12-07-2024 22:02:03 pm
Link: https://ebongalap.org/aini-lorai-na-naming-shaming-1
দু-একটি সম্পাদকীয় বক্তব্য
দিন দশ-পনেরো ধরে উচ্চশিক্ষাক্ষেত্রে একাধিক যৌন হেনস্থার অভিযোগ ও অভিযুক্তদের নামের তালিকা প্রকাশকে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়ায় চাপানউতোর চলছে। তবে আলোচনাই বলুন আর তরজাই বলুন প্রায় সবটাই চলছে ইংরেজিতে। ‘এবং আলাপ’-এর ব্লগে আমরা জ্ঞানের বণ্টন ও বিভিন্ন ভাষার মধ্যেকার এই হায়ারার্কি কিছুটা ভেঙে যৌন হেনস্থা নিয়ে জরুরি আলোচনার পরিসর বাড়াতে চাইছি বাংলা ভাষায়। আমরা সংগঠনগতভাবে ২০০৩ সালে থেকেই চেষ্টা করে আসছি বিভিন্ন ‘সচেতন নাগরিক’ কর্মশালার মাধ্যমে বাংলা মাধ্যমের স্কুল ও কলেজের ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ তৈরি করতে। গত ছ-মাস ধরে আমাদের নতুন ব্লগ ‘এখন আলাপ’-এ বাংলা ভাষায় জেণ্ডারকেন্দ্রিক লেখা প্রাধান্য পাচ্ছে। আমরা মনে করি আজকের বিশেষ ব্লগের বাংলা লেখাগুলো আরো অনেকের সাথে যৌন হেনস্থা বিষয়ে মত বিনিময় সম্ভব করবে।
এটাও আমরা লক্ষ করেছি যে যৌন হেনস্থাকারীদের এই ক্রাউডসোর্সড তালিকাকে ঘিরে পক্ষে-বিপক্ষে মত বিভাজন মূল সমস্যার জায়গাগুলো থেকে আমাদের সরিয়ে দিচ্ছে অনেকটাই এবং এর ফলে কতগুলো খোপ তৈরি হচ্ছে—যেমন, ‘নবীন-প্রবীণ’, ‘সুপরিচিত-স্বল্পপরিচিত’, ‘দলিত-উচ্চবর্ণ’ ইত্যাদি। আলোচনাগুলো এতটা কোটরবন্দি হয়ে পড়লে সমস্যার অতিসরলীকরণ আর কে কত পয়েন্টে কার থেকে এগিয়ে সেই তরজা চলতেই থাকবে। আমাদের এই উদ্যোগ ‘আমরা-ওরা’ ছকে বিতর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়া নয়, বরং এই তরজার ঊর্ধ্বে উঠে যৌন হেনস্থার সংস্কৃতির বিরুদ্ধে সংগ্রামের বিভিন্ন পন্থা ও মতামতকে এক জায়গায় নিয়ে আসা।
এই ব্লগের লেখকদের বয়স, সামাজিক অবস্থান, পেশা, মতামতে বৈচিত্র আছে, আবার মিলও পাওয়া যেতে পারে কিছু। শিক্ষাক্ষেত্রে যৌন হেনস্থা সম্পর্কে এঁদের কারোর মতামতই ‘এবং আলাপ’-এর সাংগঠনিক মত নয়। দশজন লেখকের মধ্যে তিনজন ‘এবং আলাপ’-এর সদস্য হলেও তাঁদের মতামত সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত।
পাঠক চাইলে যে কোনো লেখা অনুবাদ করে প্রচার করতে পারেন, অবশ্যই লেখক ও ‘এবং আলাপ’-এর স্বীকৃতিসহ। প্রথম পর্বে রইল সাতটি লেখা। পরবর্তী পর্বে প্রকাশিত হবে বাকি তিনটি।
সমতা বিশ্বাস, অধ্যাপক
আমি এখন কলকাতার একটা মহিলা কলেজে পড়াই। আগের কলেজের অনুপাতে এখানে ক্লাসরুমে যৌনতার কথা বলা সহজ। বিশেষত একজন সাহিত্যের গবেষক/ শিক্ষক অনেক বেশি স্বাধীনতা পান ক্লাসে এসব বিষয় তোলার, তা ঐতিহাসিক দিক থেকেই হোক বা সাহিত্যবিশ্লেষণের দিক থেকে, কিম্বা সোজাসাপটা সামাজিক প্রতিফলন আলোচনায়। ছাত্রীরা কম উশখুশ করেন, ছাত্ররা নেই, তাই তাঁরা মুচকি হাসতে পারেন না, এবং আলোচনার সময় বইয়ের গণ্ডী ছেড়ে নিজের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে কিছু বোঝানোর চেষ্টা করলে ঘরের অর্ধেক মানুষ এলিয়েনেটেড অনুভব করেন না।
