22-06-2024 20:29:48 pm
Link: https://ebongalap.org/nrc-and-transgender-communities
বিশাল এই দেশের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত অব্দি ছুটছে রাতের লম্বা ট্রেন। সব কামরায় আলো জ্বলছে। কেউ নৈশাহার সারছে, কেউ আধো ঘুমন্ত, কেউ বা গল্প গুজবে মত্ত। এক কমনীয় চেহারার রূপান্তরকামী প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেবে ব'লে টয়লেটের দিকে যাচ্ছিল। সেখানে ঢোকার আগেই তাকে ঘিরে ফেললো তিন মত্ত যুবক, হাত ধরে টানাটানি—পয়সা দেবে—কিন্তু তাদের 'করিয়ে দিতে হবে'।
রূপান্তরকামীটি জানতো এরা এলজিবিটি-র ভাগগুলো জানে না। এদের কাছে সবাই 'হিজড়া'। আর বাবুলোগরা দু’টি জিনিসকেই যমের মতো ডরায়—এইডস আর হিজড়ার অভিশাপ। তাই উপস্থিত বুদ্ধিসম্পন্ন সে ফস ক'রে বলে বসে, 'আমার এইডস আছে'। আঙুল মটকে, তালি বাজিয়ে বলে 'অভিশাপ দেব কিন্তু। তোর বালবাচ্চা সব আমার মতো হবে।'
এই আমার দেশ। যেখানে কিছু কিছু শারীরিক ভিন্নতার জন্য মানুষকে অবমানব হিসেবে দেখারই রেওয়াজ। তাই অচিন্ত্য যখন বলে—‘এনআরসি হলে কি এর থেকেও খারাপ কিছু হবে’—তখন কী উত্তর দেব বুঝতে পারি না।
তার বহিরঙ্গ এক তরুণের, কিন্তু অন্তরে সে এক পরিণত নারী, শুধুই নারী। শ্রাবণী আমাকে দেখায় অচিন্ত্যর সালোয়ারের একটি পা যেখানে নেইল পলিশ পরা পায়ের ছড়ানো পাতাকে ছুঁয়েছে, ঠিক সেইখানে উঁকি দিচ্ছে রূপোর একটি সরু এঙ্কলেট। ঘাড় অব্দি ববকাট চুল। অসাধারণ কথক সে—ট্রান্সজেন্ডারের আনন্দ-বেদনা যার ভাষায় যথাযথভাবে প্রকাশিত হয়। শিক্ষার সুস্পষ্ট ছাপ নিয়ে অচিন্ত্য রবীন্দ্রভারতীর গ্র্যাজুয়েট, অনেক কাল রবীন্দ্রসংগীত শিখেছে অগ্নিভ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। অসাধারণ রান্না করে। নিখুঁতভাবে শাড়ি পরতে জানে। কোমল, খুব কোমল আর মার্জিত তার কথা বলার ধরন। এইসবের সঙ্গে সে রাখার সাহস পেয়েছে পর্যাপ্ত দাড়িগোঁফ—তার নিজস্ব স্টাইল স্টেটমেন্ট। অনেক লড়াইয়ের পর তার এই সমস্ত অর্জন। নিজের জীবন তো আছেই, ‘প্রান্তকথা’ নামে এই কমিউনিটির মানুষদের নিয়ে কাজ করা একটি এনজিও-র সঙ্গে যুক্ত থাকার দরুণ সে এই 'অন্যরকম' মানুষদের সমস্যা সম্বন্ধে দারুণ ওয়াকিবহাল। তার সঙ্গে দীর্ঘ আড্ডায় জানা গেল কতোরকম অপমান আর অত্যাচারের মধ্যে দিয়ে এদের যাপন, আর নতুন আইন দুটি কী ভাবে সেখানে হয়ে উঠতে পারে বোঝার ওপর শাকের আঁটি।
কী আমাদের নাম...
