• নজরে টিভিএস : দলে ভারি 'স্কুটিগিরি'


    0    268

    January 25, 2019

     

     

    [এবারের নজরে বিজ্ঞাপনে একটু অন্য মেজাজ। 'টিভিস স্কুটি পেপ প্লাস' নিয়ে স্কুটিগিরিতে অনুষ্কা শর্মা-র জনপ্রিয় বিজ্ঞাপনটির মূল 'মেসেজ'টুকু পারমিতা ঘোষ মজুমদার বলে দিয়েছেন নদেবাবু-ময়না-ময়নার বন্ধু এরকম কয়েকটি কাল্পনিক চরিত্র দিয়ে তৈরি ছোট একটা গল্পের মধ্যে দিয়ে। উপরে বিজ্ঞাপনের ভিডিও লিঙ্কটি দেখুন আর পড়ুন ময়নাদের 'দল পাকানো' আর 'ডিমোক্রেসি'-র সাতকাহন।]

     

    নদেরচাঁদবাবু রবিবারের বাজারটা খেলিয়ে করেন৷ রবিবার মানে একটা সংকেত৷ একটা ইশারা৷ ঐদিন টাকাওয়ালারা বাজার যায়৷ আজকাল নদেবাবুও যান৷ তা গেলেই তো শুধু হবে না, পকেটে রেস্ত থাকা চাই! ধুঁকতে থাকা একটা বেসরকারি কারখানায় চাকরি করার সময় বাজারের সংকেত ধরার ক্ষমতা ওনার ছিল না৷ এখন রিটায়ার করেছেন৷ ছোট মেয়েটা বিউটি পার্লারে কাজ করে আজকাল দু’টো টাকা ঘরে আনছে৷ নদেবাবু মেয়ের টাকায় বাজারে সুখ খুঁজতে পারেন আজকাল৷ মনটা ফুরফুরে থাকে৷ নদেবাবু ভুলে যান, তাঁর জীবনের অনেকটাই কেটেছে সুখকে শামিয়ানার বাইরে রেখে৷

    বাজার সেরে নদেবাবু বাংলা কাগজ পড়েন৷ নানান সাংকেতিক শব্দ নিজের মাথায় গেঁথে নেন৷ নিজেকে রীতিমত শিক্ষিত লোক মনে হয়৷ যেমন ডিমোক্রেসি শব্দটা বেশ! সাংকেতিক! সময় বুঝে নানান কাজে আসে৷ নদেবাবু সব কথা ধরতে না পারলেও এটা বুঝে গেছেন, ডিমোক্রেসি আসলে দলে ভারি থাকার কায়দা৷ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন বলে নদেবাবুর সরকারের ওপর দাবী অনেক৷ যে কোনও বিষয়েই সরকারকে গাল না পাড়লে তাঁর মন ওঠে না৷ সরকারের থেকে কীভাবে আদায় করা যায় এই ফিকির খুঁজে জীবন কেটেছে৷ তখন দলের মাহাত্ম্য বুঝতেন৷ তবে দল পাকানোর যে এমন ভাল একটা নাম আছে তা এই হালে বুঝেছেন৷ দল৷ আসলে দলই সব৷ যেই দল ভারি, সেই দল জেতে! যেই দল ভারি সেই দল ক্ষমতায় আসে৷ যেই দল ভারি, সেই দলের কাছে বাকিরা টুঁ-টুঁ করে!

    আজ রবিবার৷ সকালে বাজার সেরে নদেবাবু সবে বারান্দায় কাগজটা খুলে বসেছেন, ছোট মেয়ের বন্ধু ময়না বাড়ির সামনে বোঁ করে স্কুটি এনে দাঁড় করাল৷ হাফ-প্যান্ট আর গেঞ্জি পরা মেয়েটা মাথা থেকে হেলমেট খুলতে খুলতে নদেবাবুর দিকে চেয়ে চোখ টিপে বলল 'হাই কাকু!'

    নদেবাবু হতভম্ব হয়ে গেলেন!

    এ মেয়েও তাঁর মেয়ের সাথে পার্লারে কাজ করে৷ দুটো টাকার মুখ দেখেছে বলে এত বাড়! এই পোশাকে বাইরে বেরিয়েছে? এবার তো ব্যাটাছেলেদের এ সিটি দেবে!

    নদেবাবু আড়চোখে ময়নার বুকের দিকে তাকিয়ে কান লাল করে মাথা নামিয়ে নিলেন। ছিছি!

    মুখে একটা বোকাটে হাসি নিয়ে ময়নাকে কিছু বলতে যাচ্ছিলেন, বলা হল না৷ নদেবাবুর বউ ঝড়ের গতিতে বারান্দায় চলে এলেন৷

    'ওমা! ময়না! কী লাগছে রে তোকে! পুরো অনুষ্কা! স্কুটার কবে কিনলি? ওফ! দারুণ ব্যাপার তো!'

