জনবসতি৷ তফশিলি জাতি, উপজাতি ছাড়াও রয়েছে অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়৷ স্কুলে যোগ দেওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই প্রধান শিক্ষক লক্ষ্য করেন ক্লাস এইট থেকেই ছাত্রীসংখ্যা হু-হু করে কমে যাচ্ছে৷ মুসলিম মেয়েদের তো ক্লাস সিক্স-সেভেনের পর থেকেই প্রায় দেখা যায় না। শুধুমাত্র মুসলমান বা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রেই নয়, শিক্ষিত বিত্তবান পরিবারেও মেয়েদের ক্ষেত্রে এই একই প্রবণতা৷ এরা যাচ্ছে কোথায়? এই ছাত্রীরা? মেয়েরা?
খোঁজ নিয়ে জানা যায়— তাদের প্রায় সকলেরই বিয়ে হ’য়ে যাচ্ছে তের, চৌদ্দ, পনের বছর বয়সে৷ কিন্তু সচেতনতা প্রসারের মাধ্যমে নাবালিকা বিয়ের কারণে ছাত্রীসংখ্যা কমে যাওয়াটা কিছুটা হলেও ঠেকানো যায়। স্কুলে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে, সহপাঠ্যক্রমিক কার্যাবলীতে জোর দিয়ে, ক্লাসে পড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে জীবনে শিক্ষার মূল্য, ভবিষ্যতে নিজে কিছু করা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ছোট ছোট আলোচনায় ধীরে ধীরে পড়াশুনার প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে ছাত্র ও ছাত্রী উভয় ড্রপ-আউটই কমতে পারে৷ এছাড়া বাড়িতে গিয়ে কথাবার্তা চালিয়ে, আশেপাশের গ্রামে সভা-সমিতির বক্তৃতায় মেয়েদের শিক্ষা কতটা জরুরি সেই নিয়ে কথা বলে মেয়েদের পড়ানোর বিষয়ে মানসিকতার কিছুটা পরিবর্তন ঘটেও। এইভাবেই এই স্কুলেও নাইন-টেনে পড়াশুনা ক’রে মাধ্যমিক ছাত্রী-পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ধীর গতিতে হলেও বেড়েছে৷ আসলে, সমস্যাটা শুধুমাত্র নাবালিকা বিয়ের নয়।
দীর্ঘ প্রচেষ্টায় এই স্কুল মাধ্যমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে উন্নীত হয়েছে এবং ছাত্রীসংখ্যা কয়েক বছরে কিছুটা হলেও বেড়েছে। কিন্তু ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য সমান উপযুক্ত পরিবেশ ও পরিকাঠামো প্রয়োজন মতো তৈরি হয়নি৷ ছাত্রীদের জন্য সমানভাবে শিক্ষার পরিবেশ ও সামাজিক অবস্থান তৈরি ক’রে দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা এসেছে নানা দিক থেকে।
অন্যতম বাধা এক ধরনের সংকীর্ণ, অনুদার, রক্ষণশীল মানসিকতার ধারাবাহিক প্রকাশ৷ স্কুল পরিসরে শিক্ষক-শিক্ষিকা, ম্যানেজিং কমিটির ব্যক্তিবর্গ ও সংশ্লিষ্ট অভিভাবকদের মধ্যে এই মানসিকতা একদিনের নয়৷ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা একটা প্রবণতা; এবং এই সীমাবদ্ধ মানসিকতাই লিঙ্গসাম্যের এক বড় বাধা৷ কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্রের উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে।
