07-05-2024 18:25:38 pm
Link: https://ebongalap.org/not-in-my-name
ওই ধর্মটা খুব বাজে।
রং-ও কেমন ক্যাটকেটে!
সেই ধর্মটা অখাদ্য।
দেয়া যায় না কো কারও পাতে!
তাহলে সবাই একসাথে,
নিজের-নিজের ধর্ম বাঁচাতে
বসি প্রহরণ শানাতে!
লজ্জা, ভীষণ লজ্জা ঘিরেছে দেশ ও দেশান্তর!
রক্ত বইছে সমুদ্রে। খুনি, রাজপথ, বন্দর!
আমরা কোথায় দাঁড়িয়েছি, মুখ ঢেকেছি বিষম ভয়ে।
হাইটেক দিন, করুণাবিহীন, ঘৃণা মাখি এ-হৃদয়ে।
হোক না এমন,
আজানের ডাকে মন্দির ভরে যাক –
মন্ত্রধ্বনি, আরতির আলো মসজিদের চিরাগ!
হ্যাঁ, এ-কবিতা লিখেছিলাম বটে! শিল্পসুষমামণ্ডিত একটা লেখা! কিন্তু এ-লেখাও আজ আমাকে লজ্জা দিচ্ছে। ‘লেখকের তো লেখা ছাড়া আর কোনও দায় নেই’ – এই আপ্তবাক্য বলারও দিন ফুরিয়ে এল বুঝি! নীরোর মত বেহালা বাজানো নয়, কলম কৃপাণের চেয়েও শাণিত। কিন্তু আজ, মানুষের ঘরেদোরে দাঁড়িয়ে ঝাঁকুনি দিয়ে চেতনা জাগানো উচিত। সংবিত ফেরানোর প্রয়োজন ও সময় হয়েছে বুঝি! কলম নামিয়ে রেখে।
সূত্রপাত? সে তো সেই কবেই হয়েছিল। যখন আমার অন্য ধর্মাবলম্বী বান্ধবী বাড়িতে খেতে আসবে বলে আলমারি থেকে আলাদা বাসনকোসন বেরিয়েছে। যখন, আমার অন্যধর্মীয় বন্ধুটি সদ্যবিবাহিত কিন্তু কোথাও ঘর-ভাড়া পাচ্ছিল না। যখন, রাস্তা দিয়ে চলতে-চলতে, অন্যবেশ পরিহিতর দিকে তাকিয়ে শিশুটি বলেছে, ‘মা, ওরা তো বাঙালি নয়, না?’ যখন, সারা পৃথিবীজুড়ে ভয়ংকর সন্ত্রাস, বিশ্বে শুধু একটি-ই ধর্ম বিরাজ করবে, সেই তাড়না কিংবা উন্মাদনার বশে।
আমরা পারছি না। রাজনৈতিক দাবাখেলার ছক উল্টে দিতে পারছি না। ধুয়ে দিতে পারছি না সাম্প্রদায়িকতা। ধর্ম কেন আশ্রয় না হয়ে যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে দাঁড়াল, সে তো আমাদেরই চরম অশিক্ষা কিংবা পরম ধুরন্ধরপনার কারসাজি!
যাবতীয় স্ট্রিট কর্নার, পথনাটক, মিটিং-মিছিল... মিথ্যে বলব না আমাদের নিজের বোধবুদ্ধিও তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে কেমন! খবরের কাগজের সংহত প্রতিবেদনের আড়ালেও যে ঝকঝকে শ্ব-দন্ত উঁকি দিচ্ছে, রক্তমুখি, আমরা পড়তে পাচ্ছি তাকে। বুঝতে পারছি, টের পাচ্ছি এই দুর্যোগের ঘনঘটাকে।
জানি, ভালোবাসা সব সামলে নিতে পারে। যদি অনেকটা ভালোবাসা ছড়িয়ে দেওয়া যায় (উঁহু, করুণা নয় কিন্তু), দুই ভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের শরীরে, মননে, দেখিয়ে দেয়া যায়, কোথাও এতটুকু পার্থক্য নেই, বিভেদ ঘুচবে না? রক্তগঙ্গা কি বইবে না তবে?
Link: https://ebongalap.org/not-in-my-name