কানু হেন গুণনিধি কারে দিয়ে যাব?
1 2004আজ্ঞে হ্যাঁ এই কানুটি আমি। গুণনিধিও আমি। আর ব্যাকুল রাধিকাটিও আমিই!
সকাল থেকে উঠে এই এক চিন্তা! এই যে কষ্ট ক’রে বইপত্তর পড়িয়ে, রান্নাবান্না শিখিয়ে, চালিয়াতি রপ্ত করিয়ে, চালাক চালাক কথা বলতে শিখিয়ে যে আমিটিকে গড়ে তুললুম, কার হাতে দিয়ে যাবো? ভাবতে ভাবতে কত কত শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা চলে গেল... চুলে যত্রতত্র রূপোলী ঝিলিক যৌবনের অস্তরাগ জানান দিতে শুরু করলো অথচ আমার আর পাত্রীস্থ হওয়া হলো না। নিজের জন্য যত না, তার চেয়ে কিছু কম কষ্ট আমার তাদের জন্যও হয় না যাঁরা এমন গুণনিধিটিকে করায়ত্ত করতে পারলেন না।
চেষ্টার কিন্তু ত্রুটি ছিলো না। আপনাদের জনান্তিকে জানিয়ে রাখি, চোখ কান খোলা রাখলেও বোঝা কঠিন কিন্তু, আমার জন্য পাত্রী সন্ধানে বেশ কিছু ভদ্রবেশী নারী পুরুষ শকুনের চোখ নিয়ে ঘুরছে আপনাদের আশেপাশেই। তাঁরা কেউ আমার সুহৃদ, কেউ স্বজন, কেউ আবার শত্রুও। অকাতরে সন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন। সবাই অদ্যাবধি ব্যর্থ হয়েছেন আমারই মত। এঁদের মধ্যে সর্বাগ্রে আছেন আমার মাতৃদেবী। আমার বন্ধুদের মতে - "বালাজোড়া নিয়ে রেডি"। কিন্তু ওঁর নির্বাচনগুলো একটু একপেশে- ওঁর কাছে আসা ওঁর পাঠিকা, ওঁর অনুরাগী, ওঁর মতে সম্ভাবনাময় কবি, ওঁর বিচারে শক্তিমান সম্পাদিকা- যাঁরা বেশিরভাগ সময়ই প্রথিতযশা লেখিকার কন্যার "পাত্রীসন্ধান" ঠাহরই করে উঠতে পারেন না। দুয়েকবার এর অন্তরায় ঘটছে যদিও! ওঁর এক বন্ধু দম্পতির বাড়িতে একসময় মাঝেমধ্যে নৈশভোজে যেতুম- তাঁদের এক কন্যা, আমারই কাছাকাছি বয়েসী, তিনি একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সেরে ঢাকাই শাড়ি পড়ে বাড়ি ফিরলেন, কিছুক্ষণ পরে একটি স্প্যাগেটি টপ পড়ে আমাদের কাছে বিদায় নিয়ে একটা পার্টির জন্য বেরিয়ে গেলেন। আমার মায়ের চোখে মুগ্ধতা আশঙ্কাজনক ঠেকলো। উনি অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে চাইলেন- আমি একেবারেই অন্যদিকে তাকিয়ে রইলাম। বারান্দা থেকে একটি গাড়ি এবং উর্ধমুখী উৎকন্ঠিত এক পুরুষের মুখ আমি দেখেছিলাম। বাড়ি ফিরে মা বললেন- ওরা তো আমার বন্ধু, কথা বলবো? আমি রেগে গিয়েছিলুম খুবই, আবোল তাবোল কথা বলো না-- এমনিতেই একটা হোপলেসলি হেটেরোসেক্সুয়াল মেয়ে-- মা মিন মিন করে বলেছিলেন- তাতে কী?... আমার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে এর চেয়ে বেশি কিছু বলে উঠতে পারেন নি। অনেক অনেক বছর পর, সেই মেয়েটির সঙ্গে রাতবিরেতে ক্ষুদ্র বার্তা আদান প্রদান করতে করতে আজকে আমারও মনে হয়, তাতে কী?