স্কুলে ছাত্রীদের জন্য নির্দিষ্ট শৌচালয় থাকলেও তা ব্যবহার করার সঠিক পদ্ধতি তাদের জানানোর প্রয়োজন রয়েছে৷ কারণ গ্রামের অনেক বাড়িতেই রয়েছে খাটা পায়খানা বা বন-বাদাড়ের ভরসা। তাছাড়া শৌচালয়ে জলের ব্যবহারের ক্ষেত্রে কমনরুম থেকে বালতি নিয়ে পাশের খাল বা একটু দূরের পুকুর থেকে জল আনতে যাওয়াটা ছাত্রীদের লজ্জাবোধের কারণ হয়ে ওঠে৷ প্রধান শিক্ষক ভাবেন মেয়েদের সাথে কথা বলা প্রয়োজন - ক্লাস সেভেন থেকে টুয়েলভ-এর ছাত্রীদের নিয়ে আলোচনায় বসেন৷ জৈবিক প্রক্রিয়াকে সহজ ক’রে, তাতে ছেলেমেয়েদের অভ্যস্ত করে তোলার জন্য ক্লাসে ‘টয়লেট’, ‘বাথরুম’, ‘ইউরিন্যাল’, ‘ল্যাট্রিন’ প্রভৃতি ইংরেজি শব্দের বদলে বাংলায় ‘প্রস্রাব/পেচ্ছাব’, ‘পায়খানা’—শব্দগুলি ব্যবহার করা শুরু করেন। প্রাথমিক আড়ষ্টতা কেটে যাওয়ার পর বিষয়টাতে সহজ হ’য়ে সকলে নিয়মমত কাজ করতে সাহস পায় এবং সমস্যার সুরাহা হয় অনেকটাই৷ কিন্তু তৈরি হয় অন্য সমস্যা। সহকর্মীদের কেউ কেউ বলেন এই শব্দগুলো ক্লাসে ব্যবহার করা মেয়েদের পক্ষে অশোভন, এমনকী ছাত্রীদের সাথে এসব বিষয়ে খোলাখুলি আলোচনা নিয়ে শুরু হ’য়ে যায় কিছু শিক্ষক-শিক্ষিকার হাসাহাসি, কানাকানি, ভিন্ন ইঙ্গিত৷
এই সমস্যা আরও বাড়ে ছাত্রীদের মাসিক বা মেন্সট্রুয়েশন প্রসঙ্গে নানা সমস্যায় প্রধান শিক্ষকের সরাসরি হস্তক্ষেপে। এক ছাত্রী মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী৷ হোস্টেলে রয়েছে৷ তার রুমমেট হেডস্যারকে জানায় মেয়েটি ছটফট করছে যন্ত্রণায়৷ প্রথমে লজ্জায় বলতে না চাইলেও কয়েকজন বন্ধুর সাহায্যে জানা যায় সে মাসিকের সময় খুব অসুস্থ হ’য়ে পড়ে, প্রচুর ব্লিডিং হয়৷ বোঝা যায় যে এবিষয়ে বাড়িতে মা-কে বলেও কোন চিকিৎসামূলক সুরাহা হয়নি কারণ যৌথ পরিবারের পুরুষ অভিভাবকরা এটাতে গুরুত্বই দেয়নি৷ প্রধান শিক্ষক মেয়েটির সাথে সরাসরি সহজভাবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা ক’রে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন৷ কিন্তু একজন পুরুষ শিক্ষকের এভাবে ছাত্রীদের সাথে ‘গোপন’(?) বিষয়ে কথা বলা - বিকৃত প্রচারে ছড়িয়ে দেওয়া হয় কিছু ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের মধ্যে৷ ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয় একটা স্ক্যান্ডাল৷
