• মেয়েদের কাজ : বিকল্প জীবিকার পাঁচ ভারতীয় মেয়েকে নিয়ে ছবি-নিবন্ধ


    0    91

    March 8, 2019

     

    জেলে, মুচি, বাসচালক, ট্যাক্সিচালক, দমকলকর্মী - চোখে ভেসে ওঠে একের পর এক পুরুষের ছবি। একটা মেয়ে কি পারে, বেপরোয়া সমুদ্র বা শহরের ভিড় রাস্তার মোকাবিলা করতে? মেয়েদের পেশা তাই 'নিরাপদ' গন্ডীতে আবদ্ধ হতে হবে, এমনটাই আমাদের ধারণা। আর এই ধারণাটাই চ্যালেঞ্জ করেছেন এমন পাঁচ ভারতীয় মহিলার কথা  'এখন আলাপ'-এর পাতায়। লিঙ্গের ভিত্তিতে জীবিকার কোনো স্বতঃসিদ্ধ গন্ডী থাকতে পারে না; তাই আন্তর্জাতিক শ্রমজীবি নারী দিবসে 'মেয়েদের কাজ' নিয়ে নতুন করে ভাবুক সবাই, যেমন ওঁরা ভেবেছেন। যেমন ওঁরা ভেঙেছেন পুরুষ-শাসিত সমাজের গ্লাস-সিলিং।

    তানিয়া সান্যাল । এভিয়েশন ফায়ারফাইটার ।

    তানিয়া সান্যাল

    আগুন নিয়ে খেলা কী মেয়েদের মানায়? মানায় ততক্ষণই, যখন সে মেয়ে আছেন রান্নাঘরে। কিন্তু সত্যি সত্যি ধরাচূড়া পরা ‘ফায়ারফাইটার’! কলকাতার তানিয়া ভাঙলেন ‘মেয়েদের কাজ’-এর নির্ধারিত তালিকা।

    ২৬ বছরের তানিয়া সান্যাল ভারতের প্রথম মহিলা এভিয়েশন ফায়ারফাইটার হিসেবে যোগ দিলেন শহর কলকাতার এয়ারপোর্ট ফোর্সে। এযাবৎ পুরুষ-প্রধান ‘এয়ারপোর্টস অথরিটি অফ ইণ্ডিয়াস ফায়ারফাইটিং কোর্স’-এর প্রথম সফল মহিলা শিক্ষার্থী তানিয়া গত সেপ্টেম্বরে যোগ দিয়েছেন কলকাতা বিমানবন্দরে। দেশজুড়ে ৩,১১০ টি ফোর্সের মধ্যে তিনিই এই মুহুর্তে একমাত্র ‘কোয়ালিফায়েড’ মহিলা ফায়ারফাইটার।

    [উৎস : ইণ্ডিয়াটাইমস]

    প্রতিমা পোদ্দার । বাসচালক।

    প্রতিমা পোদ্দার

    এক বাস লোক। কলকাতার রাস্তা। নিমতা-হাওড়া মিনি থেকে বড়বাজার স্টপে নামবেন এক মহিলা। কন্ডাক্টর চেঁচিয়ে উঠলেন ‘আস্তে লেডিজ...’, কথা শেষ হবার আগেই একটু কি থমকে গেলেন?

    ড্রাইভারের সিটে বসে আছেন প্রতিমা পোদ্দার। কলকাতার একমাত্র মহিলা বাস-ড্রাইভার। ভোর সাড়ে তিনটেয় বাড়ি থেকে বেরিয়ে দিনভর বাস চালান নিমতা-হাওড়া রুটে। ছ’বছর আগে ঐ রুটেই বাসের কন্ডাক্টর হিসেবে কাজ করেছেন। তারপর স্বামীর বাস দুর্ঘটনার পর আর একমুহুর্ত না ভেবেই, ড্রাইভারের দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন নিজের হাতে।

    [উৎস : ইয়োরস্টোরি ]

    কে সি রেখা । মৎস্যজীবি ।

    কে সি রেখা

    ছেত্তুভ সমুদ্রতটে একা বসে বসে মাছ-ধরা-জালের জট ছাড়াচ্ছেন রেখা। তখনো ভোর হয়নি। আর একটু পরেই এসে পরবে তার স্বামী কার্তিকেয় আর তারপর দুজনে ছোট নৌকোটা নিয়ে পাড়ি দেবেন গভীর সমুদ্রে।