"
আসল নাম প্রমাণ করতে করতেই সে বিদেশি ব'লে ঘোষিত হয়ে যেতে পারে।
ফ্যামিলি ট্রি তৈরি ক'রে নিয়ে আসা তার পক্ষে চাঁদে গিয়ে ফিরে আসার চাইতেও কঠিন।
"
এনআরসি আর সিএএ সকলের যা যা ক্ষতি করবে ব'লে আশঙ্কা, সেগুলোকে বহুগুণ বর্ধিত ক'রে দিলে যে লেলিহান আগুনের ছ্যাঁকা লাগবে তা কিন্তু এলজিবিটি সম্প্রদায়ের মানুষকেই সবচেয়ে বেশি পোড়াবে, বিশেষ ক'রে রূপান্তরকামীদের। যাদের নিজের নামধাম প্রমাণ করাই সমস্যা, তারা কী ক'রে অন্য প্রমাণ জোগাড় করতে পারবে! বেশির ভাগ 'অন্যরকম' মানুষই শৈশবে বা কৈশোরে তার শারীরিক মানসিক ভিন্নতার দরুন বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয় বা গঞ্জনা সইতে না পেরে নিজেই গৃহত্যাগ করে। বেঁচে থাকার তাগিদে নতুন নাম নেয়। বিশেষ ক'রে যারা কঠোরভাবে সম্প্রদায়বদ্ধ থাকে, যেমন আমরা যাদের 'হিজড়া' ব'লে জানি, সেই মানুষেরা গুরুর কাছে দীক্ষা নেবার পর গুরুপ্রদত্ত নামেই পরিচিত হয়। গুরু এবং গুরুর অন্যান্য শিষ্যদের সঙ্গে এক মহল্লায় বাস করতে বাধ্য হয়। হয়তো বাড়িতে যেসব অত্যাচার চলছিল এখানে তার থেকে ক্রূরতর শোষণ ও অত্যাচারচক্রে সে অনিচ্ছাতেও জড়িয়ে যায়। কিন্তু তাতে কী! এনআরসি শুধু আইনি প্রমাণ চায়। মানবিকতার অপ্রমাণ নিয়ে চর্চা তার সিলেবাসে নেই।
কিন্তু যারা গৃহত্যাগে বাধ্য বা বিতাড়িত হয়, বিগত জীবনের কোনো চিহ্ন না রেখে—কারণ বাবা মা, আত্মীয় পরিজন, সমাজ তাদের অস্বীকার করে—তারা বাঁচে নতুন নাম ও ঠিকানায়। তারা তো নাগরিকত্ব প্রমাণের প্রথম ধাপেই হোঁচট খাবে। ২০১৪ সালের হিউম্যান রাইটস কমিশনের রিপোর্ট এর প্রমাণ দেবে। সেখানে দেখা যাচ্ছে ৯৮% 'অন্যরকম' মানুষকে বারো বছর পোরার আগেই বিতাড়িত হতে হচ্ছে বা সে স্বেচ্ছায় গৃহত্যাগ করছে। মাত্র ২% বাড়িতে থাকার সুযোগ পায়। এই বিপুলসংখ্যক মানুষের মধ্যে যারা 'হিজড়া' সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হলো তারা এবং অনেক সময় অন্যেরাও তাদের যাবতীয় ডকুমেন্টস, আধার, প্যান, এপিক কার্ড সমস্ত ক'রে থাকে নতুন নামে। এই ডকুমেন্টগুলোও এখন আর নাগরিকত্ব প্রমাণে জায়েজ নয়। ফলে আসল নাম প্রমাণ করতে করতেই সে বিদেশি ব'লে ঘোষিত হয়ে যেতে পারে। ফ্যামিলি ট্রি তৈরি ক'রে নিয়ে আসা তার পক্ষে চাঁদে গিয়ে ফিরে আসার চাইতেও কঠিন।