রায়া সরকার সঙ্কলিত তালিকা ফেসবুকে ঝড় তোলার পরের দিন আমাদের কথা ছিল কেট মীলেট-এর সেক্সূয়াল পলিটিক্স পড়তে শুরু করার। তালিকায় কলকাতার এক বিখ্যাত অধ্যাপকের নাম আছে, আমাদের বিষয়ের প্রাইভেট পড়ানোতে যিনি ভীষণ জনপ্রিয়। ক্লাসে কথায় কথায়, (আসলে যৌনতা আর ক্ষমতার সম্পর্ক মীলেটের বইয়ের প্রাথমিক বক্তব্য) এই তালিকার বিষয় উঠে আসে, এবং ছাত্রীদের কাছে পরিচিত ওই তালিকার একমাত্র নামই স্বাভাবিকভাবে বলা হয়। মজার কথা, আসলে চিন্তার কথা, ক্লাসের সকলেই ঘাড় নেড়ে বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা জানতাম’। কিন্তু জানা মানে কী ওনার কাছে পড়াশুনো বন্ধ করে দেওয়া? এ বিষয়ে সকলে একমত হতে পারলেন না। ১৭ বছর আগে আমি নিজেও এই অভিযোগ শুনেছিলাম, কিন্তু কিছু করিনি।
অথচ কথায় কথায় বোঝা গেল স্নাতকোত্তর ক্লাসের দশজনই কখনো না কখনো এরকম ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন। কারোর কলেজের পুরুষ শিক্ষক স্টাফরুমে ডেকে জিজ্ঞেস করতেন, ‘মেয়ে আর মহিলার মধ্যে পার্থক্য জানো?’ না বলায় তিনি উত্তর দিতেন, ‘মেয়েরা বাড়িতে টেপফ্রক পরে ঘুরতে পারে, মহিলারা পারে না’। আমার নিজের একজন শিক্ষক ছিলেন যিনি গরমকালে ছাত্রীদের বোতাম খুলে বসতে বলতেন। আরেকজনের গৃহ শিক্ষক বারবার গায়ে হাত দিতেন, আর তিনি ভয়ে কাঁটা হয়ে বসে থাকতেন, পাছে মা কিছু জানতে পারেন।
শিক্ষক কর্তৃক যৌন হেনস্থার ফিরিস্তি দেওয়া এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। আমরা সকলেই জানি, এবং দুঃখের বিষয় আমরা সকলেই মানি, এরকম এবং এর থেকে ভয়ানক হেনস্থার ঘটনা খুবই সাধারণ। যৌন নিগ্রহের তালিকা প্রস্তুতকারী এবং তাঁর সমর্থকেরা কিন্তু একথাই বারবার বলছেন। এসকল ঘটনাকে আমরা নিত্যজীবনের অংশ হিসেবে মেনে নিয়েছি, উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলো যৌন হেনস্থাকে গুরুত্ব দেয় না, দিলেও অভিযোগকারিণীকে আরও বেশী হেনস্থার শিকার হতে হয়, এরকম সব হতাশার জঙ্গি বহিঃপ্রকাশ এই তালিকা।
কিন্তু আমাদের কলেজের পড়ুয়াদের বয়ান থেকেই পরিষ্কার, তালিকায় থাকা বা না থাকা, এই শিক্ষক বা তাঁদের ছাত্রীদের জীবনে খুব বেশী পরিবর্তন আনবে না। কয়েকজন ভয় পাবেন, বা আমার প্রাক্তন বন্ধুর মতো, তাও পাবেন না। সোশ্যাল মিডিয়া, নামজাদা প্রতিষ্ঠান ও ইংরিজি ভাষায় যাঁদের সহজ সঞ্চার নয়, তাঁদের প্রাত্যহিক জীবনকে এরকম একটা তালিকা কি লিঙ্গসাম্যের আওতায় আনতে পারবে? কলেজের স্টাফরুমে পুরুষ-মহিলা শিক্ষক নির্বিশেষে ছাত্রছাত্রীর পোশাক, ঘনিষ্ঠতা ও সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল নিয়ে আলোচনা করে চলেন। কারোর আলোচনা মোটা দাগের, কেউ তা আড়াল করতে পারেন সহজাত ও শ্রেণীগত পরিশীলিত কথোপকথনের মাধ্যমে। সেই সকল ছাত্রীদের জন্য, যাঁরা কর্তৃপক্ষকে মেনে চলেন, এবং শিক্ষাক্ষেত্রের যৌন হেনস্থাকে বৃহত্তর জীবনের লিঙ্গ বৈষম্যের একটা প্রতিফলন বলেই মেনে নেন, আমরা কীভাবে সাহায্য করতে পারি?