একইভাবে বাধা আসে মেয়েদের খেলাধূলা, নাচগান ও বাইরে যাতায়াতের প্রসঙ্গেও। হোস্টেলের ও অন্যান্য ছাত্রীদের জন্য আউটডোর গেমস-এ স্বাধীনভাবে মেয়েদের মাঠে ফুটবল ও হ্যাণ্ডবল খেলার ব্যবস্থা করতে গিয়ে সমালোচনা ও অনুৎসাহ দুটোই দেখা যায়। কিছুদিন চলার পর মেয়েদের অংশগ্রহণ কমতে কমতে একসময় খেলা বন্ধ হ’য়ে যায়৷ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের ক্ষেত্রেও ছেলেমেয়েদের একসাথে নাটকে অংশগ্রহণ, মেয়েদের জন্য স্কুলের পর রিহার্সালে থাকাটাও বাধা হয়ে দাঁড়ায়৷
বয়ঃসন্ধির ছেলেমেয়েদের ঘিরেও বিভিন্ন বিরূপ পরিস্থিতি তৈরি হয় এই লিঙ্গবৈষম্যমূলক সংকীর্ণ মানসিকতা থেকেই। কো-এড স্কুল৷ বয়ঃসন্ধির সময়ে ছেলে ও মেয়ে উভয়েরই শারীরিক পরিবর্তন ঘটে৷ তাদের মধ্যে এসময় যেসব চাহিদা সৃষ্টি হয় তার মধ্যে বদলাতে থাকা শরীর, যৌন কৌতূহল ও নিজেকে প্রকাশ করার ইচ্ছা খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ এসব কারণে স্বাভাবিকভাবেই স্কুলে ও ক্লাসে নানা সমস্যা দেখা যেতে পারে৷ যেমন নবম শ্রেণির এক ছাত্রীর একটি ঘটনা৷ হঠাৎ বেশ কিছুদিন সে স্কুলে আসছে না কেন তার খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেল— বয়সের তুলনায় বাড়ন্ত শরীরের মেয়েটি চেহারার কারণে আলাদাভাবে চোখে প’ড়ে যায় স্কুলে, ক্লাসে, রাস্তাঘাটে চলাচলে৷ সাধারণ ফ্রক পরা চেহারায় তাকে যেন বেমানান লাগে, ক্লাসের অন্যান্যরা হাসাহাসি করে তাকে নিয়ে৷ ইলেভন-টুয়েলভ্-এর ছেলেরা কু-ইঙ্গিত দেয়৷ এমনকী কোন কোন শিক্ষক-শিক্ষিকাও চিকিৎসা করানোর কথা বলেন, কোনও অসুস্থতা না থাকা সত্বেও! মেয়েটি লজ্জায় নিজেই একসময় স্কুলে আসা বন্ধ ক’রে দেয়, পড়া ছেড়ে দেয়৷ প্রধান শিক্ষক তার মা-বাবাকে ডেকে বোঝান ও স্কুলে মেয়েটির শাড়ী পরে আসার ব্যবস্থা করেন৷ যেদিন সে আবার স্কুলে আসে, ঐদিন প্রার্থনা সভার শেষে প্রধান শিক্ষক অন্যান্য ঘোষণা-র পাশাপাশি শারীরিক গঠন যে সকলের ক্ষেত্রে এক নয় এবং সৃষ্টির নিয়মে তা বিভিন্ন সময়ে বদলাতে পারে তা ছাত্রছাত্রীদের বুঝিয়ে বলেন৷ নবম শ্রেণির ওই ছাত্রী ক্রমশ লজ্জা-দ্বিধা সরিয়ে স্বাভাবিকভাবে শাড়ী পরে ক্লাসে আসতে শুরু করে।
শুধু মেয়েদের ক্ষেত্রে নয়, বয়ঃসন্ধির ছেলেদের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হয়। এই বয়সের ছাত্রদের রাস্তাঘাটে মেয়েদের ‘টিজ’ করা, ক্লাসে মেয়েদের শরীরের প্রতি বিভিন্ন ইঙ্গিত করা, যৌনক্রয়ার প্রতি কৌতুহলবশত সেই সংক্রান্ত নানান অঙ্গভঙ্গী করার কথা কানে আসে প্রধান শিক্ষকের। হয় শাস্তি দেওয়া নয়ত ‘তুচ্ছ’ ব্যাপার বলে এসব ঘটনা উড়িয়ে দেওয়াটাই রেওয়াজ। আর তার পিছনেও আছে ঐ একই মানসিকতা।
