07-03-2024 13:50:39 pm
Link: https://ebongalap.org/indian-advertisements-celebrating-womens-day
আমরা যারা ‘লিখে থাকি’ টাইপ, তাদের কোনও কিছু নিয়ে আলোচনা করতে বললে, আমরা অনেক সময় খুব গম্ভীর হয়ে পড়ি, একটা সমালোচকের চশমা বের করে আলোচনার লক্ষ্যটির দিকে তাকাই, দোষ ত্রুটি খুঁজে বের করি। এবং আলাপ থেকে যখন কিছু বিজ্ঞাপন এল তখন প্রথমে সেই চশমার জন্য হাত বাড়ালাম, তারপর বিজ্ঞাপনগুলো দেখতে দেখতে কখন যেন চশমাটা খুলে রেখেছি।
আসলে ৮ই মার্চ নারী দিবস আমার কাছে কান্না হাসি মেশামেশি একটা দিন। এক দিকে এই দিনটা মনে পড়িয়ে দেয় আমার জীবনে কাছে আসা অনেক নারীর কথা যারা গরিব বলে, মেয়ে বলে, উদ্বাস্তু বলে জীবন বড় কষ্টে কাটিয়ে চলে গিয়েছে। অথচ তারা সেই দিনের সেই ছোট্ট আমিকে যে কী উজাড় করে ভালোবাসা দিয়ে গিয়েছিল, আমি তাদের সঙ্গে একটু ভালো ব্যবহার করলে যে কী খুশি হত, সে কথা মনে করে আমি এখনও অস্থির হয়ে উঠি। ছোটবেলায় বাড়ির মার্কসবাদ আমাকে তাদের গরিব হওয়ার কষ্টটা চিনতে শিখিয়েছিল, কিন্তু তাদের নারী হওয়ার জন্য বাড়তি বঞ্চনা আরও অনেক দিন পরে নারীবাদ আমাকে শিখিয়েছে। তারও আবার অনেক দিন পর, দুর্বার মহিলা সমণ্বয় কমিটি আমাকে শিখিয়েছিল ৩রা মার্চ আন্তর্জাতিক যৌনকর্মী দিবসের গুরত্ব, সেই দিনটি এলেও আমার মন উদ্বেল হয়।
এই ব্যক্তিগত গল্প বলা এই কারণেই, যে বিজ্ঞাপনগুলো দেখতে দেখতে আমার জীবনে শেখা নানান গল্পগুলো মনে পড়ল। আপনাদেরও নিশ্চয় পড়বে, আর তার মধ্যে দিয়েই আমরা দেখব:
ব্রুকবন্ড রেড লেবেল : আ বয় হু গার্লস লাইক
প্রথম বিজ্ঞাপন রেড লেবেল চায়ের বিজ্ঞাপন। এই বিজ্ঞাপন সেই কথাটাই বলে যে কথা এবং আলাপের হয়ে আমরা কতবার কত ওয়র্কশপে বলি: জেন্ডার শরীর নয়, সমাজ ঠিক করে দেয়, শিখিয়ে দেয়, এটা ছেলেদের কাজ, এটা মেয়েদের কাজ। মনে পড়ায় রবীন্দ্রনাথের গল্পগুচ্ছের সেই বাচ্চা ছেলেটির কথা - রান্নাবাটি খেলেছিল বলে যার কপালে জুটেছিল সঙ্গীদের আর মাস্টার মশাইয়ের গঞ্জনা। গল্পটার নাম ‘গিন্নি’ ছিল কি?