অভিযুক্তদের তালিকা তাই আমার কাছে সমবেত আত্মসমালোচনার প্রয়োজনকে আরও বড় করে তুলে ধরেছে, তুলে ধরেছে আরও প্রত্যক্ষ/ জঙ্গিভাবে লিঙ্গসাম্যের জন্য কাজ করার আশু দায়িত্বকে। কে বড় নারীবাদী, সে ঝগড়াটা পরে করলেও চলবে।
মেরুনা মুর্মু, অধ্যাপক
উচ্চশিক্ষাক্ষেত্রে যৌন হেনস্থা এবং নারীবিদ্বেষের শিকড় কতটা গভীরে প্রোথিত, এবং তার প্রভাব কতটা ব্যাপক, তার স্বরূপ সামনে আসায় আজ আমরা সকলেই খুব হতভম্ব। আমাদের অনেকেরই নাম গোপনকারী ছাত্রীদের দ্বারা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নির্দিষ্ট যৌন হেনস্থার উল্লেখ না করে 'তালিকা' তৈরির পদ্ধতি নিয়ে আপত্তি থাকতে পারে, কিন্তু এই ‘তালিকা’ যে দীর্ঘকালীন নীরবতা ভঙ্গ করার চেষ্টা করেছে, তা থেকে আমরা মুখ ফিরিয়ে নিতে পারি না। আমাদের স্বীকার করতে হবে, যে আমরা হয় অন্যায় করেছি, অথবা অন্যায়ের প্রতি উদাসীন থেকেছি, অথবা দুইই। এবং ছাত্রীরা আমাদের প্রতি বিশ্বাস হারিয়েছেন। একথা আজ আর অস্বীকার করার জায়গা নেই, যে ছাত্রীছাত্র এবং শিক্ষকদের মধ্যেকার আচরণবিধির ক্ষেত্রে ঘোরতর স্খলন হয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় কথোপকথনে নিজেদের তাৎক্ষণিক ক্ষোভ জানানো ও ক্ষোভ উগরে দেওয়ায় আটকে না থেকে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর গঠনমূলক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে উদ্যোগ নিতে হবে, অভিযোগ জানানোর বিধিবদ্ধ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা সীমিত না করে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানানোর দায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অভিযোগকারীনির দিকে ঠেলে দিয়ে আমরা দায় এড়াতে পারি না। সম্ভাব্য সমাধানের জন্য বিপরীত প্রক্রিয়ার নির্মাণও জরুরি।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হায়ারার্কি এমনভাবে কাজ করে, যে সেখানে একজন ছাত্রী কতটা ক্ষমতাহীন ও দুর্বল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। একজন এমপ্লয়ার, সুপারভাইজার, রেকমেন্ডারের পদে আসীন হওয়ায় নিগ্রহকারীরা এক অসীম ক্ষমতা ভোগ করেন। ভবিষ্যতে কোনো ইন্টারভিউতে, স্কলারশিপের প্যানেলে, এমনকি ইন্টারন্যাল কমপ্লেন কমিটিতেও কোনো ছাত্রীকে তার নিগ্রহকারীর মুখোমুখি বসতে হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে জাতপাত ও ধর্ম পরিচয়ের প্রভাবও যে কতটা ব্যাপক, তা অস্বীকার করার কোনো জায়গা নেই। নিজের প্রতি হওয়া যৌন হেনস্থার বিবরণ সামনে আনার সময় সর্বতোভাবে সারভাইভারের পাশে থাকা যেমন আমাদের কর্তব্য, তেমনই পাশাপাশি ক্ষমতাশালী যৌনহেনস্থাকারিদের প্রতিশোধস্পৃহার প্রভাব কমানোর দায়িত্বটাও আমাদের উপরেই বর্তায়।