এই আগল মুক্ত "তাতে কী" অবস্থাটা অতি নবীন, কিছু আধুনিক। আগলমুক্ত হওয়া মানেই যে মুক্তি নয়, তা তো নতুন করে বলতে হবেনা। মধ্যবিত্ত মানুষ আজকাল ঝাল, ঝোল, অম্বল, কাবাব, বিরিয়ানি, চাউমিন চিলি চিকেন এর বাইরে যেমন দুঃসাহসী বিদেশী খাবার চেখে দেখেন - কুলু মানালি, পুরী, মন্দারমনি, কাশ্মীর, রাজস্থান না গিয়ে গরমের ছুটিতে পূর্ব ইওরোপ চেখে দেখেন তেমনই অনেকেই বিভিন্ন যৌনাভ্যাসও চেখে দেখেন- স্বাদ বদল হয়, কিন্তু জিহ্বা নয়। এঁদের সসম্মানে "দুঃসাহসী" আর অসম্মানে "বাই-কিউরিয়স" বলে ডাকা হয়। এঁদের সঙ্গে আমার ঘন ঘন সাক্ষাৎ হয় এবং পরিণতি আমার সঙ্গিনী খোঁজার যাত্রায় অনুকূল হয়না। যথার্থভাবে কেবল শুধু কিছু "মায়া" রহিয়া যায়।
অত্যন্ত সহৃদয়ভাবে আমাকে আমার পরম সুহৃদ অনুত্তমা, লায়লা, অনিন্দিতারা বোঝান যে এখন তো অনাঘ্রাতা, অপাপবিদ্ধা কিশোরী পাওয়া যাবে না জীবনের এই প্রান্তে এসে। তাহলে তো লোকে আমায় ক্রেডল স্ন্যাচার বলবে। এখন পরিনত বয়সেই মন দেওয়া ভালো। এমনিতেই আমি আশৈশব বয়েসে বড়দের সঙ্গে মেলামেশা করেছি বলে বয়সে বড় মহলে আমার স্বাচ্ছন্দ্য বেশি। সেটা সীমাহীন হয়ে পড়েছিলো একবার মায়ের এক কাছাকাছি বয়েসী ভারি বিদূষী মহিলার প্রতি মনে মনে আকৃষ্ট হয়ে। তাঁকে আমি যথাসম্ভব যত্মআত্তি ও মনোযোগ দিচ্ছি। তিনিও যথোপযুক্ত গ্রেসের সঙ্গে প্রায় অনবলোকনে আমাকে বধ করে চলেছেন এবং গ্রহণ করছেন মনোযোগ। আমি তাঁকে কিছু সম্বোধন না করে প্রোফেসর অমুক বলে কথা বলছি। কিন্তু শেষদৃশ্যে লঘুক্রীড়া হলো। উনি একদিন আমাদের ভালো-বাসা বাড়ির ফোনে ফোন করে আমার গলা চিনতে পেরে বললেন- ও তুই? নবনীতা কেমন আছে রে? আমি অমুক মাসী বলছি- তোর সঙ্গে কথা ছিলো… এহেন স্নেহবচনে এমন ক্ষতবিক্ষত তার আগে কোনদিন হইনি-- আমি কথা না বাড়িয়ে বললাম- ধরুন, মাকে দিচ্ছি, আমি এখুনি অফিসের জন্য বেরোবো। এই আঘাত কাটিয়ে উঠতে বেশ কিছুটা সময় লেগেছিলো।