এর পরের প্রমাণ স্কুল সার্টিফিকেট। এলজিবিটি মানুষেরা নাহয় স্কুলে ভর্তি হলো, কিন্তু পাঠ শেষ করতে পারে কি? অচিন্ত্যর বাড়ি নৈহাটি এলাকায়, সেখানে অবর্ণনীয় কষ্ট ক'রে স্কুলের পাঠ শেষ করতে পেরেছিল সে। সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় পেছন থেকে প্রচন্ড ধাক্কা, যাতে সে ছিটকে পড়ে অনেক নীচে, আছাড় খেয়ে তারই বুকে পিঠে সজোরে নোংরা দুহাত ঘসে দেওয়া এইসব ছিলো নেহাত জলভাত। সবচেয়ে বড় কথা তার কোথাও নালিশ জানাবার জায়গা ছিল না। মাস্টার মশাই থেকে শুরু ক'রে বাবা মায়েরাও জেনে বসে আছেন যে এটাই 'অন্যরকম' বাচ্চার ভবিতব্য। তবু সহপাঠীদের বুলিয়িং, সেক্স নিয়ে উঠতিদের উদগ্র কৌতুহল অগ্রাহ্য ক'রে দাঁতে দাঁত চেপে লড়ে গেছে অচিন্ত্য, কারণ নিজেকে নিয়ে নিজের ভেতরের সংশয়, বাইরের লাঞ্ছনা সবকিছু থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় শিক্ষা, এই সংরাগ সে কোথা থেকে পেয়েছিল তা সে নিজেও জানে না।
কিন্তু সবাই তো অচিন্ত্য নয়। বেশির ভাগ 'অন্যরকম' বাচ্চা স্কুলে ভর্তি হয় না অথবা স্কুলছুট হয়। ফলে সার্টিফিকেট তো থাকেই না, নিজেকে মানুষ ভাবা, নাগরিকত্বের কোন কোন সুযোগসুবিধের অধিকারী তারা, সেটা জানা বোঝার মতো শিক্ষাটুকুও তাদের থাকে না। নীরবে মার খাওয়া, উলটে মার দিতে না জানা এই সম্প্রদায়ের মানুষকে নাগরিকত্বের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা সবচেয়ে সোজা। আর পাকেচক্রে তাইই হতে চলেছে। আসাম এনআরসি-তে বিদেশী ব'লে চিহ্নিত মানুষের মধ্যে রূপান্তরকামীদের আনুপাতিক হারের বিশালতা সেই প্রমাণই দেয়।
পিতৃতন্ত্রে রূপান্তরকামীর উত্তরাধিকার
"
একটি তথাকথিত মেয়ের পুরুষালি হাবভাব পোশাকআশাক ততো অসহ্য নয়,
যতটা নিকৃষ্ট একজন পুরুষের নারী হতে চাওয়া!
"
আসামে এনআরসি সংক্রান্ত ডকুমেন্টস যা যা চাওয়া হয়েছিল তাতে সম্পত্তির অংশীদারী বা উত্তরাধিকারসংক্রান্ত প্রমাণপত্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব'লে বিবেচিত হয়েছে। অচিন্ত্যর কাছে এবং ‘দুর্বার’-এর আলোচনাসভায় এরকম একশ রূপান্তরকামীকে জেনেছি, দেখেছি, যারা সম্পত্তির ভাগ চেয়ে লড়ে যাচ্ছে। একবার যদি শারীরিক মানসিক অত্যাচারের ফলে মানুষটি ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়, তাহলে তার ফেরার সব রাস্তাই বন্ধ হয়ে যায়। সামাজিক বিড়ম্বনা ও সংস্কারের ছুতোতে যারা তাকে ভাগাতে চাইছিল, তখন তাদেরই পোয়া বারো। তারপর ফিরতে চাইলে বেদম মার, চুল কেটে দেওয়া, গুন্ডা লেলিয়ে দেওয়া, এইসবের মধ্য দিয়ে যাওয়া মানুষদের দেখেছি নিজের চোখে। এই কারণেই ওয়ার্কশপে সুপ্রিম কোর্টের এডভোকেট তৃপ্তি ট্যান্ডনের গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ, 'কভি ঘর মত ছোড়ো। যো ভি হো যায়ে, ঘরমে হি রহনা।'