ছাত্রীছাত্র ও শিক্ষকদের মধ্যে কথোপকথন জারি রাখা এবং ছাত্রীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা অ্যাকাডেমিক কমিউনিটির পক্ষ থেকে সাপোর্ট দিয়ে GSCASH বা ICC জাতীয় কমিটিতে অভিযোগ জানানোয় সহায়তা করা দরকার। কমিটিগুলোর সীমাবদ্ধতা সম্পূর্ণরূপে অবগত হওয়া সত্ত্বেও এটা দরকার। শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর আন্তসম্পর্কের বিধি তৈরির উদ্যোগ নেওয়া এবং উচিত-অনুচিতের সীমারেখা সম্পর্কে সচেতন থাকা প্রয়োজন। প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের প্রক্রিয়াকেও আরও বিস্তৃত করা দরকার। এখন যেমন শিক্ষাক্ষেত্রে ভর্তির সময় অ্যান্টি-র্যাগিং-এর নিয়মবিধি ছাত্রছাত্রীদের শেখানো হয়, তেমনই যৌন হেনস্থার বিষয়টিও সমান গুরুতর—এ বিষয়ে ছাত্রছাত্রীদের সচেতন করা উচিত।
সুচেতনা মুখার্জি, গবেষক-ছাত্রী
ফেসবুক ট্রায়াল খানিকটা ওই খাপ পঞ্চায়েতের মতোই হচ্ছে না কি, সেক্সুয়াল হারাসমেন্ট-এর ক্ষেত্রে? প্রথমত, ওই লিস্টের যেমন কিছু নামের বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্যি হতে পারে, কিছু কি মিথ্যে হওয়ার সম্ভাবনা নেই? কেউ ব্যক্তিগত জায়গায় যা ক্ষোভ ছিল মিটিয়ে নিচ্ছে না তো? এটা ভাবা কি অসম্ভব কিছু? দ্বিতীয়ত, সমস্ত ক্রিমিনাল কার্যকলাপে অভিযুক্তকে ডিফেন্ড করার জায়গা দেওয়া হয়। সেটা এখানে সম্ভব হচ্ছে? তৃতীয়ত, কেউ তো দাবি করছে না 'একাডেমিয়াতে তো এসব হওয়া অসম্ভব', 'প্রফেসররা তো এরম করতেই পারে না কখনো'। সবাই আমরা অবগত কী হয় কী হয় না সে বিষয়ে। কিন্তু নিশ্চয়ই ফেসবুকের বাইরে কোথাও অভিযোগ জানানো যেত।
মানলাম সরকারি যা যা প্রসিডিওর তাতে ক্ষমতাশালী যেহেতু প্রফেসররা, তাই তাঁরা ঠিক কেসটা চাপা দিয়ে দেবেন, ফলত ফেসবুকই পড়ে থাকল এই সমস্ত কুকর্ম তুলে ধরার জায়গা হিসেবে। তাহলে কেন কোনো অভিযোগকারিণী তার নাম আর অভিযোগ সামনে আনছে না প্রমাণসহ? শুধু এই নেমিং এন্ড শেমিং করে কী লাভ হলো? সমস্ত অভিযোগ সত্যি তার প্রমাণ কোথায়?
এরপর থেকে বা হয়তো এর আগেও এরকম হয়েছে যে যার বিরুদ্ধে আমার ব্যক্তিগত ক্ষোভ তার নামে একটা সেক্সুয়াল হার্রাসমেন্ট-এর অভিযোগ তুলে ফেসবুক-এ পোস্ট দিয়ে দিলাম আর সক্কলে শেয়ার করলো এবং প্রমাণিত সত্য ধরে নিল। অভিযোগ আর প্রমাণিত সত্যের মধ্যে তো একটা ফারাক আছে তাই না? আর যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের ডিফেন্ড করার জায়গা দেওয়া একটা ফারাক আছে। ফেসবুকে প্রাথমিক একটা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে কতদূর ব্যাপারগুলো সমূলে উৎপাটিত হবে আমি খুব সন্দিহান এ ব্যাপারে, আর খুব বিরোধীও। জীবনটা ফেসবুককেন্দ্রিক হয়ে উঠলে তো মুশকিল খুব।
বিপাশা মিস্ত্রী, ছাত্রী
আমার কাছে নারীবাদের সব থেকে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট হলো বিরুদ্ধমত প্রকাশের পরিসর এবং বিতর্কের সংস্কৃতি। নারীবাদের ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকালে দেখব, চিরকালই নারীবাদের নানা ধারাকে বোঝার ক্ষেত্রে নতুন তত্ত্ব, নতুন পদ্ধতি সামনে এসেছে। সাম্প্রতিককালে বৈষম্যের মাপক শুধু জেন্ডারে আটকে না থেকে, অন্যান্য মাপকের সাথে জেন্ডারের সম্পর্কও আরও স্পষ্ট হয়েছে।