এমনিতে যেকোনো মহিলা দেখলেই আমার অনিয়ন্ত্রিত, অনৈচ্ছিক পেশীগুলো নিজেরাই আমাকে মধ্যযুগীয় নাইটে রূপান্তরিত করে। একদিন সাদার্ন এভিনিউতে সন্ধে ঘনিয়ে এসেছে। রাস্তাঘাট ফাঁকার দিকে। দেখলাম দুটি তরুণী মেয়ে অসহায় মুখে রাস্তার দিকে দেখছে- একটি গাড়ির সামনে, গাড়িটি মাঝপথে দাঁড়িয়ে আছে। এমনিতেই সাদার্ন এভিনিউ অঞ্চলে আমার এবং আমার মায়ের শিভালরির নামডাক আছে। আমরা ওখানে একা মেয়েদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলে তাদের যানবাহন আসা অবদি অপেক্ষা করি। কখনও প্রয়োজন হলে গাড়িতে তুলে জনবহুল গড়িয়াহাটে পৌঁছে দিই। এটা আমরা বংশানুক্রমে করে চলেছি, এখন মা গাড়ি চালান না, আমি একাই করি। তাদের মুখও ভালো করে দেখা হয়না অনেক সময়েই। এই মেয়েদুটিকে দেখে ভীতা হরিণীর মত মনে হলো- আমি আল পাচিনো অবতারে নেমে পড়লুম। গাড়ি ঠেলে একদিকে নিয়ে গেলুম। তৎপরতার সঙ্গে পাংচার হয়ে যাওয়া টায়ার বদল করে দিলুম (মোটর মেকানিকের কাজ আমি ছোট থেকেই রপ্ত করে রেখেছি)। একটি মেয়ে এসে আমাকে সবেগে আলিঙ্গন করলেন- ‘আন্টি থ্যাংক ইউ সো মাচ’!
গল্পটা ভারি মিষ্টি হলেও খুব যে সুখের নয়, তা নিশ্চয়ই বলে দিতে হবেনা।
হয় কেউ আমার মাসী হয়ে যাচ্ছেন বা আমি কারো; তাই মধ্যপন্থা নিলুম। আমার বড়দির এক বন্ধু, আবার মায়ের বন্ধুকন্যাও বটে- তাঁর সঙ্গে প্রণয়জালে আবদ্ধ হলুম। তিনি আমার চেয়ে বয়েসে ১৫-১৬ বছরের বড়। যথার্থভাবে রাগের পথে ঘাটে তাঁর সঙ্গে আমার চেনাশুনো- ডোভার লেন মিউজিক কনফারেন্সে দেখা হতো- আজ্ঞে হ্যাঁ, তখনও কোলকাতায় জানুয়ারী মাসে ঠান্ডা পড়তো। উষ্ণতার খোঁজে ডোভার লেন থেকে বসবার ঘর ও কালক্রমে শোবার ঘর অবধি আমার যাত্রাপথ সুগম হলো। সেই সময়ে তাঁর বিবাহটি দোদুল্যমান। স্বামী অন্যত্র থাকেন। আমার যৌবন তখন মধ্যগগনে টগবগ করে ফুটছে। আমার মা বাধ সাধলেন। তাঁকে ডেকে ছবি বিশ্বাসের কায়দায় বললেন আমার সঙ্গে আর মেলামেশা না করতে, আমার জীবন পড়ে আছে ইত্যাদি। আমি পরে জানতে পেরে তাঁকে অভয় দিলুম, মা বাবা তো ওরকম বলবেনই। আমি সংসার পাতার জন্য বাড়ি ভাড়া ইত্যাদির ব্যবস্থা করছি। মা আমাকে বললেন- ছোট, যে মেয়ে তোমার মায়ের কথা রাখল না, সে তোমার কথা কোনদিন রাখবে না। এই মেগালোম্যানিয়ার কোনও উত্তর হয়না বলে ক্রোধে মৌন রইলাম। পৃথিবীতে কোনো প্রেমিকা কেনই বা অন্যজনের মায়ের কথা রাখবে? মা জিতলেন। তাঁর স্বামী ফিরে এসে তাঁকে অনেক অপমানের মধ্যে "লেসবিয়ান" বলে সম্বোধন করায় তিনি পিছু হটলেন আজীবনের জন্য- আর সব ঠিক ছিল, তাই বলে লেসবিয়ান?
আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হলেই যে নারীরা লেসবিয়ান হয়ে যাচ্ছেন না, আমিই যে তাদের জীবনের একমাত্র নারী, এটি অনুধাবন করে অল্পবয়েসে আত্মশ্লাঘা বোধ করতুম, আজকাল আর করিনা।
কিছুদিন আগের কথা- এ কাহিনীর নায়িকাও আমার মাতৃদেবী। তিনি বিদেশে- আমি সেই ফাঁকে একটি গোপন অভিসারে জড়িয়ে পড়লুম। এদিকে মা ভিডিওকল করতে শিখেছেন। মধ্যরাতে দেখলেন যেখানে রয়েছি সেই দেওয়াল, পর্দা অচেনা ঠেকছে। আমি বাধ্য হয়ে স্বীকার করলাম যে আমি স্বগৃহে নেই- মায়ের চোখে মুখে উৎসাহ, একটা গতি হলো বুঝি। আমার তদনীন্তন সঙ্গিনী এবং আমি দুজনেই সেই সময়ে সুরাগ্রস্ত। উনি ভিডিও কলে দৃশ্যমান হলেন এবং আমার মাকে বললেন- তোমার মেয়ে আমার সঙ্গে ঝগড়া করছে, যদি বেশি ঝগড়া করে, তুমি কার পক্ষে যাবে - মেয়ের পক্ষে, না সত্যের পক্ষে? সহসা এমন প্রশ্নে আমিই দিশেহারা- সঙ্গিনীটি সুরার প্রভাবে অপ্রতিরোধ্য। মা আমার ভূয়দর্শী তায় স্থিতধী, কিছুতেই আর বিস্মিত হন না বুঝতে পারলাম। তিনি কালবিলম্ব না করে নাটকীয় ঋজুতার সঙ্গে বললেন- আমি সত্যের পক্ষে থাকবো-- সঙ্গিনীর মুখে বিজয়ীর হাসি- দেখো তোমার মা কী বলছেন? আর ঝগড়া করবে? মা এক স্বভাববিরুদ্ধ একপেশে হাসি হেসে বললেন - কারণ আমার মেয়ে সত্যের পক্ষেই থাকবে! পিনপতন স্তব্ধতা। আমি ভাবছি এই সংলাপের পরে খুচরো পয়সা ছোঁড়াটা অমোঘ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সঙ্গিনীও দমবার পাত্রী নন আর মা-বাবাদের প্রতি তাঁর সম্মানবোধ সর্বজনবিদিত, তাই গায়ে না মেখে বললেন- কিছু হলে আমাদের সামলে নেবে তো? এবারে মা কমল মিত্র! বললেন- তোমাদের দুজনকে নয় সামলে নেবো, আর তোমার স্বামী? তাকে কে সামলাবে? এরপর আর কথা হয়না। মা বিজয়িনী অহং এ আমাকে বললেন- সূর্য উঠলে বাড়ি যেও, রাতবিরেতে ফিরতে হবেনা।
ফিরে আমাকে আসতে হয়েছিলো। এবং আমাকে মা সামলেও ছিলেন। সেই তাঁকে কে সামলেছিলো, সে আর আমি জানতে পারিনি। মোট কথা এবারেও আমার পাত্রীস্থ হওয়া হয়নি।
বারংবার এমন সব লঘুক্রীড়ায় আমার ঘটকবাহিনী হতাশ, দিশেহারা ও লাগামছাড়া হয়ে পড়ছেন। আমার মনোবিদ বন্ধু অনুত্তমা আমার মায়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করে যত মেয়ে তার জীবনে তার কবিতা, বক্তব্যের অনুরাগী হয়ে আসছেন তাদের অনেকের ছবি পাঠিয়ে জানতে চাইছেন হবে কি না! কেবল পেশাদারী সততায় তাঁর মহিলা পেশেন্টদের ছাড় দিচ্ছেন। রাজলক্ষ্মী ছোট ছোট মেয়েদের আমাকে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতে উৎসাহী করছেন, লায়লা সেমিনার থেকে সুবক্তা কোন মেয়ের বিষয়ে আমাকে অবগত করছেন, নিজের তুতো বোনেদেরও ছাড়ছেন না। কিন্তু বেড়ালের ভাগ্যে শিকেটি ছিঁড়ছে না। সম্ভাব্য