কিন্তু তার বদলে যদি বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা করা যায়? জীববিজ্ঞান, শরীরতত্ত্ব, প্রাণীর জনন ইত্যাদি সহজভাবে বুঝিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে সমস্যার অনেকটাই সমাধান করা সম্ভব। যেমন, ক্লাস এইটের একটি ঘটনা। ক্লাস চলাকালীন মাসিক শুরু হওয়ায় এক ছাত্রীর পোশাক ও বেঞ্চে রক্ত লেগে যায়। ক্লাসের সহপাঠী ছাত্ররা সেই নিয়ে হাসি-মস্করা ও ইঙ্গিত করতে থাকে। প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে, মেয়েটির জন্য সবরকম ব্যবস্থা নেওয়ার পর, ওইদিন স্কুলের শেষে এক শিক্ষিকা এবং লাইফ-সাইন্সের শিক্ষক যৌথভাবে ক্লাস নিয়ে মাসিকের জৈবিক প্রক্রিয়া ও তার শারীরবৃত্তীয় কারণ বিস্তারে বুঝিয়ে দেন সবাইকে। এরপর ঐ ছাত্ররাই অন্যান্য ছাত্রীদের প্রতি ভদ্র ব্যবহার শুরু করে, অন্যদের বোঝায়, এমনকী প্রয়োজনে ছাত্রীদের প্রতি সাহায্যের হাতও বাড়িয়ে দেয়।
প্রধান শিক্ষকের উদ্যোগে কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং বয়ঃসন্ধির ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে স্কুলের মধ্যে এবং বাইরে গিয়ে আলোচনা, ওয়ার্কশপ ইত্যাদির আয়োজন করা হয়। ছাত্রীদের ক্ষেত্রে স্কুলে হঠাৎ মাসিক শুরু হওয়া, জামাকাপড়ে রক্তের দাগ লেগে যাওয়া, তাদের ভয় পাওয়া, লজ্জা পাওয়া, প্রথম মাসিক হ’লে বড় মেয়েরা কীভাবে অন্য মেয়েদের সাহায্য করবে, ছেলেদের মধ্যেও বিষয়টাকে বুঝিয়ে দেওয়া, তাদের মধ্যে যৌন ধারণার অজ্ঞতা ও ভ্রান্তি দূর করা, কীভাবে ছেলেমেয়েদের মধ্যে আচরণগত বন্ধুত্ব শোভন পদ্ধতিতে ঘটবে—ইত্যাদি বিষয় অনেকটাই সহজ হ’য়ে যায় এইসব আলোচনা ও কর্মশালার মাধ্যমে৷ প্রথমদিকে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনার মুখোমুখি হতে হলেও ক্রমশ এর সুফলগুলি ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে স্পষ্ট হতে থাকে।
একজন বয়ঃসন্ধির ছাত্রের তার সহপাঠীর প্রতি কু-ইঙ্গিত দেওয়াই একমাত্র প্রবণতা নয়। কো-এডুকেশন স্কুলে এই বয়সে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে প্রেমপত্রের আদান-প্রদান খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়। শিক্ষক-শিক্ষিকারা কেউ কেউ এসব প্রেমপত্র বাজেয়াপ্ত করেন, কড়া শিক্ষক কেউ হয়ত প্রকাশ্যেই বকাবকি করে সকলের সামনে বিড়ম্বনায় ফেলেন ছাত্র বা ছাত্রীটিকে৷ আসলে এমন না করলে মনে করা হয় ছাত্রছাত্রীদের প্রেম বিষয়ে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে৷ বিদ্যালয়ের মধ্যে ‘প্রেম’ শব্দটি শুনলেই আমরা ছাত্রছাত্রীদের সুন্দর নরম মনটাকে না খুঁজে একটা অন্য ‘ইরিটেশন’ তৈরি করি মনে মনে৷