    স্বামীকে জাল বুনতে বা জট ছাড়াতে মাছ বেচতে সাহায্য করেন অনেক জেলের ঘরণীই, কিন্তু ৪৫ বছরের রেখা সমুদ্রের বিপদকে তোয়াক্কা না করে মাছ ধরতেও যান। কেরালার ত্রিশূর জেলার ছভক্কড় গ্রামের কে সি রেখা, রাজ্য ফিশারি দপ্তর থেকে ‘লাইসেন্স’ পাওয়া প্রথম মহিলা জেলে। গভীর সমুদ্রে তাঁর অবাধ অধিকার।

    [উৎস : দ্য হিন্দু]

    ভামাবাই মাস্তুদ । চর্মকার।

    ভামাবাই

    ভামাবাই মাস্তুদের একার সংসার। জুতোসেলাই থেকে চন্ডীপাঠ একাই করতে হয়। তবে তফাতটা হল, ওনার ক্ষেত্রে জুতো সেলাই কেবল রূপক নয়, জীবনধারণের উপায়।

    ছোটবেলায় বাবার কাছে শেখা এই বিদ্যেটা কাজে লাগিয়ে স্বামী ছেড়ে যাবার পর নিজের দোকান, নিজের পেশা আর মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার মত নিজের একটা জীবন তৈরি করেছেন ভামাবাই। পুনের এক ব্যস্ত রাস্তার ধারে মুচির যাবতীয় সরঞ্জাম নিয়ে ভামাবাইয়ের ছোট্ট দোকান। মেয়ে বলে মুচির কাজ করতে পারবেন না, এ প্রশ্ন তিনি মনেও স্থান দেননি। পুরুষ-প্রধান এই পেশায় অনায়াস স্বাচ্ছন্দ্য সত্তরোর্ধ্ব ভামাবাইয়ের।

    [উৎস: রুরালইণ্ডিয়াঅনলাইন]

    সুষমা মিদ্দে । উবের ক্যাব ড্রাইভার ।

    উবের ক্যাবে চালক সুষমা

    স্টিয়ারিং-এ মহিলা দেখলেই শহরের ট্রাফিক থেকে ভেসে আসে টুকরো মন্তব্য, ‘মেয়েগুলো যে কেন গাড়ি চালাতে আসে’ কিম্বা ‘এদের জন্যই রাস্তায় এরকম জ্যাম হয়’, অথবা ‘যে যা পারেনা তার সেটা করতে যাওয়ার দরকার কী’। তার ওপর সেটা যদি হয় ‘কমার্সিয়াল ড্রাইভিং’?

    কলকাতা শহরে মহিলা ট্যাক্সিচালকের কথা সেভাবে শোনা না গেলেও, মহিলা উবের ড্রাইভার সুষমা মিদ্দে কে অনেকেই চেনেন। বেলুড়ের বাসিন্দা বছর তিরিশের সুষমা কলকাতার উবের অ্যাপের একমাত্র মহিলা ড্রাইভার-পার্টনার। সুষমার কথায়, ‘উত্তরপাড়ায় যখন ড্রাইভিং ট্রেনিং স্কুলে যাচ্ছি, কেউ তেমন অবাক হয়নি। কিন্তু একদিন যেই ইন্সট্রাক্টরকে জিজ্ঞেস করেছি কমার্সিয়াল লাইসেন্স কীভাবে পাওয়া যাবে, সে তো পুরো থ! তারপর অবশ্য হেসে উড়িয়ে দিয়েছে। বিশ্বাস করতে চায়নি, যতদিন না উবের ক্যাব নিয়ে সত্যিই বেরিয়ে পড়েছি কলকাতার রাস্তায়। এখন সারাদিনে ১৫ টার বেশি ট্রিপ পাই। 

    [উৎস: ইণ্ডিয়ান এক্সপ্রেস]

     

    সংকলন : চান্দ্রেয়ী দে

     

     
     



    Tags
     


    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    You may use these HTML tags and attributes: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>

     



    তথ্য নীতি | Privacy policy

 
Website © and ® by Ebong Alap / এবং আলাপ, 2013-24 | PRIVACY POLICY
Web design & development: Pixel Poetics