একজন মেয়েকে লিঙ্গবৈষম্যের পাশাপাশি বর্ণ, জাতি, শ্রেণী এবং ধর্মের সামাজিক হায়ারার্কির সাথেও অনবরত সংগ্রাম চালাতে হয়। আমাদের মত মেয়েদের ঐতিহাসিকভাবে প্রথমত মেয়ে এবং দ্বিতীয়ত দলিত হিসাবে দ্বিগুণ বৈষম্য ও নিপীড়নের শিকার হতে হয়। আমার মত দলিত মেয়েরা এমনই এক অস্বস্তিকর গোষ্ঠী, যাদের নাম উল্লেখকেও ব্রাহ্মণ্যবাদ দূষণ বলে মনে করে। দুঃখের বিষয় হল, জাতিগতভাবে ব্রাহ্মণ মেয়েরাও ব্রাহ্মণ্যবাদী এবং পুরুষতান্ত্রিক সমাজে কখনও তেমন কোনো স্বীকৃতি পায়নি। তা সত্ত্বেও আজ আমার দেশে নারীবাদীরা একাধিক উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পেরেছেন। যার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ হিসেবে নির্ভয়ার মৃত্যু-পরবর্তী আন্দোলন এবং ভার্মা কমিশনের সুপারিশের উল্লেখ করা যেতে পারে।
ভারতের মত এক পুরুষতান্ত্রিক দেশে ধর্ষণের সংস্কৃতি এতটাই স্বাভাবিক, যে একজন সার্ভাইভারকে ‘ভিক্টিম’ বলে দাগিয়ে দিয়ে নিজের পরিচয় গোপনে বাধ্য করা হয়। নারীবাদীরা এই সংস্কৃতির বিরুদ্ধে, পরিচয় গোপনের বদলে সামনের সারিতে এসে নিজের প্রতিবাদ জানানোর অধিকার অর্জনের জন্য এতদিন যে সংগ্রাম চালিয়েছেন, সেটাকে অস্বীকার করে আমরা আবার সেই পরিচয় গোপনের সংস্কৃতিতে কীভাবে ফিরে যেতে পারি?
সকলের সামনে নিজেদের অভিযোগ জানানোর ক্ষেত্রে সমাজের বিধিনিষেধ বা টিভি চ্যানেলের ঝাপসা স্ক্রিন এতদিন প্রধান অন্তরায় ছিল! এখন পরিচয় গোপন রেখে ‘নেমিং অ্যান্ড শেমিং’-এর নতুন পদ্ধতি দস্তুর হয়ে উঠবে না তো? আজ যেখানে সকলের ফোনের নম্বরও ‘আধার’-এর সাথে যুক্ত করার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে, সেখানে পরিচয় গোপনের রাজনীতি কীভাবে নারী আন্দোলনকে নতুন দিশা দিতে পারে?
যৌন নিগ্রহ কোনো একদিন বা বিশেষ এক ব্যক্তির বিশেষ কোনো আচরণ নয়। আমরা মেয়েরা জীবনে প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে, বিভিন্নভাবে জাতি, শ্রেণী, ধর্ম ও আরও নানান পরিচিতির কারণে নিগ্রহের সম্মুখীন হই। নারী আন্দোলন তখনই এক অর্থে সফল হবে যখন, আমরা মেয়েরা নিজেদের দৈনন্দিন সার্ভাইভার হিসাবে চিহ্নিত করতে পারব, কারণ বিশেষ কোনো ঘটনার ভিত্তিতে একজন নিগ্রহকারীর নাম উল্লেখ করলেই সার্ভাইভার জাস্টিস পাবে, এই ধারণা ভুল এবং সমস্যাজনক। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে মুহূর্তে বিচার ও রায় ঘোষণাই শেষ কথা বলে প্রতিষ্ঠা পেলে নারী আন্দোলনের মধ্যে কোনও তর্কবিতর্ক চালানোর জায়গা থাকবে না। ‘নাম এবং বদনামের’ নতুন সংস্কৃতির সমালোচনার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান-নিয়ন্ত্রিত সুনির্দিষ্ট বিচারপদ্ধতি যে সেনসিটাইজেশানে ব্যর্থ, একথাও উল্লেখ করা বিশেষ প্রয়োজন।
আমাদের রাষ্ট্র যেভাবে বহূমত পোষণ করবার স্বাধীনতা কেড়ে নিচ্ছে, তাতে একজন দলিত মেয়ে হিসাবে আমি এমনিতেই সন্ত্রস্ত বোধ করি। এবার নারীবাদীদের মধ্যে দ্বিমত পোষণ করার বা আলোচনা চালানোর পরিসর সংকুচিত হওয়াকে ভীতিপ্রদ মনে হচ্ছে।
দোলন গঙ্গোপাধ্যায়, নারীবাদী সমাজকর্মী