অরিফ্লেম : সুপার উওম্যান
দ্বিতীয় বিজ্ঞাপন অরিফ্লেমের। এখানে ঘর ও বাহির দুই সামলানো এক মহিলার গল্প। যিনি নিজের কাজ, সংসার ও সং-এর মত স্বামী সব কিছুই সামলান। তার পরে এক আজগুবি কল্পনায়, স্বামী বোধ হয় আবাসনের বাকি সব মহিলাদের দিয়ে উপহার সাজিয়ে বৌয়ের প্রতি ভালোবাসা ইত্যাদি জানান। কিন্তু কী রকম ভাবে এই বিজ্ঞাপনটা পুরুষ সুলভ ‘ঘুষ’ কল্পনাতেই আটকে যায়, ভালোবাসার থেকে সত্যিকারের কোনও বদল কল্পনা করতে পারে না। বিজ্ঞাপনটা তাই নকল সেলিব্রেশনের ওপরে ওঠে না।
ঊষা : ইক্যুয়াল পার্টনারশিপ
তৃতীয় বিজ্ঞাপনটি বেশ মজার। এখানেও ছেলে ও মেয়ের স্বভাব, পরিবারে তাদের ভূমিকা ইত্যাদির ধারণাগুলোকে প্রশ্ন করা হয় বেশ দক্ষতার সঙ্গে। আমরা এক ধরনের নতুন দাম্পত্যের গল্প পাই, কম সংখ্যায় হলেও আমাদের চার পাশে এ রকম বদল আমরা দেখছি।
প্রেগা নিউজ : সাপোর্ট ফর নিউ মাদারস
চতুর্থ বিজ্ঞাপনটি প্রেগার। এটা সন্তান জন্মের পর নতুন মা হওয়া মেয়েদের ডিপ্রেশনের সমস্যা নিয়ে। এখানে দেখানো হয় কর্মরতা এক মায়ের সন্তান জন্মের পর অফিস বাড়ি সামলাতে কেমন সমস্যা হয়, আর তখন অফিসের তরুণ সহকর্মীরা (পুরুষ ও মেয়ে সবাই) কেমন ভাবে এগিয়ে আসে ওঁর ওপর চাপ কমাতে। বেশ মন ভালো করা গল্প। যদিও এটা পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন কিনা আমি ঠিক জানি না। ডিপ্রেশন অনেক সময় মানসিক কার্যকারণের বাইরেও শারীরিক কারণে হয়। আমার মনে আছে, আমাদের পরিচিত এক শান্ত প্রতিবেশী, বাচ্চা হওয়ার পর, নিজের বাচ্চা, প্রায় খেপে উঠে, বাচ্চা-পরিবার সব ছেড়ে আমার মায়ের কাছে চলে এসে কয়েক দিন ছিলেন। আমার বয়স তখন ৭/৮ হবে। তখনই শুনেছিলাম, বাচ্চা হওয়ার পরে ও রকম ‘পাগলামি’ হয়। মেয়েটির শ্বশুর বাড়ি খুব রেগে গিয়েছিল, আমার মা বাবা ওঁদের বুঝিয়েছিলেন। আমাদের সমাজে এই সম্বন্ধে জ্ঞান বোধ হয় এখনও খুব কম।
আরবান ক্ল্যাপ : মাই ফার্স্ট উইমেনস ডে
পঞ্চম ও শেষ বিজ্ঞাপনটি আরবান ক্ল্যাপের। এটি রূপান্তরকামী সন্তান নিয়ে। এক মহিলা আত্মীয় স্বজন প্রতিবেশিনিদের নিমন্ত্রণ করে আনছেন, কারণ তাঁর মেয়ে হতে চাওয়া পুরুষ সন্তান মেয়ে হয়ে উঠেছে, এবং এটাই তার প্রথম নারী দিবস। বিজ্ঞাপন দেখে আমার নগর কীর্তন ছবিটার কথা মনে পড়ে গেল, বেশ ছবি আর অসাধারণ ঋদ্ধি সেন।
হাল্কা প্রশ্ন: ছবি বা বিজ্ঞাপনে সব রূপান্তরকামীরা মেয়ে হতে চায় কেন? বাস্তবে তো তা দেখি না। মেয়ে না হলে কী নারী দিবস পালন করা যায় না? তাহলে মেয়েটির প্রথম নারী দিবস কেন?
Link: https://ebongalap.org/indian-advertisements-celebrating-womens-day