অচিন্ত্য একজনের কথা বলছিলো যে একমাত্র উত্তরাধিকারী হওয়া সত্ত্বেও বাবার মৃত্যুর পর তার ঠাকুমা তাকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত করবার জন্য উইল বানাচ্ছেন। সঙ্গে নিরন্তর চেষ্টা যাতে সে নিজের ঘরটুকু এখনই ছেড়ে চলে যায়। গোটা বাড়িতে তার নিজের ইচ্ছাধীন বিচরণের অধিকার নেই, শুধু দিনান্তে নিজের ঘরটিতে ফিরে আসবার স্বাধীনতা আছে। সেটুকুও কেড়ে নেবার মরিয়া চেষ্টা।
অল্পবয়সী এক রূপান্তরকামী, মাথার ওপর ছাদটুকুও না থাকলে কতরকম দুর্দশায় তাকে পড়তে হবে, তা নিয়ে নিজের রক্তের মানুষজনই যদি এইরকম নির্দয় হয়ে উঠতে পারে, তাহলে সম্পত্তির মালিকানা প্রমাণ করতে না পারলে রাষ্ট্রের চোখে তার হাল কী হবে সে ভালোই বোঝা যায়। অতএব নাগরিকত্ব প্রমাণের এ পথও যে রূপান্তরকামীর কাছে বন্ধ সেকথা বলা বাহুল্য।
এইখানে পিতৃতান্ত্রিক সমাজের একখান মোক্ষম ছলনার কথা না বলে পারা যাচ্ছে না। এতো সমস্যার মধ্যে একটু হলেও সমস্যা যাঁদের কম তাঁরা হলেন ট্রান্সমেন। যারা শরীরে অল্পবিস্তর নারীত্ব নিয়েও পুরুষের মন বহন করে। সহজ কথায় যারা ছেলে হতে চায়। একটি তথাকথিত মেয়ের পুরুষালি হাবভাব পোশাকআশাক ততো অসহ্য নয়, যতটা নিকৃষ্ট একজন পুরুষের নারী হতে চাওয়া! পুরুষ ঠোঁটে লিপস্টিক মাখবে, মাথায় ফুল গুঁজবে, শাড়ি পরবে এসব ভড়ং দেখলে সমাজপতিদের চোখ অন্ধ হয়ে আসে। কিন্তু উল্টোটা ঘটলে ঢোঁক গিলে সহ্য ক'রে নেওয়াই দস্তুর, চাই কী যোগ্যতর উত্তরাধিকারীর অভাবে পুরুষালি মেয়েটিকে সম্পত্তিও দিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
আমাদের ধর্মই বা কী...
"
সিএএ-তে কি তাহলে সবচেয়ে অসুবিধে মুসলমান রূপান্তরকামীর?
"
অচিন্ত্যকে জিজ্ঞাসা করি, সিএএ-তে কি তাহলে সবচেয়ে অসুবিধে মুসলমান রূপান্তরকামীর? তার উত্তর কী হবে জানাই ছিলো। কারণ যতোই ঘরবাড়ি, আপনজনদের ছাড়ো, ধর্ম কাউকে ছাড়ে না। একেবারে কমলি নেহি ছোড়েগা স্টাইল। এনআরসিতে কাগজ দেখাতে না পারলেও ধর্ম তো দেখাই যাবে। যেই দেখা যাবে মুসলমান, অমনি বিদেশি ব'লে ঘোষণা করা হবে তাদের। সোজা ডিটেনশন ক্যাম্প। সস্তা শ্রমের যোগান। নাহলে কাঁটাতার উঁচু ক'রে প্রতিবেশী দেশে পুশ ব্যাক। এখন বাংলায় কথা বলা মানেই বাংলাদেশী। কেউ যদি তাও ফিরে আসার চেষ্টা করে, তাকে ফেলানি ক'রে কাঁটাতারে ঝুলিয়ে দেবে বীর বিএসএফ যাদের প্রাথমিক দায়িত্ব কোনোরকম অনুপ্রবেশ হ'লে তা ঠেকানো। মুসলমান ট্রান্সজেন্ডার ট্রাইবুনালে অব্দি যেতে পারবে না।