ভারতবর্ষের নারী আন্দোলনে এখন বিতর্কের ঝঞ্ঝাপাত চলছে। বিতর্ক সবসময়ই ভাল। বিতর্ক আন্দোলনে নতুন চিন্তার জোয়ার আনে, প্রাণসঞ্চার করে। তাই এই বিতর্ককে আমি স্বাগত জানাই। শিক্ষাঙ্গনে যৌন হেনস্থা কোন নতুন ঘটনা নয়। জন্মজন্মান্তর ধরে আমরা মেয়েরা স্কুলে, কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে এই হেনস্থার শিকার। রায়া সরকার যে নতুন কাজটি করলেন, তা হল, ‘আমরা শিকার’ মোড থেকে আলোচনাটিকে ‘তোমরা অপরাধী’ মোডে নিয়ে গেলেন। এই অসম সাহসের জন্য আমি রায়াকে স্যালুট জানাই। একইসঙ্গে যে নারীবাদী নেত্রীরা ২৪ ঘন্টার মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে রায়াকে ফেসবুক থেকে তালিকা নামিয়ে নিতে বললেন, তাঁদের মাতব্বরির নিন্দা করি।
রায়া এবং তার সহযোগীদের তালিকায় যাদের নাম আছে, তারা সবাই প্রগতিশীল চিন্তার ধারক, বাহক। আর ধাক্কাটা সেখানেই লেগেছে। গাড়ির ড্রাইভার কিম্বা ফ্ল্যাটের সিকিউরিটি গার্ড যখন যৌন হেনস্থা করেন, তখন ‘নেমিং-শেমিং’ নিয়ে আমরা আদৌ চিন্তিত হই না। কিন্তু এই তালিকায় বেশীরভাগ লোক আমাদের ভাই-বেরাদর, তাই এত উৎকন্ঠিত আমরা। স্বীকার করা ভাল যে, এটা আমাদের শ্রেণীগত, জাতিগত, সামাজিক অবস্থানগত উৎকন্ঠা। আমাদের লম্বা লম্বা আন্দোলনের কাজ থাকতে পারে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে, আমরা সবাই আমাদের শ্রেণী, জাতি-ধর্মের, সামাজিক অবস্থানের পরিচিতির ঊর্ধ্বে অথবা আমরা আমাদের বাপ ঠাকুর্দার নাম-পরিচয় ভাঙ্গিয়ে খাই না।
এবার আসছে তালিকার কথা। এটা কি ঠিক তালিকা? এই সারভাইভর-রা ‘পদ্ধতি’ মানলেন না কেন? তালিকার একটা পরিপ্রেক্ষিত থাকবে না? প্রথমত মনে রাখা দরকার, রায়া পরিষ্কারভাবে বলেছেন, ভবিষ্যৎ ছাত্রী-গবেষকদের সাবধান করতে এই তালিকা। অতএব, এ তালিকা কোনো গবেষণার কাঁচামাল নয় যে তালিকা কীভাবে তৈরি হল সে আলোচনা পন্ডিতমশাইদের যৌন হেনস্থার আলোচনাকে ছাপিয়ে যাবে। এই তালিকা তৈরির পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে। কিন্তু সে প্রশ্ন এই তালিকাকে নাকচ করতে পারে না। দ্বিতীয়ত, ‘পদ্ধতি’! কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন, এঁরা এফআইআর করলেন না কেন? এঁরা ইন্টারনাল কমপ্লেন কমিটির কাছে গেলেন না কেন? আচ্ছা দিদি, আমি আপনি কতগুলো যৌন হেনস্থা নিয়ে ‘পদ্ধতি’ মেনে স্যার-দের বিরুদ্ধে নালিশ ঠুকেছি? আর যদি সাহস করে কেউ নালিশ করেই থাকেন, তাহলে তার কি অবস্থা হয় সাম্প্রতিককালে সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট-এ ঘটে যাওয়া ঘটনা থেকেই বোঝা যায়।
সর্বোপরি, আমি কোনো প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতিতে যাব কিনা সেটা সম্পূর্ণ আমার ব্যক্তিগত অভিরুচি। আর পরিপ্রেক্ষিত? কিসের পরিপ্রেক্ষিত মশাই? আজ থেকে ২৫ বছর আগে যখন আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত অধ্যাপক করিডোরে আমার নিতম্ব ছুঁয়ে নির্বিকার মুখে হেঁটে এগিয়ে গিয়েছিলেন, তখন তিনি কোন্ পরিপ্রেক্ষিতের বিচার করেছিলেন? যৌন হেনস্থার একটাই পরিপ্রেক্ষিত। সে পরিপ্রেক্ষিতের নাম, ক্ষমতা। ক্ষমতাশালী পুরুষ চিরকাল নারীকে যৌনহেনস্থা করে ক্ষমতার মজা লোটে। আমরা জানি না??