পাত্রীরা জানার আগেই আমি তাদের নাকচ করে দিচ্ছি- এভাবে হবেনা! অনুত্তমা লায়লা ঠিক করেছেন যে আমাকে সন্ধের দিকে টেরি অ্যালবার্ট কাটিয়ে, একটু রঙচঙে জামাকাপড় পরিয়ে নতুন নতুন গজিয়ে ওঠা ক্যাফেগুলোতে নিয়ে যাবেন। কিছুদিন যাবৎ একটি সন্তানসহ একক মায়ের খোঁজে আছি; আহা! বাচ্চাটা আমাকেও ছোটমা-বড়মা-রাঙামা-ফুলমা কিছু একটা "মা" বলে তো ডাকবে। সেজন্য বাচ্চাদের ইশকুলের দিকেও ওঁত পাততে বলছিলেন ঘটকবাহিনী- এগুলোতে আমি রাজী হইনি।
যদি কোনও মেয়ে দূর থেকে চোখে দেখে আমার মত অতি খর্বকায় এবং অতি স্থূলকায় একটি মানুষকে পছন্দ করে ফেলেন তবে যে তাঁর নান্দনিক বোধের দিকটি ভারি গোলমেলে এবং অগ্রহণযোগ্য, এতে কোনও সন্দেহ থাকবে না। তার হাতে আমার এত যতন করে ধুয়ে মুছে রাখা গৃহ ও ঘরসংসার সামলাবার দায়িত্ব দিই কী করে! আমার সঙ্গে মিশে, আমার বাক-ধারা শ্রবণ করে তবে তো রস আস্বাদন করবেন, বইয়ের তাকের সামনে এসে দাঁড়াবেন আমায় খুঁজতে, রান্নাঘরে থরে বিথরে সাজানো অগুনতি দেশী-বিদেশী মশলার কৌটো নেড়েচেড়ে দেখবেন, বোধি-আরাত্রিকার মত বন্ধুরা আমার যে যে রান্নাগুলো খেতে অস্বীকার করেন, সেগুলো সাগ্রহে খাবেন, রেকর্ডের তাকের ধুলো ঝেড়ে বাজিয়ে দেখবেন তবেই না গুণনিধির গুণপনা টের পাবেন- অন্তরঙ্গের রূপটি না চিনে অন্তর দেবেন কেমন করে?
কিন্তু এসব হয় না। আমার জীবনের প্রথম যে সম্ভাব্য সঙ্গিনীর সঙ্গে কিশোরী বয়সে একটা ফাঁকা অডিটোরিয়ামের অন্ধকারে মাফলার আর স্কার্ফ বদল করেছিলুম প্রায় পঁচিশ বছর আগে, তার পুত্রের এখন পাত্রীস্থ হবার সময় এসেছে শুনছি- কিন্তু আমার আর হল না।
আরেকবার এক সঙ্গিনীর সঙ্গে সংসার পাততে ঘটিবাটি বেচে তার ক্যালিফোর্নিয়ার স্টুডেন্টস এপার্টমেণ্ট গিয়ে উঠেছিলুম- সংসার হচ্ছিল ঠিকই কিন্তু বান্ধবীটি দেশের লোক তো বলাই বাহুল্য থাইল্যান্ডের সহপাঠিনী, বারকিনাফাসোর সহপাঠীর কাছেও আমাকে "কাজিন" বলে পরিচয় দিচ্ছিলেন। সে যাত্রাও তাই বৃথাই হলো।
কিছু বছর আগে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার উদ্দেশ্যে ফেসবুকে একটি স্টেটাস দিয়েছিলুম- আমি বিয়ে করে সেটিল হতে চাই। "সেটিল" লিখেছিলুম যাতে আমার দুর্নিবার হাহাকারটি একটি হাস্যরসের মাত্রাও পায় এবং প্রকৃত কদরদানরাই কেবল তার মূল্য বোঝেন। কিন্তু রসক্রিয়াটি বিপথগামী হলো। অনেকে মন্তব্য করলেন- কেমন পাত্র চাই? অনেকে রসিকতা করলেন। কিন্তু কেউ সাহস করে জিজ্ঞেস করলেন না যে পাত্র চাই? নাকি পাত্রী চাই? কীসের বাধায় জিজ্ঞেস করলেন না? আমি তো হাবেভাবে, চলনে বলনে এমন কিছু করিনি যাতে পাত্রী না চাইবার কোনও কারণ থাকতে পারে। তাঁরা লজ্জা পেলেন। অতি বড় শত্রু বা মিত্র কেউই আমাকে "লাজুক" বলে অভিহিত করবেন না। তাহলে লজ্জাটা কার?
