07-03-2024 12:55:58 pm
Link: https://ebongalap.org/prestige-ad-review-gender-perspective
আমাদের এবারের নজরে বিজ্ঞাপনে দেখব প্রেস্টিজ প্রেশার কুকারের দুটি বিজ্ঞাপন যাদের মধ্যে অনেক দিনের তফাৎ। যুগের সঙ্গে সঙ্গে বাজারের গল্প কী ভাবে বদলে যায়, বিজ্ঞাপন দু'টি সেই গল্পই বলে। বিজ্ঞাপন দু'টি একবার দেখলেই আপনাদের নজরে পড়বে, প্রোডাক্টের চেহারা আর নারী ও পুরুষ চরিত্রগুলোর ভূমিকায় বদল।
প্রেস্টিজের পুরোনো বিজ্ঞাপন
এখনও আমাদের দেশে বাড়ির রান্না মূলত মহিলারাই করেন। দুটি বিজ্ঞাপনেই আমরা সে রকম আন্দাজই পাই। প্রথম বিজ্ঞাপনে রান্নাঘর না দেখা গেলেও পরিষ্কার যে স্বামীটি স্ত্রী-র ব্যবহারের জন্যেই প্রেশার কুকার কিনছেন। কিন্তু কেনবার গোটা প্রক্রিয়ার মধ্যে স্ত্রী-র কোনও ভূমিকা নেই। পুরুষ দোকানদার আর পুরুষ ক্রেতার মধ্যে কথা চলছে। এমন কী বিজ্ঞাপনের যে মূল কথা, যে প্রেস্টিজ বাকি প্রেশার কুকারের চেয়ে বেশি নিরাপদ, তার মানে মহিলার প্রাণ বাাঁচাবে, সেই প্রয়োজনীয়তাটাও ঘুরিয়ে স্বামীর পত্নী-প্রেমের সূচক হিসেবে দেখানো হচ্ছে। নিজের প্রাণ বাঁচানোর দায়টুকুও মহিলা নিতে পারছেন না, তিনি পুরোপুরিই আমরা যাকে বলি ‘প্যাসিভ’ (ঠিক বাংলাটা পেলাম না)। এ ছাড়াও বোঝা যাচ্ছে, এই সময়ে বাজারে প্রেশার কুকার নতুন আসছে, তাই সেটা কী ভাবে কাজ করে সেটাও বোঝাবার দরকার হচ্ছে। এই সময়ে বাজারে প্রেশার কুকার – এই প্রোডাক্টটাকেই বিক্রি করবার দরকার আছে, আর তার মধ্যে, প্রেস্টিজ ব্র্যান্ডের 'ইউনিক সেলিং প্রপোজিশন' হচ্ছে ওই গ্যাসকেট রিলিজের ফাঁক, যা প্রেশারটাকে বেরুতে দেয়, কুকারের ফেটে ষাওয়ার বিপদ আটকায়। তাই অন্য প্রেশার কুকারের বদলে এটা কেনা ভালো বলা হচ্ছে। এটা ভারতীয় বাজারের সেই সময়ের চেহারা যখন নতুন পরিবার নতুন নতুন প্রোডাক্ট ব্যবহারের মধ্য দিয়ে আধুনিকতায় প্রবেশ করছে।
এর পরের ছবি ২০১৩। ভারতীয় বাজার ইতিমধ্যে অনেক এগিয়ে গিয়েছে। প্রেস্টিজ কুকারের চেহারাও বদলে গিয়ে অনেক আধুনিক হয়ে উঠেছে। সেই রকমই আধুনিক ঐশ্বর্যা রাই আর অভিষেক বচ্চনের জীবনযাত্রা। রান্না ঘরের যে সেটটা বানানো হয়েছে, সেটাও চিত্রতারকাদের বাড়ি সম্পর্কে আমাদের ধারণা অনুযায়ী।
প্রেস্টিজের সাম্প্রতিক বিজ্ঞাপন
প্রেশার কুকার কাকে বলে তা ইতিমধ্যে বাজারের ক্রেতারা জানেন। আপনি যদি প্রেশার কুকার কিনতে গিয়ে থাকেন তবে দেখবেন, অনেক কম দামী প্রেশার কুকারে বাজার ছেয়ে গিয়েছে, প্রেস্টিজ বা হকিন্স তাঁরাই কেনেন, যাঁরা বেশি দাম দিয়ে ‘ভালো’ জিনিস কিনতে চান। আর এখানেই বিজ্ঞাপনের গল্পটা বদলে যায়। কারণ, অনেক কম দামের প্রেশার কুকার যদি এখন মোটামুটি ‘ভালো’ মানের নিরাপত্তা দেয়, তবে কেবল কাজের কথা বলে, নিরাপত্তার কথা বলে, বেশি দামের একটা ব্র্যান্ডকে বিক্রি করা যায় না। কুকারের ব্যবহারিক মূল্যের চেয়ে প্রতীকী মূল্যের ওপর বেশি জোর দিতে হয়। তাই বিজ্ঞাপন রূপকথা বলে: এই নতুন ধরণের প্রেশার কুকার কিনে ক্রেতা একটা নতুন লাইফস্টাইল কিনছেন, যেটা তার মাইক্রোওয়েভ, ডাবল ডোর ৫২০ লিটারের ফ্রিজ, হ্যাচব্যাক গাড়ি কেনার স্বপ্নের সঙ্গে মানানসই, আরও আরও ‘ভালো’ থাকার গল্পের প্রথম ধাপ, যেটা তুলনামূলক কম খরচেই পেরোনো যায়। এই গল্পের 'বউ' তাই আধুনিকা, মনে হয়, ‘স্বাধীন,’ প্রেস্টিজ তিনি নিজের সিদ্ধান্তে (এবং হয়তো নিজের পয়সায়) কিনেছেন, তাই তিনি স্বামীকে বলেন প্রেস্টিজ নিয়ে তুমি কোনও কথা বলবে না। এই বিজ্ঞাপনে আবার এরা নামহীন মডেল নন, রক্ত মাংসের চিত্রতারকা – শুটিং ইত্যাদির কথা বলে অভিষেক আর ঐশ্বর্যাকে তাদের 'রিয়েল লাইফ' ভূমিকাতে দেখানো হয়েছে।
আপাতত শুধু একটা প্রশ্ন করবেন না, যে, দুজনেই প্রফেশনাল হলে ( এবং যত দূর জানি শুটিং-এ ঐশ্বর্যা বেশি ব্যস্ত থাকেন) রান্নাটা ঐশ্বর্যাকে কেন করতে হয়? তবে ভাববেন না, পরের বিজ্ঞাপনে অভিষেক রান্না করতেই পারেন, যদি বাজারের ছবি তখন তাই হয়। মাল বিক্রি হলে বিজ্ঞাপন সব করতে রাজি!
Link: https://ebongalap.org/prestige-ad-review-gender-perspective