আমি মনে করি, আমাদের একটু শোনা দরকার। নতুন প্রজন্মের নারীবাদীরা কি বলতে চাইছেন তা খোলা মনে শোনা এবং সৎভাবে বোঝার চেষ্টা করা দরকার। যদি তাঁরা আমাদের সমালোচনাও করেন, তাও শোনা এবং গ্রহণ করা দরকার। এটাই এ সময়ের দাবি। এ দাবিকে অবহেলা করলে অন্যায় হবে।
বুবাই বাগ, অধ্যাপক ও প্রতিবন্ধী আন্দোলনকর্মী
সদ্য কলেজে পা রেখেছে জাহানারা খাতুন (নাম পরিবর্তিত)। ও! পা রেখেছে বললাম কেন? ওর তো পা দুটিই নেই। সেই ছোটবেলায় একটা দুর্ঘটনায় দুটি পা-ই হারাতে হয়। তারপর চলছে ‘জীবন সংগ্রামে’র (সত্যজিৎ রায় যাকে ‘আগন্তুক’ ছবিতে বলেছেন ‘মগজের পুষ্টি’) নূতন অভিজ্ঞতা। গ্রামের স্কুলে (ছোট পরিসরে) পড়াশোনা সম্পন্ন করে মফঃস্বলের এক কলেজে (অপেক্ষাকৃত বৃহৎ পরিসরে) যোগদান করল কিছুটা আতঙ্কিত হয়েই। তার কাছে জনপরিসরের অপর নাম ছিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সেই প্রতিষ্ঠানে প্রবেশের পরে দণ্ডায়মান লম্বা লম্বা সিঁড়ি বা নিত্যব্যবহারের শৌচাগার তাকে প্রতিনিয়ত যেন ‘প্রতিবন্ধকতাজনিত হয়রানি’র সম্মুখীন করত। তার আক্ষেপের কথা শোনার মত শ্রোতা যেমন ছিল কম, তেমনই তার হয়ে বলার মত বাগ্মী লোকের চরম অভাব ছিল। প্রসঙ্গক্রমে বলা যায়, ভারতের খুব কম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আলোচনায় প্রতিবন্ধকতার দাবিদাওয়া স্থান পায়। সেখানে জেএনউ, যাদবপুর সবাই উনিশ-বিশ। ফলে উচ্চশিক্ষায় প্রতিবন্ধকতাজনিত হয়রানি অনিবার্য সত্য। হয়রানির অভিজ্ঞতার সঙ্গে (জাহানারার সঙ্গে) আর পাঁচজন তথাকথিত ‘অপ্রতিবন্ধী মানুষ’ কতটা নিজেদের মেলাতে পারবে, তা নিয়েও সন্দেহ থেকে যায়।
সাম্প্রতিককালের বহুচর্চিত ও বহুনিন্দিত ঘটনাপ্রবাহ হল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি। ‘লিঙ্গ/জাতপাত/শ্রেণী’ সেখানে অতিমাত্রায় সক্রিয়। এই হয়রানিগুলি অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার, তা বলতে কোন মানুষই দুইবার ভাবেন না। এগুলি সহজে প্রত্যক্ষমান বলে এক ধরনের বৈপ্লবিক চেতনা (শহরের পরিসরে) কিছুটা দৃশ্যমান। গ্রামীণ বা মফঃস্বলের পরিসরে তা অবশ্য বেশ কিছুটা ক্ষীণ।
প্রতিবন্ধকতাজনিত হয়রানি (প্রাতিষ্ঠানিক বা ব্যক্তিগত উভয় পরিসরেই) বা প্রতিবন্ধী মেয়েদের যৌন হয়রানি বিষয়ে শহর বা গ্রামীণ উভয় পরিসরে একই রকম প্রতিচ্ছবি দেখা যায়। ফলে জাহানারা থেকে যায় ‘বিপ্লবের পূর্ব প্রস্তুতি’র থেকে বহু যোজন দূরে। এ নিয়ে নাগরিক সমাজ হিমশীতল নীরবতা আগের মত সমান ট্র্যাডিশনে দেখিয়ে চলেছে।
শিপ্রা মুখার্জী, অধ্যাপক
গত কয়েকদিনে সোশ্যাল মিডিয়ায় যৌন নির্যাতন নিয়ে যে বিতর্কের ঝড় উঠেছে তা বুঝতে হলে আমাদের একটি সহজ বিষয় বোঝার চেষ্টা করতে হবে। উপস্থিত পরিকাঠামোর উপর যখন আমরা আর ভরসা করতে পারি না, তখন আমরা বিকল্প কোনো পন্থা খোঁজার চেষ্টা করি। সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপনের তাগিদেই তা খুঁজি। ফলে যিনি এই লিস্ট তৈরি করেছেন, তাঁর নিজের এই বিতর্কে কিছু না এসে গেলেও, তিনি যাঁদের অসহায়তা ও ক্ষোভকে ভিত্তি করে এই ঝড় তুলেছেন, তাঁরা অনেকেই মরিয়া ও নিরুপায় মানুষ, যাঁরা ‘ডিউ প্রসেস’-এর মাধ্যমে কোথাও পৌঁছনো যাবে বলে বিশ্বাস করতে পারছেন না।