লজ্জাটা মন্তব্যকারী বা কারিনীদের! তাঁদের "পাত্রী" উচ্চারণ করতে অস্বস্তি হয়েছে। এই "ডিনায়েল" তাদের, আমার নয়। ডিনায়েল মন্দ জিনিস, এই নিয়ে কোনও সংশয় নেই। এটি সত্যকে স্বীকার না করার একটি অবস্থান। এখানে সত্যটি হল, আমার পাত্রীসন্ধান- স্বীকার না করা হল "হোমোফোবিয়া"। হোমোফোবিয়া চিরকাল ছিল- আজও আছে। একটি পালাবদল ঘটেছে মাত্র এবং সেটি বাহ্যিক। আগে হোমোফোবিয়ায় আক্রান্ত মানুষ সাধারণভাবে মনে করতেন "ছেলেতে ছেলেতে, মেয়েতে মেয়েতে" ওসব হয়না। এখনও তাই মনে করেন, কিন্তু যেহেতু এখন শিক্ষিত, আধুনিক মানুষের কিছু দায় বর্তেছে নতুন জিনিস মেনে নেওয়ার তাই আপাতভাবে মেনে নিচ্ছেন কিন্তু অতি গভীরে প্রোথিত নিজেদের হোমোফোবিয়াকেই ডিনায়েলে রাখছেন।
এ অসুখ সহজে যে যাবার নয়... তা তো আমি নিজের জীবন দিয়ে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি আর সুধাসাগরের তীরেতে বসিয়া বছর বছর ধরে হলাহলই পান করে চলেছি...
পুরুষ হলে এ আমার বীর্যগাথা হতো, অল্পবয়েসী হলে হত দুঃসাহসিক স্বীকারোক্তি, কিন্তু এই তিরিশের শেষ শীতে দাঁড়িয়ে শুধু মনে হয়...
" ... তোমায় ঘরে হয়নি আনা সে কথা রয় মনে...
যেন ভুলে না যাই বেদনা পাই শয়নে স্বপনে..."
Tagsadolescence age of consent age of marriage caa child marriage corona and nursing covid19 Covid impacts on education domestic violence early marriage education during lockdown foremothers gender discrimination gender identity gender in school honour killing human rights intercommunity marriage interfaith marriage lockdown lockdown and economy lockdown and school education lockdown in india lockdown in school lockdown in schools love jihad marriage and legitimacy memoir of a nurse misogyny nrc nurse in bengal nursing nursing and gender discrimination nursing in bengal nursing in india online class online classes during lockdown online education right to choose partner school education during lockdown social taboo toxic masculinity transgender Women womens rights
কিছু কিছু খুঁটিনাটি বাদ দিলে মনে হয় আয়নার দিকে তাকিয়ে। এই জীবনে অন্য কোন মানুষের সঙ্গে অভিজ্ঞতা আর উপলব্ধির যে এতটা সাদৃশ্য থাকতে পারে তা অকল্পনীয় ছিল। যেকথা চির-অস্ফুট থেকে যাবে, তা এত সাবলীল ও সুন্দরভাবে ব্যক্ত করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।