অর্থাৎ মুসলমান রূপান্তরকামী, সে 'হিজড়া'ই হোক বা আর কিছু, এনআরসি, সিএএ-র সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে সবচেয়ে অসহায়।
এই প্রসঙ্গে আমরা আলোচনা করি শাসক দলটির সাফল্য নিয়ে—সমাজের সব স্তরে বিভাজন চারিয়ে দেবার দক্ষতা নিয়ে। এনআরসি নিয়ে তুলকালাম শুরু হবার পর দেশের 'হিজড়া' সম্প্রদায় আনঅফিসিয়ালি দু’ভাগে বিভক্ত। সভা সমিতিতে এখন একদল গেরুয়া শাড়িতে আসাটা পছন্দ করে, হাতে জড়ানো রুদ্রাক্ষের মালা। তারা নিজেদের 'হিজড়া' বলে না, পরিচয় দেয় কিন্নর ব'লে। জোরগলায় জানান দেয় তারা হিন্দু, মুসলমান 'হিজড়া'দের সঙ্গে তাদের এক ক'রে যেন দেখা না হয়।
নিকট অতীতেও এই বিভাজন, এই ভাগাভাগির চেহারা এইরকম ছিল না, একথা ওয়াকিবহালরা ভালো ক'রেই জানেন। এখনও এই সম্প্রদায়ের সঙ্ঘবদ্ধ জীবন শুরু করবার পূর্বে যে দীক্ষাদান তার রীতিনীতি নিয়মকানুন কিন্তু দুই ধর্ম দ্বারাই প্রভাবিত।
আলোচনা গড়াতে গড়াতে সন্ধ্যের ছায়া ঘনায়। অচিন্ত্যর জীবনসঙ্গীর ফোন আসে। তাকে ফিরতে হবে। আশঙ্কা প্রকাশ করি, বহু কষ্টের অর্জন এই ফেরার জায়গাগুলো তছনছ ক'রে দেবে নয়া আইন। কে কোথায় ছিটকে পড়বে, কার রুজিরুটি ছিনিয়ে নেওয়া হবে, কেউ জানে না। অনেক লড়াইয়ের পর যারা ভেবেছিলো বন্দরে নাও ভিড়েছে তাদের জন্য হয়তো অপেক্ষা ক'রে আছে বিশাল ঝড়, নয়তো দাবানল। যেমন শুরুতে ট্রেনের কামরার যে রূপান্তরকামীর কথা বলেছিলাম আমি। বিহার থেকে 'লন্ডা' নাচ বাবদ পাওয়া টাকা নিয়ে ফেরার পথে ঘটেছিলো ঐ বিপত্তি। সেই নারীহৃদয় মানুষটি এখন কলকাতার প্রখ্যাত হাসপাতালে ওটি টেকনিশিয়ান। গোটা ভারতে প্রথম ট্রান্সজেন্ডার যে এই কৃতিত্বের অধিকারী। তার হাতে কিন্তু নিজের বার্থ সার্টিফিকেটটাও নেই।
অচিন্ত্য যাবার সময় ভরসার কথা শোনালো—প্রান্তিকতা একটি অমিত সম্ভাবনা, এক অনন্য রিসোর্স। প্রান্তিক মানুষের কাছে এমন জীবনবোধ, এমন সারভাইভাল ট্রিকস বা টিঁকে থাকার কৌশল গচ্ছিত থাকে যে সেগুলো প্রয়োগ ক'রেই তারা হামেশা জিতে যেতে পারে। প্রত্যেকটা যুদ্ধ জেতার জন্য প্রাণপণ লড়া, তারপর অর্জিত অভিজ্ঞতা নিয়ে পরের যুদ্ধের প্রস্তুতি। আবার জয়।
কিন্তু তাই ব'লে এনআরসি সিএএ-র জোড়া ফলার সামনে এই প্রান্তিক মানুষগুলো! পারবেন ওরা! অচিন্ত্য আমার হাতে মৃদু চাপ দিয়ে গভীর হাসে, 'ভাববেন না। একটা না একটা হাল ঠিকই বেরোবে, দেখে নেবেন।'
অনেকক্ষণ কান পেতে শুনি সিঁড়ির ধাপে ধাপে তার প্রত্যয়ী পায়ের শব্দ। আমার যাওয়া তো নয় যাওয়া...
Link: https://ebongalap.org/nrc-and-transgender-communities