তাঁদের অভিযোগের ধরন নিয়ম মেনে নয়, তথাকথিতভাবে বেনিয়মের ধারায় পড়ে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে এই বেনিয়ম মেনে অভিযোগ নিয়ে। কঠোর পরিশ্রম করে যাঁরা পুরুষশাসিত সমাজে মেয়েদের জন্যে আইনের ধারা, ও সেই অনুসারে কিছু নিয়ম, আনতে সক্ষম হয়েছিলেন তাঁরা এই অভিযোগের ধরনকে দায়িত্বজ্ঞানশূন্য মনে করছেন। এই পথে লাভের থেকে লোকসানই বেশী বলে চিন্তিত করছেন, কারণ অভিযোগের এই প্রণালীতে ভিক্টিমের কোনো দায় নেই। প্রযুক্তির সাহায্যে সে নিজেকে আড়ালে রেখে একজনের বিরুদ্ধে নালিশ জানাচ্ছে। আশ্চর্য (বিচলিত?) হওয়ার ব্যাপার হল যে সে অভিযোগ করেই ক্ষান্ত হচ্ছে। সে সুবিচার চাইছে না, শাস্তি চাইছে না। যে নারীবাদীরা মেয়েদের অধিকার নিয়ে কয়েক দশক ধরে লড়াই করে এসেছেন, তাঁরা এই পদ্ধতির মধ্যে নারীবাদের বিপদ দেখছেন।
কিন্তু এই ‘ডিউ প্রসেস’, অর্থাৎ নিয়ম মেনে প্রতিষ্ঠানের কাছে বিচারপ্রার্থী হওয়া নিয়ে এত অবিশ্বাস কেন? তার কারণ প্রতিষ্ঠানের উপর আমরা আর বিশ্বাস রাখতে পারছি না। বেশিরভাগ সময়েই দেখা যায় যে পদ্ধতি অনুযায়ী ‘ডিউ প্রসেস’ হয়তো হয়, কিন্তু আদতে তাতে কারোরই কোনো লাভ হয় না। না অভিযোগকারিনীর, না অভিযুক্তের।লাভ হয় একমাত্র প্রতিষ্ঠানের, কারণ কার্যকর্তারা ‘নিয়ম মেনে সব হয়েছে’ এই বাক্যের সাহায্যে নিজেদের দায়মুক্ত করেন।
আরও বড় বাধা হয়ে দাড়ায় সেই ‘ডিউ প্রসেস’-এর অস্বচ্ছতা। যে ‘প্রসেস’ নিয়মের নিয়ন্ত্রণে থাকা উচিত, প্রান্তিক-কেন্দ্রিক সকলেরই নিয়ন্ত্রণের বাইরে, তা মুষ্টিমেয় কয়েকজনের দ্বারা চালিত হচ্ছে বলেই মনে হয়। কারণ কীভাবে তদন্ত প্রক্রিয়া এগোচ্ছে, বা তার পদ্ধতির মধ্যে কোনো গলদ আছে কিনা—তা জানার কোনো উপায় থাকে না। ফলে যাঁরা প্রান্তে আছেন, তাঁদের কাছে এই ‘ডিউ প্রসেস’ অস্বচ্ছ এক প্রক্রিয়া হয়েই থেকে যায়। এখান থেকেই অবিশ্বাস ও রাগের জন্ম। এই ক্ষোভ অতিক্রম করার পদ্ধতি পুরনো হলেও একটিই— ‘প্রসেস’-এর স্বচ্ছতা বজায় রাখা। এমনিতেই শিক্ষক-শিক্ষিকারা ছাত্রছাত্রীদের কাছে দূরের মানুষ, ক্ষমতার প্রতিমূর্তি। তার সাথে যদি যুক্ত হয় বর্ণের বা শ্রেণীর বৈষম্য, তখন ছাত্রছাত্রীদের কাছে অভিযোগ জানানো অনেকটাই শত্রুপক্ষের শিবিরে ঢুকে নালিশ জানানোর মতন হয়ে দাঁড়ায়। ‘প্রসেস’-এ তাই তথাকথিত নিম্ন বর্ণ/ শ্রেণী/ প্রান্তিক এলাকার মানুষের উপস্থিতি একান্ত কাম্য। নিয়ম রক্ষার্থে শুধু দু’-একজন নয়, বেশ কয়েকজন। যাতে ডিউ প্রসেসে আমাদের-ওদের লোকের বিভাজন তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে।
Link: https://ebongalap.org/aini-lorai-na-naming-shaming-1