কোন কোন ক্ষেত্রে কিছু কিছু প্রেমপত্র প্রধান শিক্ষকের টেবিলে আসে৷ কাজ শেষে একা্ন্তে যখন তিনি কোনটা খুব সুন্দর হস্তাক্ষরের, কোনটা অপরিচ্ছন্ন হাতের লেখায়, ভুল বানান ও শব্দে গাঁথা অপরিণত শিষ্ট-অশিষ্ট লেখাগুলো পড়েন, তাঁর সামনে বিশেষ দু’টি দিক উঠে আসে৷ একদিকে, আবেগঘন কথা প্রকাশ ও রঙিন স্বপ্ন মাখা জীবন-পরিকল্পনা, পড়াশুনার কথা, স্কুলের অনুষ্ঠানের কথা, ক্লাসের শিক্ষক-শিক্ষিকাকে ভালো লাগা, খারাপ লাগা বিবিধ বিষয়৷ অন্যদিকে দেখা যায় একটি বেদনাদায়ক অন্তরাল চিত্র৷ বিশেষত সেগুলি ছাত্রীদের চিঠিতেই বেশি৷ বাড়িতে অভাব, বই, জামা-কাপড় কিনতে না পারা, বাবা-মার ঝগড়া, মারামারি, বাবার নেশা করা, মাকে পেটানো, ছেলেমেয়েদের পেটানো ইত্যাদি জটিল বিষয়৷ এমনকী পাওয়া যায় ভালোবাসার ছেলের সাথে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করার কথাও - তার মূল কারণ বাড়ির পরিস্থিতি বা মেয়ের অসম্মতিতে জোর ক’রে তার বিয়ে দিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত৷
ছাত্রছাত্রীদের আলাদা করে ডেকে যদি বলা হয়—প্রেমপত্র রচনা খুবই ভালো অভ্যাস—তারা প্রথমত লজ্জিত হয়, ভয় পায়, আর লিখবে না বলে৷ প্রধান শিক্ষক যখন আরও বলেন, ভালোভাবে লিখতে হবে, বানান, ভাষা, শব্দ সঠিক জেনে লিখতে হবে, লেখার দক্ষতা বাড়াতে হবে, কীভাবে বন্ধুত্ব করতে হয়, বন্ধুত্ব রক্ষা করতে হয়, পড়াশুনা ক’রে নিজের যোগ্যতা তৈরি করতে হয়, ভালোবাসা অর্জন করতে হয়... তারা অবাক হয়, উৎসাহিত হয়, আদর্শায়িত হয়৷ এইভাবে তাদের মধ্যে অন্য এক লক্ষ্যকে জাগিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়।
আবার যাদের চিঠিতে সংসারে অশান্তি, পড়াশোনা ছেড়ে দিতে বাধ্য হওয়া বা পালিয়ে বিয়ে করার কথা থাকে, সেইসব ছাত্রছাত্রী এবং তাদের অভিভাবকদের ডেকে বুঝিয়ে, প্রয়োজনে কাউন্সেলিং করিয়ে, আর্থিক বা শিক্ষাগত সাহায্যের মাধ্যমে তার প্রতিরোধের চেষ্টা করা দরকার। নাবালিকা বিয়ে বন্ধ করার ক্ষেত্রেও কার্যকরী হয় এই ভূমিকা।
বর্তমানে সকলের চেষ্টায়, সমাজের সর্বস্তরে অনেকটাই সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটছে৷ মেয়েরা অনেক বেশি সংখ্যায় স্কুলে আসছে৷ তবে এই ধরনের অভিজ্ঞতার চিত্র যে সম্পূর্ণভাবে বদলে গেছে তা নয়৷ ছাত্রীরা এখনও অনেকটাই অস্বচ্ছন্দ, অনেক ক্ষেত্রেই ছাত্রদের তুলনায় পিছিয়ে থাকা। যেখানে বিদ্যালয় স্তরে ছেলে এবং মেয়ে শিক্ষার্থীর জন্য সঠিক চেতনামূলক সমান উপযুক্ত পরিবেশ ও সুযোগ গ’ড়ে তোলা যাবে, সে এখনও বহু পথ বাকি!
Link: https://ebongalap.org/adolescence-students-of-the-sunderbans