    নদেবাবুর গা জ্বলে গেল৷ বাড়ির পাশে এক চিলতে জমি আছে, রাবিশ পড়ে থাকে৷ সেখানেই নদেবাবু প্রস্রাব করেন৷ নদেবাবু সেই গলির দিকে হাঁটা দিলেন৷ বউ-এর এই ব্যাপারটা পছন্দ নয় তিনি জানেন, সেই জন্যেই দেখিয়ে দেখিয়ে গলিতে গেলেন৷ ব্যাটাছেলে রাস্তায় পেচ্ছাপ করবে না তো কী? যত্ত সব!

    কাজ সেরে বারান্দায় ফিরে এসে দেখলেন ময়না, ছোট মেয়ে বুলু আর তাঁর বউ তিনজনে তিনটে চেয়ার দখল করে নিয়েছে৷ একটা বেঁটে মতন টুল ছিল, তিনি সেখানে বসবেন কি বসবেন না ভাবতে ভাবতে বসেই পড়লেন৷ এদের ভাবগতিক একটু জরিপ করা দরকার! একটা বাজে গন্ধ যেন নাকে ভেসে আসছে।

    'কাকু, আমরা একটা ব্যবসা শুরু করছি, আপনার আশীর্বাদ চাইতে এলাম!' বলে ময়না ঘাড় হেলিয়ে নদেবাবুর পায়ের দিকে ডাইভ দিতে নদেবাবু টুল শুদ্ধু কেঁপে উঠলেন!

    হাঁ ক’রে মুখটা ফের বন্ধ করলে শুনলেন বউ বলছে, 'সুখ কিনতে শুধু তোমরাই বেরোবে? আহা আমাদের মেয়েগুলো কম কিসে?'

    নদেবাবু ততক্ষণে খানিকটা খেই পেয়েছেন৷ বললেন 'সুখ? কিসের সুখ?'

    'টাকা, কাকু! টাকার সুখ! আমরা এখন বাজারটা বুঝে গেছি কাকু! কোথায় কোথায় টাকার ফিকির আছে, তাও চিনে নিয়েছি! এবার যুদ্ধে আমরাও যাব!'

    'হ্যাঁ, তা আর যাবে না! ছেলেদের মতন পোশাক পরছ, পা দেখানো প্যান্ট, ছিছি, টাকা রোজগার মানে এই?'

    'এমা কাকু! তুমি রেগে গেছ নাকি? লাভ নেই কাকু৷ আমরা এখন দলে ভারি হচ্ছি! একা একা লড়াই-এ হেরে যেতাম যখন তখন বুঝিনি, এখন বুঝতে পারি আসল কথা হল দল! দলে যেদিকে ভারী সেদিকেই সমস্ত সম্পদ! সমস্ত সুখ!'

    নদেবাবু হাঁ করে ময়নাকে দেখতে থাকেন৷ ময়না খিলখিল করে হেসে উঠে বলল 'একা একা যখন এ শহরে আমি স্কুটার চালাতাম, আমার চারপাশ ঘিরে ধরে পাড়ার ছেলেগুলো টোন কাটত! ঘাবড়ে যেতাম খুব৷ তারপর একে একে সুবলা, কলি, বিপাশা, অনু ওরা সবাই আমার দেখাদেখি স্কুটি কিনল৷ আজকাল পাড়ার ছেলেগুলো টেরিয়ে দেখে বটে, কিছু বলে টলে না! বাপনকে অনেকদিন ধরে টার্গেট করে রেখেছিলাম, সেদিন ব্যাটা একা সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিল, আমরা পাঁচজন স্কুটিতে ওকে ঘিরে ধরে অ্যাইসান আওয়াজ দিয়েছি না, ব্যাটা পালানোর পথ পাচ্ছিল না! দল, বুঝলে কাকু, দল বাঁধাটাই সব!'

    'তোরা...! তোরা...!' বলে নদেবাবু ফের চুপ!

    এতক্ষণ বুলু কোন কথা বলেনি৷ এবার শান্ত কণ্ঠে সে বলল 'হ্যাঁ বাবা, বাজারের এত আয়োজন, সব তো আমাদের সবার জন্যেই! আমিও সামনে মাসে একটা স্কুটি কিনছি৷ লোন নিয়ে৷ মাসে মাসে শোধ করব৷ ময়নার দলটা ভারী হওয়া দরকার৷ দলই আসল, বুঝলে বাবা!'

    বাজার আর দল৷ দল আর বাজার৷ শব্দদুটোর মানে কি তাহলে একই! নদেবাবুর তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছিল৷ তিনি মাথা নামিয়ে ভাবলেন, হয়ত এক৷ তবু সবার ওপরে ডিমোক্রেসি!

     
     



    Tags
     


    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    You may use these HTML tags and attributes: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>

     



    তথ্য নীতি | Privacy policy

 
Website © and ® by Ebong Alap / এবং আলাপ, 2013-24 | PRIVACY POLICY
Web design & development: Pixel Poetics